ইতি-নেতি-অনেক হতাশার মধ্যে একটি আশার সংবাদ by মাসুদা ভাট্টি
বাংলাদেশ সম্পর্কে ভালো সংবাদ খুব কমই শোনা যায়, বিশেষ করে বিদেশের গণমাধ্যমে। বিগত কয়েক মাস যাবৎ ড. ইউনূস ইস্যুতে বাংলাদেশকে ঘিরে তীব্র নেতিবাচক সংবাদ দিয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যম সয়লাব ছিল। এই নেতিবাচক খবরের ভিড়ে একটি ইতিবাচক সংবাদ হয়তো অনেকেরই চোখ এড়িয়ে গিয়ে থাকবে।
কিন্তু গুরুত্ব এবং দেশের ভবিষ্যৎ পথ নির্ধারণে এই সংবাদটি যে যথেষ্ট পরিমাণে গুরুত্বপূর্ণ_এ ব্যাপারে আশা করি সবাই আমার সঙ্গে একমত হবেন। এর বিশ্লেষণে যাওয়ার আগে খবরটি জানা যাক।
বিশ্ববিখ্যাত ক্রেডিট রেটিং মুডি'স ইনভেস্টরস সার্ভিস গত সোমবার যে রিপোর্টটি প্রকাশ করেছে তাতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে স্থিতিশীল উল্লেখ করে বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে, সে বিষয়ে দৃঢ় মত ব্যক্ত করেছে। দেশের সার্বিক 'ব্যালেন্স অব পেমেন্ট' বা বিওপির ওপর চাপ থাকলেও সার্বিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি যে উল্লেখজনক, সে কথা এই রিপোর্টে খোলাখুলি উল্লেখ করেছে এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দক্ষিণ এশিয়ার পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার চেয়ে শুধু ভালোই নয়, ফিলিপাইনের মতো দেশের সমমানের বলে এতে উল্লেখ করা হয়। দেশের কর-ব্যবস্থা ও অবকাঠামোগত কিছু সংস্কারের ফলে বাংলাদেশ অগ্রগতির এই ধারা অব্যাহত রাখতে পারবে এবং আরো কিছু বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে খুব দ্রুত সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হবে বলেও রিপোর্টে বলা হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, মুডির মতো একটি বিশ্বখ্যাত এবং নিরপেক্ষ সংস্থার এই সার্টিফিকেট বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে কার্যকর হবে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির এই দুরবস্থার কালে বাংলাদেশকে একটি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে দেবে বলে বিশেষজ্ঞরা
মনে করছেন। তবে রিপোর্টটিতে স্পষ্টতই দেশের রাজনৈতিক অবস্থার উন্নতি, গণতন্ত্রায়নের পথ পরিষ্কার এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উত্থান প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট সংকটের কারণে সেখান থেকে বিপুলসংখ্যক শ্রমিকের ফিরে আসা এবং রেমিট্যান্সের ওপর তার প্রভাব পড়ায় স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ছাড়া বিশ্বমন্দার ক্ষতিকারক প্রভাবও বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। কিন্তু দেশের ভেতরকার খাদ্যনিরাপত্তায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি এবং সেই সঙ্গে কয়েকটি নীতিগত সংস্কার প্রক্রিয়ার পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে বাংলাদেশ পর পর দ্বিতীয়বারের মতো অর্থনৈতিকভাবে প্রবৃদ্ধি অর্জনের তালিকাভুক্ত দেশগুলোতে অবস্থান করে নিয়েছে বলে রিপোর্ট থেকে জানা যায়। এমনকি দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এসব নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে কোনো ধরনের প্রভাব ফেলবে না এবং ব্যাংকিং ও সার্বিক অর্থনীতি বাংলাদেশে বিনিয়োগের নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এ ছাড়া শেয়ারবাজারের মতো দেশজ বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানে সরকারের সরাসরি সংযোগ থাকার ফলে পরিস্থিতি যথেষ্ট ইতিবাচক হয়েছে বলে রিপোর্টে বলা হয়। তবে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতকে আরো কার্যকর করা গেলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ দেশগুলোকে (যেমন ভারত) খুব দ্রুত ধরে ফেলতে পারবে বলে রিপোর্টে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে।
