সরল গরল-পঞ্চম সংশোধনী বাতিল নিয়ে বিভ্রান্তি by মিজানুর রহমান খান
প্রথম আলোতে অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের ‘সংবিধান সংশোধন, না ’৭২-এর সংবিধানে প্রত্যাবর্তন’ (২১ ডিসেম্বর ২০০৯) এবং বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানীর ‘বাংলাদেশের আদি সংবিধানের ক্ষমতা’ (১ জানুয়ারি ২০১০) শীর্ষক লেখার সুবাদে আমার এই লেখা। তাঁরা রাজনীতিক নন।
একজন শিক্ষাবিদ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, অন্যজন আইনবিদ ও আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি। দুটি লেখা পড়ে পাঠকের মনে প্রথমেই যে ধারণা আরও বদ্ধমূল হতে পারে, তা হলো, হাইকোর্ট পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে দিয়েছেন।
সংবিধানের কোনো গণমুখী সংশোধন, যার লক্ষ্য প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা নয়, তেমন ধরনের কোনো সংশোধন-উদ্যোগ শাসকগোষ্ঠীর চিন্তাভাবনায় আছে, সে বিষয়ে আমার সন্দেহ-সংশয়ে এখনো চিড় ধরেনি। কিন্তু বড় ব্যথিত হই যে, বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের দেওয়া রায়ের ভুল ব্যাখ্যা চলছে। তিনি রায়ে কোথায় কতটুকু কীভাবে কী অর্থে বলেছেন, তা অনেকের কাছেই স্পষ্ট নয়। সে কারণে বাহাত্তরের সংবিধান নিয়ে সৃষ্ট বিতর্ক কোনো গঠনমূলক দিকে না গিয়ে চতুর্থ ও পঞ্চম সংশোধনীকেন্দ্রিক পুরোনো কাসুন্দিতে তিক্ত হচ্ছে। কিছু রাজনীতিক ও তাঁদের মিত্ররা অনবরত পানি ঘোলা করে চলেছেন। সংবিধান সংশোধন দূর থাক, অপপ্রচার ঠেকানো কিংবা বিতর্ককে সঠিক ধারায় নেওয়াটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে একটা চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের জাতীয় বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা এভাবে বারবার ফাঁদে পড়ে। আটকা পড়ে খাবি খায় সংকীর্ণতা ও অদূরদর্শিতার বেড়াজালে।
অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ লিখেছেন, ‘পঞ্চম সংশোধনী যদি সত্যি বাতিল হয়ে যায়, তাহলেই কি বাহাত্তরের সংবিধান ফিরে পাওয়া যাবে? আর ফিরে পেলেই কি সব অভিযোগের অবসান ঘটবে?’ তাঁর এই বক্তব্য যথার্থ যে, ‘পঞ্চম সংশোধনীতে কিছু কাটাছেঁড়া হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কিছু কাটাছেঁড়ার মেরামতও হয়েছে। বহুদলীয় গণতন্ত্রের ভিত্তি, গণতন্ত্র্রের অন্যান্য অনুষঙ্গ, যেমন—সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার সংরক্ষণে সুপ্রিম কোর্টের কর্তৃত্ব এবং স্থানীয় শাসনের পুনঃপ্রবর্তন পঞ্চম সংশোধনীর অবদান। কিন্তু মনে হতে পারে, হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়ন করা হলে পঞ্চম সংশোধনীর এই অর্জনগুলো উল্টে যাবে।’ তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘যাঁরা ’৭২-এর সংবিধানে ফিরে যেতে চান, তাঁদের মনন-চিন্তন কি সেই বাহাত্তরেই আটকে রয়েছে? নাকি তা করতেই হবে—এমন অনমনীয় জেদ? আর ’৭২-এ ফিরে যেতে চাইলে যাবেন কীভাবে?’ এ রকম জ্বলন্ত ও তীক্ষ প্রশ্নের সঙ্গে এবার মিলিয়ে দেখব বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানীর মন্তব্য। তিনি বিচারপতি খায়রুল হকের ওই রায় থেকে উদ্ধৃতি দিচ্ছেন এই বলে যে, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল সময়ের ঘোষণা, সামরিক আইন প্রজ্ঞাপন ও সামরিক আইন আদেশগুলো বেআইনি, বাতিল ও ত্রুটিযুক্ত এবং সেহেতু ‘সংবিধান (পঞ্চম সংশোধন) আইন, ১৯৭৯-ও বেআইনি ও সরাসরি বাতিল এবং তার ভিত্তিতে প্রদত্ত সকল প্রজ্ঞাপন ও আদেশসমূহ বেআইনি ও বাতিল ঘোষণা করা হলো।’
অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের লেখায় এরপর আমরা আরও দেখি, ‘আইনমন্ত্রী অবশ্য বলে ফেলেছেন, পঞ্চম সংশোধনী প্রসঙ্গে যদি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন, তবে ’৭২-এর সংবিধানে ফিরে যেতে কোনো সংশোধনীর প্রয়োজন হবে না। স্বাভাবিকভাবেই আমরা ’৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাব।’
আইনমন্ত্রীর এই খণ্ডিত বক্তব্য ইতিমধ্যেই পত্রপত্রিকায় গুরুত্বের সঙ্গে ছাপা হয়েছে এবং হয়তো তা ভবিষ্যতে আরও প্রচার পাবে। বিস্ময়ে আমি স্তম্ভিত হই অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের নির্দিষ্ট প্রশ্নে। তাঁর মনে প্রশ্ন: ‘আইনমন্ত্রীর ওই বক্তব্য কি গ্রহণযোগ্য? পঞ্চম সংশোধনী যদি বাতিল ঘোষিত হয়, তাহলেও তার আগের চারটি এবং পরের সংশোধনীগুলোর কী হবে? কোনো কথা বলা যত সহজ, তা বাস্তবায়ন তত সহজ নয়।’
আরটিভিতে কিছুদিন আগে প্রচারিত এক আলোচনায় তোফায়েল আহমেদ ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের সঙ্গে অংশ নিয়েছিলাম। মওদুদ আহমদের সামনেই উপস্থাপক বললেন, তিনি বলছেন, পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হলে পরবর্তী সব সরকার অবৈধ হয়ে পড়বে। একদলীয় শাসন বহাল হবে। আপনি কীভাবে দেখছেন?
বাহাত্তরের সংবিধানে ফেরা নিয়ে আমাদের বর্তমান জাতীয় বিতর্ক যা সংসদে নয়, গণমাধ্যম ঘিরে তরঙ্গায়িত কখনো উত্তাল ঊর্মিমুখর হয়ে উঠছে, তার স্বরূপটা মোটামুটি আমরা দেখে নিলাম। অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের লেখায় আমরা এর ক্ষতিকর দিকের বিস্তারিত ব্যাখ্যা পেলাম। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের ব্যাখ্যা তো সবচেয়ে আকর্ষণীয়। পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হলে জিয়াউর রহমান দ্বারা প্রতিষ্ঠিত বহুদলীয় গণতন্ত্র, স্থানীয় শাসন ও সুপ্রিম কোর্টের কর্তৃত্বের বিলোপ ঘটবে। এ ধরনের বক্তব্য জনগণের মধ্যে হয়তো অতটা ধাঁধা সৃষ্টি করত পারত না, যদি বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানীর মতো আইনবিদেরা রায়ের কার্যকারণ সম্পর্কে মন্তব্যে সাবধানী হতেন। বিচারপতি রাব্বানীর লেখায় পাঠকেরা দেখেছেন, ‘পঞ্চম সংশোধনী সরাসরি বেআইনি ও বাতিল করা হয়েছে।’ এরপর পাঠকেরা যদি দুয়ে দুয়ে চার মিলিয়ে ভাবতে বসেন যে, মওদুদ আহমদ ও এমাজউদ্দীন আহমদরা তো ঠিকই বলছেন, তাহলে তাঁদের দোষ দেওয়া যায় না। কিন্তু উল্লিখিত বক্তব্য কোনোটি খণ্ডিত, কোনোটি অর্ধ সত্য, কোনোটি আংশিক সত্য এবং কোনোটি মিশ্রিত। কোনোটি ডাহা মিথ্যা কিংবা কারও অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাঁর মন্তব্য মিথ্যার মতো করেই পাঠকের মনে গেঁথে যেতে পারে।
