বিশেষ সাক্ষাৎকার-‘ন্যায্য’ সমুদ্রসীমাই বাংলাদেশের চাওয়া by মো. খুরশেদ আলম
অতিরিক্ত পররাষ্ট্রসচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মোহাম্মদ খুরশেদ আলম জাতিসংঘ সমুদ্র আইনের আওতায় পরিচালিত কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। পাকিস্তানের লয়ালপুর কেন্দ্রীয় জেল ও কোহাট দুর্গে তিনি নৌ-প্রশিক্ষণে হাতেখড়ি নিয়েছিলেন। পরে মিডশিপম্যান প্রশিক্ষণে কৃতিত্বের জন্য তিনি ভারতীয় রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদক লাভ করেন।
১৯৭৩ সালে প্রথম শ্রেণীতে কমিশনপ্রাপ্ত হন। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রথম রণতরীর অধিনায়ক হয়ে তিনি ইংল্যান্ডের পোর্টসমাউথ থেকে আলজিয়ার্স, আলেকজান্দ্রিয়া, জেদ্দা, কলম্বো হয়ে চট্টগ্রামে পৌঁছান। পরে তিনি বাংলাদেশ নৌ একাডেমি পারিচালনা এবং ইতালি থেকে যোগাযোগ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি ইংল্যান্ডের গ্রিনউইচ রয়্যাল নেভাল স্টাফ কলেজের স্নাতক। ১৯৯১-৯৪ সালে কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা এবং ২০০২-০৪ সালে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ছিলেন। সাক্ষাৎকারটি গত ১১ মার্চ পররাষ্ট্র দপ্তরে নেওয়া হয়।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান খান
প্রথম আলো সমুদ্রসীমা নির্ধারণে ১৪ মার্চ বাংলাদেশ একটি আন্তর্জাতিক ট্রাইবুন্যাল থেকে প্রথমবারের মতো রায় পেতে যাচ্ছে। এটা হবে বাংলাদেশের ইতিহাসের এক মাইলফলক ঘটনা। সোমবার আপনি হামবুর্গে যাচ্ছেন। যাওয়ার আগে এ বিষয়ে আপনার কাছ থেকে বিস্তারিত জানতে চাই।
মো. খুরশেদ আলম ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ প্রথম সংসদে টেরিটরিয়াল ওয়াটার ও মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট পাস করে। তখন ভারত ও মিয়ানমার বিশেষ করে বাংলাদেশের ঘোষিত বেইজ লাইনের বিষয়ে প্রতিবাদ করে। তারা দাবি করে, বাংলাদেশের বেইজলাইন তাদের সমুদ্রসীমায় ২০ নটিক্যাল মাইল (১৭৬০ গজে এক মাইল, ২০০০ গজে এক নটিক্যাল মাইল) ঢুকে গেছে। তখন থেকেই তারা ইকুইডিসট্যান্স বা সমদূরত্ব পদ্ধতিতে লাইন টেনে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে। তবে ১৯৭৪ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের একটা অর্জন ছিল। সেটা হলো ১২ নটিক্যাল মাইল সমুদ্রসীমা নির্ধারণে দুই দেশ মতৈক্যে পৌঁছেছিল। কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়নি। কিন্তু তার ভিত্তি ছিল দুই দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সম্মত কার্যবিবরণী। তবে ১৯৭৪ সাল থেকেই আমরা জানি, দুই দেশের দাবির কারণে আমরা সাগর পাই মাত্র ১৩০ নটিক্যাল মাইল। অথচ আমাদের দাবি হলো বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকা হিসেবে ২০০ নটিক্যাল মাইল ও মহীসোপান হিসেবে সাড়ে ৪০০ নটিক্যাল মাইলেরও বেশি।
প্রথম আলো আমরা জানি এত বড় একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বাংলাদেশ দুই প্রতিবেশীর সঙ্গে আলোচনা চালাতে যথেষ্ট উদাসীন থেকেছে। এর কারণ কী ছিল? বাংলাদেশ কেন মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যায়নি?
