দুই সেঞ্চুরিয়ানকে ছাপিয়েও টেন্ডুলকার! by উৎপল শুভ্র
ভারত: ৫০ ওভারে ৩০৪/৩ শ্রীলঙ্কা: ৪৫.১ ওভারে ২৫৪ ফল: ভারত ৫০ রানে জয়ী শুকনো পাতার মতো একের পর এক উইকেট ঝরে পড়ছে, আর টেলিভিশন ক্যামেরা ক্লোজআপে ধরছে মাহেলা জয়াবর্ধনেকে। ভিউইং এরিয়াতে বসে শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক। মুখে হতাশার আঁকিবুঁকি।
সহযোদ্ধাদের মরণ দেখছিলেন, নাকি চোখের সামনে বারবার ফিরে আসছিল সেই মুহূর্তটা? ইরফান পাঠানের বলে ব্যাটটা লাগিয়ে দিয়েছিলেন থার্ডম্যানের ঠিকানা লিখে। সেটিই চলে গেল ধোনির গ্লাভসে।
প্রিয় বন্ধু সাঙ্গাকারার সঙ্গে জুটিটা দারুণ জমে গিয়েছিল। গৌতম গম্ভীর ও বিরাট কোহলির দ্বিতীয় উইকেট-জুটির জবাবটা তাহলে দ্বিতীয় উইকেটেই দিচ্ছেন শ্রীলঙ্কান ব্যাটিংয়ের দুই মহীরুহ! ফিফটি এসেছে মাত্র ৪০ বলে। পাঠানের বলে ‘আত্মহত্যা’র আগে ৫৮ বলে ৭৮। ১৩০-এর বেশি স্ট্রাইক রেট। অথচ মারমার কাটকাট ভাবটাই নেই। কোনো দিনই তা ছিল না। সাজানো ফিল্ডিংটা মনের পর্দায় সাজিয়ে জ্যামিতিক দক্ষতায় সেটির ফাঁকফোকর বের করা। জয়াবর্ধনের ব্যাটিংয়ে এমনই অনায়াস এক সৌন্দর্য যে, প্রতিপক্ষ ফিল্ডারদেরও কখনো কখনো মুগ্ধ হয়ে ব্যাটিং দেখতে ইচ্ছা করে!
মহেন্দ্র সিং ধোনি কখনো এ-জাতীয় রোমান্টিসিজমে আক্রান্ত হয়েছেন বলে দুর্নাম নেই। তখন তো আরও এই অবস্থা নয়। ১০ ওভারে ৬৫ রান এসেছে, ১৫ ওভারে উঠে গেছে ১০২। জয়াবর্ধনে আউট হওয়ার আগে রানরেট প্রায় পৌনে সাত। আস্কিং রেট পৌনে ছয়ের মতো। ভারতের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জেতার শ্রীলঙ্কান রেকর্ডটা বোধ হয় হয়েই যাচ্ছে!
জয়াবর্ধনের আউটটা যদি সেটির পথে কাঁটা বিছিয়ে থাকে, ব্যারিকেড বসে গেল সাঙ্গাকারার বিদায়ে। ৯০ বলে ১০৯ রান চাই, হাতে ৭ উইকেট—সাঙ্গাকারাকে ফিরিয়ে দিয়ে এই সহজ সমীকরণটাকে কঠিন বানিয়ে দিলেন অশ্বিন। ‘প্রায় অসম্ভব’ বানানোর কাজটা করেছেন এর আগে-পরে আরও দুই উইকেট তুলে নিয়ে। চার বল পরই থিরিমান্নেকে। শ্রীলঙ্কান ব্যাটিংয়ের নতুন তারা চান্ডিমালকে ফিরিয়েছেন এর আগেই। শ্রীলঙ্কান ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ডটা ভেঙে দিয়েছেন এই অফ স্পিনারই।
ভাঙা মেরুদণ্ডের শ্রীলঙ্কাও যথেষ্টই বিপজ্জনক। এই দলের লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানরা মাঝেমধ্যেই এমন ঝোড়ো ইনিংস খেলে ফেলেন যে, এর পরও ম্যাচে কিঞ্চিৎ অনিশ্চয়তা ছিল। সেটি দূর করার দায়িত্বটা নিলেন বিনয় কুমার, পর পর দুই বলে কুলাসেকারা ও কাপুগেদারাকে তুলে নিয়ে। এরপর ম্যাচটা আবদ্ধ ‘কখন শেষ হয়’ আনুষ্ঠানিকতায়। সেটি শেষ হতেও বেশি সময় লাগল না।