আরটিভির ওই আলোচনায় যে জবাব দিয়েছিলাম, তাই একটু বিশদ তুলে ধরছি। ১. হাইকোর্টের ওই রায়ের মুখ্যত দুটি দিক আছে। প্রথমত পর্যবেক্ষণ, দ্বিতীয়ত অপারেটিভ। পর্যবেক্ষণ একেবারে ফেলনা নয়, এ থেকেও নৈতিক বৈধতার সূত্র চাইলে বের করা সম্ভব ও কাঙ্ক্ষিত। এটা কর্তৃপক্ষের ওপর বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু অপারেটিভ অংশ নির্দেশনামূলক, যা মানা বাধ্যতামূলক। বিচারপতি গোলাম রাব্বানী যথার্থই উল্লেখ করেছেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত যাবতীয় কার্যক্রমকে হাইকোর্ট বেআইনি বলে বাতিল উল্লেখ করেছেন।’ কিন্তু এটুকু বলে থামলে বিভ্রান্তি বাড়বে। কারণ ওই মন্তব্যের অর্থ এই নয় যে, হাইকোর্ট বাস্তবেও তা বাতিল চেয়েছেন। বিষয়টি মোটেই তা নয়। ওই ঘোষণার প্রধানত আইনি, নৈতিক, একাডেমিক ও ঐতিহাসিক মূল্য রয়েছে। তাই বাতিল বলেও আদালত অপারেটিভ অংশে এসে তাকে কন্ডোন বা মার্জনা করেছেন। আদালতের নির্দেশনায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, ওই সময়ে যা ঘটেছে তা ‘পাস্ট এন্ড ক্লোজড’ হিসেবে মার্জনা করা হলো। আর তা আইনি বলে নয় বরং প্রজাতন্ত্রের স্বার্থে, সমাজে যাতে বিভ্রান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়। আবার ওই একই বাক্যে লেখা আছে, যদিও তা চিরকালের জন্য অবৈধ ও বাতিল হিসেবেই গণ্য হবে। এখন যদি বিচ্ছিন্নভাবে কেউ শুধু একটি বাক্য থেকে কতিপয় শব্দ বিচ্ছিন্ন করে ব্যাখ্যা করতে সচেষ্ট হন, তাহলে তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।
২.
সুতরাং হাইকোর্টের রায়ের ফলে ‘পঞ্চম সংশোধনী’ বাতিল হয়ে যায়নি; বরং ২৪২ পৃষ্ঠার রায়টি খুঁটিয়ে পড়ে ওই মার্জনা দেখে প্রথমে আমার মনে একটা অনুশোচনা জাগে। ভাবলাম, পঞ্চম সংশোধনীকে বেআইনি ও বাতিল বলে আবার তাকে মার্জনা করা হলো। হাইকোর্ট কেন এভাবে ঢালাও মার্জনা করলেন। কেন পঞ্চম সংশোধনীকে পরোক্ষভাবে বৈধতা দিলেন। কিন্তু পরে দেখলাম, হাইকোর্ট এ বিষয়ে সচেতন ছিলেন। রায়ে স্পষ্ট ইঙ্গিত রেখেছেন, যাতে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বৈধতাদানকারী অন্য যেকোনো আইন বা আদেশের বৈধতা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ভবিষ্যতে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। মার্জনার দোহাই দিয়ে পার না পেতে পারেন। তবে চূড়ান্ত কথা হলো, অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের এই আশঙ্কা ও প্রশ্ন অমূলক যে, ‘পঞ্চম সংশোধনী যদি বাতিল ঘোষিত হয়, তাহলেও তার আগের চারটি এবং পরের সংশোধনীগুলোর কী হবে?’ এর জবাব রায়ে দ্ব্যর্থহীন ও নির্দিষ্ট। আসলে এ রকম প্রশ্ন তোলারই কোনো সুযোগ নেই।
৩.
