উল্টো জব্দ by শামসুজ্জামান খান
গ্রামের এক বড়সড় বাজার। মানুষজনের আগমন, বেচাকেনার ধুমধাম; আর পকেটমার, চাপাবাজ, টাউট-বাটপারের আনাগোনাও কম নয়। সেই বাজারের এক কোনায় একটু নিরিবিলিতে দুই-তিনটি হোটেল। সেই হোটেলগুলোর একটার ভেতরে বসে হোটেলমালিক ও তাঁর এক বন্ধু গল্পগুজবে ব্যস্ত ছিলো।
তখন একটা লোক বড় একখানা ধামা হাতে করে হোটেলের সামনের রাস্তায় দাঁড়াল। তার থুতনিতে ছাগলা দাড়ি, মুখে বসন্তের দাগ, চোখ কোটরগত, মাথা ভর্তি টাক। দেখতে অনেকটা আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া পেশাদার সাক্ষীর মতো। লোকটি ইতি-উতি তাকাচ্ছিল। বোঝা যাচ্ছিল, সে কাউকে খুঁজছে। হোটেলমালিকের বন্ধু বললেন, ‘লোকটা চোরের মতো এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। মনে হচ্ছে, মতলব সুবিধার নয়।’ হোটেলমালিক বললেন, ‘না, কারও জন্য অপেক্ষা করছে। তাই আগন্তুকের পথের দিকে বারবার উদগ্রীব হয়ে তাকাচ্ছে।’ হোটেলমালিকের বন্ধু বলল, যেভাবে তাকাতাকি করছে, তাতে একে একটু প্যাঁচে ফেলা যায় না? একটু রগড় তো হবে!
হোটেলওয়ালা: ‘চেহারা দেখে মনে হয় সহজ মাল নয়। তবে যেভাবে বে-আক্কেলের মতো হাবভাব করছেন, তাতে ভালোমতো বিপদে ফেলা যায়। তবে তা না করে রগড়ের ঢঙে একটু চিকনে মাইর দিয়া কিছু আদায় করা যায়।’
বন্ধু: চাঁদাবাজির যুগে বুদ্ধিটা মন্দ নয়। হোটেলওয়ালা বন্ধুকে নিয়ে বাইরে আসেন। বাইরে আসার আগে বাবুর্চিকে ডেকে গোশতে খুশবুদার মসলা দিয়ে বাগার দিতে বলেন। ফলে অল্প সময়েই রান্না করা গোশতের গন্ধে চারদিক ম-ম করতে থাকে।
হোটেলমালিক ছাগলদাড়ি টাকমাথার কাছে গিয়ে বললেন, ‘ওই মিয়া, ক্ষিদা লাগছে? হইটালের ভিতরে আইসা অর্ডার দেন, যা খুশি খান। তারপর বিল মিটাইয়া চইল্যা যান। তা না কইরা রাস্তায় খাড়াইয়া অর্ধেক খাওন খাইতেছেন। এইডা কী কারবার!’
লোকটি: অর্ধেক খাওন খাইতেছি মানে? আমি একজন মানুষের জন্য খাড়াইয়া আছি।
হোটেলমালিক: মিয়া, ফাঁকতালে অর্ধেক ভূরিভোজনের তালে আছেন তা বুঝি না মনে করছেন? জানেন না ঘ্রাণ শুকলে অর্ধভোজন হয়ে যায়! দাম ফ্যালান।
লোকটা হঠাৎ অন্য রকম হয়ে যায়। দৃষ্টি কঠোর, চোয়াল শক্ত এবং চেহারায় প্রচণ্ড আস্থা। ফিচকে হাসি হাসে। তারপর বলল, ‘ও ঘ্রাণে অর্ধ ভোজন’-এর সেই গপ্প? রান্নায় জিহ্বায় পানি আনা গন্ধ তো ঠিকই পাচ্ছি। নাক সুখ পাচ্ছে, কিন্তু উদার তো চোঁ চোঁ করেও পাচ্ছে না কিছু!’ এই বলে সে কুঁচকানো পাঞ্জাবির পকেট থেকে আটআনা পয়সা বের করে হোটেলওয়ালার কানের কাছে কয়েকবার টং-টং করে বাজিয়ে বলল, ‘আমার নাকের সুখানুভূতিতে অর্ধেক ভোজন যদি হয়ে থাকে, তাহলে পয়সার টং-টং শব্দ কানে শুনে তোমারও অর্ধেক দাম পাওয়া হয়ে গেছে। ইবার ফুট। গিরিঙ্গি কইরো মানুষ চিনা।’
গ্রামবাংলার রঙ্গরসের গল্প থেকে সংগৃহীত
হোটেলওয়ালা: ‘চেহারা দেখে মনে হয় সহজ মাল নয়। তবে যেভাবে বে-আক্কেলের মতো হাবভাব করছেন, তাতে ভালোমতো বিপদে ফেলা যায়। তবে তা না করে রগড়ের ঢঙে একটু চিকনে মাইর দিয়া কিছু আদায় করা যায়।’
বন্ধু: চাঁদাবাজির যুগে বুদ্ধিটা মন্দ নয়। হোটেলওয়ালা বন্ধুকে নিয়ে বাইরে আসেন। বাইরে আসার আগে বাবুর্চিকে ডেকে গোশতে খুশবুদার মসলা দিয়ে বাগার দিতে বলেন। ফলে অল্প সময়েই রান্না করা গোশতের গন্ধে চারদিক ম-ম করতে থাকে।
হোটেলমালিক ছাগলদাড়ি টাকমাথার কাছে গিয়ে বললেন, ‘ওই মিয়া, ক্ষিদা লাগছে? হইটালের ভিতরে আইসা অর্ডার দেন, যা খুশি খান। তারপর বিল মিটাইয়া চইল্যা যান। তা না কইরা রাস্তায় খাড়াইয়া অর্ধেক খাওন খাইতেছেন। এইডা কী কারবার!’
লোকটি: অর্ধেক খাওন খাইতেছি মানে? আমি একজন মানুষের জন্য খাড়াইয়া আছি।
হোটেলমালিক: মিয়া, ফাঁকতালে অর্ধেক ভূরিভোজনের তালে আছেন তা বুঝি না মনে করছেন? জানেন না ঘ্রাণ শুকলে অর্ধভোজন হয়ে যায়! দাম ফ্যালান।
লোকটা হঠাৎ অন্য রকম হয়ে যায়। দৃষ্টি কঠোর, চোয়াল শক্ত এবং চেহারায় প্রচণ্ড আস্থা। ফিচকে হাসি হাসে। তারপর বলল, ‘ও ঘ্রাণে অর্ধ ভোজন’-এর সেই গপ্প? রান্নায় জিহ্বায় পানি আনা গন্ধ তো ঠিকই পাচ্ছি। নাক সুখ পাচ্ছে, কিন্তু উদার তো চোঁ চোঁ করেও পাচ্ছে না কিছু!’ এই বলে সে কুঁচকানো পাঞ্জাবির পকেট থেকে আটআনা পয়সা বের করে হোটেলওয়ালার কানের কাছে কয়েকবার টং-টং করে বাজিয়ে বলল, ‘আমার নাকের সুখানুভূতিতে অর্ধেক ভোজন যদি হয়ে থাকে, তাহলে পয়সার টং-টং শব্দ কানে শুনে তোমারও অর্ধেক দাম পাওয়া হয়ে গেছে। ইবার ফুট। গিরিঙ্গি কইরো মানুষ চিনা।’
গ্রামবাংলার রঙ্গরসের গল্প থেকে সংগৃহীত
No comments