বিচার-বাবার হত্যারহস্য ভাই হত্যার বিচার by মৌটুসী ইসলাম
২০০৮ সালের ৩ ডিসেম্বর এক বিস্ফোরণে নিজ বাড়িতে আহত হয়ে হাসপাতালে মৃত্যবরণ করেন বিশিষ্ট শ্রমিকনেতা নুরুল ইসলাম ও তাঁর ছেলে ইসলাম তমোহর। তখন থেকেই পরিবারটি এই বিয়োগান্ত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি করে আসছে।
আজ ১৫ জুলাই সন্ধ্যা ছয়টায় ২৫/সি ২৫/ডি ব্লক-বি লালমাটিয়ার সেই বাড়ির সামনে মানববন্ধন ও আলোক প্রজ্বালনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
২০০৮ সালের ৩ ডিসেম্বরের সেই ঘটনা আপনাদের কারও কারও মনে থাকতে পারে। লালমাটিয়ায় বাড়িতে সেদিন ‘সন্দেহজনক’ অগ্নিকাণ্ডে ঘুমন্ত অবস্থায় নিহত হন আমার বাবা শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের নেতা ও গণতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডেন্ট নুরুল ইসলাম এবং আমার একমাত্র ভাই তমোহর। মা আর আমি তখন যুক্তরাষ্ট্রে ছিলাম। ৪ ডিসেম্বর রাতে আমরা বাংলাদেশে ফিরে আসি। ফিরে আসার পথে বিমানের সেই ২৬ ঘণ্টার দমবন্ধ করা অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আজ কিছু বলতে চাই না। পরিচিতদের অনেকেই বিমানবন্দরে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। আমাদের জানানো হলো, ‘বাবা ও পুচি নেই।’ কথাটা বিশ্বাস হচ্ছিল না। এই তো, মাত্র ৪৫ ঘণ্টা আগেই শুনেছি বাবার ভরাট কণ্ঠস্বর। বাবা আর নেই! তমোহর আর নেই! আজও আমি বিশ্বাস করি না এবং সত্য উদ্ঘাটন না হওয়া পর্যন্ত আমার এই অস্থিরতা যাবে না।
পরবর্তী কয়েকটি মাস কীভাবে কেটে গেল, জানি না। মা আর আমি অন্ধের মতো সতীর্থদের কথামতো কাজ করে গিয়েছিলাম। সেই সময়গুলো এখন আর আমার মনে পড়ে না। শুনেছিলাম, রাজনৈতিক নেতা ও বিশিষ্টজনেরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে শোভাযাত্রা করেছেন। আমাদের জানানো হয়েছিল, এটা একটা সুস্পষ্ট হত্যাকাণ্ড এবং আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখেই তা ঘটানো হয়েছিল। বাবা ও মায়ের পুরোনো বন্ধুরা আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু্ তাঁরা করবেন এবং এই জঘন্য অপরাধের শেষ দেখে ছাড়বেন। এসব প্রতিশ্রুতি নিয়ে তখন ভাবিনি। তখন আমার আর মায়ের জন্য সবকিছুই অর্থহীন হয়ে গিয়েছিল, এবং আমরা কেবল বেঁচে থাকার লড়াই করছিলাম।
এই ডিসেম্বরে বাবা ও ভাইহীন জীবনের তিন বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে। জীবন থেমে গেছে, সময় চলে গেছে। বাবার বন্ধুদের দেওয়া সেই কথাগুলো খুব জরুরি ছিল। তাঁদের দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলোও ধীরে ধীরে পরিষ্কার হচ্ছে। ওই ঘটনার পর একটা ঢিলেঢালা তদন্তে আমার বাবা ও ভাইয়ের গুপ্তহত্যার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করা হয়নি। আমাদের সময় কাটছে এ বিষয়ে দেশ ও বিদেশের সহায়তা ও সমর্থন পাওয়ার আশায়। তাঁদের সবার চোখে ও কথায় আমি সহানুভূতি দেখতে পাই। কিন্তু সব শুভ কামনা আর সমর্থন নিয়েও ৩০ মাস ধরে তদন্ত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে একটি অফিশিয়াল প্রতিবেদন বের করা সম্ভব হয়নি। সেই কালরাত্রি আমাদের কাছে এখনো একটি অস্পষ্ট ও তমসাচ্ছন্ন ঘটনা। ওই ঘটনা কেবল দুটি জীবনই কেড়ে নেয়নি, ধ্বংস করে দিয়েছে বিস্ময়করভাবে বেঁচে যাওয়া অন্য দুজনের জীবনও।
