চারদিক-জাহাঙ্গীরনগর: দ্বিতীয় জন্মের আঁতুড়ঘর by ফারুক ওয়াসিফ
১৯৯৫ সালের এ রকমই এক শীতার্ত রাতে আরিচা রোডে যাত্রীসেবা বাস থেকে নেমে কেঁপে উঠেছিলাম। শীতে নয়, উত্তেজনায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের উত্তেজনায়, মফস্বলি ছোট নদী থেকে বড় নদীতে মেশার মৎস্যসুলভ আনন্দে। এই শীতেও জাহাঙ্গীরনগরের কথা ভেবে কেঁপে উঠছি।
খুব শীত এবার। ক্যাম্পাসটা তো প্রকৃতির পাঠশালা। সেখানকার খোলা আয়তনে, জলাশয় ভরা পাখি আর গাছগাছালিতে মাতানো বাতাসের রাজত্বে শীত তো কাঁপাবেই।
তবু শীত নয়, কাঁপিয়ে দিল ইতিহাস। ইতিহাস সাক্ষী, স্বাধীনতার সমান বয়সী এই বিশ্ববিদ্যালয়। স্বাধীন বাংলাদেশের জীবনী আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনী এ কারণে তাই একাকার। ১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয় ‘জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের’। তারপর যুদ্ধ, তারপর রোদনভরা ইতিহাস। অবশেষে রক্তগঙ্গা সাঁতরে যে বাংলাদেশ ইতিহাসের কূলে উঠে দাঁড়াল, রক্তের দামে সেই দেশের মানুষ শিখল—সবার রক্তই সমান লাল। জাতপরিচয়ের সাম্প্রদায়িক দাগও সেই রক্তেই ধোয়া হলো। তাই ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে যে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট পাস হলো, তাতে বিশ্ববিদ্যালয়টির নতুন নাম হলো ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়’।
পাকিস্তান আমলের অন্তিম মুহূর্তে যার জন্ম, যার উদয়কাল হেলে আছে স্বাধীনতার দিকে, তাকে কি স্বাধীনতার সন্তান না বলে পারা যায়? যার জন্ম সুবহে সাদিকের আলো-আঁধারির মধ্যে, সে তো দিনেরই সন্তান। তাই বুঝি জাহাঙ্গীরনগরে অনাগরিক বিশুদ্ধ অন্ধকারের শেষে এখনো দিন আসে অঢেল আলো উপচানো আবহে। রাতের পূর্ণিমা আর দিনের সূর্য সেই ক্যাম্পাসে আজও অমলিন।
আজও সেই আরিচা রোড আছে। আজও সেই মহাসড়কে বাস থেকে নামলে রক্তে ছোট্ট একটা স্পন্দন জাগে। শৈশব থেকে কৈশোর হয়ে যৌবন পর্যন্ত দীর্ঘ সময় যার শিক্ষার মধ্যে কাটে, শিক্ষায়তন তার দ্বিতীয় মাতৃভূমি। শিশু একবার জন্মে মাতৃগর্ভে, দ্বিতীয়বার জন্মে বিদ্যালয়ে। শিক্ষার্থীদের তাই দ্বিজ বলা হয়। জাহাঙ্গীরনগর আমাদের দ্বিতীয় জন্মের আঁতুড়ঘর।
আমাদেরও তো পাঁচ-ছয়টি বছর এখানেই বাস করতে হয়েছে। বেড়ে উঠতে হয়েছে এখানকার আলো-হাওয়ায় আর শিক্ষক-সতীর্থদের ভালোবাসায়। সেই তো প্রথম ঘরছাড়া। পরিবারের বাইরে সেই তো প্রথম জীবনের মুখোমুখি হওয়া। সম্পূর্ণ আবাসিক বলে ক্যাম্পাসের সঙ্গে এখানকার শিক্ষার্থীদের মাখামাখি একটু বেশিই। স্মৃতিকাতরতাও তাই বেশি।
