অধিকার-বিহারিরা কি বাংলাদেশি হবেন? by আবদুল মজিদ
বাংলাদেশে আটকেপড়া পাকিস্তানিরা (বিহারি) কি বাংলাদেশি হতে যাচ্ছেন? বাংলাদেশি হিসেবে পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ সব নাগরিক সুবিধা কি তারাও পাবেন? আর যদি বাংলাদেশি না হন তাদের পাকিস্তানে পুনর্বাসন করা হবে কবে?
আটকেপড়া পাকিস্তানিদের (বিহারি) প্রত্যাবাসন ইস্যুটি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি আউটস্ট্যান্ডিং ইস্যু। ১৯৯৩ সালে আলোচনার ভিত্তিতে বিহারিদের প্রত্যাবাসনের ইস্যুতে একটি বড় অগ্রগতি হয়। ১৯৯২ সালে পাকিস্তান সরকার বিহারিদের নিয়ে যাওয়া বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। প্রাথমিকভাবে ৩ হাজার বিহারি পরিবারকে পাকিস্তানে প্রত্যাবাসনে রাজি হয় পাকিস্তান। এরই অংশ হিসেবে ১৯৯৩ সালের জানুয়ারিতে ৫০টি পরিবার পাকিস্তানে ফিরে যায়। ওই সময় পাকিস্তান সরকারের পরিবর্তনের ঘটনায় প্রত্যাবাসন কাজ ব্যাহত হয়। এরপর থেকে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যখনই বাংলাদেশ সরকারের আলোচনা হয় তখন বিহারি প্রত্যাবাসন ইস্যুটি তুলে ধরা হচ্ছে। এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার স্থবিরতার আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের একটি রায়। এ রায়টির জন্য বিহারিরা এখন পাকিস্তানে প্রত্যাবাসনের চেয়ে বাংলাদেশি হওয়ার স্বপ্ন ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশে আটকেপড়া পাকিস্তানিরা (বিহারি) কি বাংলাদেশি হতে যাচ্ছেন? বাংলাদেশি হিসেবে পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ সব নাগরিক সুবিধা কি তারাও পাবেন? আর যদি বাংলাদেশি না হন তাদের পাকিস্তানে পুনর্বাসন করা হবে কবে? এ প্রশ্নগুলোর মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিহারিদের জীবন। এটা স্বীকার করতেই হয়, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরবর্তী ৪০ বছর ধরে বিহারিরা রাষ্ট্রপরিচয়হীন অমানবিক জীবন কাটাচ্ছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ১৩টি জেলায় ৬৬টি ক্যাম্পে ৫ লাখের মতো আটকেপড়া পাকিস্তানি (বিহারি) রয়েছেন (১৯৯২ সালের সর্বশেষ জরিপে বলা হয়েছিল, এদেশে বিহারি রয়েছেন ২,৩৭,৪৪০ জন। কিন্তু এই সংখ্যা দ্বিগুণ হবে)। সরকার ও উদ্বাস্তু বিষয়ক জাতিসংঘ হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) তাদের পানি, খাদ্য, বিদ্যুৎ ও পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধা দিচ্ছে। যদিও বিহারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বস্তিসদৃশ ক্যাম্পগুলোতে তারা অমানবিক জীবনযাপন করছেন। তারা সুপেয় পানির সুবিধা পাচ্ছেন না। পাচ্ছেন না বিদ্যুৎ সুবিধা। খাদ্যাভাব তো রয়েছেই। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা খুবই অপরিচ্ছন্ন ও অস্বাস্থ্যকর।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী অনেক আটকেপড়া পাকিস্তানি (বিহারি) নিজেদের জন্মগতভাবে বাংলাদেশি হিসেবে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আইনি সহায়তা নিচ্ছে। ২০০৮ সালের ১৮ মে উর্দুভাষী আটকেপড়া পাকিস্তানিদের নাগরিকত্ব দেওয়ার রায়টি দেওয়ায় তারা লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে পাসপোর্ট ও ট্রাভেল ডকুমেন্ট চেয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, বেসরকারি সংগঠন, ব্রিটিশ এমপি এবং