আফগানিস্তান-কান্দাহারের বাদশাহের মৃত্যু by পেপে এসকোবার
ওয়াশিংটন থেকে ব্রাসেলস কিংবা কাবুলে যাঁরা কোনো ঘটনা ঘুরিয়ে নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসতে তৎপর থাকেন, তাঁদের কয়েক রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। বিশ্বজনমত বিরামহীনভাবে ধাক্কা খাচ্ছে পাকিস্তান-আফগানযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো জোট ‘বিজয়’ অর্জন করতে যাচ্ছে—এমন উদ্ভট ধারণায়।
এবার দেখা যাক মাঠের বাস্তবতা কী। মার্কিন সরকার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে ৮০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা ‘স্থগিত’ করার পরক্ষণেই পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্থানীয় এক্সপ্রেস টিভিকে বললেন, ‘পরিস্থিতি নেহাত কঠিন হয়ে পড়লে আমরা আমাদের সৈন্যদের ফিরিয়ে আনব।’ স্পষ্টত তিনি ইঙ্গিত দিচ্ছেন, পশতুন-অধ্যুষিত উপজাতীয় এলাকায় গেরিলাদের বিরুদ্ধে লড়তে ইসলামাবাদ থেকে আর কোনো সৈন্য যাবে না। এর চেয়ে খোলাখুলিভাবে বলতে পারতেন না মুখতার। ‘আমেরিকানরা যদি আমাদের অর্থ দিতে অস্বীকৃতি জানায়, তবে ঠিক আছে...সেনাবাহিনীকে এত লম্বা সময় ধরে পার্বত্য অঞ্চলে রাখা সম্ভব হবে না।’
এখানে আবারও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, উপজাতীয় অঞ্চলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অনিচ্ছা সত্ত্বেও ওয়াশিংটনের সন্ত্রাসবিরোধী বিদ্রোহ দমন অভিযানের খেলা খেলছে। পশতুন জাতীয়তাবাদকে ইসলামাবাদের যতটা ভয়, সেনাবাহিনী জানে তাদের ততটাই সতর্কতার সঙ্গে এগোতে হবে, অন্যথায় পশতুন উপজাতীয় গণবিদ্রোহের মুখে পড়তে হবে। যে গণবিদ্রোহ আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসবে পশতুনিস্তান সংহতকরণের মতো নিষিদ্ধ ভাবনা। এ কারণে পাকিস্তান ভেঙে পড়ার প্রশ্ন উঠবে।
অন্যদিকে, আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই কদিন আগে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেছেন অতিথি প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজির সঙ্গে। কারজাই বলেন, ‘আফগান জনগণের ঘরে ঘরে সবার একই বেদনা। আশার কথা, আল্লাহ চাহেন তো আফগান জনগণের দুঃখ-বেদনার অবসান ঘটবে; শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করা হবে।’ প্রেসিডেন্ট কারজাইয়ের সৎভাই আহমদ ওয়ালির হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে খুব বেশি আফগান একই বেদনা অনুভব করবেন না। আহমদ ওয়ালি ছিলেন বিরাট মাদক ব্যবসায়ী, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর বেতনভুক্ত মূল্যবান ব্যক্তি এবং কান্দাহার প্রাদেশিক পরিষদের প্রধান হিসেবে কান্দাহারের ক্ষমতা বাটোয়ারার শীর্ষস্থানীয় মধ্যস্থতাকারী।