একই সময়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ খানা আয় ও ব্যয় নির্ধারণ জরিপের ফলাফল থেকে জানা যায় যে দেশের মানুষের মধ্যে দারিদ্র্য কমেছে এবং সাধারণভাবে আয় বেড়েছে। চূড়ান্ত রিপোর্ট জানা না গেলেও এ রিপোর্ট থেকে জানা যায়, এ বছরই দেশের দারিদ্র্যের হার ৩০ শতাংশ পর্যন্ত নেমে আসতে পারে। ২০০৫ সালে এই হার ছিল ৪০ শতাংশের একটু ওপরে। অর্থাৎ বিগত পাঁচ বছরে দারিদ্র্যের হার প্রায় ১০ শতাংশ কমেছে। সে হিসাবে প্রতিবছর এই হার প্রায় ২ শতাংশ। বিষয়টি নিঃসন্দেহে আনন্দের এবং যথেষ্ট পরিমাণে প্রচারের দাবি রাখে এ কারণে যে নেতিবাচক সংবাদ শুনতে শুনতে আমাদের মনে যে হতাশার জন্ম নেয়, তা থেকে মুক্ত হয়ে নিজেকে এবং সামগ্রিকভাবে সবাইকে সামনের দিকে ইতিবাচক দৃষ্টি নিয়ে তাকানোর জন্য এ রকম সংবাদ যথেষ্ট কার্যকর হতে পারে বলে আমার বিশ্বাস।
বাংলাদেশ সম্ভাবনার দেশ_এ কথা এখন আর কেউ অস্বীকার করে না। এখানে সমস্যার পাহাড় রয়েছে, এ কথাও ঠিক। কিন্তু সমস্যার পাহাড়ে ঝরনার মতো সম্ভাবনার ফল্গুধারাও বিদ্যমান। এখন প্রশ্ন হলো, এই ধারাগুলোকে সঠিকভাবে ব্যবহারের পথ নির্ধারণ এবং সুযোগ হিসেবে সেগুলো কাজে লাগিয়ে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। বিগত দশকে যাঁদেরই একাধিকবার ভারত ভ্রমণের সুযোগ ঘটেছে তাঁরা নিশ্চয়ই একটি বিষয় লক্ষ করেছেন যে ভারতের যেকোনো শহরেই এক বছর আগেও যে অবস্থা দেখে এসেছেন, এক বছর পর পরিস্থিতির সম্পূর্ণ পরিবর্তন লক্ষ করা যাবে। বিশেষ করে অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভারত যে সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে, তা গোটা বিশ্বের জন্যই বিস্ময়কর। বিশ্লেষকদের মতে, এর মূলে অনেক কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো স্থিতিশীল ও জবাবদিহিতামূলক সরকারব্যবস্থা, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যব্যবস্থায় আধুনিক এবং দেশের স্বার্থ অক্ষুণ্ন্ন রেখে পদক্ষেপ গ্রহণ, বিজ্ঞানভিত্তিক ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষায় জনগণকে উৎসাহী করে তোলা ও সুযোগ সৃষ্টি এবং সর্বোপরি নিজেদের ভাগ্যোন্নয়নে ব্যক্তি ও সামষ্টিক_দুয়ের অভূতপূর্ব পরিশ্রম ভারতকে আজ এক বিশিষ্ট স্থান দিয়েছে।
বাংলাদেশের পরিস্থিতিও ভারতের চেয়ে ভিন্নতর হওয়ার কথা নয়, বরং বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রেই ভারতের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। বিশেষ করে ভারতের প্রদেশগুলোর মধ্যে 'কেন্দ্রের বিমাতাসুলভ আচরণের' খেদ, বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাসী ও ভাষাভাষীদের মধ্যে বিরোধ ইত্যাদি বাংলাদেশের চেয়ে সেখানকার পরিস্থিতিকে বরং নাজুকই করে রেখেছে। কারণ বাংলাদেশে সে রকম বড় কোনো সমস্যা নেই। বাংলাদেশের মূল সমস্যা কেবল সুশাসনে, সিদ্ধান্ত গ্রহণে ও বাস্তবায়নে। হয়তো বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করতে পারেন; কিন্তু একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে দেশের সমস্যাকে আমি এভাবেই দেখি। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কোমর সোজা করে দাঁড়াতে না দঁাঁড়াতেই তার ওপর হামলা হয়, নির্বাচনব্যবস্থা ছিনতাই হয় রাজনৈতিক দল, প্রশাসন ও সামরিক বাহিনীর প্রত্যক্ষ অঁাঁতাতে, জনগণ নিজেদের বঞ্চিত বোধ করে এবং সর্বোপরি দুর্নীতির কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে গোটা শাসনব্যবস্থা। কিন্তু এসব নেতিবাচক পরিস্থিতি এড়িয়ে বিগত দুই বছর যখন বাংলাদেশ স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশের তালিকায় নিজেকে রাখতে পেরেছে, সে ক্ষেত্রে সরকারের অনেক সমালোচনা করেও এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, শাসনব্যবস্থায় সরকার খারাপ করছে না, বরং পরিস্থিতি এ রকমও যদি অব্যাহত রাখা যায়, তাহলে বাংলাদেশ বদলে যেতে বাধ্য। দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি ভোট নিয়ে ক্ষমতায় আসা সরকার যে জনগণের আস্থার জায়গাটি বিনষ্ট করবে না, সে ভরসা এখন করা যেতেই পারে।
