জয় হোক সৎ ও যোগ্য প্রার্থীর by সুলতানা কামাল
আগামীকাল বহুলআলোচিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। ত্রিপক্ষীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতার এ নির্বাচন জাতীয় গুরুত্ব অর্জন করেছে। পেশিশক্তি ও কালোটাকার বিপরীতে সৎ ও যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করার বিষয়টি যথেষ্ট আলোচিত। এই প্রেক্ষাপটে নাগরিক সমাজের তিনজন প্রতিনিধির মতামত প্রকাশ করা হলো।
আমাদের দেশে নির্বাচনে যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হয়, তা হলো স্বতঃস্ফূর্ততা। গণতন্ত্রের প্রতি জনগণের যে অপরিমেয় আস্থা আছে এবং তাঁরা এর প্রতি যে অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল, নির্বাচনে তাঁদের সক্রিয় অংশগ্রহণই তার প্রমাণ। এ কারণে আমাদের দেশে ভোট দেওয়ার হার উন্নত দেশগুলো থেকে অনেক বেশি।
কিন্তু এখানে যে বিষয়টি উপেক্ষিত থাকে, তা হলো সৎ ও যোগ্য প্রার্থী বাছাই। নির্বাচন হলো সৎ ও যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ের সুযোগ, তা অনেকেই ভুলে যান। নির্বাচন হলো প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া মাত্র। এই প্রক্রিয়ায় ভুল হলে গণতন্ত্র সংহত হতে পারে না।
এখানে প্রথম প্রশ্ন হলো, ভোটাররা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারছেন কি না? দ্বিতীয় প্রশ্ন এবং আমার বিবেচনায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, তাঁরা কাকে ভোট দিচ্ছেন? ভোটের মাধ্যমে যদি আমি সৎ, যোগ্য ও জনগণের জন্য কাজ করবেন, এমন প্রার্থীকে বাছাই করি, তাহলে নির্বাচনের পর আফসোস করতে হয় না। কিন্তু এর বিপরীত হলে সেই গণতন্ত্রের সুফল জনগণ পায় না।
বলা হয়, ভোট প্রত্যেক নাগরিকের পবিত্র আমানত। প্রশ্ন হলো, সেই আমানত আমি কার কাছে গচ্ছিত রাখছি। যিনি আমানতের মর্যাদা দেবেন, তাঁর কাছে গচ্ছিত রাখলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু যিনি আমার ভোটের মর্যাদা দেবেন না, সে রকম প্রার্থীকে বিজয়ী করলে যে পরে পস্তাতে হয়, তার বহু নজির আছে।
নির্বাচনের দুটি দিক। প্রথমত এর ব্যবস্থাপনা। এর দায়িত্ব পুরোপুরি নির্বাচন কমিশনের। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, কমিশনকে সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সততা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
কিন্তু ভোটাররা কাকে নির্বাচন করবেন বা কোন ধরনের প্রার্থীকে জয়ী করবেন, সেটি সম্পূর্ণ তাঁদের সিদ্ধান্তের ব্যাপার।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সামনে রেখে যে কথাগুলো বলা প্রয়োজন তা হলো, নারায়ণগঞ্জবাসীই ঠিক করবেন, তাঁরা কোন ধরনের প্রার্থী বাছাই করবেন। তাঁরা প্রার্থীদের অতীত ও বর্তমান কর্মকাণ্ড জানেন। কে তাঁদের জন্য কী করেছেন, সেটাও অজানা নয়। তাঁরা সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীর পক্ষে রায় দেবেন বলেই আমার বিশ্বাস।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারকাজ এত দিন মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবেই চলেছে। বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু শেষ মুহূর্তে একধরনের উত্তেজনা লক্ষ করা যাচ্ছে, যা কোনোভাবেই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য সহায়ক নয়। নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে ভোটারদের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রশমনে এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া এবং নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা। এর আগের নির্বাচনগুলো নির্বাচন কমিশন যে মানের করেছে, তা থেকে কোনোভাবেই নিচে নামা যাবে না; বরং আগের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে একটি সর্বাঙ্গীণ সুন্দর এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই আমরা তাদের কাছে প্রত্যাশা করি।
বর্তমানে যাঁরা ক্ষমতায় আছেন, তাঁরা নারীর ক্ষমতায়নের কথা বেশ জোরের সঙ্গে বলেন। নারায়ণগঞ্জে প্রার্থী সমর্থনের ক্ষেত্রে তার প্রতিফলন ঘটবে বলেই সবাই আশা করেছিলেন; কিন্তু তা ঘটেনি।