তালেবান প্রকৃতপক্ষে হয়তো দেশটির ৭০ শতাংশই নিয়ন্ত্রণ করে। এদিক থেকে দেখলে এই হত্যাকাণ্ড একটি চমকপ্রদ অভ্যুত্থান। হত্যাকাণ্ডের দায় যথারীতি স্বীকার করেছে তালেবান। তালেবানের মুখপাত্র ইউসুফ আহমাদি দায় স্বীকার করে বলেন, ‘বসন্তকালীন অভিযান শুরু করার পর এটি সবচেয়ে বড় অর্জনের অন্যতম। আমরা সম্প্রতি তাঁকে হত্যার ভার দিয়েছিলাম সরদার মোহাম্মদকে। তাঁকে হত্যার পরপর সরদার মোহাম্মদও শহীদ হলেন।’
কান্দাহারে প্রচারিত পাল্টা মত হলো, কারজাইয়ের মতো সরদার মোহাম্মদ একই পোপোলজাই গোত্র থেকে আসা একজন বিশ্বস্ত কারজাই কমান্ডার। তিনি আহমদ ওয়ালির মাথায় দুটি গুলি করে তাঁকে হত্যা করেছেন। মাদক ব্যবসা ও ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। যে করেই হোক, জনসংযোগের যুদ্ধেও তালেবান বিজয়ী হচ্ছে।
এখন তালেবানরা ওয়াশিংটনপন্থী প্রধানতম ব্যক্তিকে মেরে ফেলল। শুধু কান্দাহারে নয়, পুরো দক্ষিণ আফগানিস্তানে ছিল তাঁর দোর্দণ্ড প্রতাপ। ন্যাটো বাহিনী যেখানে তালেবানকে তার আধ্যাত্মিক কেন্দ্র ও পছন্দনীয় জায়গায় পরাজিত করতে নিয়োজিত, সেখানেই এই হত্যাকাণ্ড ‘ন্যাটো জিতে চলেছে’ এই আধিপত্যিক বয়ানকে ভেঙে চূর্ণ করে দিয়েছে।
২০০১ সালের হেমন্তে তালেবানের ওপর মার্কিন বোমা হামলা চলছিল। সেই সময়ে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের রাজধানী কোয়েটায় আহমদ ওয়ালির সঙ্গে আমি দীর্ঘ সময় কাটিয়েছি। সেটা তিনি ও তাঁর সৎভাই ‘কাবাব বিক্রেতা’ থেকে গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিকে পরিণত হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগের কথা।
তখনই তিনি সিআইএর মূল্যবান ব্যক্তির তালিকায়। সেই সময়টায় যুক্তরাষ্ট্র হামিদ কারজাইকে আফগানিস্তানে প্রতিষ্ঠা দিতে তৎপর। আহমদ ওয়ালি তখনই অন্যতম প্রধান আফিম চোরাকারবারি। তা ছাড়া তাঁর উপজাতির নেতাও বটে। নিজের সৎভাইয়ের চেয়ে তিনি অনেক বেশি দৃঢ়প্রত্যয়ী।
বিংশ শতকের প্রথম দশকে তিনি এসবই জারি রেখেছিলেন। পাশাপাশি হোটেল, আবাসন প্রকল্প, এমনকি টয়োটার ডিলারশিপের মালিকানা পান। তবে, এত কিছু ছাপিয়েও তিনি কান্দাহার স্ট্রাইক ফোর্সের কমান্ডার হিসেবে কান্দাহারকে ‘ধরে রাখতে’ লড়াই করে যাচ্ছিলেন। সেখানে তালেবানীকরণ অত্যন্ত প্রচণ্ড ছিল। কান্দাহার স্ট্রাইক ফোর্স একটি বেসরকারি আধা সামরিক গোষ্ঠী, যারা শীর্ষস্থানীয় তালেবান নেতাদের একে একে টার্গেট করে হত্যার কাজে মার্কিন বিশেষ বাহিনী ও সিআইএকে সহায়তা করে।
কার্যত তিনিই ছিলেন গভর্নর। লোকে তাঁকে বলত ‘কান্দাহারের বাদশাহ’—গভর্নর ও দন্তহীন প্রাদেশিক পরিষদের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষমতাধর। তাঁর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা থেকে তাজিক, উজবেক, হাজারা ও সেক্যুলার পশতুনরা যে শিক্ষাটা নিচ্ছে তা হলো, কারজাই সরকার ফাঁপা (অবশ্য, বেশির ভাগ আফগান আগে থেকেই সেটা জানে), এমনকি কারজাইদের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিকেও রক্ষা করার সামর্থ্য সরকারের নেই।