মো. খুরশেদ আলম সেটা আমি বলতে পারব না। সুদীর্ঘকাল দুই প্রতিবেশীর সঙ্গে এ নিয়ে কোনো আলাপ-আলোচনা করা হয়নি। তার মানে সাগর ও সাগরের সম্পদের ওপর আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার যে তাগিদ ছিল, সেটা কোনো সরকারই তেমন সঠিকভাবে পালন করেনি। আর সেটা না করার কারণে জার্মানির আদালতে মিয়ানমার সেটা অস্বীকার করে। আমাদের কাছে সেই দলিল ছিল, আমরা আদালতে তা পেশ করি। আমরা এ-ও বলেছি, গত ৩৫ বছর ধরে মিয়ানমার ওই সম্মত কার্যবিবরণীর আওতায় সুবিধা ভোগ করেছে। শুনানিকালে তারা বলেছে, সেন্টমার্টিন একটি দ্বীপ এবং মিয়ানমার একটি মূল ভূখণ্ড। সুতরাং দ্বীপ আর ভূখণ্ড একই গুরুত্ব বহন করে না। তাই এখন আমরা বাংলাদেশকে ১২ মাইল নয়, ছয় মাইল দেব। আমরা এটা মেনে নিইনি।
প্রথম আলো আমাদের সমুদ্রের উপকূলের বৈশিষ্ট্য অনন্য। এটা বিশ্বের আর দশটা উপকূলের মতো নয়, এর ধরনটা অবতল প্রকৃতির। সে কারণেই কি আমরা ইকুইডিসট্যান্স বা সমদূরত্ব দ্বারা বিচ্ছিন্ন পদ্ধতি পরিহার করে ইকুয়েটেবল বা ন্যয়সংগত পদ্ধতি অনুসরণের দাবি তুলেছি? ১৪ মার্চের রায়ে তো এটাই ফয়সালা হবে যে বাংলাদেশ কোন পদ্ধতির আওতায় পড়বে?
মো. খুরশেদ আলম ঠিক তাই। আমাদের কাছে কিছুতেই সমদূরত্ব পদ্ধতি গ্রহণযোগ্য হওয়ার ছিল না। বিজ্ঞ বিচারকেরা সমদূরত্ব পদ্ধতি স্থির করলে বাংলাদেশের বিরাট ক্ষতি হবে। আমরা খুবই আশাবাদী যে ১৯৮২ সালের জাতিসংঘ সমুদ্র আইনের আওতায় আমরা ‘ন্যায়সংগত পদ্ধতি’র আওতায় মীমাংসা লাভ করব।
প্রথম আলো ১৪ মার্চের রায় কি দুই দেশের ওপর বাধ্যকর না ঐচ্ছিক?
মো. খুরশেদ আলম এটা মানা বাধ্যতামূলক। এই রায় চূড়ান্ত। এর বিরুদ্ধে আর কোনো আপিলও চলবে না।
প্রথম আলো মিয়ানমারের সঙ্গে কয়েকটি পর্বে আলোচনা হয়েছে। এগুলো কী ফল দিয়েছিল?
মো. খুরশেদ আলম আগেই বলেছি, ১৯৭৪ সালেই তাদের সঙ্গে আলোচনায় একটা অগ্রগতি ঘটে। এরপর ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৬ সালের মধ্যে সাত-আটবার আলোচনা হয়েছে, কিন্তু কোনো অগ্রগতি হয়নি। ১৯৮৬ সালের পর ২২ বছর সমুদ্রসীমা নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আর কোনো আলোচনা হয়নি। এরপর নতুন করে আলোচনা শুরু হয় ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে।
প্রথম আলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার কেন এ বিষয়ে আলোচনার তাগিদ অনুভব করেছিল?
