মেঘবালক by জয়ন্ত বর্মণ
—‘আঁধার রাতে মেঘবালককে দেখা যাবে না, কেউ দেখতে পাবে না।’
—‘মেঘবালক? ধুর্!’
প্রথম যেবার অনু আমাকে মেঘবালকের কাহিনি শুনিয়েছিল, আমি এভাবেই উড়িয়ে দিয়েছিলাম...
—‘নামটা কি তুই দিয়েছিস?’
—‘হুম্ হুম্।’ গম্ভীরভাবে অনু বলল, ‘তুই বিশ্বাস করলি না? যা! আমি বাকি সবাইকে বলব, তারা বিশ্বাস করবে।’
—‘মেঘবালক? ধুর্!’
প্রথম যেবার অনু আমাকে মেঘবালকের কাহিনি শুনিয়েছিল, আমি এভাবেই উড়িয়ে দিয়েছিলাম...
—‘নামটা কি তুই দিয়েছিস?’
—‘হুম্ হুম্।’ গম্ভীরভাবে অনু বলল, ‘তুই বিশ্বাস করলি না? যা! আমি বাকি সবাইকে বলব, তারা বিশ্বাস করবে।’
আমি হেসে হেসে বলেছিলাম—‘এই আজগুবি কাহিনি সবাইকে বলিস না, সবাই তোকে নিয়ে হাসাহাসি করবে।’ কার কথা কে শোনে? অনু ঠিকই তার আরও দুই পাগল বন্ধুকে গিয়ে এই কাহিনি শুনিয়েছে এবং আশ্চর্য ব্যাপার এই যে ওই দুই বন্ধুও তা বিশ্বাস করেছে! যদিও তারা নাকি অনেক দিন চেষ্টা করেও মেঘবালকের দেখা পায়নি। পাবে কীভাবে? সবাই তো আর অনুর মতো পাগল নয়। তারা এই বানানো গল্প শোনার ধৈর্য কোথা থেকে পেয়েছে, কে জানে? যদিও অনু গল্পের শুরুতেই বলে নেয়, ‘এটা কিন্তু মোটেও বানানো গল্প না...গত মাসের আট তারিখ ছিল পূর্ণিমা...’ শুরু হয়ে যায় তার কাহিনি। কাহিনি আর কিছুই নয়। কোনো এক পূর্ণিমার রাতে সে নাকি কাকে দেখেছে এক পা ভাঁজ করে আর দুটো হাত দুই পাশে ছড়িয়ে দিয়ে শূন্যে ভাসছে!!!
—‘আজব!’ তাকে থামিয়ে দিয়ে আমি বলি, ‘এই ভয়ংকর দৃশ্য দেখেও তুই চিৎকার করলি না কেন?’
সে বলে, ‘ভয়ংকর মানে? আমার কাছে তো তাকে দেখতে ভালোই লাগছিল। কি রোমান্টিক!’
ঈর্ষায় আমার গা জ্বলে যায়! বলে উঠি, ‘তাহলে পেপারে, না হলে টিভি চ্যানেলে জানা তোর আবিষ্কারের কথা।’
সে বলে, ‘আমার মেঘবালকের কথা আমি সবাইকে কেন বলব? শুধু আমার বন্ধুদের বলব। ‘আমার মেঘবালক!’ রাগে বলে উঠি, ‘যা! তার প্রেমে পড়ে যা!’ সে-ও কম নয়। বলে, ‘প্রেমে তো পড়েই গেছি। মেঘবালক, তোমার প্রেমে পড়েছি!’
রাগে উঠে চলে আসি আমি। এই পাগল মেয়ের মাথার কোনো ঠিক নেই। আজগুবি চিন্তাভাবনা নিয়েই সারা দিন পড়ে থাকে। এসব চিন্তার কি কোনো মানে আছে? আবার নাকি ওই আজগুবি মেঘবালক না ফালকের প্রেমে পড়েছে। যত্তসব!
—‘শাওন!’ অনু ডাকছে। ডাকতে থাকুক। আমি যাব না।
—‘এই শাওন!’ ও আবার ডাকছে। আর রাগ করে থাকতে পারি না। এই পাগলটাকেই যে প্রচণ্ড ভালোবাসি।
তার পাশে গিয়ে বসি। বলি, ‘কী এমন আছে রে তোর মেঘবালকে?’