ভারতীয় ক্রিকেটে এখন পালাবদলের গান। রাহুল দ্রাবিড় অবসর নিলেন কদিন আগে। ওয়ানডে দলে সেটির প্রভাব পড়ার কোনো কারণ নেই। তবে সামনে চলার পাথেয় অভিজ্ঞতার নির্ভরতা, নাকি তারুণ্যের দুঃসাহস—ওয়ানডের ভারত তো বেশ কিছুদিন ধরেই দ্বিধা থরথর। বীরেন্দর শেবাগ নেই বলেই এই এশিয়া কাপে ‘রোটেশন পলিসি’-ও আলোচনায় নেই। নইলে এখানেও হয়তো বিতর্ক মাথা চাড়া দিত, যেমন দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ায়।
ভারতের কাছে এই এশিয়া কাপের অর্থ হতে পারে একটাই—দুঃস্বপ্নকে কবর দেওয়ার মিশন। ইংল্যান্ডের দগদগে ঘায়ের ওপর নুনের ছিটা অস্ট্রেলিয়া সফর। যেন দুঃস্বপ্নের মিছিল করে ধেয়ে আসা। মহেন্দ্র সিং ধোনি বোধ হয় এই এশিয়া কাপের মতো আর কোনো টুর্নামেন্টের জন্য এমন ব্যগ্র প্রতীক্ষায় ছিলেন না।
হোবার্টে সিবি সিরিজের শেষ ম্যাচে ভারত যে ব্যাটিংটা করেছে, সেটি এককথায় অবিশ্বাস্য। ভারত না বলে বলা উচিত বিরাট কোহলি। সেই কোহলি হোবার্টের ফর্মই যেন টেনে আনলেন ঢাকায়। তবে এটা অন্য কোহলি। হোবার্টের মতো চার-ছয়ের ফুলঝুরি ছড়ানো বিধ্বংসী নয়, কালকের ১২০ বলে ১০৮-এ মিশে অনেক বেশি রক্ত-ঘাম। বাউন্ডারি মাত্র ৭টি।
গম্ভীরের ১১৮ বলে ১০০ রানের ইনিংসেও তা-ই। জয়াবর্ধনের বুদ্ধিদীপ্ত অধিনায়কত্ব আর শ্রীলঙ্কানদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং জয় করতে উইকেটে প্রচুর দৌড়াতে হয়েছে দুজনকে। ২০৫ রানের জুটিটি যখন চার-ছয়ের মালায় সাজার অপেক্ষায়, তখনই তিন বলের মধ্যে দুজনই আউট। ৪৩তম ওভারে এই যুগল আঘাতের পরও অবশ্য ভারতীয় ইনিংস উড়ে চলল। ধোনি ও রায়নার ঝড়ে শেষ ৪৩ বলে এল ৭৮ রান।
তার পরও ভারতীয় ইনিংসের সবচেয়ে আলোচিত অধ্যায় এটি নয়। এমনকি দুই সেঞ্চুরিও নয়। মাত্র ২৫ মিনিট স্থায়ী ১৯ বলের একটি ইনিংসের কী ‘মহিমা’, বাকি সব ছাপিয়ে সেটিই হয়ে গেল সবচেয়ে বেশি আলোচিত! সাফল্যে যেমন সবার মানস জুড়ে থাকেন, ব্যর্থতাতেও যে তা-ই থাকেন শচীন রমেশ টেন্ডুলকার। শততম সেঞ্চুরিটা যেদিন থেকে ‘পাখির চোখ’ হয়ে গেল, সেদিন থেকে আরও বেশি। ব্যর্থতাতেও তাঁর জন্য বরাদ্দ ম্যাচ রিপোর্টের বড় একটা অংশ।
মাথার সামনের দিকে কয়েকটি চুলে সোনালি রং করিয়েছেন। টেন্ডুলকারকে একটু নতুন-নতুনই লাগছে এতে। নতুন লাগল আউট হওয়ার পর তাঁর প্রতিক্রিয়াতেও। লাকমলের ফুলটস সোজা শর্ট কাভারের হাতে তুলে দেওয়ার পর কী আশায় দাঁড়িয়ে থাকলেন, তিনিই ভালো বলতে পারবেন। উৎসবে মেতে ওঠা শ্রীলঙ্কান বৃত্তটার পাশে গিয়ে কী যেন বললেন। এরপর এগিয়ে গেলেন দুই আম্পায়ারের দিকে। বলটা কোমর উচ্চতার বেশি ছিল কি না, এ নিয়ে সংশয়? নাকি ক্যাচটা ঠিকভাবে নেওয়া হয়েছে কি না, এ নিয়ে?
টিভি রিপ্লেতে দুই সংশয়েরই অবসান। শততম সেঞ্চুরি মরীচিকা হয়ে যাওয়ার হাহাকারকে সঙ্গী করে আরেকবার ড্রেসিংরুমমুখী যাত্রা। এর আগের প্রতিক্রিয়ায় টেন্ডুলকার পরিষ্কার বুঝিয়ে দিলেন, শততম সেঞ্চুরি এখন তাঁর কাঁধে সিন্দাবাদের ভূত!
প্রিয় বন্ধু সাঙ্গাকারার সঙ্গে জুটিটা দারুণ জমে গিয়েছিল। গৌতম গম্ভীর ও বিরাট কোহলির দ্বিতীয় উইকেট-জুটির জবাবটা তাহলে দ্বিতীয় উইকেটেই দিচ্ছেন শ্রীলঙ্কান ব্যাটিংয়ের দুই মহীরুহ! ফিফটি এসেছে মাত্র ৪০ বলে। পাঠানের বলে ‘আত্মহত্যা’র আগে ৫৮ বলে ৭৮। ১৩০-এর বেশি স্ট্রাইক রেট। অথচ মারমার কাটকাট ভাবটাই নেই। কোনো দিনই তা ছিল না। সাজানো ফিল্ডিংটা মনের পর্দায় সাজিয়ে জ্যামিতিক দক্ষতায় সেটির ফাঁকফোকর বের করা। জয়াবর্ধনের ব্যাটিংয়ে এমনই অনায়াস এক সৌন্দর্য যে, প্রতিপক্ষ ফিল্ডারদেরও কখনো কখনো মুগ্ধ হয়ে ব্যাটিং দেখতে ইচ্ছা করে!
মহেন্দ্র সিং ধোনি কখনো এ-জাতীয় রোমান্টিসিজমে আক্রান্ত হয়েছেন বলে দুর্নাম নেই। তখন তো আরও এই অবস্থা নয়। ১০ ওভারে ৬৫ রান এসেছে, ১৫ ওভারে উঠে গেছে ১০২। জয়াবর্ধনে আউট হওয়ার আগে রানরেট প্রায় পৌনে সাত। আস্কিং রেট পৌনে ছয়ের মতো। ভারতের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জেতার শ্রীলঙ্কান রেকর্ডটা বোধ হয় হয়েই যাচ্ছে!
জয়াবর্ধনের আউটটা যদি সেটির পথে কাঁটা বিছিয়ে থাকে, ব্যারিকেড বসে গেল সাঙ্গাকারার বিদায়ে। ৯০ বলে ১০৯ রান চাই, হাতে ৭ উইকেট—সাঙ্গাকারাকে ফিরিয়ে দিয়ে এই সহজ সমীকরণটাকে কঠিন বানিয়ে দিলেন অশ্বিন। ‘প্রায় অসম্ভব’ বানানোর কাজটা করেছেন এর আগে-পরে আরও দুই উইকেট তুলে নিয়ে। চার বল পরই থিরিমান্নেকে। শ্রীলঙ্কান ব্যাটিংয়ের নতুন তারা চান্ডিমালকে ফিরিয়েছেন এর আগেই। শ্রীলঙ্কান ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ডটা ভেঙে দিয়েছেন এই অফ স্পিনারই।
ভাঙা মেরুদণ্ডের শ্রীলঙ্কাও যথেষ্টই বিপজ্জনক। এই দলের লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানরা মাঝেমধ্যেই এমন ঝোড়ো ইনিংস খেলে ফেলেন যে, এর পরও ম্যাচে কিঞ্চিৎ অনিশ্চয়তা ছিল। সেটি দূর করার দায়িত্বটা নিলেন বিনয় কুমার, পর পর দুই বলে কুলাসেকারা ও কাপুগেদারাকে তুলে নিয়ে। এরপর ম্যাচটা আবদ্ধ ‘কখন শেষ হয়’ আনুষ্ঠানিকতায়। সেটি শেষ হতেও বেশি সময় লাগল না।
ভারতীয় ক্রিকেটে এখন পালাবদলের গান। রাহুল দ্রাবিড় অবসর নিলেন কদিন আগে। ওয়ানডে দলে সেটির প্রভাব পড়ার কোনো কারণ নেই। তবে সামনে চলার পাথেয় অভিজ্ঞতার নির্ভরতা, নাকি তারুণ্যের দুঃসাহস—ওয়ানডের ভারত তো বেশ কিছুদিন ধরেই দ্বিধা থরথর। বীরেন্দর শেবাগ নেই বলেই এই এশিয়া কাপে ‘রোটেশন পলিসি’-ও আলোচনায় নেই। নইলে এখানেও হয়তো বিতর্ক মাথা চাড়া দিত, যেমন দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ায়।