মো. খুরশেদ আলম মিয়ানমার ওই সময় বঙ্গোপসাগরে একটি রিগ নিয়ে এসেছিল তাদের একটি ব্লকে তেল আহরণের জন্য। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে সেই আলোচনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখে। আমি দুই-একবার তাদের সঙ্গে আলোচনায় নেতৃত্ব দিয়েছি। কিন্তু দ্রুত বুঝে নিলাম, আলোচনা করে কোনো অগ্রগতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তারা সমদূরত্ব পদ্ধতির আওতায় সমুদ্রে ২৪৩ ডিগ্রি একটি সমুদ্রসীমা আশা করে। অন্যদিকে ১৯৮০ সালের পর ভারতের সঙ্গেও এই ইস্যুতে কোনো আলোচনা হয়নি। ১৯৭৪ থেকে ১৯৮০ পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ভারতের সঙ্গে এক দফা আলোচনা হয়েছিল। মিয়ানমারের সঙ্গে পাঁচ দফা। এর তিন দফা তত্ত্বাবধায়ক ও দুই দফা বর্তমান সরকারের আমলে। ভারতের সঙ্গে হয়েছে চার দফা।
প্রথম আলো পেট্রোবাংলা বঙ্গোপসাগরে ব্লক ঘোষণার পর ভারত ও মিয়ানমার প্রতিবাদ জানিয়েছিল। সেই বিষয়টি একটু খুলে বলুন।
মো. খুরশেদ আলম ২০০৫ সালে বিএনপি সরকার এই ব্লকের বিডিং প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। তারা পুরো কাজই চূড়ান্ত করে গিয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার শুধু তা বাস্তবায়ন করে। বাংলাদেশ সমুদ্রে সোজা লাইন টেনে ২৮টি ব্লক ঘোষণা করে। তখন ভারত ও মিয়ানমার আপত্তি তুলল। ভারত ও মিয়ানমার যথাক্রমে ১০ ও ১৭টি ব্লক দাবি করল।
প্রথম আলো তাহলে বাংলাদেশের ভাগে থাকে মাত্র একটি ব্লক। সেটি কি ১৩০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে? সেটি কী অবস্থায় আছে?
মো. খুরশেদ আলম হ্যাঁ। ভারত ও মিয়ানমার ওই সমদূরত্ব পদ্ধতি ধরে ২৭টি ব্লক দাবি করেছে। আর অবশিষ্ট ব্লকটি কনোকোফিলিপসকে দেওয়া হয়েছে। তারা কাজ করছে।
প্রথম আলো তাহলে বাংলাদেশের পক্ষে একতরফাভাবে ওই ব্লকগুলোর ঘোষণা দেওয়া কি ঠিক হয়নি?
মো. খুরশেদ আলম সিদ্ধান্তটি আসলে আইনানুগ ছিল না। মিয়ানমার যুক্তি দিল, তুমি তোমার ২০০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে ব্লক দিয়েছ, তাহলে আমার সামনে মাত্র ৩০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে কীভাবে তোমার ব্লক পড়ল? জায়গা না থাকলে ভাগাভাগি হবে কিন্তু এটা কীভাবে একতরফা হতে পারে? মিয়ানমারের উপকূল থেকে সর্বোচ্চ ১১৫ মাইল ও সর্বনিম্ন ৩০ মাইলের মধ্যে বাংলাদেশের ব্লক পড়েছিল।
প্রথম আলো কিন্তু বিএনপি সরকার নিশ্চয়ই একটা যুক্তির ওপর ভিত্তি করে ২৮টি ব্লকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সেটি কী ছিল?
মো. খুরশেদ আলম ১৯৭৪ সালের আইন অনুযায়ী বিএনপি ওটা করেছিল। কিন্তু ওই আইনে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা চিহ্নিত করা হয়নি। কারণ দুই পক্ষ সম্মত না হলে সমুদ্রসীমা হয় না। কাগজপত্র থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, বিএনপির তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, এভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া সমীচীন হবে না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান ব্লকের বিষয়ে ভূমিকা রাখেন। তিনি বিবৃতিও দিয়েছিলেন যে বাংলাদেশের এলাকায় বাংলাদেশ ব্লক ঘোষণা করেছে। কিন্তু আপনি যদি আপনার সীমানায় দেয়াল তুলতে চান, তাহলে পাশের বাড়ির মালিকের সঙ্গে আপনাকে আলোচনা করতে হবে। কিন্তু তা না করে ওইভাবে ব্লক ঘোষণা করে সংকটকে গভীরে নেওয়া হয়েছিল।
প্রথম আলো এখন বলুন আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত কীভাবে গ্রহণ করেছিলেন?