ল' ফার্মগুলো হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী উর্দুভাষী বিহারি সম্প্রদায় দীর্ঘদিন রাষ্ট্রহীন অবস্থায় থাকতে পারে না। বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে তাদের পাসপোর্ট ও ট্রাভেল ডকুমেন্ট পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রশিদ এবং বিচারপতি আশফাকুল ইসলামকে নিয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০০৮ সালের ১৮ মে একটি রুলিং দেন যে, দেশের বিভিন্ন অংশে ১১৬টি ক্যাম্পে আটকেপড়া পাকিস্তানিদের (সাধারণভাবে বলা হয়ে থাকে 'বিহারি') বাংলাদেশি হিসেবে গণ্য করতে হবে। হাইকোর্ট নির্বাচন কমিশনকে বিহারিদের যারা ভোটার হতে চায় তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দেন। তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ২০০৭ সালের ২৬ নভেম্বর স্ট্র্যান্ডেড পাকিস্তানিজ ইয়ুথ রিহ্যাবিলিটেশন মুভমেন্টের প্রেসিডেন্ট সাদাকাত খান ও অন্য ১০ জন সদস্যের দায়ের করা রিট আবেদনের (নং. ১০১২৯/২০০৭) পরিপ্রেক্ষিতে এই রায় দেন হাইকোর্ট। রিট মামলাটির ওপর ২০০৮ সালের ৮ জুন হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে একটি আপিল আবেদন দায়ের করার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটরকে অনুরোধ জানায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ আপিল আবেদনটি আদৌ হয়েছে কি-না বা হয়ে থাকলে এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের কোনো রায় পাওয়া গেছে কি-না সে সম্পর্কে পরিষ্কার কোনো তথ্য আইন মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া যায়নি। হাইকোর্টের রায় পরবর্তী চূড়ান্ত সমাধান না পাওয়ার আগ পর্যন্ত বিহারিদের বাংলাদেশি করে নেওয়ার দাবিটি উঠতেই থাকবে, যা সরকারের জন্য বিব্রতকর।
আটকেপড়া পাকিস্তানিদের নেতা আবদুল জব্বার খানের সঙ্গে কথা হয়। তাদের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০১০ সালের মার্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমাদের সমস্যার কথা জানিয়েছি। হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। আমরা জাতীয় পরিচয়পত্র পাব। পাসপোর্ট পাব। আমরা ক্যাম্পের বাইরে থাকতে পারব। অন্য বাংলাদেশিদের মতো সব নাগরিক সুবিধা পাব। কিন্তু মাত্র ১৮ হাজার ভোটার পরিচয়পত্র পেয়েছেন। কেউ ক্যাম্পের বাইরেও যেতে পারছেন না। কেউ পাসপোর্ট করতে পারছেন না।
আবদুল মজিদ : সাংবাদিক
বাংলাদেশে আটকেপড়া পাকিস্তানিরা (বিহারি) কি বাংলাদেশি হতে যাচ্ছেন? বাংলাদেশি হিসেবে পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ সব নাগরিক সুবিধা কি তারাও পাবেন? আর যদি বাংলাদেশি না হন তাদের পাকিস্তানে পুনর্বাসন করা হবে কবে? এ প্রশ্নগুলোর মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিহারিদের জীবন। এটা স্বীকার করতেই হয়, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরবর্তী ৪০ বছর ধরে বিহারিরা রাষ্ট্রপরিচয়হীন অমানবিক জীবন কাটাচ্ছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ১৩টি জেলায় ৬৬টি ক্যাম্পে ৫ লাখের মতো আটকেপড়া পাকিস্তানি (বিহারি) রয়েছেন (১৯৯২ সালের সর্বশেষ জরিপে বলা হয়েছিল, এদেশে বিহারি রয়েছেন ২,৩৭,৪৪০ জন। কিন্তু এই সংখ্যা দ্বিগুণ হবে)। সরকার ও উদ্বাস্তু বিষয়ক জাতিসংঘ হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) তাদের পানি, খাদ্য, বিদ্যুৎ ও পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধা দিচ্ছে। যদিও বিহারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বস্তিসদৃশ ক্যাম্পগুলোতে তারা অমানবিক জীবনযাপন করছেন। তারা সুপেয় পানির সুবিধা পাচ্ছেন না। পাচ্ছেন না বিদ্যুৎ সুবিধা। খাদ্যাভাব তো রয়েছেই। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা খুবই অপরিচ্ছন্ন ও অস্বাস্থ্যকর।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী অনেক আটকেপড়া পাকিস্তানি (বিহারি) নিজেদের জন্মগতভাবে বাংলাদেশি হিসেবে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আইনি সহায়তা নিচ্ছে। ২০০৮ সালের ১৮ মে উর্দুভাষী আটকেপড়া পাকিস্তানিদের নাগরিকত্ব দেওয়ার রায়টি দেওয়ায় তারা লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে পাসপোর্ট ও ট্রাভেল ডকুমেন্ট চেয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, বেসরকারি সংগঠন, ব্রিটিশ এমপি এবং ল' ফার্মগুলো হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী উর্দুভাষী বিহারি সম্প্রদায় দীর্ঘদিন রাষ্ট্রহীন অবস্থায় থাকতে পারে না। বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে তাদের পাসপোর্ট ও ট্রাভেল ডকুমেন্ট পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রশিদ এবং বিচারপতি আশফাকুল ইসলামকে নিয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০০৮ সালের ১৮ মে একটি রুলিং দেন যে, দেশের বিভিন্ন অংশে ১১৬টি ক্যাম্পে আটকেপড়া পাকিস্তানিদের (সাধারণভাবে বলা হয়ে থাকে 'বিহারি') বাংলাদেশি হিসেবে গণ্য করতে হবে। হাইকোর্ট নির্বাচন কমিশনকে বিহারিদের যারা ভোটার হতে চায় তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দেন। তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ২০০৭ সালের ২৬ নভেম্বর স্ট্র্যান্ডেড পাকিস্তানিজ ইয়ুথ রিহ্যাবিলিটেশন মুভমেন্টের প্রেসিডেন্ট সাদাকাত খান ও অন্য ১০ জন সদস্যের দায়ের করা রিট আবেদনের (নং. ১০১২৯/২০০৭) পরিপ্রেক্ষিতে এই রায় দেন হাইকোর্ট। রিট মামলাটির ওপর ২০০৮ সালের ৮ জুন হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে একটি আপিল আবেদন দায়ের করার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটরকে অনুরোধ জানায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ আপিল আবেদনটি আদৌ হয়েছে কি-না বা হয়ে থাকলে এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের কোনো রায় পাওয়া গেছে কি-না সে সম্পর্কে পরিষ্কার কোনো তথ্য আইন মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া যায়নি। হাইকোর্টের রায় পরবর্তী চূড়ান্ত সমাধান না পাওয়ার আগ পর্যন্ত বিহারিদের বাংলাদেশি করে নেওয়ার দাবিটি উঠতেই থাকবে, যা সরকারের জন্য বিব্রতকর।
আটকেপড়া পাকিস্তানিদের নেতা আবদুল জব্বার খানের সঙ্গে কথা হয়। তাদের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০১০ সালের মার্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমাদের সমস্যার কথা জানিয়েছি। হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। আমরা জাতীয় পরিচয়পত্র পাব। পাসপোর্ট পাব। আমরা ক্যাম্পের বাইরে থাকতে পারব। অন্য বাংলাদেশিদের মতো সব নাগরিক সুবিধা পাব। কিন্তু মাত্র ১৮ হাজার ভোটার পরিচয়পত্র পেয়েছেন। কেউ ক্যাম্পের বাইরেও যেতে পারছেন না। কেউ পাসপোর্ট করতে পারছেন না।
আবদুল মজিদ : সাংবাদিক
No comments