হাইকোর্ট নির্দিষ্টভাবে চতুর্থ সংশোধনী ও পঞ্চম সংশোধনীর কিছু বিষয় গ্রহণ ও বর্জনে সচেষ্ট হয়েছেন। এটি বুঝতে হলে রায়ের ২১ নম্বর নির্দেশনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ থেকে দেখা যায়, মার্জনা কোথায় কতটুকু প্রযোজ্য হবে, তা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। বলা হয়েছে, চতুর্থ সংশোধনীর যে বিধানাবলি পঞ্চম সংশোধনীতে বিলোপ করা হয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে আদালতের মার্জনা প্রযোজ্য হবে। এখানে কথাটা দৃশ্যত অস্পষ্ট ও ব্যাখ্যার দাবি রাখে। একটা বিভ্রম ও খটকা তৈরি করে। কিন্তু একে বিচ্ছিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে না। কারণ, রায়ে ওই বাক্যে এক শ্বাসে নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে, ‘পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বাহাত্তরের সংবিধানের প্রস্তাবনা ও আটটি অনুচ্ছেদে যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে তাকে মার্জনা করা হবে না। বাহাত্তরের সংবিধানের প্রস্তাবনা, অনুচ্ছেদ ৬, ৮, ৯, ১০, ১২, ২৫, ৩৮ ও ১৪২ বহাল থাকবে। এরপরের বাক্যে হাইকোর্ট এমনকি নির্দিষ্টভাবে বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমের জারি করা একটি সামরিক ফরমানকেও বৈধ বলে ঘোষণা করেন। এটি হলো সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ। এখানে একটা মজার গল্প আছে। মূল সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদে লেখা ছিল, প্রধান বিচারপতির পরামর্শে বিচারপতিরা নিয়োগ পাবেন। চতুর্থ সংশোধনীতে তা ছাঁটা হলো। বিচারপতি সায়েম ফরমান দিয়ে প্রধান বিচারপতি কথাটি ফিরিয়ে এনে বিচার বিভাগের আব্রু ঢাকলেন। জেনারেল জিয়া পরে আরেকটি ফরমান দিয়ে তাঁর জুতার মাপে ৯৫ অনুচ্ছেদ তৈরি করে নেন। প্রধান বিচারপতির পরামর্শ কথাটি দ্বিতীয়বার ছেঁটে ফেলেন। আর অধস্তন আদালত নিয়ন্ত্রণে চতুর্থতে হরণ করা ১১৬ অনুচ্ছেদের বিকৃতিও তিনি অটুট রাখেন। জিয়ার সেই যে জুতার মাপ বাংলাদেশের পরবর্তী প্রত্যেক শাসকের মাপমতো হয়েছে। তাই আমরা যখন সুপ্রিম কোর্টের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় পঞ্চম সংশোধনীর মাজেজা কিংবা অন্যদের জবানিতে সামরিক শাসকদের প্রতি একতরফা দায় চাপাতে দেখি, তা অর্ধসত্য ও স্ববিরোধী মনে হয়।
৪.
এই লেখা শেষ করার পর জানলাম, আপিল বিভাগ ৩ জানুয়ারি সরকারের এর আগের স্থগিত আবেদন রদ করেছেন। বিএনপি সরকার কতিপয় অতি উত্সাহীর পরামর্শে গেল গেল রব তুলেছিল। দ্রুত আপিল করেছিল। তখন হাইকোর্টের ওই রায় স্থগিত করা হয়। গতকাল তা রদ হলো। কারণ, বর্তমান সরকার বিএনপি সরকারের স্থগিত আবেদন প্রত্যাহারের আবেদন করেছিল। ১৮ জানুয়ারি ইন্টারভেনর হিসেবে বিএনপির লিভ টু আপিলের শুনানি হবে। আপাতত হাইকোর্টের রায় পেন্ডিং চ্যালেঞ্জ আবেদন সাপেক্ষে সমুন্নত।
