আজ রাতে আমি ভয় পাব by মো. জাহিদ উস-সালেহীন
আমি রায়হান, রায়হান কবীর। বন্ধুরা আমাকে খুব সাহসী একজন মানুষ হিসেবেই জানে। কারণ, আমি কখনোই ভয় পাই না, কোনো কিছুকেই না। আমি পুরোটা রাত আমাদের হলের পশ্চিম পাশের ঘন বাঁশঝাড়টাতে দিব্যি কাটিয়ে দিতে পারি। চান তো ওই বিশাল দিঘিটার কুচকুচে কালো জলের মাঝ বরাবর সাঁতারও দিতে পারি। কোনো কিছুতেই আমার ভয়ও হয় না। বন্ধুরা যখন কোনো ভয়ের ছবি দেখে, ভয়ে কুঁকড়ে থাকে, বাথরুমে যায় দরজা না লাগিয়ে, আমি তখন হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ি। এমন ভিতুর ডিম এরা!
আমি ভাবি, ভূতের ভয়—সে আবার কি! না না, আমাকে ভুল বুঝবেন না। আমি বলছি না যে ভূত বলে কিছু নেই। তাই বা বলি কী করে...। আমি শুধু বলতে চাই, ভূতকে ভয় পাওয়ার কী আছে। ভূতকে আলাদা একটা প্রজাতি হিসেবে ভাবলেই হয়, যারা নানা সব মজার কাণ্ড করে বেড়ায়। তাদের কাজ তো ওই একটাই, মানুষকে একটুখানি ভড়কে দেওয়া। এর বেশি কিছু তো না। আর তাতেই কি না সবাই ভূতের ভয়ে রীতিমতো ঠক ঠক করে কাঁপতে থাকে।
আমি আমার বন্ধুদের বোঝাই, ‘দেখো বাছারা, ভূতকে কিন্তু সব সময় খারাপ ভাবার কোনো কারণ নেই। আমার তো মনে হয় ভূতেরা আমাদের অনেক সময় সাহায্য-সহযোগিতাও করতে চায়। এই যেমন ধরো সেদিন, আমাদের লাভলু—যে কি না জীবনে কোনো দিন গাছে ওঠেনি। সে কেমন ওই পুবদিকের তালগাছটাতে উঠে তারস্বরে চেঁচাচ্ছিল। বলছিল, ওকে নাকি কেউ একজন চুল ধরে টেনে গাছে উঠিয়ে দিয়েছে। এই কথা বলতে বলতে তার সে কী কান্না। আরে গাধা, এটাও বুঝলি না যে ভূতটা তোকে গাছে চড়া শেখাচ্ছিল। গাছে চড়া শেখার কি সুযোগটাই না তুই হারালি।’
ওরা মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। আমি দ্বিতীয় উদাহরণ টানি, ‘কিংবা, আমাদের টগরের ঘটনাটাই ধরো না। ব্যাটা নাকি উঁচুতে উঠতে ভয় পায়। অথচ সেই টগরই কি না আমাদের চারতলা হলের ছাদের রেলিং ধরে ঝুলতে লাগল হঠাৎ। ও বলে কি না, ও নাকি ঘুমিয়ে ছিল, ঘুম থেকে উঠতেই দেখে এই ঝুলন্ত অবস্থা। সে যা-ই হোক, ও কিন্তু এখন আর উচ্চতাকে ভয় পায় না। দেখো তাহলে, ভূত ওর কত বড় একটা উপকার করে দিল।’
বন্ধুরা সব আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইল। শামসু হঠাৎ উত্তেজিত ভঙ্গিতে বলল, ‘আমার ঘটনাকে কী বলবি, আমার পা ধরে টেনে দিঘির মাঝখানে নিয়ে যে পানি গেলাল।’ আমি চটপট উত্তর দিই, ‘ওটা তো ছিল তোকে সাঁতার শেখানোর চেষ্টা। আমরা তো সবাই জানি যে তুই সাঁতার জানিস না।’ ‘তবে রে, ভূতের হয়ে ওকালতি! তোর ওকালতি আমি ছোটাব এবার।’