উচ্চশিক্ষা কেবল ক্লাসরুমের উপস্থিতি খাতা নয়, নয় রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ সারি সারি নাম। ক্লাসরুম এখানে সপ্রাণ হওয়ার কথা, সতীর্থরা হওয়ার কথা ভাই-বন্ধু-বোন। আর শিক্ষকের হওয়ার কথা পরিচয়-সংকট। ঐতিহ্য বলে, শিক্ষক পিতার মতো চিন্তার মুক্তি শেখান, শিক্ষক বন্ধুর মতো পথপ্রদর্শক। আজও তাই গোপনে তাঁদের পায়ে হাত দিই, আরও গোপনে আলতো করে কাঁধে রাখি হাত।
এটা চাওয়া, পাওয়া কি তত সুন্দর? এটাই কি সেই ক্যাম্পাস নয়, যেখানে লাশ পড়ে ছিল? কবীর সরণি যাঁর নামে, সেই কবীরের প্রাণ কি সন্ত্রাসের বেদিতেই বলি হয়নি? এখানে কি ঘটেনি ধর্ষক মানিক গ্রুপের উত্থান? কিন্তু জাহাঙ্গীরনগরের ইতিহাসে এগুলো ফুটনোটে লেখা ঘটনা মাত্র। কবীরের হত্যাকারী ধর্মীয় ফ্যাসিস্ট সংগঠনকে সেখানকার শিক্ষার্থীরা আজও নিষিদ্ধ করে রেখেছে। ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে পথপ্রদর্শনকারী বিরাট আন্দোলন হয়েছে এখানে। উচ্চ আদালতের নির্দেশিত জাতীয় যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালার রূপকারও এক অর্থে এখানকার নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থী-শিক্ষকের আন্দোলন। ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় ছাত্রলীগের নেতা মানিকসহ নিপীড়কেরা ধাওয়া ও ধোলাই দুটোই খেয়েছে। প্রশাসন বাধ্য হয়েছে তাদের বহিষ্কার করতে। সেই প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের মিছিলই দুই বছর পর আবার তাদের সশস্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠাকে গণজোয়ারের মুখে ভাসিয়ে দিয়েছে। একবার নয়, বারে বারে জাহাঙ্গীরনগর তার আত্মশুদ্ধি ঘটিয়েছে। এখনো ঘটাচ্ছে।
এই উদ্দাম এই প্রতিবাদ সম্ভব হয় না, যদি শিক্ষার্থীরা নিজেদের এক পরিবারের মতো না ভাবে। সম্ভব হয় না, যদি একে প্রিয়ের মতো ভালো না বাসে। জাহাঙ্গীরনগরের ক্যাম্পাস তাদের কাছে কেবল শিক্ষা ভবন আর হল নয়। ক্যাম্পাস মানে দুপুরে ক্যাফেটেরিয়ার আড্ডা, সন্ধ্যায় প্রান্তিকের মুখর জটলা, বিকেলে লেকের পাড় দিয়ে গান গাইতে গাইতে হেঁটে যাওয়া, অনেক রাতে এই হলের গানের শোর পাশের হলের বন্ধুদের গলায় প্রতিধ্বনি তোলা, তুমুল গরমের মধ্যে সাত-পাঁচ না ভেবে মেছো জলাশয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া। ক্যাম্পাস মানে লাইব্রেরির সামনে সংশপ্তক। ক্যাম্পাস মানে অমর একুশে ভাস্কর্য। ক্যাম্পাস মানে বটতলার বেড়ার হোটেলে রাতের আহার শেষের পরেও আড্ডা ভেঙে উঠতে মন না চাওয়া। ক্যাম্পাস মানে ছেলেদের হলের গেস্টরুমে অপেক্ষারতা সহপাঠিনী। ক্যাম্পাস মানে প্রীতিলতা, জাহানারা ইমাম হলের মাঝখান দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে জানালায় কারও মুখ খোঁজা। ক্যাম্পাস মানে পকেটে টাকা নেই কিংবা ঈদে সব বন্ধ বলে শিক্ষকের বাসায় গিয়ে আহার দাবি করা। ক্যাম্পাস মানে পরীক্ষার আগে গ্রুপে গ্রুপে রাতজাগা পড়ালেখা। ক্যাম্পাস মানে তারাভরা রাতে মুক্তমঞ্চের অপরূপ সব অনুষ্ঠান। ক্যাম্পাস মানে টিএসসির বকুলতলায় কিংবা কলাভবনের আকাশমণি চত্বরে উঠতি কবিদের কাব্যপাঠ। ক্যাম্পাস মানে মিছিলে মিছিলে শতকণ্ঠের সাহসিকতা। ক্যাম্পাস মানে ক্লাসরুমে ক্লাসরুমে শত ফুল ফুটতে দাও। তার পরও, পুষ্পবনে কি সাপ নেই? আছে। দুর্নীতি আছে, দলীয়করণ আছে, প্রশাসনিক ন্যায়-অন্যায়ের দাপাদাপি আছে। বাংলাদেশে যা যা ঘটে, তার সবই জাহাঙ্গীরনগরেও ঘটে। কিন্তু প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে জাহাঙ্গীরনগরীয় ঐতিহ্যের মশালবাতি এখনো অন্ধকারের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ। নতুন মুখগুলো কি তা মনে রাখে?
তাদের প্রতি ঈর্ষা, হলগুলো ভরে যারা থাকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতীক অঙ্কিত বাসে যারা এখন ঝুলে ঝুলে যায়। তাদের প্রতি ঈর্ষা, যারা আজও প্রিয় শিক্ষকদের সঙ্গ পায়। তাদের প্রতি ঈর্ষা, যারা আরিচা রোডের ডেইরি গেটে ‘ক্যাম্পাস আইছে’ বলে নেমে পড়ে। আর আমরা যাঁরা প্রাক্তন, তাঁরা জানালা দিয়ে কেবল তাকিয়ে থাকি, চলতে চলতে যত দূর পারি, দেখে নিই আমাদের দ্বিতীয় জন্মের উন্মুক্ত আঁতুড়ঘরটিকে। আর কেঁপে উঠি।
আজ তার জন্মদিন, আজ সে ভালো থাকুক, চিরদিন তার মঙ্গল হোক।
farukwasif@yahoo.com
তবু শীত নয়, কাঁপিয়ে দিল ইতিহাস। ইতিহাস সাক্ষী, স্বাধীনতার সমান বয়সী এই বিশ্ববিদ্যালয়। স্বাধীন বাংলাদেশের জীবনী আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনী এ কারণে তাই একাকার। ১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয় ‘জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের’। তারপর যুদ্ধ, তারপর রোদনভরা ইতিহাস। অবশেষে রক্তগঙ্গা সাঁতরে যে বাংলাদেশ ইতিহাসের কূলে উঠে দাঁড়াল, রক্তের দামে সেই দেশের মানুষ শিখল—সবার রক্তই সমান লাল। জাতপরিচয়ের সাম্প্রদায়িক দাগও সেই রক্তেই ধোয়া হলো। তাই ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে যে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট পাস হলো, তাতে বিশ্ববিদ্যালয়টির নতুন নাম হলো ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়’।
