বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি-ভাবিয়া করিও কাজ ...
ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না_ বাংলাভাষায় বহু পুরনো প্রবাদ। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বা পিডিবি এবং সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন শেষে উপসংহারে এসেছে_ নাহ্, কাজটি ঠিক হয়নি। বিদ্যুতের নিদারুণ ঘাটতির মুখে তারা ৩৩টি ছোট ছোট বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলার অনুমতি দিয়েছিল, যেগুলোতে জ্বালানি হিসেবে
ব্যবহার হচ্ছে তেল। গ্যাসের ঘাটতির কারণেই এমন সিদ্ধান্ত। ক্ষমতা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে এগুলোতে দিনে প্রায় ৩০ কোটি টাকার ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল দরকার হয়, যার প্রায় সবটাই আমদানি করা। উৎপাদন কেন্দ্রগুলো তাদের খরচ করা জ্বালানির একটি অংশ সরকারের কাছ থেকে সাবসিডি পায়। কিন্তু ভর্তুকির বোঝা যথেষ্ট ভারি এবং তা রাজস্ব বাজেটে রীতিমতো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্ত_ দিনে মোটামুটি ২০ কোটি টাকার তেল ব্যবহার করতে হবে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সায় আছে এতে, সেটা ধরে নেওয়া যায়। কিন্তু এর পরিণতিতে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র পূর্ণ ক্ষমতায় চালু থাকছে না। ফলে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বিদ্যুৎ। কম বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হওয়ায় লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা বাড়ছে। শহর-বন্দর-গ্রাম সর্বত্র অভিযোগ_ গরম শুরু হতে না হতেই যদি এ অবস্থা, ভরা গ্রীষ্মকালে কী হবে? বাংলায় আরেকটি প্রবাদ আছে_ আম ও ছালা দুটিই একসঙ্গে হারানো। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কি এমন দশায় পড়তে হবে? চড়া দামের জ্বালানির কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিদিন কিছু সময় বন্ধ রাখতে হচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম যে বিশ্ববাজারে যথেষ্ট বেশ, সেটা নতুন বিষয় নয়। আগে এ বিষয়টি কেন ভাবা হয়নি? এখন অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিক এবং বিদ্যুতের ভোক্তা, সবার সমালোচনার মুখে পড়বে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। চূড়ান্ত বিচারে এর দায় বর্তাবে সরকারের ওপরেই। রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াও যথেষ্ট হবে তাতে সন্দেহ নেই। এমনিতেই রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত। বিরোধীরা রয়েছে রাজপথে। গরম বাড়তে থাকলে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ জনগণ যে সরকারকে মোটেই সাধুবাদ দেবে না, বরং বাড়বে সমালোচনা ও ক্ষোভ_ সেটা বুঝতে সমস্যা হয় না।
No comments