এখন দরকার সঠিক তথ্য ও ব্যাখ্যার প্রেক্ষাপটে গণমাধ্যমে বিতর্ক চলমান রাখা। এ জন্য সর্বাগ্রে বাহাত্তরের সংবিধানে ফেরা কিংবা পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের মতো ঢালাও মন্তব্য পরিহার করা। কারণ, ওই দুটি উত্তেজক রাজনৈতিক পরিভাষার বাস্তব ব্যবহার ইতিমধ্যেই অচল ও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। বাহাত্তরের সংবিধানে পুরোপুরি ফেরা যাবে না। পঞ্চম সংশোধনীও পুরোপুরি বাতিল করা যাবে না। সুতরাং অহেতুক উত্তেজনা না ছড়ানোই প্রত্যাশিত। তর্ক হোক অনুচ্ছেদভিত্তিক।
মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক
mrkhanbd@gmail.com
সংবিধানের কোনো গণমুখী সংশোধন, যার লক্ষ্য প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা নয়, তেমন ধরনের কোনো সংশোধন-উদ্যোগ শাসকগোষ্ঠীর চিন্তাভাবনায় আছে, সে বিষয়ে আমার সন্দেহ-সংশয়ে এখনো চিড় ধরেনি। কিন্তু বড় ব্যথিত হই যে, বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের দেওয়া রায়ের ভুল ব্যাখ্যা চলছে। তিনি রায়ে কোথায় কতটুকু কীভাবে কী অর্থে বলেছেন, তা অনেকের কাছেই স্পষ্ট নয়। সে কারণে বাহাত্তরের সংবিধান নিয়ে সৃষ্ট বিতর্ক কোনো গঠনমূলক দিকে না গিয়ে চতুর্থ ও পঞ্চম সংশোধনীকেন্দ্রিক পুরোনো কাসুন্দিতে তিক্ত হচ্ছে। কিছু রাজনীতিক ও তাঁদের মিত্ররা অনবরত পানি ঘোলা করে চলেছেন। সংবিধান সংশোধন দূর থাক, অপপ্রচার ঠেকানো কিংবা বিতর্ককে সঠিক ধারায় নেওয়াটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে একটা চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের জাতীয় বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা এভাবে বারবার ফাঁদে পড়ে। আটকা পড়ে খাবি খায় সংকীর্ণতা ও অদূরদর্শিতার বেড়াজালে।
অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ লিখেছেন, ‘পঞ্চম সংশোধনী যদি সত্যি বাতিল হয়ে যায়, তাহলেই কি বাহাত্তরের সংবিধান ফিরে পাওয়া যাবে? আর ফিরে পেলেই কি সব অভিযোগের অবসান ঘটবে?’ তাঁর এই বক্তব্য যথার্থ যে, ‘পঞ্চম সংশোধনীতে কিছু কাটাছেঁড়া হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কিছু কাটাছেঁড়ার মেরামতও হয়েছে। বহুদলীয় গণতন্ত্রের ভিত্তি, গণতন্ত্র্রের অন্যান্য অনুষঙ্গ, যেমন—সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার সংরক্ষণে সুপ্রিম কোর্টের কর্তৃত্ব এবং স্থানীয় শাসনের পুনঃপ্রবর্তন পঞ্চম সংশোধনীর অবদান। কিন্তু মনে হতে পারে, হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়ন করা হলে পঞ্চম সংশোধনীর এই অর্জনগুলো উল্টে যাবে।’ তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘যাঁরা ’৭২-এর সংবিধানে ফিরে যেতে চান, তাঁদের মনন-চিন্তন কি সেই বাহাত্তরেই আটকে রয়েছে? নাকি তা করতেই হবে—এমন অনমনীয় জেদ? আর ’৭২-এ ফিরে যেতে চাইলে যাবেন কীভাবে?’ এ রকম জ্বলন্ত ও তীক্ষ প্রশ্নের সঙ্গে এবার মিলিয়ে দেখব বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানীর মন্তব্য। তিনি বিচারপতি খায়রুল হকের ওই রায় থেকে উদ্ধৃতি দিচ্ছেন এই বলে যে, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল সময়ের ঘোষণা, সামরিক আইন প্রজ্ঞাপন ও সামরিক আইন আদেশগুলো বেআইনি, বাতিল ও ত্রুটিযুক্ত এবং সেহেতু ‘সংবিধান (পঞ্চম সংশোধন) আইন, ১৯৭৯-ও বেআইনি ও সরাসরি বাতিল এবং তার ভিত্তিতে প্রদত্ত সকল প্রজ্ঞাপন ও আদেশসমূহ বেআইনি ও বাতিল ঘোষণা করা হলো।’
অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের লেখায় এরপর আমরা আরও দেখি, ‘আইনমন্ত্রী অবশ্য বলে ফেলেছেন, পঞ্চম সংশোধনী প্রসঙ্গে যদি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন, তবে ’৭২-এর সংবিধানে ফিরে যেতে কোনো সংশোধনীর প্রয়োজন হবে না। স্বাভাবিকভাবেই আমরা ’৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাব।’
আইনমন্ত্রীর এই খণ্ডিত বক্তব্য ইতিমধ্যেই পত্রপত্রিকায় গুরুত্বের সঙ্গে ছাপা হয়েছে এবং হয়তো তা ভবিষ্যতে আরও প্রচার পাবে। বিস্ময়ে আমি স্তম্ভিত হই অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের নির্দিষ্ট প্রশ্নে। তাঁর মনে প্রশ্ন: ‘আইনমন্ত্রীর ওই বক্তব্য কি গ্রহণযোগ্য? পঞ্চম সংশোধনী যদি বাতিল ঘোষিত হয়, তাহলেও তার আগের চারটি এবং পরের সংশোধনীগুলোর কী হবে? কোনো কথা বলা যত সহজ, তা বাস্তবায়ন তত সহজ নয়।’
আরটিভিতে কিছুদিন আগে প্রচারিত এক আলোচনায় তোফায়েল আহমেদ ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের সঙ্গে অংশ নিয়েছিলাম। মওদুদ আহমদের সামনেই উপস্থাপক বললেন, তিনি বলছেন, পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হলে পরবর্তী সব সরকার অবৈধ হয়ে পড়বে। একদলীয় শাসন বহাল হবে। আপনি কীভাবে দেখছেন?
বাহাত্তরের সংবিধানে ফেরা নিয়ে আমাদের বর্তমান জাতীয় বিতর্ক যা সংসদে নয়, গণমাধ্যম ঘিরে তরঙ্গায়িত কখনো উত্তাল ঊর্মিমুখর হয়ে উঠছে, তার স্বরূপটা মোটামুটি আমরা দেখে নিলাম। অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের লেখায় আমরা এর ক্ষতিকর দিকের বিস্তারিত ব্যাখ্যা পেলাম। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের ব্যাখ্যা তো সবচেয়ে আকর্ষণীয়। পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হলে জিয়াউর রহমান দ্বারা প্রতিষ্ঠিত বহুদলীয় গণতন্ত্র, স্থানীয় শাসন ও সুপ্রিম কোর্টের কর্তৃত্বের বিলোপ ঘটবে। এ ধরনের বক্তব্য জনগণের মধ্যে হয়তো অতটা ধাঁধা সৃষ্টি করত পারত না, যদি বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানীর মতো আইনবিদেরা রায়ের কার্যকারণ সম্পর্কে মন্তব্যে সাবধানী হতেন। বিচারপতি রাব্বানীর লেখায় পাঠকেরা দেখেছেন, ‘পঞ্চম সংশোধনী সরাসরি বেআইনি ও বাতিল করা হয়েছে।’ এরপর পাঠকেরা যদি দুয়ে দুয়ে চার মিলিয়ে ভাবতে বসেন যে, মওদুদ আহমদ ও এমাজউদ্দীন আহমদরা তো ঠিকই বলছেন, তাহলে তাঁদের দোষ দেওয়া যায় না। কিন্তু উল্লিখিত বক্তব্য কোনোটি খণ্ডিত, কোনোটি অর্ধ সত্য, কোনোটি আংশিক সত্য এবং কোনোটি মিশ্রিত। কোনোটি ডাহা মিথ্যা কিংবা কারও অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাঁর মন্তব্য মিথ্যার মতো করেই পাঠকের মনে গেঁথে যেতে পারে।