এর পরও আমি মনে করি, নারায়ণগঞ্জের মানুষ সৎ, যোগ্য ও নিবেদিতপ্রাণ প্রার্থীকে বেছে নিতে ভুল করবেন না। সর্বোপরি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হোক এবং নারায়ণগঞ্জের ভোটাররা যোগ্য ও সৎ প্রার্থীকেই বাছাই করে নিতে পারবেন—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
সুলতানা কামাল: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক।
কিন্তু এখানে যে বিষয়টি উপেক্ষিত থাকে, তা হলো সৎ ও যোগ্য প্রার্থী বাছাই। নির্বাচন হলো সৎ ও যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ের সুযোগ, তা অনেকেই ভুলে যান। নির্বাচন হলো প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া মাত্র। এই প্রক্রিয়ায় ভুল হলে গণতন্ত্র সংহত হতে পারে না।
এখানে প্রথম প্রশ্ন হলো, ভোটাররা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারছেন কি না? দ্বিতীয় প্রশ্ন এবং আমার বিবেচনায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, তাঁরা কাকে ভোট দিচ্ছেন? ভোটের মাধ্যমে যদি আমি সৎ, যোগ্য ও জনগণের জন্য কাজ করবেন, এমন প্রার্থীকে বাছাই করি, তাহলে নির্বাচনের পর আফসোস করতে হয় না। কিন্তু এর বিপরীত হলে সেই গণতন্ত্রের সুফল জনগণ পায় না।
বলা হয়, ভোট প্রত্যেক নাগরিকের পবিত্র আমানত। প্রশ্ন হলো, সেই আমানত আমি কার কাছে গচ্ছিত রাখছি। যিনি আমানতের মর্যাদা দেবেন, তাঁর কাছে গচ্ছিত রাখলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু যিনি আমার ভোটের মর্যাদা দেবেন না, সে রকম প্রার্থীকে বিজয়ী করলে যে পরে পস্তাতে হয়, তার বহু নজির আছে।
নির্বাচনের দুটি দিক। প্রথমত এর ব্যবস্থাপনা। এর দায়িত্ব পুরোপুরি নির্বাচন কমিশনের। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, কমিশনকে সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সততা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
কিন্তু ভোটাররা কাকে নির্বাচন করবেন বা কোন ধরনের প্রার্থীকে জয়ী করবেন, সেটি সম্পূর্ণ তাঁদের সিদ্ধান্তের ব্যাপার।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সামনে রেখে যে কথাগুলো বলা প্রয়োজন তা হলো, নারায়ণগঞ্জবাসীই ঠিক করবেন, তাঁরা কোন ধরনের প্রার্থী বাছাই করবেন। তাঁরা প্রার্থীদের অতীত ও বর্তমান কর্মকাণ্ড জানেন। কে তাঁদের জন্য কী করেছেন, সেটাও অজানা নয়। তাঁরা সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীর পক্ষে রায় দেবেন বলেই আমার বিশ্বাস।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারকাজ এত দিন মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবেই চলেছে। বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু শেষ মুহূর্তে একধরনের উত্তেজনা লক্ষ করা যাচ্ছে, যা কোনোভাবেই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য সহায়ক নয়। নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে ভোটারদের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রশমনে এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া এবং নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা। এর আগের নির্বাচনগুলো নির্বাচন কমিশন যে মানের করেছে, তা থেকে কোনোভাবেই নিচে নামা যাবে না; বরং আগের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে একটি সর্বাঙ্গীণ সুন্দর এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই আমরা তাদের কাছে প্রত্যাশা করি।
বর্তমানে যাঁরা ক্ষমতায় আছেন, তাঁরা নারীর ক্ষমতায়নের কথা বেশ জোরের সঙ্গে বলেন। নারায়ণগঞ্জে প্রার্থী সমর্থনের ক্ষেত্রে তার প্রতিফলন ঘটবে বলেই সবাই আশা করেছিলেন; কিন্তু তা ঘটেনি।
এর পরও আমি মনে করি, নারায়ণগঞ্জের মানুষ সৎ, যোগ্য ও নিবেদিতপ্রাণ প্রার্থীকে বেছে নিতে ভুল করবেন না। সর্বোপরি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হোক এবং নারায়ণগঞ্জের ভোটাররা যোগ্য ও সৎ প্রার্থীকেই বাছাই করে নিতে পারবেন—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
সুলতানা কামাল: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক।
No comments