মৃত্যুশয্যায় আমার বাবা সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। তিনি বারবার উল্লেখ করেছিলেন ‘নাশকতা’ শব্দটি, এবং তাঁর জীবনের ওপর একটি পরিকল্পিত হামলার কথা। কিন্তু প্রাথমিক তদন্তে মনে হয়, এই অতি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্যটি উপেক্ষা করা হয়েছে এবং সেই বিয়োগান্ত ঘটনাকে বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে সৃষ্ট ‘আকস্মিক অগ্নিকাণ্ড’ বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এর অল্প কিছুদিন পরেই সরকারের একটি নিজস্ব প্রতিবেদনে বলা হয়, এটা শর্টসার্কিটের আগুন হতে পারে না। কারণ, সম্ভাব্য যে ফ্রিজটি থেকে আগুন লাগে, সেটির বিদ্যুৎ-সংযোগ আগে থেকেই বিচ্ছিন্ন ছিল। এ ছাড়া ফ্রিজের পেছনে থাকা গ্যাস-সিলিন্ডারটিও ছিল সম্পূর্ণ অক্ষত। সেই রাতের ঘটনায় উচ্চমাত্রার ধোঁয়ার মতো কিছু ফ্রিজ থেকে বের হয়ে এসে টেলিভিশন সেট, একটি সিলিং ফ্যান গলিয়ে ফেলে। আশ্চর্যজনকভাবে বাড়ির ভেতরের সবকিছুই, এমনকি ফ্রিজের কয়েক ফুট দূরের প্লাস্টিকের টেবিলম্যাটগুলোও প্রায় সম্পূর্ণ অক্ষত রয়ে যায়। আড়াই বছর পর এসে মনে হচ্ছে, এ ঘটনায় উত্তরের চেয়ে প্রশ্নই এখনো বেশি। স্পষ্টত, ওই ঘটনাটি কোনো স্বাভাবিক অগ্নিকাণ্ড ছিল না। তাহলে কীভাবে একটি পুরোনো, সংযোগবিচ্ছিন্ন ফ্রিজ থেকে ও-রকম বিস্ফোরণ হলো? আর আমার ভাইয়ের শরীরেও কোনো পোড়া চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এই প্রশ্নগুলোই আমাকে আরও কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন করে।
আমার মনে যে প্রশ্নগুলো জেগেছে, সেগুলো এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন বলে মনে করছি:
১. কারা দিনের পর দিন আমার ভাই ও বাবাকে টেলিফোন করে ও এসএমএস পাঠিয়ে মৃত্যুর হুমকি দিয়েছে? মৃত্যুশয্যায়ও বাবা এ বিষয়টি উল্লেখ করেছেন, কিন্তু কেন তা নিয়ে কোনো স্বচ্ছ তদন্ত হলো না?
২. সরকারের একটি রাসায়নিক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ফ্রিজে দুটি ভয়ানক রাসায়নিক দ্রব্য—আরসাইন (Arsine) ও অসমিয়াম (Osmium) পাওয়া গেছে, যা শুধু বিষাক্তই নয়, এটি শ্বাসতন্ত্রকে আক্রমণ করে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে। জেনেছি, এটা নাকি আফগানিস্তানে যুদ্ধরত এলাকায় বিস্ফোরকের একটি বিশেষ উপাদান হিসেবে ব্যবহূত হয়। তাহলে এই উপাদান কীভাবে তিন বছর ধরে অব্যবহূত ফ্রিজের মধ্যে পাওয়া যাবে?
৩. ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি (ডিপিডিসি) তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে জানায়, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে এ ঘটনাটি ঘটেনি। অর্থাৎ এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়। আবার ঠিক এক বছর পরই একই প্রতিষ্ঠানের অপর প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘটনাস্থল পরিদর্শন না করেই ডিপিডিসি দল মনে করছে, আগের প্রতিবেদনটি ভুল এবং ‘শর্টসার্কিট হইলেও হইতে পারে’। আমি দ্বিতীয় প্রতিবেদনের এই ‘নতুন তথ্য’ শুনে হতভম্ব হয়ে যাই এবং ডিপিডিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে যাই। তিনি অবাক বিস্ময়ে বলেন, শুধু প্রথম প্রতিবেদন সম্পর্কেই তিনি অবগত আছেন। আমার প্রশ্ন হলো, তাহলে কে বা কারা এই দ্বিতীয় প্রতিবেদনটি তৈরি করল এবং কেন করল?