লেখক : সম্পাদক, একপক্ষ, editor@ekpokkho.com
বিশ্ববিখ্যাত ক্রেডিট রেটিং মুডি'স ইনভেস্টরস সার্ভিস গত সোমবার যে রিপোর্টটি প্রকাশ করেছে তাতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে স্থিতিশীল উল্লেখ করে বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে, সে বিষয়ে দৃঢ় মত ব্যক্ত করেছে। দেশের সার্বিক 'ব্যালেন্স অব পেমেন্ট' বা বিওপির ওপর চাপ থাকলেও সার্বিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি যে উল্লেখজনক, সে কথা এই রিপোর্টে খোলাখুলি উল্লেখ করেছে এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দক্ষিণ এশিয়ার পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার চেয়ে শুধু ভালোই নয়, ফিলিপাইনের মতো দেশের সমমানের বলে এতে উল্লেখ করা হয়। দেশের কর-ব্যবস্থা ও অবকাঠামোগত কিছু সংস্কারের ফলে বাংলাদেশ অগ্রগতির এই ধারা অব্যাহত রাখতে পারবে এবং আরো কিছু বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে খুব দ্রুত সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হবে বলেও রিপোর্টে বলা হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, মুডির মতো একটি বিশ্বখ্যাত এবং নিরপেক্ষ সংস্থার এই সার্টিফিকেট বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে কার্যকর হবে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির এই দুরবস্থার কালে বাংলাদেশকে একটি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে দেবে বলে বিশেষজ্ঞরা
মনে করছেন। তবে রিপোর্টটিতে স্পষ্টতই দেশের রাজনৈতিক অবস্থার উন্নতি, গণতন্ত্রায়নের পথ পরিষ্কার এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উত্থান প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট সংকটের কারণে সেখান থেকে বিপুলসংখ্যক শ্রমিকের ফিরে আসা এবং রেমিট্যান্সের ওপর তার প্রভাব পড়ায় স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ছাড়া বিশ্বমন্দার ক্ষতিকারক প্রভাবও বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। কিন্তু দেশের ভেতরকার খাদ্যনিরাপত্তায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি এবং সেই সঙ্গে কয়েকটি নীতিগত সংস্কার প্রক্রিয়ার পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে বাংলাদেশ পর পর দ্বিতীয়বারের মতো অর্থনৈতিকভাবে প্রবৃদ্ধি অর্জনের তালিকাভুক্ত দেশগুলোতে অবস্থান করে নিয়েছে বলে রিপোর্ট থেকে জানা যায়। এমনকি দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এসব নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে কোনো ধরনের প্রভাব ফেলবে না এবং ব্যাংকিং ও সার্বিক অর্থনীতি বাংলাদেশে বিনিয়োগের নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এ ছাড়া শেয়ারবাজারের মতো দেশজ বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানে সরকারের সরাসরি সংযোগ থাকার ফলে পরিস্থিতি যথেষ্ট ইতিবাচক হয়েছে বলে রিপোর্টে বলা হয়। তবে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতকে আরো কার্যকর করা গেলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ দেশগুলোকে (যেমন ভারত) খুব দ্রুত ধরে ফেলতে পারবে বলে রিপোর্টে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে।
