স্মরণ-আশেক আলী খান : শিক্ষাসেবা ও গ্রামোন্নয়নে অগ্রণী এক ব্যক্তি by নীলুফার বেগম
পৃথিবীতে কিছু কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা ক্ষণজন্মা, ত্যাগী ও ব্যতিক্রমধর্মী। তাঁরা নিজের সুখ ও আরাম-আয়েশের চেয়ে পরের উপকার_বিশেষ করে নিজ এলাকাবাসীর জন্য কল্যাণকর কাজ করতে পছন্দ করেন ও ভালোবাসেন। তেমন একজন ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন মরহুম আশেক আলী খান, চাঁদপুর জেলার প্রথম মুসলমান গ্র্যাজুয়েট (বাংলা একাডেমী, চরিতাভিধান, পৃষ্ঠা ৭৬)। তাঁর জন্ম ১৮৯১ সালে চাঁদপুর জেলার গুলবাহার গ্রামের একই বাড়ির দাদা ও নানার অভিন্ন পরিবারের ভরা সংসারে।
১৯৭৪ সালের ২ আগস্ট তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁর জন্মের সময় গুলবাহার গ্রাম গোয়ালভাওর নামে পরিচিত ছিল। তাঁর বাবার নাম আইনউদ্দিন খান ও মায়ের নাম আলেকজান বিবি ওরফে টুনি বিবি। তিনি ১৯১১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন চাঁদপুর বাবুরহাট হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাস করেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে উল্লেখ্য, ১৯১০ সালে সর্বপ্রথম ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষার প্রচলন হয় ব্রিটিশ ভারতে। ওই স্কুলে পড়ার সময় তাঁর ক্লাসে তিনিই একমাত্র মুসলমান ছাত্র ছিলেন এবং ক্লাসে সবার মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করতেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে ১৯১৩ সালে পাস করেন ইন্টারমিডিয়েট। এরপর ঢাকা কলেজে ইংরেজিতে অনার্সে ভর্তি হন। কিন্তু আর্থিক সংকটে অনার্স কোর্স শেষ করতে পারেননি। পড়ায় বিরতি দিয়ে পরপর দুটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। পরে কলকাতায় সিটি কলেজে বিএ ভর্তি হয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। ১৯১৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাস করেন। সে সময় বিএ পাস হিসেবে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের চাকরি পাওয়া লোভনীয় হওয়া সত্ত্বেও তিনি শিক্ষকতাকে বেছে নিলেন পেশা হিসেবে। বিটি পড়ে ফার্স্ট ক্লাস পেলেন ১৯১৯ সালে। প্রথমে চাঁদপুর গনি স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করলেন। তিনি বিভিন্ন পর্যায়ে শিক্ষকতা করেন ময়মনসিংহ, ফরিদপুর ও বরিশাল জিলা স্কুলে এবং সর্বশেষ ঝালকাঠির সরকারি স্কুলে। শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে তিনি এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থার দুরবস্থার সঙ্গেও নিবিড়ভাবে পরিচিত হলেন। তিনি তৎকালীন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের হাজী জালাল হাই স্কুল, মতলব থানার নারায়ণপুর হাই স্কুল, হাজীগঞ্জ থানার দরবেশগঞ্জ হাই স্কুল ও কচুয়া থানার রঘুনাথপুর হাই স্কুলে হেড মাস্টার পদে দীর্ঘ ১৫ বছর কাজ করলেন। তখনই শিক্ষাসেবী সংগঠক হিসেবে এসব নড়বড়ে স্কুল দাঁড় করিয়ে দেন। সে স্কুলগুলো এখনো জ্ঞান বিস্তারের কাজ করে যাচ্ছে।
আশেক আলী খান অমায়িক, বিনয়ী, ধীরস্থির ও ধৈর্যশীল লোক ছিলেন। তাঁর সমসাময়িকরা তাঁকে উত্তেজিত হতে দেখেননি। জীবনাচরণ ও কথাবার্তায় সব ক্ষেত্রে তাঁর সরলতা লক্ষণীয় ছিল। সৎ জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। ন্যায়পরায়ণতা, সত্যবাদিতা ও দৃঢ়সংকল্প তাঁর জীবনের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল। তাঁর চরিত্রে কোনো রকম দ্বিধা ও জড়তা ছিল না। এলাকার জনগণের মঙ্গলের জন্য যা ভাবতেন, যা বিশ্বাস করতেন_তা কথায় ও কাজে প্রকাশ করতেন, আবার তা বাস্তবায়ন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞা নিয়ে এগিয়ে যেতেন। কোনো বাধাই মানতেন না। একজন ধর্মপরায়ণ ও ফরহেজগার লোক হিসেবে তিনি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। জীবন ছিল তাঁর শৃঙ্খলাপূর্ণ। গভীর শ্রদ্ধায় তাঁকে স্মরণ করি।
নীলুফার বেগম
আশেক আলী খান অমায়িক, বিনয়ী, ধীরস্থির ও ধৈর্যশীল লোক ছিলেন। তাঁর সমসাময়িকরা তাঁকে উত্তেজিত হতে দেখেননি। জীবনাচরণ ও কথাবার্তায় সব ক্ষেত্রে তাঁর সরলতা লক্ষণীয় ছিল। সৎ জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। ন্যায়পরায়ণতা, সত্যবাদিতা ও দৃঢ়সংকল্প তাঁর জীবনের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল। তাঁর চরিত্রে কোনো রকম দ্বিধা ও জড়তা ছিল না। এলাকার জনগণের মঙ্গলের জন্য যা ভাবতেন, যা বিশ্বাস করতেন_তা কথায় ও কাজে প্রকাশ করতেন, আবার তা বাস্তবায়ন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞা নিয়ে এগিয়ে যেতেন। কোনো বাধাই মানতেন না। একজন ধর্মপরায়ণ ও ফরহেজগার লোক হিসেবে তিনি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। জীবন ছিল তাঁর শৃঙ্খলাপূর্ণ। গভীর শ্রদ্ধায় তাঁকে স্মরণ করি।
নীলুফার বেগম
No comments