ন্যাটোর আফগানিস্তান ‘জয়ের’ গল্পের ব্যাপারে আর কিছু বলার নেই। পাকিস্তানের উপজাতীয় এলাকায় যুদ্ধ ‘জিতে চলেছে’ এমন প্রচারণার ব্যাপারে আগ্রহী যে কারও উচিত হবে পাকিস্তানের ক্ষমতাধর সেনাপ্রধান আশফাক কায়ানি (পেন্টাগনের প্রাণপ্রিয় ব্যক্তি) এবং গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ সুজা পাশা কী ভাবছেন, সেদিকে ফিরে তাকানো। তাঁদের দাসানুদাসদের মধ্য দিয়ে তাঁরা বলছেন, ওয়াশিংটনের ‘স্থগিত’ হওয়া ৮০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়াই তাঁদের চলবে অথবা যা কিছু দরকার, সবই তাঁরা ‘সব সময়ের বন্ধু’ চীনের কাছে চাইবেন।
পেন্টাগনের মুখপাত্র কর্নেল ডেভিড লাগানের মতে, ইসলামাবাদ ৮০০ মিলিয়ন ডলার পেতে পারে, যদি আরও অনেক বেশি মার্কিন গোয়েন্দাকে ভিসা দেয় এবং পাকিস্তানি জনগণকে ব্যাপক হারে সন্ত্রাসবাদবিরোধী ও বিদ্রোহবিরোধী প্রশিক্ষণ পুনরায় চালু করে। উপজাতীয় অঞ্চলের ওপর মার্কিন ড্রোনযুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ইসলামাবাদ, এসব নতুন বিষয়ে আগ্রহী নয়।
এ ক্ষেত্রে ‘বিজয়ী’ আসলে আল-কায়েদা। এটি উপজাতীয় অঞ্চলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে পাকিস্তানি তালেবানকে সংঘর্ষে জড়িয়ে তা ব্যবহার করছে মনোযোগ ভিন্নমুখী করার কৌশল হিসেবে। ইত্যবসরে মধ্য এশিয়ার দিকে তারা নিজস্ব খিলাফতচালিত এজেন্ডা বিস্তৃত করার বুদ্ধি আঁটছে।
কিন্তু মার্কিন জেনারেল ডেভিড পেট্রাউস তো বলে আসছিলেন, আল-কায়েদার বিরুদ্ধে মার্কিনের ‘বিজয় ঘটে চলেছে’: ‘কেন্দ্রীয় শাসনাধীন উপজাতীয় অঞ্চলে আল-কায়েদা বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে...এই ঘটনা আল-কায়েদার সত্যিকারের কৌশলগত পরাজয়ের সম্ভাবনা ধারণ করে।’ আসলেই কি তা-ই? উপজাতীয় এলাকায় ড্রোন দিয়ে সবাইকে মেরে না ফেলা পর্যন্ত সেটা সত্যি হবে না।
এশিয়া টাইমস অনলাইন থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনুবাদ: আহসান হাবীব
পেপে এসকোবার: এশিয়া টাইমসের ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি।
এখানে আবারও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, উপজাতীয় অঞ্চলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অনিচ্ছা সত্ত্বেও ওয়াশিংটনের সন্ত্রাসবিরোধী বিদ্রোহ দমন অভিযানের খেলা খেলছে। পশতুন জাতীয়তাবাদকে ইসলামাবাদের যতটা ভয়, সেনাবাহিনী জানে তাদের ততটাই সতর্কতার সঙ্গে এগোতে হবে, অন্যথায় পশতুন উপজাতীয় গণবিদ্রোহের মুখে পড়তে হবে। যে গণবিদ্রোহ আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসবে পশতুনিস্তান সংহতকরণের মতো নিষিদ্ধ ভাবনা। এ কারণে পাকিস্তান ভেঙে পড়ার প্রশ্ন উঠবে।