মো. খুরশেদ আলম বর্তমান সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গোড়াতেই সিদ্ধান্ত নিল সাগরে আমাদের যে সম্পদ আছে তার ওপর জাতীয় অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আলাপ-আলোচনা করে আর কালক্ষেপণ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাহলে বিকল্প থাকে তৃতীয় পক্ষের শরণাপন্ন হওয়া। এই পটভূমিতে আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।
প্রথম আলো ভারত ও মিয়ানমার এরপর কী প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল?
মো. খুরশেদ আলম মিয়ানমার ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইব্যুনাল ফর ল অব দ্য সি-তে যেতে চাইল। আমরা সম্মত হয়েছি। ভারতকেও আসতে বলা হলো। জার্মানি, ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ড যেভাবে সমস্যার সমাধান করেছিল, সেভাবে আমরা একযোগে সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তি করতে পারতাম। কিন্তু ভারত রাজি হয়নি। এ জন্য আদালত হয়ে গেল দুটো। মিয়ানমারের সঙ্গে হলো ট্রাইব্যুনাল আর ভারতের সঙ্গে থেকে গেল হেগের পারমান্যান্ট কোর্ট অব আরবিট্রেশন। আমরা এখন ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইব্যুনাল ফর ল অব দ্য সি-র রায়ের অপেক্ষা করছি। জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর বিচার-প্রক্রিয়া চলল। মোট ১৬-১৭ দিন জার্মানির ট্রাইব্যুনালে মৌখিক শুনানি হয়েছে।
প্রথম আলো বাংলাদেশ তার শুনানিতে কোন কোন বিষয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিল? আমাদের মতো বিশেষ প্রকৃতির সমুদ্র উপকূল বিশ্বে আর কাদের রয়েছে? আন্তর্জাতিক আদালত থেকে তারা কী ধরনের ফল পেয়েছে? আপনারা কেন আশাবাদী যে আইনি লড়াইয়ে বাংলাদেশ জয়ী হতে চলেছে?
মো. খুরশেদ আলম আমরা সমুদ্র আইনের ‘ন্যায়সংগত’ ধারার আওতায় সুরাহা চেয়েছি। ন্যায়সংগত প্রক্রিয়ায় নির্ধারণে আইনে কোনো সূত্র নেই। সে কারণে আমরা একটা ‘বাই সেক্টর’ পদ্ধতি অনুসরণের কথা বলেছি। যেমন আমাদের ও মিয়ানমার থেকে দুটো কোস্ট লাইন নিলাম। এই অ্যাঙ্গেলটা ভাগ করার নাম বাই সেক্টর। হন্ডুরাস ও নিকারাগুয়া এটা করেছে। তাতে আমরা ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত যেতে পারব। এখন আমরা আজকের আদালতের রায়ের দিকে তাকিয়ে আছি। কোর্ট কী বলতে পারেন। প্রথম বিকল্প সমদূরত্ব পদ্ধতি অনুযায়ী সমাধান দেওয়া। যেটা সমুদ্র আইনে আদালতকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যাতে তারা এ সিদ্ধান্তে না পৌঁছান সে জন্য আমরা যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত আদালতে পেশ করেছি।
প্রথম আলো এখন ভারতের প্রশ্নে আইনগত অবস্থানটি ব্যাখ্যা করুন। মিয়ানমার প্রশ্নে আমরা যে রায় পাচ্ছি তা কীভাবে ভারতের ওপর প্রভাব ফেলবে?
মো. খুরশেদ আলম সালিশ আদালতে পাঁচজন বিচারক থাকবেন। এটি গঠিত হয়ে গেছে গত জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে। আদালত ইতিমধ্যেই তাদের কার্যপ্রণালি চূড়ান্ত করেছেন। গত ৩১ মে ২০১১ বাংলাদেশ এই আদালতে তার কাউন্টার মেমোরিয়াল জমা দিয়েছে। ভারতের দেওয়ার কথা ছিল ৩১ মে ২০১২। কিন্তু ভারত বলেছে, যেহেতু বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার যে রায় হবে, তার একটা প্রভাব এই মামলায় পড়তে পারে, তাই ভারতকে আরও দুই মাস সময় বর্ধিত করা হোক। এখন ভারত ৩১ জুলাই ২০১২-এর মধ্যে তাদের উত্তর দেবে। আমরা উত্তর দেব ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে। তারা রিজয়েন্ডার দেবে জুলাই ২০১৩। এরপর মৌখিক শুনানি শুরু হবে। এরপর রায়। ২০১৪ সালের মধ্যে এই রায় আশা করছি।
প্রথম আলো আপনাকে ধন্যবাদ।
মো. খুরশেদ আলম ধন্যবাদ।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান খান
প্রথম আলো সমুদ্রসীমা নির্ধারণে ১৪ মার্চ বাংলাদেশ একটি আন্তর্জাতিক ট্রাইবুন্যাল থেকে প্রথমবারের মতো রায় পেতে যাচ্ছে। এটা হবে বাংলাদেশের ইতিহাসের এক মাইলফলক ঘটনা। সোমবার আপনি হামবুর্গে যাচ্ছেন। যাওয়ার আগে এ বিষয়ে আপনার কাছ থেকে বিস্তারিত জানতে চাই।
মো. খুরশেদ আলম ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ প্রথম সংসদে টেরিটরিয়াল ওয়াটার ও মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট পাস করে। তখন ভারত ও মিয়ানমার বিশেষ করে বাংলাদেশের ঘোষিত বেইজ লাইনের বিষয়ে প্রতিবাদ করে। তারা দাবি করে, বাংলাদেশের বেইজলাইন তাদের সমুদ্রসীমায় ২০ নটিক্যাল মাইল (১৭৬০ গজে এক মাইল, ২০০০ গজে এক নটিক্যাল মাইল) ঢুকে গেছে। তখন থেকেই তারা ইকুইডিসট্যান্স বা সমদূরত্ব পদ্ধতিতে লাইন টেনে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে। তবে ১৯৭৪ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের একটা অর্জন ছিল। সেটা হলো ১২ নটিক্যাল মাইল সমুদ্রসীমা নির্ধারণে দুই দেশ মতৈক্যে পৌঁছেছিল। কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়নি। কিন্তু তার ভিত্তি ছিল দুই দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সম্মত কার্যবিবরণী। তবে ১৯৭৪ সাল থেকেই আমরা জানি, দুই দেশের দাবির কারণে আমরা সাগর পাই মাত্র ১৩০ নটিক্যাল মাইল। অথচ আমাদের দাবি হলো বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকা হিসেবে ২০০ নটিক্যাল মাইল ও মহীসোপান হিসেবে সাড়ে ৪০০ নটিক্যাল মাইলেরও বেশি।
প্রথম আলো আমরা জানি এত বড় একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বাংলাদেশ দুই প্রতিবেশীর সঙ্গে আলোচনা চালাতে যথেষ্ট উদাসীন থেকেছে। এর কারণ কী ছিল? বাংলাদেশ কেন মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যায়নি?
