সেবা বন্ধ করে প্রতিবাদ নয়-অচলাবস্থায় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল

উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অচলাবস্থার সারিতে এবার যোগ দিল শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ব্যাপক ভাঙচুরের জেরে কর্তৃপক্ষ কলেজ বন্ধ করে দিয়েছে, অন্যদিকে কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিষদের ডাকে হাসপাতালের বহির্বিভাগেও চলছে কয়েক ঘণ্টা করে ধর্মঘট।


ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের একাংশ জড়িত থাকায় বিষয়টি রাজনৈতিক চেহারাও পেয়েছে। ফলে চিকিৎসাশিক্ষার এ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা ও চিকিৎসা—উভয়ই স্থগিত, আক্রান্ত ও বিপর্যস্ত।
বরাবরের মতো তুচ্ছ ঘটনা থেকেই এই লঙ্কাকাণ্ড ঘটে। কলেজ প্রাঙ্গণে তাস খেলারত বহিরাগত ব্যক্তিদের সঙ্গে তর্কাতর্কি থেকে এর সূত্রপাত। তাদের তাড়াতে যান ছাত্রলীগের কর্মীরা। কলেজে বহিরাগত হলেও তারা স্থানীয়। অতএব, স্থানীয় পেশিশক্তি ব্যবহারে তারাও পিছপা হয়নি। দলে-বলে শক্তিশালী হয়ে তারা হাসপাতালে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এ পর্যন্ত বোধগম্য। কিন্তু কী কারণে ছাত্রলীগের কর্মীরা উপাধ্যক্ষের কক্ষসহ কলেজ ভবনে ভাঙচুর চালালেন, তা বোধগম্য নয়। বহিরাগত ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়াসহ কলেজ প্রাঙ্গণের নিরাপত্তা জোরদার করাই যদি দাবি হয়, তার জন্য ভাঙচুরের কী প্রয়োজন?
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরও গাফিলতি রয়েছে। মেয়েদের হোস্টেলের পেছন দিকটা উন্মুক্ত রাখা তাদের উচিত হয়নি। কলেজ প্রাঙ্গণে বহিরাগত ব্যক্তিদের দৌরাত্ম্য নিয়েও তাদের আগেভাগেই সচেতন থাকা প্রয়োজন ছিল। তাহলেও এসব কারণে হাসপাতাল ও কলেজে অচলাবস্থা সৃষ্টি থেকে বিরত থাকা উচিত ছিল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। বহিরাগত ব্যক্তিদের উসকানিতে তারা শিক্ষা ও সেবা দুই-ই বন্ধ করে কি আত্মঘাতী কাজ করলেন না? হাসপাতালে সেবা নিতে আসা দরিদ্র ও অসহায় রোগীদের কথা কেউই ভাবল না? আমরা আশা করব, হামলাকারীদের শাস্তি এবং হাসপাতালের নিয়মিত কার্যক্রম—দুটোর ব্যবস্থাই জরুরিভাবে করা হবে।
একের পর এক উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এভাবে সহিংসতা, দলাদলি, দুর্নীতির জের ধরে অচলাবস্থায় পড়া অশনিসংকেত। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর পক্ষপাত এবং দলীয়করণও এর জন্য দায়ী। লাগামছাড়া ছাত্রলীগ, দায়িত্বহীন প্রশাসন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের শিথিলতার সমীকরণেরই ফল হলো এই অচলাবস্থা। এই জট কাটাতে দরকার সততা ও আইন প্রয়োগের কঠোরতা। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান পরিচালনার বিষয়ে সরকারের দক্ষ ও নিরপেক্ষ ভূমিকাই প্রত্যাশিত।

No comments

Powered by Blogger.