স্মরণ-গুরু কি কখনো মারা যায় রে! by জাহিদ রিপন
১৯৯৫-এর কোনো একদিন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী আমি সালাম বরকত হল থেকে তখন বিভাগের দিকে যাচ্ছি। হঠাৎ পাশে এসে ব্রেক কষল একটি সাদা মাইক্রোবাস। দরজা খুলে তিনি নির্দেশ দিলেন, ‘উঠে এসো।’
‘না’ বলার কোনো সুযোগ নেই, কখনোই ছিল না। গাড়ি চলতে শুরু করার অনেক পরে জানতে পারলাম, আমরা চলেছি ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে। মনে মনে ভাবছি, ক্যাম্পাসে অথবা ঢাকায় আমার যে আজ কোনো জরুরি প্রয়োজন থাকতে পারে, বিষয়টি তাঁর ভাবনাতেই নেই। এ জন্যই ছাত্রাবস্থায় মাঝেমধ্যেই মজা করে বলতাম, ‘পড়েছি মোগলের হাতে, খানা...’। সে যাক, একটু পরে কোনোক্রমে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘স্যার, ওখানে কি কোনো অনুষ্ঠান আছে?’ তিনি জানালেন, ‘একটি নাট্য সংগঠনের কর্মশালার সমাপনী দিনে আজ আমাকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এরপর সন্ধ্যায় কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠান এবং ওরা আমাকে সম্মাননা জানাবে।’ বললাম, ‘ক্লাসের বিষয়টি কী?’ তিনি বললেন, ‘জানি না। ওদের কাছ থেকে জেনে তারপর প্রশিক্ষণ শুরু করব।’ আমি বিস্ময়মিশ্রিত কণ্ঠে মিনমিন করে বললাম, ‘কিন্তু স্যার, প্রস্তুতি?’ জবাবে তিনি একটু হেসে বললেন, ‘সর্বক্ষণ যে থিয়েটারের প্রস্তুতিতে থাকে, তার তো আলাদা প্রস্তুতি না নিলেও চলে!’ এই হলো নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন—আমার নাট্যগুরু!
তাঁর সান্নিধ্য মানে হলো এক অনির্বচনীয় আনন্দের সুযোগ, অন্তত শিল্পতৃষ্ণার্তর কাছে। আর ক্লাসে তিনি তো শুধু নির্ধারিত পাঠ্যবিষয়ে সীমাবদ্ধ থাকতেন না; বরং আলোচনা চলে যেত নতুন কোনো দর্শন অভিমুখী। তিনি জানতেন কীভাবে কাকে সৃজনে উদ্বুদ্ধ করতে হয়। একটি ঘটনার কথা বলি, ‘অভিনয়’ শিরোনামে জীবনের প্রথম একটি প্রবন্ধ লিখেছি। অল্প বয়সের মোহমুগ্ধতায় তখন নিজের সৃষ্টি সবকিছুই গুরুকে দেখাতে ইচ্ছা জাগে। তো তাঁকে বিনয়ের সঙ্গে বিষয়টি বলে খাতাটি এগিয়ে দিলাম। তিনি পড়লেন, ক্রোধ নিয়ে নানা স্থানে গোল চিহ্ন আর কোথাও আগাগোড়া ক্রসচিহ্ন দিয়ে পাশে এক জনপ্রিয় সাহিত্যিকের দ্বারা প্রভাবিত বলে মন্তব্য লিখলেন এবং