ভারতের কাছে এই এশিয়া কাপের অর্থ হতে পারে একটাই—দুঃস্বপ্নকে কবর দেওয়ার মিশন। ইংল্যান্ডের দগদগে ঘায়ের ওপর নুনের ছিটা অস্ট্রেলিয়া সফর। যেন দুঃস্বপ্নের মিছিল করে ধেয়ে আসা। মহেন্দ্র সিং ধোনি বোধ হয় এই এশিয়া কাপের মতো আর কোনো টুর্নামেন্টের জন্য এমন ব্যগ্র প্রতীক্ষায় ছিলেন না।
হোবার্টে সিবি সিরিজের শেষ ম্যাচে ভারত যে ব্যাটিংটা করেছে, সেটি এককথায় অবিশ্বাস্য। ভারত না বলে বলা উচিত বিরাট কোহলি। সেই কোহলি হোবার্টের ফর্মই যেন টেনে আনলেন ঢাকায়। তবে এটা অন্য কোহলি। হোবার্টের মতো চার-ছয়ের ফুলঝুরি ছড়ানো বিধ্বংসী নয়, কালকের ১২০ বলে ১০৮-এ মিশে অনেক বেশি রক্ত-ঘাম। বাউন্ডারি মাত্র ৭টি।
গম্ভীরের ১১৮ বলে ১০০ রানের ইনিংসেও তা-ই। জয়াবর্ধনের বুদ্ধিদীপ্ত অধিনায়কত্ব আর শ্রীলঙ্কানদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং জয় করতে উইকেটে প্রচুর দৌড়াতে হয়েছে দুজনকে। ২০৫ রানের জুটিটি যখন চার-ছয়ের মালায় সাজার অপেক্ষায়, তখনই তিন বলের মধ্যে দুজনই আউট। ৪৩তম ওভারে এই যুগল আঘাতের পরও অবশ্য ভারতীয় ইনিংস উড়ে চলল। ধোনি ও রায়নার ঝড়ে শেষ ৪৩ বলে এল ৭৮ রান।
তার পরও ভারতীয় ইনিংসের সবচেয়ে আলোচিত অধ্যায় এটি নয়। এমনকি দুই সেঞ্চুরিও নয়। মাত্র ২৫ মিনিট স্থায়ী ১৯ বলের একটি ইনিংসের কী ‘মহিমা’, বাকি সব ছাপিয়ে সেটিই হয়ে গেল সবচেয়ে বেশি আলোচিত! সাফল্যে যেমন সবার মানস জুড়ে থাকেন, ব্যর্থতাতেও যে তা-ই থাকেন শচীন রমেশ টেন্ডুলকার। শততম সেঞ্চুরিটা যেদিন থেকে ‘পাখির চোখ’ হয়ে গেল, সেদিন থেকে আরও বেশি। ব্যর্থতাতেও তাঁর জন্য বরাদ্দ ম্যাচ রিপোর্টের বড় একটা অংশ।
মাথার সামনের দিকে কয়েকটি চুলে সোনালি রং করিয়েছেন। টেন্ডুলকারকে একটু নতুন-নতুনই লাগছে এতে। নতুন লাগল আউট হওয়ার পর তাঁর প্রতিক্রিয়াতেও। লাকমলের ফুলটস সোজা শর্ট কাভারের হাতে তুলে দেওয়ার পর কী আশায় দাঁড়িয়ে থাকলেন, তিনিই ভালো বলতে পারবেন। উৎসবে মেতে ওঠা শ্রীলঙ্কান বৃত্তটার পাশে গিয়ে কী যেন বললেন। এরপর এগিয়ে গেলেন দুই আম্পায়ারের দিকে। বলটা কোমর উচ্চতার বেশি ছিল কি না, এ নিয়ে সংশয়? নাকি ক্যাচটা ঠিকভাবে নেওয়া হয়েছে কি না, এ নিয়ে?
টিভি রিপ্লেতে দুই সংশয়েরই অবসান। শততম সেঞ্চুরি মরীচিকা হয়ে যাওয়ার হাহাকারকে সঙ্গী করে আরেকবার ড্রেসিংরুমমুখী যাত্রা। এর আগের প্রতিক্রিয়ায় টেন্ডুলকার পরিষ্কার বুঝিয়ে দিলেন, শততম সেঞ্চুরি এখন তাঁর কাঁধে সিন্দাবাদের ভূত!
No comments