মধ্যপ্রাচ্য-মিসরীয় স্বৈরতন্ত্রের মৃত্যুযন্ত্রণা by রবার্ট ফিস্ক

মিসরীয় ট্যাংক, সেসবের ওপরে বসা ঘোরগ্রস্ত বিক্ষুব্ধ মানুষ, পতাকা, ফ্রিডম স্কয়ারে হাজার চল্লিশেক বিক্ষোভকারীর কান্না, চিৎকার, স্লোগান, প্রার্থনা, ট্যাংকগুলোতে বসা লোকদের মধ্যে মুসলিম ব্রাদারহুড দলের নেতা। এ দৃশ্য কি বুখারেস্ট মুক্তির সেই দৃশ্যের সঙ্গে তুলনীয়? আমেরিকার তৈরি একটি ব্যাটল-ট্যাংকের ওপরে উঠে আমার শুধু মনে পড়ছিল প্যারিসের মুক্তি নিয়ে তৈরি চলচ্চিত্রগুলোর কথা।


কয়েক শ মিটার দূরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছাকাছি এলাকায় হোসনি মোবারকের কালো উর্দিধারী নিরাপত্তা পুলিশ গুলি চালাচ্ছিল বিক্ষুব্ধ মিছিলকারীদের ওপর। এক উত্তাল, ঐতিহাসিক বিজয়ের উদ্যাপন, মোবারকের নিজের ট্যাংক বাহিনীই তাঁর স্বৈরশাসন থেকে মুক্ত করছে রাজধানী কায়রোকে।
নিজের পুতুলনাচের দুনিয়ায় মোবারক এখনো দাবি করে চলেছেন তিনি মিসরের প্রেসিডেন্ট। ওয়াশিংটনের বারাক ওবামা ও হিলারি ক্লিনটনের কাছেও তিনি এ দাবি বহাল রেখেছেন। কিন্তু বিক্ষুব্ধ জনগণের বিক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টায় ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেছেন ওমর সুলেইমানের নাম। ওমর সুলেইমান হোসনি মোবারকের সরকারের একজন ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তা, ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনায় মিসরের প্রধান আলোচক, বয়স ৭৫, বছরের পর বছর ধরে তিনি তেল আবিব ও জেরুজালেম সফর করেছেন এবং হূদেরাগে আক্রান্ত হয়েছেন চারবার। আট কোটি মিসরীয় জনতার বিক্ষোভ ও মুক্তির আনন্দ কী করে সামলাবেন এই প্রৌঢ় আপারাতচিক, তা কল্পনারও বাইরে। ট্যাংকের ওপরে বসা আমার চারপাশের লোকজনকে যখন আমি জানালাম মোবারক তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওমর সুলেইমানকে বেছে নিয়েছেন, তখন তারা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।
ট্যাংকগুলো যারা চালাচ্ছিল, তাদের পরনে যুদ্ধের পোশাক, মুখে হাসি, কখনো কখনো তারা হাততালি দিয়ে উঠছে। জনতা রং স্প্রে করে ট্যাংকগুলোর গায়ে যেসব চিকা মেরেছে, তারা সেগুলো মুছে ফেলার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। কায়রোর রাস্তাঘাটে এখন যেসব মিসরীয় ট্যাংক চলছে, সেগুলোর গায়ে গায়ে লেখা ‘মোবারক চলে যাও—দূর হয়ে যাও’, ‘মোবারক, তোমার দিন শেষ’। সে রকমই একটি ট্যাংক চক্কর দিচ্ছিল ফ্রিডম স্কয়ারে, তাতে বসে ছিলেন মুসলিম ব্রাদারহুড দলের সিনিয়র নেতা মোহামেদ বেলতাগি। তার আগে গার্ডেন সিটি শহরতলির কাছাকাছি এলাকায় হেঁটে যেতে যেতে দেখেছিলাম, সারি ধরে যাচ্ছে ট্যাংকের বহর, জনতা হুমড়ি খেয়ে পড়ে ট্যাংকের সেনাদের হাতে তুলে দিচ্ছে কমলালেবু, তাদের প্রশংসা করছে মিসরের দেশপ্রেমিক বলে। ভাইস প্রেসিডেন্ট নিয়োগ বা বশংবদ চাটুকারদের নিয়ে মোবারকের নতুন সরকার গঠন যতই পাগলামি হোক না কেন, কায়রোর পথে পথে প্রমাণিত হচ্ছে মোবারক ও তাঁর নতুন সরকারের বস্তুত কোনো ক্ষমতা নেই এবং এই সত্যটা ধরতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা স্রেফ ব্যর্থ হয়েছেন।
