মেয়র পদপ্রার্থীর ‘বিনয়ের’ সাক্ষাৎ প্রমাণ-লক্ষ্মীপুরে প্রথম আলো গায়েব

গত মঙ্গলবারের পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় ‘তাহেরের ‘‘বিনয়ে’’ ভীত ভোটাররা!’ শীর্ষক সংবাদটি প্রকাশের পরই সেই ‘বিনয়ের’ প্রমাণ পাওয়া গেল। লক্ষ্মীপুরবাসী সেদিনের প্রথম আলোর মুখ দেখতে পাননি। বুধবারের প্রথম আলোয় খবর হলো, ‘তাহেরের সঙ্গে যোগ হয়েছে ফেরারী বিপ্লবের ভয়’। এ দিনের পত্রিকাও যথারীতি গায়েব।


দিনের আলো ফোটার আগেই কোনো অন্ধকারের শক্তি পত্রিকার কপিগুলো লোপাট করে দিয়েছে। মেয়র পদপ্রার্থী গডফাদার আবু তাহেরের ‘বিনয়’ এবং তাঁর পুত্র দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ‘ফেরারি বিপ্লবের’ ক্ষমতার এমন হাতেনাতে প্রমাণ মেলায় প্রথম আলোর সংবাদের সত্যতা আরও প্রতিষ্ঠিতই হলো।
প্রতিটি ঘটনার পেছনে একটি ‘উদ্দেশ্য’ থাকে, থাকে অভিপ্রায় ও লাভ-ক্ষতির হিসাব। পৌরসভা নির্বাচনে লক্ষ্মীপুরের মেয়র পদে আবু তাহেরের প্রার্থিতা নিয়ে এলাকাবাসীর উদ্বেগের খবরই প্রকাশ করেছিল প্রথম আলোর ওই অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। কিন্তু দেখা গেল, ঢাকা থেকে শহরটিতে পৌঁছালেও পর পর দুই দিন পাঠকের কাছে পৌঁছাতে পারেনি পত্রিকা। সংবাদগুলো যারা স্থানীয় ভোটারদের জানতে দিতে চায় না, ধরা যায়, তারাই কাজটি করেছে। এর অভিপ্রায় স্পষ্টতই প্রতিহিংসা। সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে শুধু নয়, এটা জনগণের বিরুদ্ধেই অপরাধ। হকার ও এজেন্টদের অভিযোগ, ভয় দেখিয়ে তাঁদের কাছ থেকে পত্রিকা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। কাজটি সন্ত্রাসমূলক এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে আঘাত হিসেবেই বিবেচিত হবে। আশা করি, লক্ষ্মীপুরের প্রশাসন এজেন্ট ও হকারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্যও এটা জরুরি। যারা প্রথম আলো গায়েব করতে পারে, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্যও তারা বড় হুমকি। আশা করি, নির্বাচন কমিশনও বিষয়টি আমলে নেবে।
কেবল এই ঘটনাই নয়, প্রায়ই দেখা যায়, কোনো কোনো প্রভাবশালী মহল তাদের অপস্বার্থের বিরুদ্ধে কোনো সংবাদ সংবাদপত্রে প্রকাশিত হলেই সংবাদমাধ্যমের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। সংবাদমাধ্যম অসত্য প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইন রয়েছে। সংবাদপত্রও নীতিগতভাবে যথাযথ প্রতিবাদ ও ভিন্নমত প্রকাশ করতে বাধ্য। এসব সোজা রাস্তায় না গিয়ে বাঁকা পথে পত্রিকার প্রচারকে ক্ষতিগ্রস্ত করা কোনো সভ্য উপায় নয়। গণমাধ্যমকে বাস্তবতার আয়না বলা হয়ে থাকে। সেই আয়নায় যদি কারও অপকর্মের ছবি ভেসে ওঠে, তার দায় আয়নার নয়, অপকর্মের হোতার।

No comments

Powered by Blogger.