ইয়াবা পাচার-মারণ নেশা থেকে বাঁচান
র্যাবের অভিযানে ইয়াবার বৃহত্তর একটি চালান আটক হওয়ার ঘটনা আশ্বস্ত হওয়ার মতো সংবাদ। ২ লাখ ৭০ হাজার ইয়াবার বিশাল একটি চালান উদ্ধার করে র্যাব বিপুল প্রশংসা অর্জন করেছে। এই দফা বিপুল মাদকের হাত থেকে দেশ রক্ষা পেয়েছে সত্য; কিন্তু একই সঙ্গে ঘটনাটি মাদক নিয়ে নাগরিকদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
র্যাবের হাতে ধৃত ব্যক্তিরা স্বীকার করেছেন, এ ধরনের চালান এটিই প্রথম নয়। অভিনব কায়দায় সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে মিয়ানমার থেকে বড় বড় মাদকের চালান আসছে। গত মার্চেও এই চালানের সমপরিমাণ একটি চালান এসেছে। সে চালানের ইয়াবা নিরাপদে পাইকারি বিক্রেতার হাত থেকে খুচরা বিক্রেতাদের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। চালানের ঘনত্ব ও পরিমাণ বলে দেয় দেশে ইয়াবার বিপুল চাহিদা তৈরি হয়েছে। বিশেষত তরুণদের মধ্যে এই মাদক আশঙ্কাজনকভাবে বিস্তৃত হয়েছে। ইয়াবা মাদকটির প্রচলনের শুরু থেকে এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জোরদার অভিযানও শুরু হয়েছিল। ইয়াবার দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছিল। সরকারের তৎপরতা, গণমাধ্যমের প্রভাবে ইয়াবার প্রকোপ কিছুটা কমে এসেছিল বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু এখন এ ধারণা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, ইয়াবার ব্যবহার দেশে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। গত মার্চের ৭ তারিখে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক মাদক নিয়ন্ত্রণ কৌশল বিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ভারত ও মিয়ানমার থেকে পাচার হয়ে আসা ইয়াবা ট্যাবলেটসহ অন্যান্য মাদক নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ সরকার। সে প্রতিবেদনে ব্যর্থতার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও সামর্থ্যের অভাবকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। অবশ্য বাংলাদেশ যে প্রচুর মাদকের চালান আটক করেছে সে কথাও প্রতিবেদনে উলি্লখিত হয়েছে। এবারের চালান আটকের বিষয়টিও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হবে বলে আশা করা যায়। বস্তুত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কোন উৎসগুলো থেকে মাদক এ দেশে প্রবেশ করে তা কারও অজানা নয়। কিন্তু মাদক পাচারকারীরা অভিনব পদ্ধতি, কূূটবুদ্ধির মাধ্যমে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে ফাঁকি দেয়। এ জন্য সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে র্যাবের মতো প্রশিক্ষিত বাহিনীগুলোকে উন্নত প্রযুক্তিসহকারে মাদক নিয়ন্ত্রণের বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। দেশে ইয়াবার বিস্তার রোধ করতে হলে উৎসমূলেই একে ঠেকাতে হবে। তবে শুধু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর ওপর দায়িত্ব ছেড়ে দিলেই চলবে না; মাদকের ভয়ঙ্কর নেশা থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে সামাজিকভাবে মাদককে নিরুৎসাহিত করতে হবে। আর এ জন্য মাদকবিরোধী শক্তিশালী প্রচার দরকার। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমেরও অনেক করণীয় আছে। সবচেয়ে বড় কথা, ইয়াবা পাচারের সঙ্গে জড়িত রাঘববোয়ালদের ধরে আইনের হাতে সোপর্দ করতে হবে। এরা যাতে কোনোভাবে আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যেতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আইনের প্রয়োগে কঠোর মনোভাবই কাম্য। অনেক সময়ই দেখা যায়, এ ক্ষেত্রের চুনোপুঁটিরা বিভিন্ন অভিযানে ধরা পড়লেও গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। অভিযান পরিচালিত হতে হবে গডফাদারদের বিরুদ্ধেও। ইয়াবার মূলোৎপাটনই এখন জরুরি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গণমাধ্যমসহ সবার সহযোগিতায় দেশ মাদকের মারণ নেশা থেকে মুক্তি পাক, এটাই এখনকার প্রত্যাশা।
No comments