পাঁচ দিন ধরে মিসরে যে সহিংসতা চলছে এবং যেসব প্রাণহানি ঘটেছে, তার জন্য দায়ী মূলত মোবারকের নিরাপত্তা পুলিশ। কিন্তু মোবারক বলার চেষ্টা করছেন, মিসরের জনগণের হয়েই সহিংসতা বন্ধ করা তাঁর দায়িত্ব। তাঁর এই দুর্বল প্রয়াস আরও বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে মিসরের জনগণকে, যাদের ৩০টি বছর কেটে গেছে এই স্বৈরশাসকের অধীনে। এমন সন্দেহ ক্রমেই বাড়ছে যে, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাগুলো ঘটিয়েছেন সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যরা। গত ২৪ ঘণ্টায় একটি গ্রামে যে ১১ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, সেসবও সাদা পোশাকের পুলিশের কাজ। তারা এসব করছে মোবারককে গদিচ্যুত করার আন্দোলনে লিপ্ত বিক্ষোভকারীদের সংহতি নষ্ট করে দিতে। মুখোশ পরা কিছু লোক কয়েকটি কমিউনিকেশন সেন্টার ধ্বংস করেছে, তাদের পেছনে নিশ্চয়ই কোনো না কোনো সংস্থা ছিল। অনেকের সন্দেহ, এটাও সরকারের সাদা পোশাকধারী সেই ঠ্যাংগাড়ে বাহিনীর কাজ, যারা মিছিলকারীদের অনেককে পিটিয়েছে।
কিন্তু কায়রো, আলেকসান্দ্রিয়া, সুয়েজ ও অন্যান্য শহরের থানাগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো স্পষ্টতই সাদা পোশাকধারী পুলিশের কাজ নয়। গত শুক্রবার রাতে কায়রোর আলেকসান্দ্রিয়া মহাসড়কে মাইল চল্লিশ দূরে একদল যুবক মহাসড়কের ওপর আগুন জ্বালায়, ওই পথে চলমান গাড়িগুলো আগুন দেখে গতি কমালে সেই যুবকেরা তাদের কাছে শত শত ডলার দাবি করে। গতকাল (শনিবার) সকালে কায়রোর কেন্দ্রীয় এলাকায় অস্ত্রধারী লোকজন গাড়ির মালিকদের কাছ থেকে গাড়ি ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল।
আরও ভয়ংকর দস্যুবৃত্তি চলেছে মিসরের জাতীয় জাদুঘরে। সুপ্রাচীন সম্পদের এই বৃহত্তম ভান্ডারটি পাহারার দায়িত্ব ছেড়ে পুলিশ চলে যাওয়ার পর লুটপাটকারীরা এই লাল ভবনটিতে ঢুকে পড়ে চার হাজার বছরের পুরোনো ফারাওদের মূর্তিগুলো ভেঙে ফেলে, মিসরীয় মমিগুলো এবং ফারাও রাজাদের কবরে যেসব ছোট ছোট কাঠের কারুকাজ করা নৌকা ছিল, সেগুলো নষ্ট করে ফেলে। যেসব অমূল্য মূর্তি ঘিরে ছিল কাচের বেষ্টনী, সেগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে, ভেতরের কালো রঙের সৈন্যসামন্তদের মূর্তিগুলো তছনছ করা হয়েছে। এ ঘটনা নিয়েও গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল যে, শুক্রবার রাতে পুলিশের দল জাদুঘরটি অরক্ষিত রেখে চলে যাওয়ার আগে নিজেরাই ওসব ভাঙচুর চালিয়েছে। ২০০৩ সালে ইরাকের বাগদাদ জাদুঘরে যে ধ্বংসযজ্ঞ চলেছিল, এ যেন তারই ভয়াবহ ছায়াপাত। অবশ্য কায়রোর এই জাদুঘরে সে রকম লুটতরাজ ঘটেনি, কিন্তু প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদের যে ক্ষতিসাধন করা হয়েছে, তা এক ভয়াবহ প্রত্নতাত্ত্বিক বিপর্যয় ছাড়া কিছু নয়।
মাদিনাত আস সাদিস ইম উকতাবার নামের কায়রোর এক উপশহর থেকে রাতের বেলা গাড়ি চালিয়ে ফিরছিলাম রাজধানী কায়রোর দিকে। অন্ধকারে কতগুলো যন্ত্রযান দৃশ্যমান হয়ে উঠলে আমাকে গাড়ির গতি কমাতে হলো। দেখলাম, ভাঙাচোরা যানবাহন, সড়কজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে ভাঙা কাচের টুকরো, বিধ্বস্ত চেহারার পুলিশ সদস্যরা রাইফেল তাক করে আছেন আমার গাড়ির হেডলাইট বরাবর। অর্ধেক পোড়া একটা জিপ। ওগুলো দাঙ্গাবিরোধী পুলিশ বাহিনীর ব্যবহূত যানবাহনের ধ্বংসস্তূপ, শুক্রবার রাতে বিক্ষোভকারীরা কায়রো থেকে ভাগিয়ে দিয়েছে ওদের। সেই বিক্ষোভকারীরাই শনিবার রাতে কায়রোর ফ্রিডম স্কয়ারে জড়ো হয়ে আওয়াজ তুলেছে ‘আল্লাহ্ আল-আকবর!’ কায়রো নগরের রাতের বাতাসে গর্জে উঠেছিল তাদের কণ্ঠ।
প্রতিশোধের ডাকও দেওয়া হয়েছে। আল-জাজিরা টেলিভিশনের কর্মীরা আলেকসান্দ্রিয়ার মর্গে দেখতে পেয়েছেন ২৩টি লাশ, তারা দৃশ্যত পুলিশের গুলিতে নিহত। কতগুলো লাশের মুখমণ্ডলে ভয়াবহ নির্যাতনের চিহ্ন। কায়রোর এক মর্গেও আবিষ্কৃত হয়েছে ১১টি লাশ। রক্তাক্ত লাশগুলো দেখতে সমবেত আত্মীয়স্বজন পুলিশের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য চিৎকার করছিলেন।
কায়রো এখন আনন্দের পরিবেশ থেকে প্রবেশ করছে গম্ভীর ক্রোধের পরিবেশে। শনিবার সকালে হেঁটে নীল নদের সেতুটা পেরিয়ে দেখতে গিয়েছিলাম হোসনি মোবারকের দলের সদর দপ্তরের ১৫ তলা ভবনটি, যেটিতে বিক্ষোভকারীরা আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। ভবনটির সামনে দেখলাম বিশাল এক পোস্টার, এক কথায় মোবারকের দলের বিজ্ঞাপন: কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করে বেরিয়ে আসা শিক্ষার্থীদের ছবি, চিকিৎসকদের ছবি, পূর্ণকালীন চাকরির কথা। এমন সব প্রতিশ্রুতি যেগুলো মোবারকের দল ৩০ বছরেও পূরণ করতে পারেনি। পোস্টারটির পেছনে দলের সদর দপ্তরের ভবনটির পুড়ে কালো হয়ে যাওয়া জানালাগুলো থেকে পাক খেয়ে বেরিয়ে আসছিল সোনালি আগুনের শিখা। দাউ দাউ করে জ্বলছিল মোবারকের দলের সদর দপ্তর, তারই মধ্যে মধ্যযুগীয় লুটেরার দল নিয়ে যাচ্ছিল চেয়ার-টেবিল ও অন্যান্য জিনিস। নীল নদের ওপরের সেতুটি এবং মোটরওয়ে ফ্লাইওভারগুলোতে দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য দেখছিল হাজার হাজার মানুষ, অনেকে ছবি তুলছিল।
কিন্তু এই দৃশ্যেরই ছবি তোলার জন্য ডেনিশ টেলিভিশনের একটি দল যখন সেখানে এসে হাজির হলো, তখন অনেক লোক তাদের বাধা দিয়ে চেঁচামেচি শুরু করে দিল। লোকজন ডেনিশ সাংবাদিকদের বলল, এই আগুনের ছবি তোলার অধিকার তাদের নেই; মিসরের জনগণ গর্বিত জাতি, তারা লুটতরাজ, জ্বালাও-পোড়াও—এসব করে না। সেদিনের একটা আলোচ্য বিষয় হতে পারত এটাই: স্বৈরতন্ত্র থেকে মিসরীয়দের এই ‘মুক্তি’ সম্পর্কে এমন কিছু প্রকাশ করার অধিকার সাংবাদিকদের নেই, যা করলে এই ‘মুক্তি’র ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে মিসরের জনসাধারণ সাংবাদিকদের প্রতি যথেষ্ট বন্ধুভাবাপন্ন। শুক্রবার রাতে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কাপুরুষের মতো এক বিবৃতি দেওয়ার পরেও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক মনোভাবের একটিও আলামত এখানে দেখা যায়নি। ৩০ বছর বয়সী এক নারী মনোরোগ চিকিৎসক আমাকে বললেন, ‘আমরা যা চাই, তা হলো মোবারকের বিদায়, নতুন নির্বাচন, আমাদের মুক্তি ও মর্যাদা।’ তাঁর পেছনে তরুণ-যুবকের দল রাস্তা থেকে সরিয়ে ফেলছিল ভাঙা ক্র্যাশ ব্যারিয়ার ও রাস্তার বিভাজক বেড়াগুলো।
হোসনি মোবারক মিসর ছেড়ে চলে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তিনি বলছেন, এসব বিক্ষোভ-মিছিল, অগ্নিসংযোগ এক অশুভ নীলনকশার অংশ। তিনি এটা বলছেন যাতে বিশ্বনেতারা তাঁর প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখেন। বারাক ওবামা মিসরে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন, সেই সঙ্গে সহিংসতা বন্ধেরও আহ্বান জানিয়েছেন। হোসনি মোবারক তিন দশক ধরে তাঁর অপশাসন টিকিয়ে রাখার স্বার্থে যেসব মিথ্যা বলে এসেছেন, বারাক ওবামা হুবহু তা-ই বললেন। ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর মিসর সফরে এসে এই কায়রোতেই যখন আরবদের উদ্দেশে মুক্তি ও গণতন্ত্র অর্জনের আহ্বান জানিয়েছিলেন, তখন মিসরের লোকজন গভীর আনন্দ পেয়েছিল। কিন্তু গত শুক্রবার যখন তিনি মিসরের প্রেসিডেন্টের পক্ষেই সমর্থন ব্যক্ত করলেন, তখন ওবামার ওপর থেকে মিসরীয়দের সব আশা-ভরসা দূর হয়ে গেল। সমস্যা সেই একটাই: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের যখন মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে কিছু করতে হয়, তখন ওয়াশিংটনে ক্ষমতার ও নৈতিকতার পথ একসঙ্গে মেলে না। আরব ও ইসরায়েলের বিষয় যখন চলে আসে, তখন আমেরিকার নৈতিক নেতৃত্ব গায়েব হয়ে যায়।
এই সমীকরণে মিসরের সেনাবাহিনী একটা পক্ষ। ওয়াশিংটন মিসরকে বছরে যে ১৩০ কোটি ডলার সাহায্য দেয়, মিসরীয় সেনাবাহিনী পায় তার বিরাট এক অংশ। সেই সেনাবাহিনীর সেনাপতি জেনারেল তানতাবি হোসনি মোবারকের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগত বন্ধু। যখন কায়রোতে পুলিশ বিক্ষোভাকারীদের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছিল, তখন জেনালের তানতাবি ঘটনাক্রমে ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থান করছিলেন। এটা সম্ভবত নিকট ভবিষ্যতের জন্য ভালো কিছুর আভাস নয়।
সুতরাং ‘মুক্তি’র পুরোটা পথই কায়রোকে পেরিয়ে আসতে হবে। শেষটা হয়তো পরিষ্কার। কিন্তু মর্মান্তিক ঘটনাগুলোর অবসান খুব তাড়াতাড়ি ঘটছে না। গত রাতে খবর এল, কাসর আল-আইন হাসপাতালে লুটপাট হয়েছে।
ব্রিটেনের দি ইনডিপেনডেন্ট থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মশিউল আলম
রবার্ট ফিস্ক: ব্রিটিশ সাংবাদিক। দি ইনডিপেনডেন্ট-এর মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক সংবাদদাতা।

No comments

Powered by Blogger.