চারদিক-নূহার জন্য মানববন্ধন by ফারহানা আলম
কক্সবাজার পছন্দ ছিল নূহার। মাত্র তিন বছর বয়সেই বেশ কয়েকবার কক্সবাজার ঘুরে এসেছিল সে। আবার কক্সবাজার যাওয়া হচ্ছে—এ কথা জানতে পেরে ২৯ জুন নূহা তো আনন্দেই ঘুমাতে পারছিল না। কেন ঘুমাচ্ছে না—মা-বাবা জানতে চাইলে তার উত্তরটা ছিল এ রকম: ‘কাল কক্সবাজার যাব, এই আনন্দে ঘুম আসছে না। খুব আনন্দ লাগছে।
’ সমুদ্র দেখার স্বপ্নে এভাবেই বিভোর হয়েছিল নূহা।
৩০ জুন নূহা, তার মা-বাবা, বাবার বন্ধু, সহকর্মী এবং তাদের পরিবারের সবাই মিলে বেলা তিনটায় একটি মাইক্রোবাসে করে কক্সবাজার রওনা হয়। যাওয়ার পথে প্রচণ্ড বৃষ্টি, মহাসড়কে যানজট, কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনার কারণে অনিচ্ছাকৃত দেরি হয়ে যায়। তাই সাতজনের এই দলটি চট্টগ্রাম অতিক্রম করে রাত প্রায় দেড়টায়। পটিয়ায় গ্যাসস্টেশন থেকে গাড়িতে জ্বালানি নেওয়ার সময় নূহা পেছনে মায়ের কোল থেকে বাবার কোলে উঠে আসে। আর তার কিছু পরেই চকরিয়ার খুটাখালী মেদাকচ্ছপিয়া এলাকায় মোড় ঘোরার সময় রাস্তায় গাছের গুঁড়ি পড়ে থাকতে দেখে চালক গাড়ির গতি কমান। সে সময় নূহার বাবা চালককে বলেন দ্রুত এ এলাকা পেরিয়ে যেতে। ডাকাতেরা পেছন থেকে গুলি ছুড়লে তা জহিরুলের (নূহার বাবা) বাহুতে লাগে। গুলিটা তাঁর বাহু ভেদ করে বুকে ঘুমিয়ে থাকা নূহার মাথায় বিদ্ধ হয়। বাবার হূ ৎ পিণ্ড বাঁচিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে নূহা।
রাত তিনটার দিকে বাংলাদেশের এক প্রান্তে এই ঘটনাটি ঘটেছে। সে সময় হয়তো দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ঘটে যাচ্ছিল আরও অনেক চমকপ্রদ ঘটনা; যার একটি সংবিধান-বিতর্ক—সবাই ব্যস্ত সেগুলো নিয়ে। তাই হয়তো গণমাধ্যম, নেতাদের কিংবা প্রশাসনের সুযোগ হয়নি এমন সামান্য একটি ঘটনার দিকে নজর দেওয়ার, যে ঘটনা একটি পরিবারের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে তাদের একমাত্র সন্তানকে। এমন অঘটন তো এ দেশে বিরল নয়। আমাদের গণমাধ্যম, আমাদের তথাকথিত নেতা-নেত্রীরা সেদিন ব্যস্ত দেশের সংবিধানে কী সংযোজন-বিয়োজন হলো, তা নিয়ে। কিন্তু যাদের জন্য এই সংবিধান, তারাই যদি সংবিধানের আলোকে বর্ণিত সুযোগ-সুবিধাগুলো না পায়, তাহলে কোথায় যাবে সাধারণ মানুষ? সংবিধানে রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিককেই নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলা আছে, কিন্তু সেটা কি রক্ষা হচ্ছে? যাদের জন্য এই সংবিধান, যে ভবিষ্য ৎ প্রজন্মের জন্য এই সংবিধান নিয়ে সবার এত উ ৎ কণ্ঠা, সেই ভবিষ্য ৎ প্রজন্মকে যদি এভাবে অপরাধের বলি হতে হয়, তাহলে সংবিধান নিয়ে স্বপ্নের জাল কি বোনা যাবে?
চকরিয়া থানায় মামলা করার পর ডাকাত দলের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা অপরাধ স্বীকার করে। স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে জানা যায়, তারা কিছুদিন আগেই একটি ডাকাতি মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছে। তারপর আবার শুরু করেছে একই কাজ। এভাবে প্রায় ৩০ বছর ধরে তাদের এই কর্মকাণ্ড চলছে। আর তাদের কাছে জিম্মি হচ্ছে সাধারণ মানুষ। জহিরুল তাঁর ফেসবুকের পাতায় লিখেছেন, ‘নূহা বলত, আমার আব্বু বেস্ট আব্বু, আমার আম্মু বেস্ট আম্মু; আর আমি আমার আব্বু-আম্মুর বেস্ট নূহা। নিজের জীবন দিয়ে তার বাবাকে বাঁচিয়ে, সে যে আমার বেস্ট নূহা, তা প্রমাণ করে গেল। মামণি, তুমি আমার বেস্ট নূহা, তুমি ঘুমিয়ে ছিলে আমার বুকের মাঝে এবং সারা জীবন ওখানেই থাকবে।’
নূহা আজ শুধু জহিরুলের সন্তান নয়, সে আজ আমাদের সবার আদরের মেয়ে। বেস্ট নূহা আমাদের ছেড়ে অকালে চলে গেল। আমরা নূহার এই অকালে চলে যাওয়ার বিচার চাই। আর এ লক্ষ্যে আজ বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজন করা হয়েছে এক মানববন্ধনের। এখানে নূহার স্কুলের বন্ধুরাও আসবে তাদের বন্ধুর হত্যার বিচারের দাবি করতে। আজ এখানে যাঁরা সমবেত হবেন, তাঁদের কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বা আকাঙ্ক্ষা নেই। রাষ্ট্রযন্ত্রের কাছে তাঁদের প্রশ্ন, আর কত ত্যাগে জীবনের নিরাপত্তা মিলবে? আমরা তো নাগরিক হিসেবে সব দায়িত্ব পালন করছি, সেই সঙ্গে কোনো না কোনো পরিবারকে যেতে হয় এমনি কোনো কঠিন বাস্তবতার মধ্যে দিয়ে। কিন্তু আর কত? আমরা কি নিরাপদে পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে বেড়াতেও যেতে পারব না?
আর কারও যেন নূহার পরিণতি মেনে নিতে না হয়, সে জন্য আপনিও যোগ দিন এই মানববন্ধনে।
ফারহানা আলম
৩০ জুন নূহা, তার মা-বাবা, বাবার বন্ধু, সহকর্মী এবং তাদের পরিবারের সবাই মিলে বেলা তিনটায় একটি মাইক্রোবাসে করে কক্সবাজার রওনা হয়। যাওয়ার পথে প্রচণ্ড বৃষ্টি, মহাসড়কে যানজট, কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনার কারণে অনিচ্ছাকৃত দেরি হয়ে যায়। তাই সাতজনের এই দলটি চট্টগ্রাম অতিক্রম করে রাত প্রায় দেড়টায়। পটিয়ায় গ্যাসস্টেশন থেকে গাড়িতে জ্বালানি নেওয়ার সময় নূহা পেছনে মায়ের কোল থেকে বাবার কোলে উঠে আসে। আর তার কিছু পরেই চকরিয়ার খুটাখালী মেদাকচ্ছপিয়া এলাকায় মোড় ঘোরার সময় রাস্তায় গাছের গুঁড়ি পড়ে থাকতে দেখে চালক গাড়ির গতি কমান। সে সময় নূহার বাবা চালককে বলেন দ্রুত এ এলাকা পেরিয়ে যেতে। ডাকাতেরা পেছন থেকে গুলি ছুড়লে তা জহিরুলের (নূহার বাবা) বাহুতে লাগে। গুলিটা তাঁর বাহু ভেদ করে বুকে ঘুমিয়ে থাকা নূহার মাথায় বিদ্ধ হয়। বাবার হূ ৎ পিণ্ড বাঁচিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে নূহা।