শামসু শার্টের হাত গুটাতে গুটাতে ওর দশাসই শরীর নিয়ে এগিয়ে আসে। অন্যরা তাড়াতাড়ি ওকে জাপটে ধরে আটকায়। আমি বুঝলাম অবস্থা বেগতিক। তাই দ্রুত সটকে পড়লাম।
আমি চলে আসার পরপরই ওরা সবাই মিলে সভা বসায়। সিদ্ধান্ত নেয়, আমাকে চরম শিক্ষা দেওয়া হবে। এমন ভূতের ভয় দেখানো হবে যে আমি নাকি আমার বাবার নামটা পর্যন্ত ভুলে যাব। ওরা পরিকল্পনা করে, আমাকে ভয় দেখানো ফন্দি আঁটে।
আমি ওদের কথা শুনে রুমে বসে মিটিমিটি হাসি। ভাবছেন, ওদের কথা শুনছি কীভাবে? আমি শুনতে পাই, অনেক দূরের কথা, এমনকি ওই যে টংয়ের দোকানের মামাটা কাকে কী বলছে, তা-ও আমি জানি। এটা আমার কাছে কোনো ব্যাপারই না।
আচ্ছা, সবাইকে একত্রে ভয় পাইয়ে দিলে কেমন হয়। আজ রাতে যখন ওদের একেকটা কিম্ভূত সব সাজে সেজে আমাকে ভয় দেখাতে আসবে, তখন যদি ওরা নিজেরাই ভয়ে চিৎকার শুরু করে। কী মজাটাই না হবে! যেমন ধরুন, ওরা যদি দেখে, মাথাটা আমার মেঝেতে একটা প্লেটের ওপর বসে দরাজ গলায় গান গাইছে, আর তার ঠিক দুই হাত দূরে আমার শরীরখানা তা ধিন ধিন করে নাচছে, কেমন প্রতিক্রিয়া হবে তখন ভিতুগুলোর। ভয়ে সবার একেবারে জ্বর এসে যাবে নির্ঘাত।
পরক্ষণেই ইচ্ছেটাকে দমন করতে হলো। তাহলে যে সবকিছু ফাঁস হয়ে যাবে! এমনিতেই কিছুক্ষণ আগে নিজের কৃতকর্মের সাফাই গেয়ে ওদের ভীষণ রাগিয়ে দিয়েছি। আজকে বরং ওদের একটু ভয় পাওয়ার ভান করি। পড়াশোনার এত ইচ্ছে আমার, সেটা যখন এই মানুষের সঙ্গেই করতে হচ্ছে, এই ত্যাগটুকু তো স্বীকার করতেই হবে। আজ রাতে আমিই না হয় হলাম প্রথম ভূত, যে মানুষকে ভয় পেল।
আমি আমার বন্ধুদের বোঝাই, ‘দেখো বাছারা, ভূতকে কিন্তু সব সময় খারাপ ভাবার কোনো কারণ নেই। আমার তো মনে হয় ভূতেরা আমাদের অনেক সময় সাহায্য-সহযোগিতাও করতে চায়। এই যেমন ধরো সেদিন, আমাদের লাভলু—যে কি না জীবনে কোনো দিন গাছে ওঠেনি। সে কেমন ওই পুবদিকের তালগাছটাতে উঠে তারস্বরে চেঁচাচ্ছিল। বলছিল, ওকে নাকি কেউ একজন চুল ধরে টেনে গাছে উঠিয়ে দিয়েছে। এই কথা বলতে বলতে তার সে কী কান্না। আরে গাধা, এটাও বুঝলি না যে ভূতটা তোকে গাছে চড়া শেখাচ্ছিল। গাছে চড়া শেখার কি সুযোগটাই না তুই হারালি।’