খাতাটি দূরে ছুড়ে ফেলে দিলেন! সে রাতে ঘুমাতে পারলাম না। শুধু মনে হলো, কী এমন ক্ষতি হতো যদি তিনি একটু অনুপ্রাণিত করতেন? প্রাথমিক অভিমান এবং কষ্ট কিছুটা লাঘব হলে লেখাটি নিয়ে আবার বসলাম। তিনি যেমন বলেন, ‘শিল্পের একটা পর্যায়ে পৌঁছালে নিজেই নিজের সবচেয়ে বড় সমালোচক’—এ কথাটি মাথায় রেখে আবেগমুক্তভাবে ত্রুটিগুলো যথাসম্ভব খুঁজে বের করে লেখাটি পুনর্বার লিখলাম। লেখাটি আগাগোড়া পরিবর্তিত হলো এবং সেই গভীর রাতে একাকী আমি উপলব্ধি করলাম যে সেলিম আল দীনের আশীর্বাদ আর অনুপ্রেরণা প্রদানের পদ্ধতি কতটা ভিন্ন, কতটা স্থায়ী আর কতটাই কার্যকর! আরেকবার ফরিদপুরের একটি দল ফরিদপুরের নাট্যচর্চায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিন প্রজন্মের তিনজনকে সংবর্ধনা দেয়; যেখানে নবীন প্রজন্ম থেকে আমাকে নির্বাচন করা হয়েছিল। আবেগাপ্লুত আমি বিষয়টি গুরুকে বলতেই তিনি চুপ হয়ে গেলেন। ক্ষণিক পরে তিনি ক্রোধমিশ্রিত কণ্ঠে বললেন, ‘আমি এই বয়সে শকুন্তলা লিখতে গিয়ে উনিশবার খসড়া করেছি এবং তার পৃষ্ঠাসংখ্যা চার হাজারের কম হবে না, আর তুমি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র সংবর্ধনা পেয়ে বসে থাকো, আবার আমাকে বলতে আসো! এত অল্পে সন্তুষ্ট হয়ো না।’ আমি সারা জীবনের জন্য শিক্ষা পেয়ে গেলাম। প্রকৃতপক্ষে তাঁর ক্লাসে যা জেনেছি এর চেয়ে কোনো অংশে কম শিখিনি ক্যাম্পাসের পথে পথে প্রত্যুষে আর প্রদোষে তাঁর সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে। সে আলোচনা যে সক্রেটিস, প্লেটো, অ্যারিস্টটল, শেক্সপিয়ার, মার্লো হয়ে কখন লালন, রবীন্দ্রনাথ, হাকিম আলী গায়েন অথবা বাংলার সহজিয়া দর্শনে পরিক্রমণ করতেন টেরই পেতাম না। যুগন্ধর সব মনীষীর দর্শন যে এতটাই সহজে বোঝা যায়, অনুভব করে শিহরিত হতাম! ফেরার পথে পথে এ উপলব্ধি শুধু আচ্ছন্ন করে রাখত—এই লোকটার সান্নিধ্য না পেলে জন্মগ্রহণের কি কোনো সার্থকতা ছিল?
