মুছাপুর রেগুলেটর-বিপর্যয়ের দায় কার?

পঞ্চাশ ও ষাট থেকে গত কয়েক দশকে দেশের বিভিন্ন স্থানে জোয়ার-ভাটা ও নদ-নদীর প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে স্থাপিত অবকাঠামো বা রেগুলেটরগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হলেও দু'একটি ব্যতিক্রম রয়েছে। এর মধ্যে ১৯৫৮ সালে ডাকাতিয়া ও ছোট ফেনী নদীর মোহনায় স্থাপিত কাজীরহাট রেগুলেটরটি উদাহরণ হয়ে আছে।


যশোরের ভবদহসহ উপকূলীয় বিভিন্ন স্থানে রেগুলেটর ও পোল্ডার যেখানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করেছে; এটি সেখানে ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লার কমবেশি এক লাখ হেক্টর জমির সুরক্ষা কবচ হিসেবে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছিল। চার দশক ধরে জলোচ্ছ্বাস ও লোনা পানি ঠেকিয়ে এবং উজানের অংশে মিঠা পানির ভাণ্ডার তৈরি করে ওই অঞ্চলের কৃষিক্ষেত্রে ইতিবাচক অবদান রেখে চলছিল। কিন্তু আমাদের দেশের ভূতেরা বেশিদিন কাউকে সুখে থাকতে দেয় না। কিল শুরু করে। যে কারণে গত পাঁচ বছর ধরে কাজীরহাট রেগুলেটরটি ধারাবাহিক অবহেলা ও দায়িত্বহীনতাপ্রসূত বিপর্যয়ের উদাহরণে পরিণত হয়েছে। মঙ্গলবার সমকালের লোকালয় পাতায় প্রকাশিত প্রতিবেদনসূত্রে জানা যাচ্ছে, ২০০০ সালের দিকে ওই অবকাঠামোতে ত্রুটি দেখা দিতে থাকে এবং ২০০৫ সালে এর পাঁচটি গেট হঠাৎ ধসে পড়ে। তড়িঘড়ি সংস্কার করতে গিয়ে রেগুলেটরটি কার্যত অচল হয়ে যায়। প্রশ্ন উঠতে পারে, বিপর্যয় ঘটার আগেই সংস্কার করা হয়নি কেন? আগেই ব্যবস্থা নিলে নিঃসন্দেহে এমন পরিণতি বরণ করতে হতো না। কিন্তু একটি সচল সেচ ব্যবস্থার বিপর্যয়ের ইতিহাসের এখানেই শেষ নয়। সমকালের প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, কাজীরহাট রেগুলেটরের বিকল্প হিসেবে ওই বছরই নদীটির মোহনার দিকে মুছাপুরে ১১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আরেকটি প্রকল্প নেওয়া হয়। ক্লোজার ড্যাম নির্মাণ না হলেও পরের বছর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খুব সম্ভবত নির্বাচনী সুবিধা পেতে রেগুলেটরটি উদ্বোধন করেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই নির্মাণকাজ উদ্বোধনের পাঁচ বছর পরও শেষ হয়নি। আর এর মাশুল গুনছেন ওই এলাকার চাষিরা। একদিকে ধান চাষাবাদ সম্ভব হচ্ছে না, অন্যদিকে জোয়ারের লোনা পানি ও জলোচ্ছ্বাস ঢুকে পড়ছে। এই অবহেলা ও বিপর্যয়ের দায় কার, খতিয়ে দেখার আহ্বান জানাই আমরা।
 

No comments

Powered by Blogger.