মো. খুরশেদ আলম সেটা আমি বলতে পারব না। সুদীর্ঘকাল দুই প্রতিবেশীর সঙ্গে এ নিয়ে কোনো আলাপ-আলোচনা করা হয়নি। তার মানে সাগর ও সাগরের সম্পদের ওপর আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার যে তাগিদ ছিল, সেটা কোনো সরকারই তেমন সঠিকভাবে পালন করেনি। আর সেটা না করার কারণে জার্মানির আদালতে মিয়ানমার সেটা অস্বীকার করে। আমাদের কাছে সেই দলিল ছিল, আমরা আদালতে তা পেশ করি। আমরা এ-ও বলেছি, গত ৩৫ বছর ধরে মিয়ানমার ওই সম্মত কার্যবিবরণীর আওতায় সুবিধা ভোগ করেছে। শুনানিকালে তারা বলেছে, সেন্টমার্টিন একটি দ্বীপ এবং মিয়ানমার একটি মূল ভূখণ্ড। সুতরাং দ্বীপ আর ভূখণ্ড একই গুরুত্ব বহন করে না। তাই এখন আমরা বাংলাদেশকে ১২ মাইল নয়, ছয় মাইল দেব। আমরা এটা মেনে নিইনি।
প্রথম আলো আমাদের সমুদ্রের উপকূলের বৈশিষ্ট্য অনন্য। এটা বিশ্বের আর দশটা উপকূলের মতো নয়, এর ধরনটা অবতল প্রকৃতির। সে কারণেই কি আমরা ইকুইডিসট্যান্স বা সমদূরত্ব দ্বারা বিচ্ছিন্ন পদ্ধতি পরিহার করে ইকুয়েটেবল বা ন্যয়সংগত পদ্ধতি অনুসরণের দাবি তুলেছি? ১৪ মার্চের রায়ে তো এটাই ফয়সালা হবে যে বাংলাদেশ কোন পদ্ধতির আওতায় পড়বে?
মো. খুরশেদ আলম ঠিক তাই। আমাদের কাছে কিছুতেই সমদূরত্ব পদ্ধতি গ্রহণযোগ্য হওয়ার ছিল না। বিজ্ঞ বিচারকেরা সমদূরত্ব পদ্ধতি স্থির করলে বাংলাদেশের বিরাট ক্ষতি হবে। আমরা খুবই আশাবাদী যে ১৯৮২ সালের জাতিসংঘ সমুদ্র আইনের আওতায় আমরা ‘ন্যায়সংগত পদ্ধতি’র আওতায় মীমাংসা লাভ করব।
প্রথম আলো ১৪ মার্চের রায় কি দুই দেশের ওপর বাধ্যকর না ঐচ্ছিক?
মো. খুরশেদ আলম এটা মানা বাধ্যতামূলক। এই রায় চূড়ান্ত। এর বিরুদ্ধে আর কোনো আপিলও চলবে না।
প্রথম আলো মিয়ানমারের সঙ্গে কয়েকটি পর্বে আলোচনা হয়েছে। এগুলো কী ফল দিয়েছিল?
মো. খুরশেদ আলম আগেই বলেছি, ১৯৭৪ সালেই তাদের সঙ্গে আলোচনায় একটা অগ্রগতি ঘটে। এরপর ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৬ সালের মধ্যে সাত-আটবার আলোচনা হয়েছে, কিন্তু কোনো অগ্রগতি হয়নি। ১৯৮৬ সালের পর ২২ বছর সমুদ্রসীমা নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আর কোনো আলোচনা হয়নি। এরপর নতুন করে আলোচনা শুরু হয় ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে।
প্রথম আলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার কেন এ বিষয়ে আলোচনার তাগিদ অনুভব করেছিল?
মো. খুরশেদ আলম মিয়ানমার ওই সময় বঙ্গোপসাগরে একটি রিগ নিয়ে এসেছিল তাদের একটি ব্লকে তেল আহরণের জন্য। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে সেই আলোচনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখে। আমি দুই-একবার তাদের সঙ্গে আলোচনায় নেতৃত্ব দিয়েছি। কিন্তু দ্রুত বুঝে নিলাম, আলোচনা করে কোনো অগ্রগতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তারা সমদূরত্ব পদ্ধতির আওতায় সমুদ্রে ২৪৩ ডিগ্রি একটি সমুদ্রসীমা আশা করে। অন্যদিকে ১৯৮০ সালের পর ভারতের সঙ্গেও এই ইস্যুতে কোনো আলোচনা হয়নি। ১৯৭৪ থেকে ১৯৮০ পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ভারতের সঙ্গে এক দফা আলোচনা হয়েছিল। মিয়ানমারের সঙ্গে পাঁচ দফা। এর তিন দফা তত্ত্বাবধায়ক ও দুই দফা বর্তমান সরকারের আমলে। ভারতের সঙ্গে হয়েছে চার দফা।
প্রথম আলো পেট্রোবাংলা বঙ্গোপসাগরে ব্লক ঘোষণার পর ভারত ও মিয়ানমার প্রতিবাদ জানিয়েছিল। সেই বিষয়টি একটু খুলে বলুন।
মো. খুরশেদ আলম ২০০৫ সালে বিএনপি সরকার এই ব্লকের বিডিং প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। তারা পুরো কাজই চূড়ান্ত করে গিয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার শুধু তা বাস্তবায়ন করে। বাংলাদেশ সমুদ্রে সোজা লাইন টেনে ২৮টি ব্লক ঘোষণা করে। তখন ভারত ও মিয়ানমার আপত্তি তুলল। ভারত ও মিয়ানমার যথাক্রমে ১০ ও ১৭টি ব্লক দাবি করল।
প্রথম আলো তাহলে বাংলাদেশের ভাগে থাকে মাত্র একটি ব্লক। সেটি কি ১৩০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে? সেটি কী অবস্থায় আছে?