একই সময়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ খানা আয় ও ব্যয় নির্ধারণ জরিপের ফলাফল থেকে জানা যায় যে দেশের মানুষের মধ্যে দারিদ্র্য কমেছে এবং সাধারণভাবে আয় বেড়েছে। চূড়ান্ত রিপোর্ট জানা না গেলেও এ রিপোর্ট থেকে জানা যায়, এ বছরই দেশের দারিদ্র্যের হার ৩০ শতাংশ পর্যন্ত নেমে আসতে পারে। ২০০৫ সালে এই হার ছিল ৪০ শতাংশের একটু ওপরে। অর্থাৎ বিগত পাঁচ বছরে দারিদ্র্যের হার প্রায় ১০ শতাংশ কমেছে। সে হিসাবে প্রতিবছর এই হার প্রায় ২ শতাংশ। বিষয়টি নিঃসন্দেহে আনন্দের এবং যথেষ্ট পরিমাণে প্রচারের দাবি রাখে এ কারণে যে নেতিবাচক সংবাদ শুনতে শুনতে আমাদের মনে যে হতাশার জন্ম নেয়, তা থেকে মুক্ত হয়ে নিজেকে এবং সামগ্রিকভাবে সবাইকে সামনের দিকে ইতিবাচক দৃষ্টি নিয়ে তাকানোর জন্য এ রকম সংবাদ যথেষ্ট কার্যকর হতে পারে বলে আমার বিশ্বাস।
বাংলাদেশ সম্ভাবনার দেশ_এ কথা এখন আর কেউ অস্বীকার করে না। এখানে সমস্যার পাহাড় রয়েছে, এ কথাও ঠিক। কিন্তু সমস্যার পাহাড়ে ঝরনার মতো সম্ভাবনার ফল্গুধারাও বিদ্যমান। এখন প্রশ্ন হলো, এই ধারাগুলোকে সঠিকভাবে ব্যবহারের পথ নির্ধারণ এবং সুযোগ হিসেবে সেগুলো কাজে লাগিয়ে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। বিগত দশকে যাঁদেরই একাধিকবার ভারত ভ্রমণের সুযোগ ঘটেছে তাঁরা নিশ্চয়ই একটি বিষয় লক্ষ করেছেন যে ভারতের যেকোনো শহরেই এক বছর আগেও যে অবস্থা দেখে এসেছেন, এক বছর পর পরিস্থিতির সম্পূর্ণ পরিবর্তন লক্ষ করা যাবে। বিশেষ করে অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভারত যে সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে, তা গোটা বিশ্বের জন্যই বিস্ময়কর। বিশ্লেষকদের মতে, এর মূলে অনেক কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো স্থিতিশীল ও জবাবদিহিতামূলক সরকারব্যবস্থা, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যব্যবস্থায় আধুনিক এবং দেশের স্বার্থ অক্ষুণ্ন্ন রেখে পদক্ষেপ গ্রহণ, বিজ্ঞানভিত্তিক ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষায় জনগণকে উৎসাহী করে তোলা ও সুযোগ সৃষ্টি এবং সর্বোপরি নিজেদের ভাগ্যোন্নয়নে ব্যক্তি ও সামষ্টিক_দুয়ের অভূতপূর্ব পরিশ্রম ভারতকে আজ এক বিশিষ্ট স্থান দিয়েছে।
বাংলাদেশের পরিস্থিতিও ভারতের চেয়ে ভিন্নতর হওয়ার কথা নয়, বরং বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রেই ভারতের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। বিশেষ করে ভারতের প্রদেশগুলোর মধ্যে 'কেন্দ্রের বিমাতাসুলভ আচরণের' খেদ, বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাসী ও ভাষাভাষীদের মধ্যে বিরোধ ইত্যাদি বাংলাদেশের চেয়ে সেখানকার পরিস্থিতিকে বরং নাজুকই করে রেখেছে। কারণ বাংলাদেশে সে রকম বড় কোনো সমস্যা নেই। বাংলাদেশের মূল সমস্যা কেবল সুশাসনে, সিদ্ধান্ত গ্রহণে ও বাস্তবায়নে। হয়তো বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করতে পারেন; কিন্তু একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে দেশের সমস্যাকে আমি এভাবেই দেখি। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কোমর সোজা করে দাঁড়াতে না দঁাঁড়াতেই তার ওপর হামলা হয়, নির্বাচনব্যবস্থা ছিনতাই হয় রাজনৈতিক দল, প্রশাসন ও সামরিক বাহিনীর প্রত্যক্ষ অঁাঁতাতে, জনগণ নিজেদের বঞ্চিত বোধ করে এবং সর্বোপরি দুর্নীতির কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে গোটা শাসনব্যবস্থা। কিন্তু এসব নেতিবাচক পরিস্থিতি এড়িয়ে বিগত দুই বছর যখন বাংলাদেশ স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশের তালিকায় নিজেকে রাখতে পেরেছে, সে ক্ষেত্রে সরকারের অনেক সমালোচনা করেও এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, শাসনব্যবস্থায় সরকার খারাপ করছে না, বরং পরিস্থিতি এ রকমও যদি অব্যাহত রাখা যায়, তাহলে বাংলাদেশ বদলে যেতে বাধ্য। দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি ভোট নিয়ে ক্ষমতায় আসা সরকার যে জনগণের আস্থার জায়গাটি বিনষ্ট করবে না, সে ভরসা এখন করা যেতেই পারে।
লেখক : সম্পাদক, একপক্ষ, editor@ekpokkho.com
No comments