অন্যদিকে, আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই কদিন আগে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেছেন অতিথি প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজির সঙ্গে। কারজাই বলেন, ‘আফগান জনগণের ঘরে ঘরে সবার একই বেদনা। আশার কথা, আল্লাহ চাহেন তো আফগান জনগণের দুঃখ-বেদনার অবসান ঘটবে; শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করা হবে।’ প্রেসিডেন্ট কারজাইয়ের সৎভাই আহমদ ওয়ালির হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে খুব বেশি আফগান একই বেদনা অনুভব করবেন না। আহমদ ওয়ালি ছিলেন বিরাট মাদক ব্যবসায়ী, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর বেতনভুক্ত মূল্যবান ব্যক্তি এবং কান্দাহার প্রাদেশিক পরিষদের প্রধান হিসেবে কান্দাহারের ক্ষমতা বাটোয়ারার শীর্ষস্থানীয় মধ্যস্থতাকারী।
তালেবান প্রকৃতপক্ষে হয়তো দেশটির ৭০ শতাংশই নিয়ন্ত্রণ করে। এদিক থেকে দেখলে এই হত্যাকাণ্ড একটি চমকপ্রদ অভ্যুত্থান। হত্যাকাণ্ডের দায় যথারীতি স্বীকার করেছে তালেবান। তালেবানের মুখপাত্র ইউসুফ আহমাদি দায় স্বীকার করে বলেন, ‘বসন্তকালীন অভিযান শুরু করার পর এটি সবচেয়ে বড় অর্জনের অন্যতম। আমরা সম্প্রতি তাঁকে হত্যার ভার দিয়েছিলাম সরদার মোহাম্মদকে। তাঁকে হত্যার পরপর সরদার মোহাম্মদও শহীদ হলেন।’
কান্দাহারে প্রচারিত পাল্টা মত হলো, কারজাইয়ের মতো সরদার মোহাম্মদ একই পোপোলজাই গোত্র থেকে আসা একজন বিশ্বস্ত কারজাই কমান্ডার। তিনি আহমদ ওয়ালির মাথায় দুটি গুলি করে তাঁকে হত্যা করেছেন। মাদক ব্যবসা ও ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। যে করেই হোক, জনসংযোগের যুদ্ধেও তালেবান বিজয়ী হচ্ছে।
এখন তালেবানরা ওয়াশিংটনপন্থী প্রধানতম ব্যক্তিকে মেরে ফেলল। শুধু কান্দাহারে নয়, পুরো দক্ষিণ আফগানিস্তানে ছিল তাঁর দোর্দণ্ড প্রতাপ। ন্যাটো বাহিনী যেখানে তালেবানকে তার আধ্যাত্মিক কেন্দ্র ও পছন্দনীয় জায়গায় পরাজিত করতে নিয়োজিত, সেখানেই এই হত্যাকাণ্ড ‘ন্যাটো জিতে চলেছে’ এই আধিপত্যিক বয়ানকে ভেঙে চূর্ণ করে দিয়েছে।
২০০১ সালের হেমন্তে তালেবানের ওপর মার্কিন বোমা হামলা চলছিল। সেই সময়ে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের রাজধানী কোয়েটায় আহমদ ওয়ালির সঙ্গে আমি দীর্ঘ সময় কাটিয়েছি। সেটা তিনি ও তাঁর সৎভাই ‘কাবাব বিক্রেতা’ থেকে গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিকে পরিণত হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগের কথা।
তখনই তিনি সিআইএর মূল্যবান ব্যক্তির তালিকায়। সেই সময়টায় যুক্তরাষ্ট্র হামিদ কারজাইকে আফগানিস্তানে প্রতিষ্ঠা দিতে তৎপর। আহমদ ওয়ালি তখনই অন্যতম প্রধান আফিম চোরাকারবারি। তা ছাড়া তাঁর উপজাতির নেতাও বটে। নিজের সৎভাইয়ের চেয়ে তিনি অনেক বেশি দৃঢ়প্রত্যয়ী।
বিংশ শতকের প্রথম দশকে তিনি এসবই জারি রেখেছিলেন। পাশাপাশি হোটেল, আবাসন প্রকল্প, এমনকি টয়োটার ডিলারশিপের মালিকানা পান। তবে, এত কিছু ছাপিয়েও তিনি কান্দাহার স্ট্রাইক ফোর্সের কমান্ডার হিসেবে কান্দাহারকে ‘ধরে রাখতে’ লড়াই করে যাচ্ছিলেন। সেখানে তালেবানীকরণ অত্যন্ত প্রচণ্ড ছিল। কান্দাহার স্ট্রাইক ফোর্স একটি বেসরকারি আধা সামরিক গোষ্ঠী, যারা শীর্ষস্থানীয় তালেবান নেতাদের একে একে টার্গেট করে হত্যার কাজে মার্কিন বিশেষ বাহিনী ও সিআইএকে সহায়তা করে।