নিজের সৃষ্ট চরিত্র সম্পর্কে তাঁর ছিল কী যে অসীম মমতা! তখন যৈবতী কন্যার মন নাটকটি মাত্র লেখা সম্পন্ন হয়েছে। এক দিন নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের তৃতীয় তলার ল্যাবে মহড়ার ফাঁকে তিনি পাণ্ডুলিপিটি আমাদের পাঠ করে শোনালেন। পাঠ শেষে যথারীতি বিরতি। তিনি সংলগ্ন ছাদে চলে গেলেন। আমরা যার যার মতো মজা করছি। হঠাৎ দেখলাম তিনি হাউমাউ করে কাঁদছেন, নাটকের চরিত্রদের কষ্টের অনুভবে! সেদিন সত্যিই তাঁর চরিত্রগুলোর প্রতি তীব্র ঈর্ষা বোধ করেছিলাম। মনে হয়েছিল, আমরা যারা সামনে থাকি জীবিত রক্তমাংসের, তাদের তিনি কি এতটা অনুভব করেন? পারেন তাদের দুঃখ-কষ্ট এতখানি হূদয়ঙ্গম করতে? আমার কখনো কখনো সত্যিই মনে হয়েছে, এখানেই হয়তো তিনি দ্বান্দ্বিক। হূদয়ের যে উষ্ণতা নিয়ে হয়তো গত রাতে ফিরে গেছি, আজ সকালে সেই অনুরাগ নিয়ে হাজির হয়ে দেখি তিনি যেন অন্য মানুষ! তবে কি সাধারণ আমরা পূর্বাবস্থানে রয়ে গেলেও এক রাতেই তিনি যাত্রা শুরু করেছেন নবতর কোনো সৃজনমার্গে। কে জানে! তাঁর কাছ থেকে কষ্টও পেয়েছি অনেক, মনে হয়েছে তিনি আমাকে, আমাদের কখনোই বুঝতে চাননি। তখন সান্ত্বনা পেতাম এই ভেবে যে যিনি সুদূরের পিয়াসী হয়ে সমগ্র জাতির আপন নাট্যসংস্কৃতির ভিত্তিভূমি নির্মাণের দায়িত্ব নিজ কাঁধে নিয়েছেন স্বেচ্ছায়, তিনি হয়তো সমকালে সবার প্রত্যাশা সমরূপে মেটাতে পারবেন না—এটাই স্বাভাবিক। রবীন্দ্রনাথের রাজা নাটকের মতো তখন তাঁর সম্পর্কে ভাবতাম, ‘চিনে নিয়েছি যে সুখে দুঃখে চিনে নিয়েছি। এখন আর কাঁদাতে পারে না।’ তবে এও সত্য, তাঁর মতো একজন বড় মানুষের প্রয়াণের আগে আমার প্রতি তাঁর যে সিদ্ধান্তগুলো ভুল ছিল বলে উপলব্ধি হয়েছে, তার প্রতিটির কথা আমাকে অনুতাপের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন। ভাবা যায়!
গুরুর সঙ্গে আমার সর্বশেষ দেখা হয় জানুয়ারির ৫ তারিখে। তিনি তখন তাঁর অসমাপ্ত শেষ নাটক হাড়হাড্ডি রচনার কাজ করছেন। তিনি আমাকে গত ভোররাতে লেখা অংশটুকু শোনালেন, ‘মা অনেক আগেই মারা গেছে। কনকনে শীতের রাতে ছেলে হঠাৎ ঘুমের মধ্যে অনুভব করে কে যেন গায়ে কাঁথা তুলে দিচ্ছে। ছেলের ঘুম ভেঙে যায়। সে জিজ্ঞাসা করে, কে? অন্ধকারে মা জবাব দেন, আমি। বিস্মিত ছেলে বলে, তুমি না মারা গেছ! স্নেহের হাসি হেসে মা বলেন, দূর বোকা, মা কি কখনো মারা যায় রে?’
আজ বাংলা নাট্যরীতিসহ শিল্পের নানা বাঁক পরিভ্রমণে নানা সংকট মোচনে যখন সেলিম আল দীনকে সর্বক্ষণ পথনির্দেশকরূপে পাশে পাই, তখন সত্যিই মনে হয় বিস্মিত আমাকে তিনি যেন বলছেন, ‘দূর বোকা, গুরু কি কখনো মারা যায় রে?’