রাত তিনটার দিকে বাংলাদেশের এক প্রান্তে এই ঘটনাটি ঘটেছে। সে সময় হয়তো দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ঘটে যাচ্ছিল আরও অনেক চমকপ্রদ ঘটনা; যার একটি সংবিধান-বিতর্ক—সবাই ব্যস্ত সেগুলো নিয়ে। তাই হয়তো গণমাধ্যম, নেতাদের কিংবা প্রশাসনের সুযোগ হয়নি এমন সামান্য একটি ঘটনার দিকে নজর দেওয়ার, যে ঘটনা একটি পরিবারের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে তাদের একমাত্র সন্তানকে। এমন অঘটন তো এ দেশে বিরল নয়। আমাদের গণমাধ্যম, আমাদের তথাকথিত নেতা-নেত্রীরা সেদিন ব্যস্ত দেশের সংবিধানে কী সংযোজন-বিয়োজন হলো, তা নিয়ে। কিন্তু যাদের জন্য এই সংবিধান, তারাই যদি সংবিধানের আলোকে বর্ণিত সুযোগ-সুবিধাগুলো না পায়, তাহলে কোথায় যাবে সাধারণ মানুষ? সংবিধানে রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিককেই নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলা আছে, কিন্তু সেটা কি রক্ষা হচ্ছে? যাদের জন্য এই সংবিধান, যে ভবিষ্য ৎ প্রজন্মের জন্য এই সংবিধান নিয়ে সবার এত উ ৎ কণ্ঠা, সেই ভবিষ্য ৎ প্রজন্মকে যদি এভাবে অপরাধের বলি হতে হয়, তাহলে সংবিধান নিয়ে স্বপ্নের জাল কি বোনা যাবে?
চকরিয়া থানায় মামলা করার পর ডাকাত দলের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা অপরাধ স্বীকার করে। স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে জানা যায়, তারা কিছুদিন আগেই একটি ডাকাতি মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছে। তারপর আবার শুরু করেছে একই কাজ। এভাবে প্রায় ৩০ বছর ধরে তাদের এই কর্মকাণ্ড চলছে। আর তাদের কাছে জিম্মি হচ্ছে সাধারণ মানুষ। জহিরুল তাঁর ফেসবুকের পাতায় লিখেছেন, ‘নূহা বলত, আমার আব্বু বেস্ট আব্বু, আমার আম্মু বেস্ট আম্মু; আর আমি আমার আব্বু-আম্মুর বেস্ট নূহা। নিজের জীবন দিয়ে তার বাবাকে বাঁচিয়ে, সে যে আমার বেস্ট নূহা, তা প্রমাণ করে গেল। মামণি, তুমি আমার বেস্ট নূহা, তুমি ঘুমিয়ে ছিলে আমার বুকের মাঝে এবং সারা জীবন ওখানেই থাকবে।’
নূহা আজ শুধু জহিরুলের সন্তান নয়, সে আজ আমাদের সবার আদরের মেয়ে। বেস্ট নূহা আমাদের ছেড়ে অকালে চলে গেল। আমরা নূহার এই অকালে চলে যাওয়ার বিচার চাই। আর এ লক্ষ্যে আজ বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজন করা হয়েছে এক মানববন্ধনের। এখানে নূহার স্কুলের বন্ধুরাও আসবে তাদের বন্ধুর হত্যার বিচারের দাবি করতে। আজ এখানে যাঁরা সমবেত হবেন, তাঁদের কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বা আকাঙ্ক্ষা নেই। রাষ্ট্রযন্ত্রের কাছে তাঁদের প্রশ্ন, আর কত ত্যাগে জীবনের নিরাপত্তা মিলবে? আমরা তো নাগরিক হিসেবে সব দায়িত্ব পালন করছি, সেই সঙ্গে কোনো না কোনো পরিবারকে যেতে হয় এমনি কোনো কঠিন বাস্তবতার মধ্যে দিয়ে। কিন্তু আর কত? আমরা কি নিরাপদে পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে বেড়াতেও যেতে পারব না?
আর কারও যেন নূহার পরিণতি মেনে নিতে না হয়, সে জন্য আপনিও যোগ দিন এই মানববন্ধনে।
ফারহানা আলম
No comments