চরাচর-হাজার ধানের দেশ by সাইফুল ইসলাম
পলিমাটির দেশ বাংলাদেশ। পলিপড়া জমির ধানের ভাত আর নদীনালা ও খালবিলের মাছই ছিল বাঙালির প্রধান খাদ্য। কেউ কেউ এ দেশকে বলতেন_বিশাল ধানক্ষেত। সকালের সোনালি রোদ যখন ধানের শীষে পড়ত, তখন মনে হতো সোনারঙে আঁকা ছবি যেন।
এ দেশের কৃষকরা বৈজ্ঞানিক উপায়ের চাষবাস জানত না, তবে কোন জমিতে কখন কী ধরনের ফসল ফলাতে হবে তা জানত ভালোভাবেই। শীত-বসন্তের খরায় যখন মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যেত, কিষান তখন সে জমিতে চালিয়ে দিত লাঙল-মই। বছরের প্রথম বৃষ্টিতে সে জমি হয়ে উঠত প্রজননে উন্মুখ। কিষানরা তখন উঁচু জমিতে বুনে দিত আউশ ধানের বীজ। আশু সময়ে, অর্থাৎ মাত্র আড়াই মাসে পাক ধরত বলে কৃষকরা সে ধানের নাম দিয়েছিল আউশ। মাঝারি নিচু জমিতে একই সঙ্গে বুনে দিত আউশ-আমন দুটোই। অন্যদিকে নিচু জমিতে বুনত শুধু আমন ধান। অল্পদিনের মধ্যে আউশ ধান পেকে গেলে তা কেটে ঘরে তুলত কৃষকরা, জমিতে পড়ে থাকত আমন ধান। এদিকে আষাঢ়-শ্রাবণে দেশে বর্ষা নামত। পানি উঠে যেত জমিতে। তখন বর্ষার পানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে উঠত আমন ধানের গাছ। শোনা যায়, পানি বৃদ্ধির সঙ্গে কোনো কোনো দিন এ ধানগাছ বড় হতো সাত হাত পর্যন্ত। এ সময়ই রোপা আমন ধানের বীজ বুনে দিত বাড়ির পালান-আঙিনা_এসব উঁচু স্থানে। শ্রাবণের শেষে জমি থেকে নামতে শুরু করত বর্ষার পানি।
আর তখন নতুন পড়া থকথকে পলিমাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ত বপন করা আমন ধান, যা বর্ষার সঙ্গে এত দিন লড়াই করে টিকে ছিল। এ সময়ই বাড়ির আঙিনা-পালানের বীজতলা থেকে তুলে আনা হতো আমনের চারা। তা রোপণ করা হতো নতুন পলিপড়া জমিতে। ধীরে ধীরে দেশ হয়ে উঠত সবুজের সমুদ্র। আর সবুজের সমুদ্রে হাওয়া লেগে দোল খাওয়া ধান দেখে কৃষকের মন আনন্দে নেচে উঠত। একসময় শরতের সাদা মেঘের ভেলায় চড়ে আসত হেমন্ত। আর এ সময়ই ক্ষেতে আমন ও রোপা আমন ধান পাকা শুরু করত। নবান্ন ঘরে তোলার বিশাল কর্মযজ্ঞে মেতে উঠত কৃষক। হেমন্তে ঘরে তোলা হতো বলে কৃষক এ ধানের নাম দেয় হেমন্তের ধান। আর হেমন্ত শব্দটিই কালের স্রোতে ক্ষয়ে ক্ষয়ে হয়ে গেছে আমন। আমন ধানের চাষ করে কৃষক পেত চিকন সুগন্ধিজাতের চাল। এ চালের স্বাদ ও গন্ধ ছিল বিভিন্ন রকমের। ফলে এর ব্যবহারেও ছিল ভিন্নতা। মুড়ি, চিঁড়া, পোলাও, পায়েসের জন্য রোপণ করা হতো আলাদা ধান। ধানের নামও ছিল