সে বলে, ‘আমার মেঘবালক। সে শুধু আমায় দেখা দিয়েছে। আর কাউকে দেয়নি।’
নিজে নিজে ভাবি যে এই মেয়ের মাথায় নিশ্চিত বড় কোনো একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। নয়তো অসম্ভব একটা কিছুকে কল্পনা করে তা প্রাণপণে বিশ্বাস করা সাধারণ মানুষের কাজ নয়। অনু বলতে থাকে ‘আমি প্রতিদিন মেঘবালককে দেখার জন্য জানালার পাশে বসে থাকি, জানিস। আজ তো অমাবস্যা। আঁধার রাত। তারপরও আমি মেঘবালককে দেখার জন্য জানালার পাশে বসে থাকব।’
আমি আস্তে করে তাকে বলি, ‘যা! আজ রাতে তোর মেঘবালককে দেখব। ঠিক আছে?’
—‘আঁধার রাতে মেঘবালককে দেখা যাবে না, কেউ দেখতে পাবে না।’
রাত প্রায় তিনটা বাজে। লোডশেডিং। ঘুম আসছে না। গরমে লোডশেডিংয়ের মতো ভয়ংকর ব্যাপার খুব কমই আছে। এই অসহ্য গরমেও চোখে শুধু অনুর মুখটা ভাসছে। কী যে অদ্ভুত এই মেয়েটা! তার চেয়েও বেশি অদ্ভুত হলো তার চিন্তাভাবনা। আজগুবি। মেঘবালক! হাহ্! নিজে নিজেই হেসে উঠি আমি।
মা-বাবা, বোন সবাই ঘুমাচ্ছে। বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালাম আমি। এই গরমে কীভাবে থাকবে মানুষ? অসহ্য! চার্জার লাইটটা হাতে নিই। দরজা খুলে সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসি ছাদে। আজ অমাবস্যা। এর ওপর লোডশেডিং। অন্ধকার ছাদে আমি একা। অনুর কথা মনে পড়ছে। সঙ্গে তার ‘মেঘবালকের’ কাহিনিও। আকাশের দিকে তাকাই আমি। ঘুটঘুটে অন্ধকার। চার্জার লাইটটা নিভিয়ে ফেলি। চারদিকে তাকাই। দূর-দূরান্ত পর্যন্ত আলোর কোনো চিহ্ন কোথাও নেই। আজ তাহলে অনুর মেঘবালকের দেখা মিলবে না। হঠাৎ করে অনুর বলা কথাগুলো মনে হলো—‘...তারপরও আমি মেঘবালককে দেখার জন্য জানালার পাশে বসে থাকব...।’
নিশ্চয়ই সে প্রতিদিনের মতো আজও তার জানালার পাশে বসে আছে মেঘবালককে দেখার অপেক্ষায়...।
এক পা ভাঁজ করে নিচু হই আমি...দুটো হাত ছড়িয়ে দিই...আস্তে আস্তে শূন্যে উঠে যেতে থাকি...ধীরে ধীরে আরও ওপরে...আরও ওপরে...অনেক অনেক ওপরে উঠে যাই আমি...।
আঁধার রাতে মেঘবালককে দেখা যাবে না...কেউ দেখতে পাবে না...।
—‘আজব!’ তাকে থামিয়ে দিয়ে আমি বলি, ‘এই ভয়ংকর দৃশ্য দেখেও তুই চিৎকার করলি না কেন?’
সে বলে, ‘ভয়ংকর মানে? আমার কাছে তো তাকে দেখতে ভালোই লাগছিল। কি রোমান্টিক!’
ঈর্ষায় আমার গা জ্বলে যায়! বলে উঠি, ‘তাহলে পেপারে, না হলে টিভি চ্যানেলে জানা তোর আবিষ্কারের কথা।’
সে বলে, ‘আমার মেঘবালকের কথা আমি সবাইকে কেন বলব? শুধু আমার বন্ধুদের বলব। ‘আমার মেঘবালক!’ রাগে বলে উঠি, ‘যা! তার প্রেমে পড়ে যা!’ সে-ও কম নয়। বলে, ‘প্রেমে তো পড়েই গেছি। মেঘবালক, তোমার প্রেমে পড়েছি!’