পাকিস্তান আমলের অন্তিম মুহূর্তে যার জন্ম, যার উদয়কাল হেলে আছে স্বাধীনতার দিকে, তাকে কি স্বাধীনতার সন্তান না বলে পারা যায়? যার জন্ম সুবহে সাদিকের আলো-আঁধারির মধ্যে, সে তো দিনেরই সন্তান। তাই বুঝি জাহাঙ্গীরনগরে অনাগরিক বিশুদ্ধ অন্ধকারের শেষে এখনো দিন আসে অঢেল আলো উপচানো আবহে। রাতের পূর্ণিমা আর দিনের সূর্য সেই ক্যাম্পাসে আজও অমলিন।
আজও সেই আরিচা রোড আছে। আজও সেই মহাসড়কে বাস থেকে নামলে রক্তে ছোট্ট একটা স্পন্দন জাগে। শৈশব থেকে কৈশোর হয়ে যৌবন পর্যন্ত দীর্ঘ সময় যার শিক্ষার মধ্যে কাটে, শিক্ষায়তন তার দ্বিতীয় মাতৃভূমি। শিশু একবার জন্মে মাতৃগর্ভে, দ্বিতীয়বার জন্মে বিদ্যালয়ে। শিক্ষার্থীদের তাই দ্বিজ বলা হয়। জাহাঙ্গীরনগর আমাদের দ্বিতীয় জন্মের আঁতুড়ঘর।
আমাদেরও তো পাঁচ-ছয়টি বছর এখানেই বাস করতে হয়েছে। বেড়ে উঠতে হয়েছে এখানকার আলো-হাওয়ায় আর শিক্ষক-সতীর্থদের ভালোবাসায়। সেই তো প্রথম ঘরছাড়া। পরিবারের বাইরে সেই তো প্রথম জীবনের মুখোমুখি হওয়া। সম্পূর্ণ আবাসিক বলে ক্যাম্পাসের সঙ্গে এখানকার শিক্ষার্থীদের মাখামাখি একটু বেশিই। স্মৃতিকাতরতাও তাই বেশি।
উচ্চশিক্ষা কেবল ক্লাসরুমের উপস্থিতি খাতা নয়, নয় রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ সারি সারি নাম। ক্লাসরুম এখানে সপ্রাণ হওয়ার কথা, সতীর্থরা হওয়ার কথা ভাই-বন্ধু-বোন। আর শিক্ষকের হওয়ার কথা পরিচয়-সংকট। ঐতিহ্য বলে, শিক্ষক পিতার মতো চিন্তার মুক্তি শেখান, শিক্ষক বন্ধুর মতো পথপ্রদর্শক। আজও তাই গোপনে তাঁদের পায়ে হাত দিই, আরও গোপনে আলতো করে কাঁধে রাখি হাত।
এটা চাওয়া, পাওয়া কি তত সুন্দর? এটাই কি সেই ক্যাম্পাস নয়, যেখানে লাশ পড়ে ছিল? কবীর সরণি যাঁর নামে, সেই কবীরের প্রাণ কি সন্ত্রাসের বেদিতেই বলি হয়নি? এখানে কি ঘটেনি ধর্ষক মানিক গ্রুপের উত্থান? কিন্তু জাহাঙ্গীরনগরের ইতিহাসে এগুলো ফুটনোটে লেখা ঘটনা মাত্র। কবীরের হত্যাকারী ধর্মীয় ফ্যাসিস্ট সংগঠনকে সেখানকার শিক্ষার্থীরা আজও নিষিদ্ধ করে রেখেছে। ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে পথপ্রদর্শনকারী বিরাট আন্দোলন হয়েছে এখানে। উচ্চ আদালতের নির্দেশিত জাতীয় যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালার রূপকারও এক অর্থে এখানকার নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থী-শিক্ষকের আন্দোলন। ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় ছাত্রলীগের নেতা মানিকসহ নিপীড়কেরা ধাওয়া ও ধোলাই দুটোই খেয়েছে। প্রশাসন বাধ্য হয়েছে তাদের বহিষ্কার করতে। সেই প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের মিছিলই দুই বছর পর আবার তাদের সশস্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠাকে গণজোয়ারের মুখে ভাসিয়ে দিয়েছে। একবার নয়, বারে বারে জাহাঙ্গীরনগর তার আত্মশুদ্ধি ঘটিয়েছে। এখনো ঘটাচ্ছে।