একমাত্র জীবিত সন্তান হিসেবে এ ঘটনাটি নিয়ে লেখা খুবই প্রয়োজন ছিল। কখনোই ভাবিনি বাবা ও ভাইয়ের দুর্ভাগ্যজনক পরিণতির ন্যায়বিচার চেয়ে এভাবে ঘুরতে হবে আমাকে। প্রতিটি দিনই এখন আমার নিরন্তর লড়াইয়ের দিন। তবু আশা রাখি, একসময় এই লড়াইয়ের পথ ধরেই বের হয়ে আসবে দেশের আরেকটি অমীমাংসিত বিয়োগান্ত ঘটনার প্রকৃত রহস্য।
মৌটুসী ইসলাম: নুরুল ইসলামের কন্যা।
২০০৮ সালের ৩ ডিসেম্বরের সেই ঘটনা আপনাদের কারও কারও মনে থাকতে পারে। লালমাটিয়ায় বাড়িতে সেদিন ‘সন্দেহজনক’ অগ্নিকাণ্ডে ঘুমন্ত অবস্থায় নিহত হন আমার বাবা শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের নেতা ও গণতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডেন্ট নুরুল ইসলাম এবং আমার একমাত্র ভাই তমোহর। মা আর আমি তখন যুক্তরাষ্ট্রে ছিলাম। ৪ ডিসেম্বর রাতে আমরা বাংলাদেশে ফিরে আসি। ফিরে আসার পথে বিমানের সেই ২৬ ঘণ্টার দমবন্ধ করা অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আজ কিছু বলতে চাই না। পরিচিতদের অনেকেই বিমানবন্দরে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। আমাদের জানানো হলো, ‘বাবা ও পুচি নেই।’ কথাটা বিশ্বাস হচ্ছিল না। এই তো, মাত্র ৪৫ ঘণ্টা আগেই শুনেছি বাবার ভরাট কণ্ঠস্বর। বাবা আর নেই! তমোহর আর নেই! আজও আমি বিশ্বাস করি না এবং সত্য উদ্ঘাটন না হওয়া পর্যন্ত আমার এই অস্থিরতা যাবে না।
পরবর্তী কয়েকটি মাস কীভাবে কেটে গেল, জানি না। মা আর আমি অন্ধের মতো সতীর্থদের কথামতো কাজ করে গিয়েছিলাম। সেই সময়গুলো এখন আর আমার মনে পড়ে না। শুনেছিলাম, রাজনৈতিক নেতা ও বিশিষ্টজনেরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে শোভাযাত্রা করেছেন। আমাদের জানানো হয়েছিল, এটা একটা সুস্পষ্ট হত্যাকাণ্ড এবং আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখেই তা ঘটানো হয়েছিল। বাবা ও মায়ের পুরোনো বন্ধুরা আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু্ তাঁরা করবেন এবং এই জঘন্য অপরাধের শেষ দেখে ছাড়বেন। এসব প্রতিশ্রুতি নিয়ে তখন ভাবিনি। তখন আমার আর মায়ের জন্য সবকিছুই অর্থহীন হয়ে গিয়েছিল, এবং আমরা কেবল বেঁচে থাকার লড়াই করছিলাম।
এই ডিসেম্বরে বাবা ও ভাইহীন জীবনের তিন বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে। জীবন থেমে গেছে, সময় চলে গেছে। বাবার বন্ধুদের দেওয়া সেই কথাগুলো খুব জরুরি ছিল। তাঁদের দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলোও ধীরে ধীরে পরিষ্কার হচ্ছে। ওই ঘটনার পর একটা ঢিলেঢালা তদন্তে আমার বাবা ও ভাইয়ের গুপ্তহত্যার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করা হয়নি। আমাদের সময় কাটছে এ বিষয়ে দেশ ও বিদেশের সহায়তা ও সমর্থন পাওয়ার আশায়। তাঁদের সবার চোখে ও কথায় আমি সহানুভূতি দেখতে পাই। কিন্তু সব শুভ কামনা আর সমর্থন নিয়েও ৩০ মাস ধরে তদন্ত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে একটি অফিশিয়াল প্রতিবেদন বের করা সম্ভব হয়নি। সেই কালরাত্রি আমাদের কাছে এখনো একটি অস্পষ্ট ও তমসাচ্ছন্ন ঘটনা। ওই ঘটনা কেবল দুটি জীবনই কেড়ে নেয়নি, ধ্বংস করে দিয়েছে বিস্ময়করভাবে বেঁচে যাওয়া অন্য দুজনের জীবনও।