রাগে উঠে চলে আসি আমি। এই পাগল মেয়ের মাথার কোনো ঠিক নেই। আজগুবি চিন্তাভাবনা নিয়েই সারা দিন পড়ে থাকে। এসব চিন্তার কি কোনো মানে আছে? আবার নাকি ওই আজগুবি মেঘবালক না ফালকের প্রেমে পড়েছে। যত্তসব!
—‘শাওন!’ অনু ডাকছে। ডাকতে থাকুক। আমি যাব না।
—‘এই শাওন!’ ও আবার ডাকছে। আর রাগ করে থাকতে পারি না। এই পাগলটাকেই যে প্রচণ্ড ভালোবাসি।
তার পাশে গিয়ে বসি। বলি, ‘কী এমন আছে রে তোর মেঘবালকে?’
সে বলে, ‘আমার মেঘবালক। সে শুধু আমায় দেখা দিয়েছে। আর কাউকে দেয়নি।’
নিজে নিজে ভাবি যে এই মেয়ের মাথায় নিশ্চিত বড় কোনো একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। নয়তো অসম্ভব একটা কিছুকে কল্পনা করে তা প্রাণপণে বিশ্বাস করা সাধারণ মানুষের কাজ নয়। অনু বলতে থাকে ‘আমি প্রতিদিন মেঘবালককে দেখার জন্য জানালার পাশে বসে থাকি, জানিস। আজ তো অমাবস্যা। আঁধার রাত। তারপরও আমি মেঘবালককে দেখার জন্য জানালার পাশে বসে থাকব।’
আমি আস্তে করে তাকে বলি, ‘যা! আজ রাতে তোর মেঘবালককে দেখব। ঠিক আছে?’
—‘আঁধার রাতে মেঘবালককে দেখা যাবে না, কেউ দেখতে পাবে না।’
রাত প্রায় তিনটা বাজে। লোডশেডিং। ঘুম আসছে না। গরমে লোডশেডিংয়ের মতো ভয়ংকর ব্যাপার খুব কমই আছে। এই অসহ্য গরমেও চোখে শুধু অনুর মুখটা ভাসছে। কী যে অদ্ভুত এই মেয়েটা! তার চেয়েও বেশি অদ্ভুত হলো তার চিন্তাভাবনা। আজগুবি। মেঘবালক! হাহ্! নিজে নিজেই হেসে উঠি আমি।
মা-বাবা, বোন সবাই ঘুমাচ্ছে। বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালাম আমি। এই গরমে কীভাবে থাকবে মানুষ? অসহ্য! চার্জার লাইটটা হাতে নিই। দরজা খুলে সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসি ছাদে। আজ অমাবস্যা। এর ওপর লোডশেডিং। অন্ধকার ছাদে আমি একা। অনুর কথা মনে পড়ছে। সঙ্গে তার ‘মেঘবালকের’ কাহিনিও। আকাশের দিকে তাকাই আমি। ঘুটঘুটে অন্ধকার। চার্জার লাইটটা নিভিয়ে ফেলি। চারদিকে তাকাই। দূর-দূরান্ত পর্যন্ত আলোর কোনো চিহ্ন কোথাও নেই। আজ তাহলে অনুর মেঘবালকের দেখা মিলবে না। হঠাৎ করে অনুর বলা কথাগুলো মনে হলো—‘...তারপরও আমি মেঘবালককে দেখার জন্য জানালার পাশে বসে থাকব...।’
নিশ্চয়ই সে প্রতিদিনের মতো আজও তার জানালার পাশে বসে আছে মেঘবালককে দেখার অপেক্ষায়...।
এক পা ভাঁজ করে নিচু হই আমি...দুটো হাত ছড়িয়ে দিই...আস্তে আস্তে শূন্যে উঠে যেতে থাকি...ধীরে ধীরে আরও ওপরে...আরও ওপরে...অনেক অনেক ওপরে উঠে যাই আমি...।
আঁধার রাতে মেঘবালককে দেখা যাবে না...কেউ দেখতে পাবে না...।
No comments