মো. খুরশেদ আলম হ্যাঁ। ভারত ও মিয়ানমার ওই সমদূরত্ব পদ্ধতি ধরে ২৭টি ব্লক দাবি করেছে। আর অবশিষ্ট ব্লকটি কনোকোফিলিপসকে দেওয়া হয়েছে। তারা কাজ করছে।
প্রথম আলো তাহলে বাংলাদেশের পক্ষে একতরফাভাবে ওই ব্লকগুলোর ঘোষণা দেওয়া কি ঠিক হয়নি?
মো. খুরশেদ আলম সিদ্ধান্তটি আসলে আইনানুগ ছিল না। মিয়ানমার যুক্তি দিল, তুমি তোমার ২০০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে ব্লক দিয়েছ, তাহলে আমার সামনে মাত্র ৩০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে কীভাবে তোমার ব্লক পড়ল? জায়গা না থাকলে ভাগাভাগি হবে কিন্তু এটা কীভাবে একতরফা হতে পারে? মিয়ানমারের উপকূল থেকে সর্বোচ্চ ১১৫ মাইল ও সর্বনিম্ন ৩০ মাইলের মধ্যে বাংলাদেশের ব্লক পড়েছিল।
প্রথম আলো কিন্তু বিএনপি সরকার নিশ্চয়ই একটা যুক্তির ওপর ভিত্তি করে ২৮টি ব্লকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সেটি কী ছিল?
মো. খুরশেদ আলম ১৯৭৪ সালের আইন অনুযায়ী বিএনপি ওটা করেছিল। কিন্তু ওই আইনে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা চিহ্নিত করা হয়নি। কারণ দুই পক্ষ সম্মত না হলে সমুদ্রসীমা হয় না। কাগজপত্র থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, বিএনপির তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, এভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া সমীচীন হবে না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান ব্লকের বিষয়ে ভূমিকা রাখেন। তিনি বিবৃতিও দিয়েছিলেন যে বাংলাদেশের এলাকায় বাংলাদেশ ব্লক ঘোষণা করেছে। কিন্তু আপনি যদি আপনার সীমানায় দেয়াল তুলতে চান, তাহলে পাশের বাড়ির মালিকের সঙ্গে আপনাকে আলোচনা করতে হবে। কিন্তু তা না করে ওইভাবে ব্লক ঘোষণা করে সংকটকে গভীরে নেওয়া হয়েছিল।
প্রথম আলো এখন বলুন আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত কীভাবে গ্রহণ করেছিলেন?
মো. খুরশেদ আলম বর্তমান সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গোড়াতেই সিদ্ধান্ত নিল সাগরে আমাদের যে সম্পদ আছে তার ওপর জাতীয় অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আলাপ-আলোচনা করে আর কালক্ষেপণ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাহলে বিকল্প থাকে তৃতীয় পক্ষের শরণাপন্ন হওয়া। এই পটভূমিতে আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।
প্রথম আলো ভারত ও মিয়ানমার এরপর কী প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল?
