আদালতের আদেশ পেঁৗছাতে বিলম্ব-নিছক গাফিলতি, নাকি দুর্নীতি?

বরিশাল মহানগরীর আলোচিত মা-মেয়ে জোড়া খুনের মামলার আসামির জামিন বাতিল করে দেওয়া উচ্চতর আদালতের আদেশ সিনিয়র জুডিসিয়াল আদালত থেকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পেঁৗছতে তিন মাস সময় লেগেছে।


অথচ বরিশাল নগরীতে দুটি আদালত ভবন পাশাপাশি অবস্থিত। শনিবার সমকালে 'পাশাপাশি দুই ভবন তবুও আদালতের আদেশ পেঁৗছল ৩ মাস পর' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আদালতের আদেশ পেঁৗছানোর বিলম্বের কারণ স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়নি। তবে প্রতিবেদনটি পড়ে ধারণা করা যায়, এই বিলম্বের সঙ্গে আসামির জামিনের আয়ু বৃদ্ধির একটা সংযোগ রয়েছে। আর এটা যদি সত্যি হয়, তাহলে এর জন্য মোটা রকমের অর্থের লেনদেন হওয়াটা অসম্ভব নয়। তদুপরি আর দশটা সরকারি দফতরের মতো বিচার বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও যে আমলাতান্ত্রিক লালফিতার দৌরাত্ম্যে আসক্ত সেটা কারও অজানা নয়। হাকিম নড়ে তো হুকুম নড়ে না_ এই আপ্তবাক্যে আস্থা রেখেই বলা যায়, আদালতের হুকুম বাস্তবায়ন নানা রকমের কারসাজির মাধ্যমে বিলম্বিত করা যায়, এমনকি ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করে আদালতের রায়ের উদ্দেশ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করা যায়। এসব সম্পর্কে উচ্চতর আদালত সজাগ থাকলেও প্রশাসনিক জটিলতা, দুর্বলতা ও দুর্নীতিগ্রস্ততার কারণে এর নিরাময় করা সম্ভব হয় না। বরিশাল নগরীর জোড়া খুনের আসামির বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার অকাট্য প্রমাণও রয়েছে। কিন্তু নানা কায়দায় আসামির জামিন বিলম্বিত করে মামলার মেরিট নষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা করাটা বিচিত্র নয়। হত্যা মামলাটি নিঃসন্দেহে স্পর্শকাতর। উচ্চতর আদালত সেটা বুঝে এবং মামলার মেরিট বিবেচনা করে আসামির ইতিপূর্বে দেওয়া জামিন বাতিল করেন। কিন্তু উচ্চতর আদালতের রায়ের কপিটি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পেঁৗছতে বিলম্ব হওয়ায় আসামি তার জামিনকে প্রলম্বিত করার সুযোগ পেয়েছে। কেন পাশাপাশি ভবন হওয়া সত্ত্বেও আদেশটি এক ভবন থেকে আরেক ভবনে যেতে দীর্ঘ সময় লাগল তার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান জরুরি। এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি করা যায়। এরপর তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার স্বার্থেই বিবেচনা করা উচিত।
 

No comments

Powered by Blogger.