মৃত্যুশয্যায় আমার বাবা সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। তিনি বারবার উল্লেখ করেছিলেন ‘নাশকতা’ শব্দটি, এবং তাঁর জীবনের ওপর একটি পরিকল্পিত হামলার কথা। কিন্তু প্রাথমিক তদন্তে মনে হয়, এই অতি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্যটি উপেক্ষা করা হয়েছে এবং সেই বিয়োগান্ত ঘটনাকে বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে সৃষ্ট ‘আকস্মিক অগ্নিকাণ্ড’ বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এর অল্প কিছুদিন পরেই সরকারের একটি নিজস্ব প্রতিবেদনে বলা হয়, এটা শর্টসার্কিটের আগুন হতে পারে না। কারণ, সম্ভাব্য যে ফ্রিজটি থেকে আগুন লাগে, সেটির বিদ্যুৎ-সংযোগ আগে থেকেই বিচ্ছিন্ন ছিল। এ ছাড়া ফ্রিজের পেছনে থাকা গ্যাস-সিলিন্ডারটিও ছিল সম্পূর্ণ অক্ষত। সেই রাতের ঘটনায় উচ্চমাত্রার ধোঁয়ার মতো কিছু ফ্রিজ থেকে বের হয়ে এসে টেলিভিশন সেট, একটি সিলিং ফ্যান গলিয়ে ফেলে। আশ্চর্যজনকভাবে বাড়ির ভেতরের সবকিছুই, এমনকি ফ্রিজের কয়েক ফুট দূরের প্লাস্টিকের টেবিলম্যাটগুলোও প্রায় সম্পূর্ণ অক্ষত রয়ে যায়। আড়াই বছর পর এসে মনে হচ্ছে, এ ঘটনায় উত্তরের চেয়ে প্রশ্নই এখনো বেশি। স্পষ্টত, ওই ঘটনাটি কোনো স্বাভাবিক অগ্নিকাণ্ড ছিল না। তাহলে কীভাবে একটি পুরোনো, সংযোগবিচ্ছিন্ন ফ্রিজ থেকে ও-রকম বিস্ফোরণ হলো? আর আমার ভাইয়ের শরীরেও কোনো পোড়া চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এই প্রশ্নগুলোই আমাকে আরও কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন করে।
আমার মনে যে প্রশ্নগুলো জেগেছে, সেগুলো এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন বলে মনে করছি:
১. কারা দিনের পর দিন আমার ভাই ও বাবাকে টেলিফোন করে ও এসএমএস পাঠিয়ে মৃত্যুর হুমকি দিয়েছে? মৃত্যুশয্যায়ও বাবা এ বিষয়টি উল্লেখ করেছেন, কিন্তু কেন তা নিয়ে কোনো স্বচ্ছ তদন্ত হলো না?
২. সরকারের একটি রাসায়নিক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ফ্রিজে দুটি ভয়ানক রাসায়নিক দ্রব্য—আরসাইন (Arsine) ও অসমিয়াম (Osmium) পাওয়া গেছে, যা শুধু বিষাক্তই নয়, এটি শ্বাসতন্ত্রকে আক্রমণ করে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে। জেনেছি, এটা নাকি আফগানিস্তানে যুদ্ধরত এলাকায় বিস্ফোরকের একটি বিশেষ উপাদান হিসেবে ব্যবহূত হয়। তাহলে এই উপাদান কীভাবে তিন বছর ধরে অব্যবহূত ফ্রিজের মধ্যে পাওয়া যাবে?
৩. ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি (ডিপিডিসি) তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে জানায়, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে এ ঘটনাটি ঘটেনি। অর্থাৎ এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়। আবার ঠিক এক বছর পরই একই প্রতিষ্ঠানের অপর প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘটনাস্থল পরিদর্শন না করেই ডিপিডিসি দল মনে করছে, আগের প্রতিবেদনটি ভুল এবং ‘শর্টসার্কিট হইলেও হইতে পারে’। আমি দ্বিতীয় প্রতিবেদনের এই ‘নতুন তথ্য’ শুনে হতভম্ব হয়ে যাই এবং ডিপিডিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে যাই। তিনি অবাক বিস্ময়ে বলেন, শুধু প্রথম প্রতিবেদন সম্পর্কেই তিনি অবগত আছেন। আমার প্রশ্ন হলো, তাহলে কে বা কারা এই দ্বিতীয় প্রতিবেদনটি তৈরি করল এবং কেন করল?
একমাত্র জীবিত সন্তান হিসেবে এ ঘটনাটি নিয়ে লেখা খুবই প্রয়োজন ছিল। কখনোই ভাবিনি বাবা ও ভাইয়ের দুর্ভাগ্যজনক পরিণতির ন্যায়বিচার চেয়ে এভাবে ঘুরতে হবে আমাকে। প্রতিটি দিনই এখন আমার নিরন্তর লড়াইয়ের দিন। তবু আশা রাখি, একসময় এই লড়াইয়ের পথ ধরেই বের হয়ে আসবে দেশের আরেকটি অমীমাংসিত বিয়োগান্ত ঘটনার প্রকৃত রহস্য।
মৌটুসী ইসলাম: নুরুল ইসলামের কন্যা।
No comments