আলাদা। যেমন_বাসমতি, বালাম, মৌলি, নোরই, বটেশ্বর, কালামানিক, মাধবজটা, ভাটুরি, মেঘরাজ, কামরাঙ্গা, চন্দ্রাহার, রায়দা, কাটারিভোগ, দাদখানি, বাঁশফুল, কালিজিরা, বাদশাভোগ, নাজিরশাইল, ঝিঙ্গাশাইল, পাটনাই, চিনিগুঁড়া, লতিশাইল, জাগলি, খাবরি, খৈয়া, চৈতা, ধলি, খেয়ালি, কালি, টেপি, গৌরকাজল, বান্দরজটা, লক্ষ্মীকাজল, পঙ্খীরাজ, ময়নামতি, করচামুড়ি, মধুশাইল, লালমতি, দয়ালভোগ, লালধান, মালতি, বিনি্ন, চিনিসাগর, টেপা, গাম্বি, কইতরমণি, দুধসাগর, হরিরাজ, রঘুরাজ, রঘুশাইল, সন্ধ্যামণি, বউমালা, হিজলি, সাহারাজ, মালশিরা, সোনামুখী, সোনালিকা, গাজি, চন্দন, কলম, মুক্তা, কদমছড়ি, কটকি, করঞ্চা, বনজিরা, মইধান, ডমরু, দুধকাউন, বাসন্তি, বেনামুড়ি, কাদামণি, কালিশাইটা, হগুনকাঁপা, সুলতানভোগ, বাঁকতুলসী, উড়কি, বনকামিনী, ভজনা, আগুনবান, হরিমতি, কালাহেড়ে, হোগলা, হামাই, পাতাবাহার, বটিপান, ধোবোলুচি, জামাইনাড়ু, কনকচুড়ো, চিত্তরাঙ্গি, কোটেহুঁড়ো, গোলাপসরু, মাগুর, ডিমেধান ইত্যাদি।
সাইফুল ইসলাম
আর তখন নতুন পড়া থকথকে পলিমাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ত বপন করা আমন ধান, যা বর্ষার সঙ্গে এত দিন লড়াই করে টিকে ছিল। এ সময়ই বাড়ির আঙিনা-পালানের বীজতলা থেকে তুলে আনা হতো আমনের চারা। তা রোপণ করা হতো নতুন পলিপড়া জমিতে। ধীরে ধীরে দেশ হয়ে উঠত সবুজের সমুদ্র। আর সবুজের সমুদ্রে হাওয়া লেগে দোল খাওয়া ধান দেখে কৃষকের মন আনন্দে নেচে উঠত। একসময় শরতের সাদা মেঘের ভেলায় চড়ে আসত হেমন্ত। আর এ সময়ই ক্ষেতে আমন ও রোপা আমন ধান পাকা শুরু করত। নবান্ন ঘরে তোলার বিশাল কর্মযজ্ঞে মেতে উঠত কৃষক। হেমন্তে ঘরে তোলা হতো বলে কৃষক এ ধানের নাম দেয় হেমন্তের ধান। আর হেমন্ত শব্দটিই কালের স্রোতে ক্ষয়ে ক্ষয়ে হয়ে গেছে আমন। আমন ধানের চাষ করে কৃষক পেত চিকন সুগন্ধিজাতের চাল। এ চালের স্বাদ ও গন্ধ ছিল বিভিন্ন রকমের। ফলে এর ব্যবহারেও ছিল ভিন্নতা। মুড়ি, চিঁড়া, পোলাও, পায়েসের জন্য রোপণ করা হতো আলাদা ধান। ধানের নামও ছিল আলাদা। যেমন_বাসমতি, বালাম, মৌলি, নোরই, বটেশ্বর, কালামানিক, মাধবজটা, ভাটুরি, মেঘরাজ, কামরাঙ্গা, চন্দ্রাহার, রায়দা, কাটারিভোগ, দাদখানি, বাঁশফুল, কালিজিরা, বাদশাভোগ, নাজিরশাইল, ঝিঙ্গাশাইল, পাটনাই, চিনিগুঁড়া, লতিশাইল, জাগলি, খাবরি, খৈয়া, চৈতা, ধলি, খেয়ালি, কালি, টেপি, গৌরকাজল, বান্দরজটা, লক্ষ্মীকাজল, পঙ্খীরাজ, ময়নামতি, করচামুড়ি, মধুশাইল, লালমতি, দয়ালভোগ, লালধান, মালতি, বিনি্ন, চিনিসাগর, টেপা, গাম্বি, কইতরমণি, দুধসাগর, হরিরাজ, রঘুরাজ, রঘুশাইল, সন্ধ্যামণি, বউমালা, হিজলি, সাহারাজ, মালশিরা, সোনামুখী, সোনালিকা, গাজি, চন্দন, কলম, মুক্তা, কদমছড়ি, কটকি, করঞ্চা, বনজিরা, মইধান, ডমরু, দুধকাউন, বাসন্তি, বেনামুড়ি, কাদামণি, কালিশাইটা, হগুনকাঁপা, সুলতানভোগ, বাঁকতুলসী, উড়কি, বনকামিনী, ভজনা, আগুনবান, হরিমতি, কালাহেড়ে, হোগলা, হামাই, পাতাবাহার, বটিপান, ধোবোলুচি, জামাইনাড়ু, কনকচুড়ো, চিত্তরাঙ্গি, কোটেহুঁড়ো, গোলাপসরু, মাগুর, ডিমেধান ইত্যাদি।
সাইফুল ইসলাম
No comments