ওরা মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। আমি দ্বিতীয় উদাহরণ টানি, ‘কিংবা, আমাদের টগরের ঘটনাটাই ধরো না। ব্যাটা নাকি উঁচুতে উঠতে ভয় পায়। অথচ সেই টগরই কি না আমাদের চারতলা হলের ছাদের রেলিং ধরে ঝুলতে লাগল হঠাৎ। ও বলে কি না, ও নাকি ঘুমিয়ে ছিল, ঘুম থেকে উঠতেই দেখে এই ঝুলন্ত অবস্থা। সে যা-ই হোক, ও কিন্তু এখন আর উচ্চতাকে ভয় পায় না। দেখো তাহলে, ভূত ওর কত বড় একটা উপকার করে দিল।’
বন্ধুরা সব আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইল। শামসু হঠাৎ উত্তেজিত ভঙ্গিতে বলল, ‘আমার ঘটনাকে কী বলবি, আমার পা ধরে টেনে দিঘির মাঝখানে নিয়ে যে পানি গেলাল।’ আমি চটপট উত্তর দিই, ‘ওটা তো ছিল তোকে সাঁতার শেখানোর চেষ্টা। আমরা তো সবাই জানি যে তুই সাঁতার জানিস না।’ ‘তবে রে, ভূতের হয়ে ওকালতি! তোর ওকালতি আমি ছোটাব এবার।’
শামসু শার্টের হাত গুটাতে গুটাতে ওর দশাসই শরীর নিয়ে এগিয়ে আসে। অন্যরা তাড়াতাড়ি ওকে জাপটে ধরে আটকায়। আমি বুঝলাম অবস্থা বেগতিক। তাই দ্রুত সটকে পড়লাম।
আমি চলে আসার পরপরই ওরা সবাই মিলে সভা বসায়। সিদ্ধান্ত নেয়, আমাকে চরম শিক্ষা দেওয়া হবে। এমন ভূতের ভয় দেখানো হবে যে আমি নাকি আমার বাবার নামটা পর্যন্ত ভুলে যাব। ওরা পরিকল্পনা করে, আমাকে ভয় দেখানো ফন্দি আঁটে।
আমি ওদের কথা শুনে রুমে বসে মিটিমিটি হাসি। ভাবছেন, ওদের কথা শুনছি কীভাবে? আমি শুনতে পাই, অনেক দূরের কথা, এমনকি ওই যে টংয়ের দোকানের মামাটা কাকে কী বলছে, তা-ও আমি জানি। এটা আমার কাছে কোনো ব্যাপারই না।
আচ্ছা, সবাইকে একত্রে ভয় পাইয়ে দিলে কেমন হয়। আজ রাতে যখন ওদের একেকটা কিম্ভূত সব সাজে সেজে আমাকে ভয় দেখাতে আসবে, তখন যদি ওরা নিজেরাই ভয়ে চিৎকার শুরু করে। কী মজাটাই না হবে! যেমন ধরুন, ওরা যদি দেখে, মাথাটা আমার মেঝেতে একটা প্লেটের ওপর বসে দরাজ গলায় গান গাইছে, আর তার ঠিক দুই হাত দূরে আমার শরীরখানা তা ধিন ধিন করে নাচছে, কেমন প্রতিক্রিয়া হবে তখন ভিতুগুলোর। ভয়ে সবার একেবারে জ্বর এসে যাবে নির্ঘাত।
পরক্ষণেই ইচ্ছেটাকে দমন করতে হলো। তাহলে যে সবকিছু ফাঁস হয়ে যাবে! এমনিতেই কিছুক্ষণ আগে নিজের কৃতকর্মের সাফাই গেয়ে ওদের ভীষণ রাগিয়ে দিয়েছি। আজকে বরং ওদের একটু ভয় পাওয়ার ভান করি। পড়াশোনার এত ইচ্ছে আমার, সেটা যখন এই মানুষের সঙ্গেই করতে হচ্ছে, এই ত্যাগটুকু তো স্বীকার করতেই হবে। আজ রাতে আমিই না হয় হলাম প্রথম ভূত, যে মানুষকে ভয় পেল।
No comments