উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ by সোহায়েল হোসেন সোহেল
শামসুর রাহমান যখন এই শিরোনামে কবিতাটি লিখেছিলেন তখন আমাদের দেশের অবস্থা কেমন ছিল তা আমার জানা নেই। তবে তিনি বোধহয় অনুমান করেছিলেন, একসময় আমাদের দেশটা সত্যি সত্যি কোনো উদ্ভট উটের উপরেই চলবে। স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো দলই পরপর দু'বার ক্ষমতায় আসতে পারেনি।
এই পাঁচ বছর আওয়ামী লীগ তো পরের পাঁচ বছর বিএনপি। ঠিক এভাবেই। তবে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন এ দেশের উন্নয়নের রূপরেখা বা উন্নয়নের মডেল অঙ্কন করতে কেউ কম যাননি। তাই সেটা মন থেকে হোক বা জনগণকে দেখানোর জন্য হোক, উন্নয়নের এই রূপরেখা কাগজ-কলম আর ল্যাপটপের পাতাকেই শুধু সমৃদ্ধ করেছে। বাস্তবতার হাত ধরে তা কখনোই জনমানুষের জীবনকে স্পর্শ করতে পারেনি। তবে হ্যাঁ, কাজ শুরু হয় বটে কিন্তু শেষ হওয়ার আগেই ক্ষমতাসীন দলের মসনদে থাকার মেয়াদ শেষ হয়। নতুন যে দল ক্ষমতায় আসে পুরনোদের কাজ তাদের পছন্দ হয় না। শুরু হয় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, কাদা ছোড়াছুড়ি। পুরনো সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সব লুটেপুটে খেয়েছে। মন্ত্রী-এমপিরা ব্যাংক-ব্যালান্স সমৃদ্ধ করেছেন, গাড়ি-বাড়ি করেছেন, দুর্নীতির আখড়া তৈরি করেছেন। সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। জনগণকে কখনও শান্তি দিতে পারেনি। এগুলো সব পরিবর্তন করতে হবে। আবার নতুন করে সব শুরু। কিছুদিন যায়। তারাও নতুন মডেল আবিষ্কার করেন। কিন্তু জনগণের ভাগ্য আর ফেরে না। দেশের সড়কগুলো ঠিক হয় না, দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরা যায় না। বিদ্যুৎ সমস্যা দূর হয় না। সীমান্ত হত্যা বন্ধ হয় না। দেশে খুন, জখম, লুণ্ঠন, রাহাজানি, হানাহানি; সব দিন দিন বাড়তে থাকে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলে নারকীয় তাণ্ডবলীলা। ছাত্রকে মেরে ছাদ থেকে ফেলে দেয় আরেক ছাত্র। একজন আরেকজনের রগ কাটে, হাত-পা ভাঙে। পুলিশের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলে দেশীয় অস্ত্রের মহড়া। হল থেকে উদ্ধার করা হয় পিস্তল, রামদা, ছুরি, চাইনিজ কুড়াল, লোহার রড, হাতুড়ি। এসবই সম্ভব আমাদের এই অদ্ভুত দেশে। এ নিয়ে প্রশ্ন করলে খুব সুন্দর জবাব পাওয়া যায়_ 'আমরা আলাদিনের প্রদীপ হাতে নিয়ে ক্ষমতায় আসিনি যে রাতারাতি সব পরিবর্তন হয়ে যাবে।' সে আমরা সাধারণ মানুষরাও বুঝি। ক্ষমতায় এসে কিছুদিনের মধ্যেই সব সমস্যা দূর হয়ে যাবে এমন প্রত্যাশা একটু বাড়াবাড়িও বটে। দেশের বড় সেতুগুলো, স্টেডিয়ামগুলো, বিমানবন্দর বা স্থাপনা অথবা অন্য যে কোনো কিছুর নতুন নামকরণ করে সেটাই স্থায়ী থেকে যাবে তার নিশ্চয়তা কোথায়? দেশের সংবিধান পরিবর্তন করে তা টিকিয়ে রাখা যাবে কি? কারণ, নতুন যারা আসবে তারা কেউ ওগুলো মেনে নেবে না। মোট কথা ক্ষমতাসীন দলের কোনো কাজই বিরোধী দলের পছন্দ হবে না। আবার সব নতুন করে শুরু। মেনে নিলাম এরকমই সব হবে, কিন্তু এসবের দ্বারা সাধারণ মানুষের লাভ কি হচ্ছে? কী পাচ্ছি আমরা সরকারের কাছ থেকে? সরকারের কাছে আমাদের প্রয়োজন কি শুধুই নির্বাচনের সময়? আমাদের সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা সোনার বাংলাদেশটা কি এভাবেই চলতে থাকবে? উদ্ভট উটের পিঠ থেকে কখনও কি তাকে নামানো যাবে না?
য় শিক্ষার্থী, মাস্টার্স, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
sohelrumcj@gmail.com
No comments