শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি এই অসম্মান কেন?-রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধ
স্বাধীনতার প্রাক্কালে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরেরা রায়েরবাজারের যে জায়গায় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ধরে নিয়ে হত্যা করে, সেখানে একটি পূর্ণাঙ্গ শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ নির্মাণের দাবি ছিল সর্বমহলের। দীর্ঘ অপেক্ষার পর বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হলেও সেটি এখনো পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি।
স্মৃতিসৌধটিকে সম্প্রসারিত করে পাঠাগার ও জাদুঘর নির্মাণের পরিকল্পনাও সরকারের আছে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তার কোনো লক্ষণ নেই। বরং কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার সুযোগ নিয়ে স্থানীয় স্বার্থান্বেষী মহল স্মৃতিসৌধটি নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, স্মৃতিসৌধের বেষ্টনীর চারপাশে ধর্মের নামে একাধিক স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে।
জনবিক্ষোভের ভয়ে কাজটি তারা করছে রাতের আঁধারে। যে স্থানে স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে, সেটি ব্যক্তিমালিকানাধীন দাবি করলেও তা সত্য নয় বলে জানিয়েছে স্থানীয় জনগণ। আসলে স্মৃতিসৌধের জায়গা দখলই মহলটির উদ্দেশ্য। দ্বিতীয় কথা হলো, সেই জমি ব্যক্তিমালিকানাধীন হলেও শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধকে ক্ষতিগ্রস্ত করে কিংবা এর সৌন্দর্য নষ্ট করে তারা কোনো স্থাপনা নির্মাণ করতে পারে না। এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতেরও স্পষ্ট নির্দেশনা আছে। হাইকোর্টের রায় হলো, মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, গণকবর স্মৃতিস্তম্ভ ও ঐতিহাসিক স্থানের সার্বিক আবহ নষ্ট হতে পারে এমন স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধকে ঘিরে স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্র ও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আমরা তাদের এই উদ্বেগের সঙ্গে একমত। রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের বেষ্টনী ঘিরে যেসব নতুন স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে, তা অবিলম্বে বন্ধ করা হোক। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি এ ধরনের অসম্মান এবং স্মৃতিসৌধের অমর্যাদা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সেই সঙ্গে রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধটিকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
No comments