তাঁর সান্নিধ্য মানে হলো এক অনির্বচনীয় আনন্দের সুযোগ, অন্তত শিল্পতৃষ্ণার্তর কাছে। আর ক্লাসে তিনি তো শুধু নির্ধারিত পাঠ্যবিষয়ে সীমাবদ্ধ থাকতেন না; বরং আলোচনা চলে যেত নতুন কোনো দর্শন অভিমুখী। তিনি জানতেন কীভাবে কাকে সৃজনে উদ্বুদ্ধ করতে হয়। একটি ঘটনার কথা বলি, ‘অভিনয়’ শিরোনামে জীবনের প্রথম একটি প্রবন্ধ লিখেছি। অল্প বয়সের মোহমুগ্ধতায় তখন নিজের সৃষ্টি সবকিছুই গুরুকে দেখাতে ইচ্ছা জাগে। তো তাঁকে বিনয়ের সঙ্গে বিষয়টি বলে খাতাটি এগিয়ে দিলাম। তিনি পড়লেন, ক্রোধ নিয়ে নানা স্থানে গোল চিহ্ন আর কোথাও আগাগোড়া ক্রসচিহ্ন দিয়ে পাশে এক জনপ্রিয় সাহিত্যিকের দ্বারা প্রভাবিত বলে মন্তব্য লিখলেন এবং খাতাটি দূরে ছুড়ে ফেলে দিলেন! সে রাতে ঘুমাতে পারলাম না। শুধু মনে হলো, কী এমন ক্ষতি হতো যদি তিনি একটু অনুপ্রাণিত করতেন? প্রাথমিক অভিমান এবং কষ্ট কিছুটা লাঘব হলে লেখাটি নিয়ে আবার বসলাম। তিনি যেমন বলেন, ‘শিল্পের একটা পর্যায়ে পৌঁছালে নিজেই নিজের সবচেয়ে বড় সমালোচক’—এ কথাটি মাথায় রেখে আবেগমুক্তভাবে ত্রুটিগুলো যথাসম্ভব খুঁজে বের করে লেখাটি পুনর্বার লিখলাম। লেখাটি আগাগোড়া পরিবর্তিত হলো এবং সেই গভীর রাতে একাকী আমি উপলব্ধি করলাম যে সেলিম আল দীনের আশীর্বাদ আর অনুপ্রেরণা প্রদানের পদ্ধতি কতটা ভিন্ন, কতটা স্থায়ী আর কতটাই কার্যকর! আরেকবার ফরিদপুরের একটি দল ফরিদপুরের নাট্যচর্চায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিন প্রজন্মের তিনজনকে সংবর্ধনা দেয়; যেখানে নবীন প্রজন্ম থেকে আমাকে নির্বাচন করা হয়েছিল। আবেগাপ্লুত আমি বিষয়টি গুরুকে বলতেই তিনি চুপ হয়ে গেলেন। ক্ষণিক পরে তিনি ক্রোধমিশ্রিত কণ্ঠে বললেন, ‘আমি এই বয়সে শকুন্তলা লিখতে গিয়ে উনিশবার খসড়া করেছি এবং তার পৃষ্ঠাসংখ্যা চার হাজারের কম হবে না, আর তুমি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র সংবর্ধনা পেয়ে বসে থাকো, আবার আমাকে বলতে আসো! এত অল্পে সন্তুষ্ট হয়ো না।’ আমি সারা জীবনের জন্য শিক্ষা পেয়ে গেলাম। প্রকৃতপক্ষে তাঁর ক্লাসে যা জেনেছি এর চেয়ে কোনো অংশে কম শিখিনি ক্যাম্পাসের পথে পথে প্রত্যুষে আর প্রদোষে তাঁর সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে। সে আলোচনা যে সক্রেটিস, প্লেটো, অ্যারিস্টটল, শেক্সপিয়ার, মার্লো হয়ে কখন লালন, রবীন্দ্রনাথ, হাকিম আলী গায়েন অথবা বাংলার সহজিয়া দর্শনে পরিক্রমণ করতেন টেরই পেতাম না। যুগন্ধর সব মনীষীর দর্শন যে এতটাই সহজে বোঝা যায়, অনুভব করে শিহরিত হতাম! ফেরার পথে পথে এ উপলব্ধি শুধু আচ্ছন্ন করে রাখত—এই লোকটার সান্নিধ্য না পেলে জন্মগ্রহণের কি কোনো সার্থকতা ছিল?