এই উদ্দাম এই প্রতিবাদ সম্ভব হয় না, যদি শিক্ষার্থীরা নিজেদের এক পরিবারের মতো না ভাবে। সম্ভব হয় না, যদি একে প্রিয়ের মতো ভালো না বাসে। জাহাঙ্গীরনগরের ক্যাম্পাস তাদের কাছে কেবল শিক্ষা ভবন আর হল নয়। ক্যাম্পাস মানে দুপুরে ক্যাফেটেরিয়ার আড্ডা, সন্ধ্যায় প্রান্তিকের মুখর জটলা, বিকেলে লেকের পাড় দিয়ে গান গাইতে গাইতে হেঁটে যাওয়া, অনেক রাতে এই হলের গানের শোর পাশের হলের বন্ধুদের গলায় প্রতিধ্বনি তোলা, তুমুল গরমের মধ্যে সাত-পাঁচ না ভেবে মেছো জলাশয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া। ক্যাম্পাস মানে লাইব্রেরির সামনে সংশপ্তক। ক্যাম্পাস মানে অমর একুশে ভাস্কর্য। ক্যাম্পাস মানে বটতলার বেড়ার হোটেলে রাতের আহার শেষের পরেও আড্ডা ভেঙে উঠতে মন না চাওয়া। ক্যাম্পাস মানে ছেলেদের হলের গেস্টরুমে অপেক্ষারতা সহপাঠিনী। ক্যাম্পাস মানে প্রীতিলতা, জাহানারা ইমাম হলের মাঝখান দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে জানালায় কারও মুখ খোঁজা। ক্যাম্পাস মানে পকেটে টাকা নেই কিংবা ঈদে সব বন্ধ বলে শিক্ষকের বাসায় গিয়ে আহার দাবি করা। ক্যাম্পাস মানে পরীক্ষার আগে গ্রুপে গ্রুপে রাতজাগা পড়ালেখা। ক্যাম্পাস মানে তারাভরা রাতে মুক্তমঞ্চের অপরূপ সব অনুষ্ঠান। ক্যাম্পাস মানে টিএসসির বকুলতলায় কিংবা কলাভবনের আকাশমণি চত্বরে উঠতি কবিদের কাব্যপাঠ। ক্যাম্পাস মানে মিছিলে মিছিলে শতকণ্ঠের সাহসিকতা। ক্যাম্পাস মানে ক্লাসরুমে ক্লাসরুমে শত ফুল ফুটতে দাও। তার পরও, পুষ্পবনে কি সাপ নেই? আছে। দুর্নীতি আছে, দলীয়করণ আছে, প্রশাসনিক ন্যায়-অন্যায়ের দাপাদাপি আছে। বাংলাদেশে যা যা ঘটে, তার সবই জাহাঙ্গীরনগরেও ঘটে। কিন্তু প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে জাহাঙ্গীরনগরীয় ঐতিহ্যের মশালবাতি এখনো অন্ধকারের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ। নতুন মুখগুলো কি তা মনে রাখে?
তাদের প্রতি ঈর্ষা, হলগুলো ভরে যারা থাকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতীক অঙ্কিত বাসে যারা এখন ঝুলে ঝুলে যায়। তাদের প্রতি ঈর্ষা, যারা আজও প্রিয় শিক্ষকদের সঙ্গ পায়। তাদের প্রতি ঈর্ষা, যারা আরিচা রোডের ডেইরি গেটে ‘ক্যাম্পাস আইছে’ বলে নেমে পড়ে। আর আমরা যাঁরা প্রাক্তন, তাঁরা জানালা দিয়ে কেবল তাকিয়ে থাকি, চলতে চলতে যত দূর পারি, দেখে নিই আমাদের দ্বিতীয় জন্মের উন্মুক্ত আঁতুড়ঘরটিকে। আর কেঁপে উঠি।
আজ তার জন্মদিন, আজ সে ভালো থাকুক, চিরদিন তার মঙ্গল হোক।
farukwasif@yahoo.com
No comments