কার্যত তিনিই ছিলেন গভর্নর। লোকে তাঁকে বলত ‘কান্দাহারের বাদশাহ’—গভর্নর ও দন্তহীন প্রাদেশিক পরিষদের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষমতাধর। তাঁর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা থেকে তাজিক, উজবেক, হাজারা ও সেক্যুলার পশতুনরা যে শিক্ষাটা নিচ্ছে তা হলো, কারজাই সরকার ফাঁপা (অবশ্য, বেশির ভাগ আফগান আগে থেকেই সেটা জানে), এমনকি কারজাইদের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিকেও রক্ষা করার সামর্থ্য সরকারের নেই।
ন্যাটোর আফগানিস্তান ‘জয়ের’ গল্পের ব্যাপারে আর কিছু বলার নেই। পাকিস্তানের উপজাতীয় এলাকায় যুদ্ধ ‘জিতে চলেছে’ এমন প্রচারণার ব্যাপারে আগ্রহী যে কারও উচিত হবে পাকিস্তানের ক্ষমতাধর সেনাপ্রধান আশফাক কায়ানি (পেন্টাগনের প্রাণপ্রিয় ব্যক্তি) এবং গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ সুজা পাশা কী ভাবছেন, সেদিকে ফিরে তাকানো। তাঁদের দাসানুদাসদের মধ্য দিয়ে তাঁরা বলছেন, ওয়াশিংটনের ‘স্থগিত’ হওয়া ৮০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়াই তাঁদের চলবে অথবা যা কিছু দরকার, সবই তাঁরা ‘সব সময়ের বন্ধু’ চীনের কাছে চাইবেন।
পেন্টাগনের মুখপাত্র কর্নেল ডেভিড লাগানের মতে, ইসলামাবাদ ৮০০ মিলিয়ন ডলার পেতে পারে, যদি আরও অনেক বেশি মার্কিন গোয়েন্দাকে ভিসা দেয় এবং পাকিস্তানি জনগণকে ব্যাপক হারে সন্ত্রাসবাদবিরোধী ও বিদ্রোহবিরোধী প্রশিক্ষণ পুনরায় চালু করে। উপজাতীয় অঞ্চলের ওপর মার্কিন ড্রোনযুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ইসলামাবাদ, এসব নতুন বিষয়ে আগ্রহী নয়।
এ ক্ষেত্রে ‘বিজয়ী’ আসলে আল-কায়েদা। এটি উপজাতীয় অঞ্চলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে পাকিস্তানি তালেবানকে সংঘর্ষে জড়িয়ে তা ব্যবহার করছে মনোযোগ ভিন্নমুখী করার কৌশল হিসেবে। ইত্যবসরে মধ্য এশিয়ার দিকে তারা নিজস্ব খিলাফতচালিত এজেন্ডা বিস্তৃত করার বুদ্ধি আঁটছে।
কিন্তু মার্কিন জেনারেল ডেভিড পেট্রাউস তো বলে আসছিলেন, আল-কায়েদার বিরুদ্ধে মার্কিনের ‘বিজয় ঘটে চলেছে’: ‘কেন্দ্রীয় শাসনাধীন উপজাতীয় অঞ্চলে আল-কায়েদা বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে...এই ঘটনা আল-কায়েদার সত্যিকারের কৌশলগত পরাজয়ের সম্ভাবনা ধারণ করে।’ আসলেই কি তা-ই? উপজাতীয় এলাকায় ড্রোন দিয়ে সবাইকে মেরে না ফেলা পর্যন্ত সেটা সত্যি হবে না।
এশিয়া টাইমস অনলাইন থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনুবাদ: আহসান হাবীব
পেপে এসকোবার: এশিয়া টাইমসের ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি।
No comments