আরটিভির ওই আলোচনায় যে জবাব দিয়েছিলাম, তাই একটু বিশদ তুলে ধরছি। ১. হাইকোর্টের ওই রায়ের মুখ্যত দুটি দিক আছে। প্রথমত পর্যবেক্ষণ, দ্বিতীয়ত অপারেটিভ। পর্যবেক্ষণ একেবারে ফেলনা নয়, এ থেকেও নৈতিক বৈধতার সূত্র চাইলে বের করা সম্ভব ও কাঙ্ক্ষিত। এটা কর্তৃপক্ষের ওপর বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু অপারেটিভ অংশ নির্দেশনামূলক, যা মানা বাধ্যতামূলক। বিচারপতি গোলাম রাব্বানী যথার্থই উল্লেখ করেছেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত যাবতীয় কার্যক্রমকে হাইকোর্ট বেআইনি বলে বাতিল উল্লেখ করেছেন।’ কিন্তু এটুকু বলে থামলে বিভ্রান্তি বাড়বে। কারণ ওই মন্তব্যের অর্থ এই নয় যে, হাইকোর্ট বাস্তবেও তা বাতিল চেয়েছেন। বিষয়টি মোটেই তা নয়। ওই ঘোষণার প্রধানত আইনি, নৈতিক, একাডেমিক ও ঐতিহাসিক মূল্য রয়েছে। তাই বাতিল বলেও আদালত অপারেটিভ অংশে এসে তাকে কন্ডোন বা মার্জনা করেছেন। আদালতের নির্দেশনায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, ওই সময়ে যা ঘটেছে তা ‘পাস্ট এন্ড ক্লোজড’ হিসেবে মার্জনা করা হলো। আর তা আইনি বলে নয় বরং প্রজাতন্ত্রের স্বার্থে, সমাজে যাতে বিভ্রান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়। আবার ওই একই বাক্যে লেখা আছে, যদিও তা চিরকালের জন্য অবৈধ ও বাতিল হিসেবেই গণ্য হবে। এখন যদি বিচ্ছিন্নভাবে কেউ শুধু একটি বাক্য থেকে কতিপয় শব্দ বিচ্ছিন্ন করে ব্যাখ্যা করতে সচেষ্ট হন, তাহলে তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।
২.
সুতরাং হাইকোর্টের রায়ের ফলে ‘পঞ্চম সংশোধনী’ বাতিল হয়ে যায়নি; বরং ২৪২ পৃষ্ঠার রায়টি খুঁটিয়ে পড়ে ওই মার্জনা দেখে প্রথমে আমার মনে একটা অনুশোচনা জাগে। ভাবলাম, পঞ্চম সংশোধনীকে বেআইনি ও বাতিল বলে আবার তাকে মার্জনা করা হলো। হাইকোর্ট কেন এভাবে ঢালাও মার্জনা করলেন। কেন পঞ্চম সংশোধনীকে পরোক্ষভাবে বৈধতা দিলেন। কিন্তু পরে দেখলাম, হাইকোর্ট এ বিষয়ে সচেতন ছিলেন। রায়ে স্পষ্ট ইঙ্গিত রেখেছেন, যাতে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বৈধতাদানকারী অন্য যেকোনো আইন বা আদেশের বৈধতা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ভবিষ্যতে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। মার্জনার দোহাই দিয়ে পার না পেতে পারেন। তবে চূড়ান্ত কথা হলো, অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের এই আশঙ্কা ও প্রশ্ন অমূলক যে, ‘পঞ্চম সংশোধনী যদি বাতিল ঘোষিত হয়, তাহলেও তার আগের চারটি এবং পরের সংশোধনীগুলোর কী হবে?’ এর জবাব রায়ে দ্ব্যর্থহীন ও নির্দিষ্ট। আসলে এ রকম প্রশ্ন তোলারই কোনো সুযোগ নেই।
৩.