মো. খুরশেদ আলম মিয়ানমার ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইব্যুনাল ফর ল অব দ্য সি-তে যেতে চাইল। আমরা সম্মত হয়েছি। ভারতকেও আসতে বলা হলো। জার্মানি, ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ড যেভাবে সমস্যার সমাধান করেছিল, সেভাবে আমরা একযোগে সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তি করতে পারতাম। কিন্তু ভারত রাজি হয়নি। এ জন্য আদালত হয়ে গেল দুটো। মিয়ানমারের সঙ্গে হলো ট্রাইব্যুনাল আর ভারতের সঙ্গে থেকে গেল হেগের পারমান্যান্ট কোর্ট অব আরবিট্রেশন। আমরা এখন ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইব্যুনাল ফর ল অব দ্য সি-র রায়ের অপেক্ষা করছি। জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর বিচার-প্রক্রিয়া চলল। মোট ১৬-১৭ দিন জার্মানির ট্রাইব্যুনালে মৌখিক শুনানি হয়েছে।
প্রথম আলো বাংলাদেশ তার শুনানিতে কোন কোন বিষয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিল? আমাদের মতো বিশেষ প্রকৃতির সমুদ্র উপকূল বিশ্বে আর কাদের রয়েছে? আন্তর্জাতিক আদালত থেকে তারা কী ধরনের ফল পেয়েছে? আপনারা কেন আশাবাদী যে আইনি লড়াইয়ে বাংলাদেশ জয়ী হতে চলেছে?
মো. খুরশেদ আলম আমরা সমুদ্র আইনের ‘ন্যায়সংগত’ ধারার আওতায় সুরাহা চেয়েছি। ন্যায়সংগত প্রক্রিয়ায় নির্ধারণে আইনে কোনো সূত্র নেই। সে কারণে আমরা একটা ‘বাই সেক্টর’ পদ্ধতি অনুসরণের কথা বলেছি। যেমন আমাদের ও মিয়ানমার থেকে দুটো কোস্ট লাইন নিলাম। এই অ্যাঙ্গেলটা ভাগ করার নাম বাই সেক্টর। হন্ডুরাস ও নিকারাগুয়া এটা করেছে। তাতে আমরা ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত যেতে পারব। এখন আমরা আজকের আদালতের রায়ের দিকে তাকিয়ে আছি। কোর্ট কী বলতে পারেন। প্রথম বিকল্প সমদূরত্ব পদ্ধতি অনুযায়ী সমাধান দেওয়া। যেটা সমুদ্র আইনে আদালতকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যাতে তারা এ সিদ্ধান্তে না পৌঁছান সে জন্য আমরা যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত আদালতে পেশ করেছি।
প্রথম আলো এখন ভারতের প্রশ্নে আইনগত অবস্থানটি ব্যাখ্যা করুন। মিয়ানমার প্রশ্নে আমরা যে রায় পাচ্ছি তা কীভাবে ভারতের ওপর প্রভাব ফেলবে?
মো. খুরশেদ আলম সালিশ আদালতে পাঁচজন বিচারক থাকবেন। এটি গঠিত হয়ে গেছে গত জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে। আদালত ইতিমধ্যেই তাদের কার্যপ্রণালি চূড়ান্ত করেছেন। গত ৩১ মে ২০১১ বাংলাদেশ এই আদালতে তার কাউন্টার মেমোরিয়াল জমা দিয়েছে। ভারতের দেওয়ার কথা ছিল ৩১ মে ২০১২। কিন্তু ভারত বলেছে, যেহেতু বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার যে রায় হবে, তার একটা প্রভাব এই মামলায় পড়তে পারে, তাই ভারতকে আরও দুই মাস সময় বর্ধিত করা হোক। এখন ভারত ৩১ জুলাই ২০১২-এর মধ্যে তাদের উত্তর দেবে। আমরা উত্তর দেব ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে। তারা রিজয়েন্ডার দেবে জুলাই ২০১৩। এরপর মৌখিক শুনানি শুরু হবে। এরপর রায়। ২০১৪ সালের মধ্যে এই রায় আশা করছি।
প্রথম আলো আপনাকে ধন্যবাদ।
মো. খুরশেদ আলম ধন্যবাদ।
No comments