নিজের সৃষ্ট চরিত্র সম্পর্কে তাঁর ছিল কী যে অসীম মমতা! তখন যৈবতী কন্যার মন নাটকটি মাত্র লেখা সম্পন্ন হয়েছে। এক দিন নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের তৃতীয় তলার ল্যাবে মহড়ার ফাঁকে তিনি পাণ্ডুলিপিটি আমাদের পাঠ করে শোনালেন। পাঠ শেষে যথারীতি বিরতি। তিনি সংলগ্ন ছাদে চলে গেলেন। আমরা যার যার মতো মজা করছি। হঠাৎ দেখলাম তিনি হাউমাউ করে কাঁদছেন, নাটকের চরিত্রদের কষ্টের অনুভবে! সেদিন সত্যিই তাঁর চরিত্রগুলোর প্রতি তীব্র ঈর্ষা বোধ করেছিলাম। মনে হয়েছিল, আমরা যারা সামনে থাকি জীবিত রক্তমাংসের, তাদের তিনি কি এতটা অনুভব করেন? পারেন তাদের দুঃখ-কষ্ট এতখানি হূদয়ঙ্গম করতে? আমার কখনো কখনো সত্যিই মনে হয়েছে, এখানেই হয়তো তিনি দ্বান্দ্বিক। হূদয়ের যে উষ্ণতা নিয়ে হয়তো গত রাতে ফিরে গেছি, আজ সকালে সেই অনুরাগ নিয়ে হাজির হয়ে দেখি তিনি যেন অন্য মানুষ! তবে কি সাধারণ আমরা পূর্বাবস্থানে রয়ে গেলেও এক রাতেই তিনি যাত্রা শুরু করেছেন নবতর কোনো সৃজনমার্গে। কে জানে! তাঁর কাছ থেকে কষ্টও পেয়েছি অনেক, মনে হয়েছে তিনি আমাকে, আমাদের কখনোই বুঝতে চাননি। তখন সান্ত্বনা পেতাম এই ভেবে যে যিনি সুদূরের পিয়াসী হয়ে সমগ্র জাতির আপন নাট্যসংস্কৃতির ভিত্তিভূমি নির্মাণের দায়িত্ব নিজ কাঁধে নিয়েছেন স্বেচ্ছায়, তিনি হয়তো সমকালে সবার প্রত্যাশা সমরূপে মেটাতে পারবেন না—এটাই স্বাভাবিক। রবীন্দ্রনাথের রাজা নাটকের মতো তখন তাঁর সম্পর্কে ভাবতাম, ‘চিনে নিয়েছি যে সুখে দুঃখে চিনে নিয়েছি। এখন আর কাঁদাতে পারে না।’ তবে এও সত্য, তাঁর মতো একজন বড় মানুষের প্রয়াণের আগে আমার প্রতি তাঁর যে সিদ্ধান্তগুলো ভুল ছিল বলে উপলব্ধি হয়েছে, তার প্রতিটির কথা আমাকে অনুতাপের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন। ভাবা যায়!
গুরুর সঙ্গে আমার সর্বশেষ দেখা হয় জানুয়ারির ৫ তারিখে। তিনি তখন তাঁর অসমাপ্ত শেষ নাটক হাড়হাড্ডি রচনার কাজ করছেন। তিনি আমাকে গত ভোররাতে লেখা অংশটুকু শোনালেন, ‘মা অনেক আগেই মারা গেছে। কনকনে শীতের রাতে ছেলে হঠাৎ ঘুমের মধ্যে অনুভব করে কে যেন গায়ে কাঁথা তুলে দিচ্ছে। ছেলের ঘুম ভেঙে যায়। সে জিজ্ঞাসা করে, কে? অন্ধকারে মা জবাব দেন, আমি। বিস্মিত ছেলে বলে, তুমি না মারা গেছ! স্নেহের হাসি হেসে মা বলেন, দূর বোকা, মা কি কখনো মারা যায় রে?’
আজ বাংলা নাট্যরীতিসহ শিল্পের নানা বাঁক পরিভ্রমণে নানা সংকট মোচনে যখন সেলিম আল দীনকে সর্বক্ষণ পথনির্দেশকরূপে পাশে পাই, তখন সত্যিই মনে হয় বিস্মিত আমাকে তিনি যেন বলছেন, ‘দূর বোকা, গুরু কি কখনো মারা যায় রে?’
No comments