হাইকোর্ট নির্দিষ্টভাবে চতুর্থ সংশোধনী ও পঞ্চম সংশোধনীর কিছু বিষয় গ্রহণ ও বর্জনে সচেষ্ট হয়েছেন। এটি বুঝতে হলে রায়ের ২১ নম্বর নির্দেশনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ থেকে দেখা যায়, মার্জনা কোথায় কতটুকু প্রযোজ্য হবে, তা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। বলা হয়েছে, চতুর্থ সংশোধনীর যে বিধানাবলি পঞ্চম সংশোধনীতে বিলোপ করা হয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে আদালতের মার্জনা প্রযোজ্য হবে। এখানে কথাটা দৃশ্যত অস্পষ্ট ও ব্যাখ্যার দাবি রাখে। একটা বিভ্রম ও খটকা তৈরি করে। কিন্তু একে বিচ্ছিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে না। কারণ, রায়ে ওই বাক্যে এক শ্বাসে নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে, ‘পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বাহাত্তরের সংবিধানের প্রস্তাবনা ও আটটি অনুচ্ছেদে যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে তাকে মার্জনা করা হবে না। বাহাত্তরের সংবিধানের প্রস্তাবনা, অনুচ্ছেদ ৬, ৮, ৯, ১০, ১২, ২৫, ৩৮ ও ১৪২ বহাল থাকবে। এরপরের বাক্যে হাইকোর্ট এমনকি নির্দিষ্টভাবে বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমের জারি করা একটি সামরিক ফরমানকেও বৈধ বলে ঘোষণা করেন। এটি হলো সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ। এখানে একটা মজার গল্প আছে। মূল সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদে লেখা ছিল, প্রধান বিচারপতির পরামর্শে বিচারপতিরা নিয়োগ পাবেন। চতুর্থ সংশোধনীতে তা ছাঁটা হলো। বিচারপতি সায়েম ফরমান দিয়ে প্রধান বিচারপতি কথাটি ফিরিয়ে এনে বিচার বিভাগের আব্রু ঢাকলেন। জেনারেল জিয়া পরে আরেকটি ফরমান দিয়ে তাঁর জুতার মাপে ৯৫ অনুচ্ছেদ তৈরি করে নেন। প্রধান বিচারপতির পরামর্শ কথাটি দ্বিতীয়বার ছেঁটে ফেলেন। আর অধস্তন আদালত নিয়ন্ত্রণে চতুর্থতে হরণ করা ১১৬ অনুচ্ছেদের বিকৃতিও তিনি অটুট রাখেন। জিয়ার সেই যে জুতার মাপ বাংলাদেশের পরবর্তী প্রত্যেক শাসকের মাপমতো হয়েছে। তাই আমরা যখন সুপ্রিম কোর্টের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় পঞ্চম সংশোধনীর মাজেজা কিংবা অন্যদের জবানিতে সামরিক শাসকদের প্রতি একতরফা দায় চাপাতে দেখি, তা অর্ধসত্য ও স্ববিরোধী মনে হয়।
৪.
এই লেখা শেষ করার পর জানলাম, আপিল বিভাগ ৩ জানুয়ারি সরকারের এর আগের স্থগিত আবেদন রদ করেছেন। বিএনপি সরকার কতিপয় অতি উত্সাহীর পরামর্শে গেল গেল রব তুলেছিল। দ্রুত আপিল করেছিল। তখন হাইকোর্টের ওই রায় স্থগিত করা হয়। গতকাল তা রদ হলো। কারণ, বর্তমান সরকার বিএনপি সরকারের স্থগিত আবেদন প্রত্যাহারের আবেদন করেছিল। ১৮ জানুয়ারি ইন্টারভেনর হিসেবে বিএনপির লিভ টু আপিলের শুনানি হবে। আপাতত হাইকোর্টের রায় পেন্ডিং চ্যালেঞ্জ আবেদন সাপেক্ষে সমুন্নত।
এখন দরকার সঠিক তথ্য ও ব্যাখ্যার প্রেক্ষাপটে গণমাধ্যমে বিতর্ক চলমান রাখা। এ জন্য সর্বাগ্রে বাহাত্তরের সংবিধানে ফেরা কিংবা পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের মতো ঢালাও মন্তব্য পরিহার করা। কারণ, ওই দুটি উত্তেজক রাজনৈতিক পরিভাষার বাস্তব ব্যবহার ইতিমধ্যেই অচল ও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। বাহাত্তরের সংবিধানে পুরোপুরি ফেরা যাবে না। পঞ্চম সংশোধনীও পুরোপুরি বাতিল করা যাবে না। সুতরাং অহেতুক উত্তেজনা না ছড়ানোই প্রত্যাশিত। তর্ক হোক অনুচ্ছেদভিত্তিক।
মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক
mrkhanbd@gmail.com
No comments