পবিত্র কোরআনের আলো-প্রতিপক্ষের দাবি অনুযায়ী ফরমায়েশি মুজিজা নাজিলে অস্বীকৃতি
২০. ওয়া ইয়াক্বূলূনা লাওলা উনযিলা আ'লাইহি আ-য়াতুম্ মির্ রাবি্বহি; ফাক্বুল ইন্নামাল গাইবু লিল্লা-হি ফানতাযিরূ; ইন্নী মাআ'কুম্ মিনাল মুনতাযিরীন। ২১. ওয়া ইয- আযাক্বনান না-ছা রাহ্মাতাম্ মিম্ বা'দি দ্বার্রা-আ মাচ্ছাতহুম ইযা লাহুম্ মাকরুন ফী আয়া-তিনা-; ক্বুলিল্লা-হু আছ্রাউ' মাক্রা-; ইন্না রুছুলানা ইয়াক্তুবূনা মা তাম্কুরূন।
২২. হুয়াল্লাযী ইউছায়্যিরুকুম ফিল বার্রি ওয়ালবাহ্রি; হাত্তা ইযা কুনতুম ফিল ফুলকি্; ওয়া জারাইনা বিহিম বিরীহিন ত্বায়্যিবাতিন ওয়া ফারিহূ বিহা জা-আতহা- রীহুন আ'-সিফুন ওয়া জা-আহুমুল মাওজু মিন কুলি্ল মাকা-নিন ওয়া যান্নূ আন্নাহুম উহীত্বা বিহিম দাআ'উল্লা-হা মুখ্লিসীনা লাহু দ্দীন; লায়িন আনজাইতানা- মিন হা-যিহী লানাকূনান্না মিনাশ্ শা-কিরীন। [সুরা : ইউনুস, আয়াত : ২০-২২]
অনুবাদ : ২০. তারা বলে, এ নবীর প্রতি তার প্রভুর পক্ষ থেকে কোনো নিদর্শন (মুজিজা) কেন অবতীর্ণ হলো না? সুতরাং (হে নবী, এর উত্তরে) আপনি বলে দিন, বিমূর্ত (অদৃশ্য) বিষয়গুলো তো কেবল আল্লাহরই এখতিয়ারে। সুতরাং তোমরা অপেক্ষা করো, আমিও তোমাদের সঙ্গে অপেক্ষা করছি। (অর্থাৎ এটা ইতিবাচক আশ্বাস নয়; বরং নেতিবাচক বিদ্রূপ)।
২১. (মানুষের একটা প্রবণতা হলো) তাদের কোনো দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করার পর আমি যখন রহমত আশ্বাদন করাই, তখন সহসাই তারা আমার নিদর্শনগুলোর ব্যাপারে চালাকি শুরু করে দেয়। (হে নবী!) আপনি বলে দিন, চালবাজিতে আল্লাহ পিছিয়ে থাকেন না (অর্থাৎ তাঁকে চালবাজিতে ঠকানো সম্ভব নয়)। নিশ্চয়ই আমার ফিরিশতারা তোমাদের সব চালবাজি লিপিবদ্ধ করছে।
২২. সেই আল্লাহই তোমাদের ভ্রমণ করান স্থলে এবং সাগরেও। এভাবে তোমরা যখন নৌকায় সওয়ার হও আর নৌকাগুলো মানুষকে নিয়ে অনুকূল বাতাসে চলতে থাকে, তখন আরোহীরা এতে ভীষণ আনন্দিত হয়। হঠাৎ এক সময় তারা তীব্র বায়ুপ্রবাহের কবলে পড়ে যায়; সব দিক থেকে তাদের দিকে প্রবল ঢেউ ছুটে আসে, তারা ভাবতে থাকে যে তারা (বিপজ্জনক) ঘূর্ণিঝড়ে পড়ে গেছে। তখন তারা খাঁটি মনে কেবল আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী হয়ে শুধু তাঁকেই ডাকতে থাকে। (আল্লাহকে ডাকতে ডাকতে তারা বলে), তুমি যদি আমাদের (এই বিপদ থেকে) উদ্ধার কমরা, তবে আমরা অবশ্যই তোমার কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হবো।
ব্যাখ্যা : ২০ নম্বর আয়াতে আয়াত বা নিদর্শন শব্দটি দ্বারা মুজিজা বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা তাঁর সব নবী-রাসুলকেই মুজিজা দান করেছেন। প্রাচীনকালের কোনো কোনো নবীকে অনেক অলৌকিক মুজিজা দান করেছিলেন। আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কেও আল্লাহ অনেক মুজিজা দান করেছেন। তবে তাঁকে দান করা মুজিজাগুলো অনেক সূক্ষ্ম ও উচ্চতর প্রজ্ঞাসম্পন্ন। ভাষা ও সংস্কৃতির উৎকর্ষের এ যুগে নিরক্ষর নবীর ওপর কোরআন নাজিলই শ্রেষ্ঠ মুজিজা। এরপরও মক্কার কাফিররা রাসুল (সা.)-এর কাছে তাদের খেয়াল-খুশিমতো মুজিজা দাবি করত। নবুয়ত প্রমাণের জন্য মুজিজা প্রকাশ করা প্রয়োজন হতো, কিন্তু কাফিরদের চালবাজির খপ্পরে পড়ে মুজিজা দেখানোর কোনো মানে নেই। বিশেষত যেহেতু জানা ছিল, মুজিজা দাবি করার মধ্যে কোনো সরলতা ছিল না, বরং ছিল কুটিলতা। এই পরিপ্রেক্ষিতেই মুজিজার দাবি নাকচ করে দিয়ে এই আয়াত নাজিল হয়েছে। এখানে সংক্ষেপে একটা কৌশলগত জবাব দেওয়া হয়েছে এবং একটা সূক্ষ্ম বিদ্রূপও করা হয়েছে।
২১ ও ২২ নম্বর আয়াতে মানুষের একটা মন্দ প্রবণতার কথা উল্লেখ করে এ জন্য ভর্ৎসনা করা হয়েছে এবং এই প্রবণতা পরিত্যাগ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। প্রবণতাটা হলো, মানুষ যখন বিপদে পড়ে তখন আল্লাহকে খুব ডাকে, আবার যখন আল্লাহর রহমতে বিপদ দূর হয়ে যায়, তখন তার অবাধ্যতায় নানা ছল-চাতুরি শুরু করে দেয়। ২২ নম্বর আয়াতে মানুষের এই প্রবণতার একটা চমৎকার উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। ২১ নম্বর আয়াতে আল্লাহর জন্য 'মকর' বা চালবাজি শব্দটির যে ব্যবহার হয়েছে, এর অর্থ: চাল-চালাকির প্রতিউত্তর প্রদানে আল্লাহ সম্পূর্ণ সক্ষম।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments