সোয়াইন ফ্লু ভাইরাস-পরীক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা চাই by ড. মামুন আহমেদ
রাজধানীসহ সারা দেশে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ছে ভাইরাসজনিত অতি ছোঁয়াছে রোগ সোয়াইন ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জা এইচ১এন১। বিশ্বের অন্য অনেক দেশের মতো আমাদের দেশেও বর্তমানে এটি বহুল আলোচিত ও আতঙ্কের বিষয়। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্তের সংখ্যা সরকারি হিসাব অনুযায়ী ২১৩। আগামী শীত মৌসুমে এ ভাইরাস ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে প্রায় মহামারি আকার ধারণ করতে পারে-বিশেষজ্ঞ চিকিৎসরা এমন মতামত ব্যক্ত করেছেন। সম্প্রতি রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে সোয়াইন ফ্লু আক্রান্ত একজন রোগীর মৃত্যুর খবরে এ বিষয়ে সাধারণ মানুষের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা নতুন মাত্রা লাভ করেছে। আতঙ্কিত মানুষ সময়মত রোগ নির্ণয় ও সঠিক চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। সরকারের তরফ থেকে সোয়াইন ফ্লু বিষয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য জনগণকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, এ রোগ প্রতিরোধে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী দেশে মজুত আছে। সরকারি হাসপাতালে বিশেষ ওয়ার্ড খোলা হয়েছে এবং জরুরি অবস্থা মোকাবেলার জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসকগণ প্রস্তুত আছেন। কিন্তু রোগীর দেহে নিশ্চিতভাবে সোয়াইন ফ্লু ভাইরাসের উপস্থিতি পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রমের অপ্রতুলতা জনগণকে হতাশ ও আতঙ্কিত করে তুলছে। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, আক্রান্ত রোগীর দেহের নমুনা পরীক্ষা করে সোয়াইন ফ্লু ভাইরাস নিশ্চিতভাবে শনাক্তকরণের নামমাত্র ব্যবস্থা আছে দেশের দুটি প্রতিষ্ঠানে-সরকারি রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনসিটটিউট (আইইডিসিআর) এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রে (আইসিডিডিআরবি)। সোয়াইন ফ্লু পরীক্ষার জন্য আগত আতঙ্কিত রোগীকে আইইডিসিআর থেকে জানানো হয়েছে যে, সোয়াইন ফ্লু ভাইরাসের জন্য ল্যাবরেটরি টেসেটর প্রয়োজন নেই। বরং রোগের লক্ষণ দেখা দিলে সরাসরি চিকিৎসা গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। অবাধে সোয়াইন ফ্লু ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া অসংখ্য রোগীকে পরীক্ষা করার উপযুক্ত ব্যবস্থা প্রয়োজনের তুলনায় অতি অপ্রতুল বিধায় এ ধরনের পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু এর ক্ষতিকর দিকটি হয়তো বিবেচনায় নেয়া হয়নি। সঠিকভাবে সোয়াইন ফ্লু ভাইরাসের পরীক্ষা না করে শুধু রোগের লক্ষণ আর অনুমানের উপর ভিত্তি করে ভাইরাসনাশক ওষুধ (অহঃর ঠরৎধষ উৎঁম)-এর ব্যবহার ভবিষ্যতে আরো বড় ধরনের জনস্বাস্থ্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। কারণ এর ফলে ভাইরাসের জীনের মৌলিক উপাদান পরিবর্তিত হয়ে আরো বিপজ্জনক জীবনসংহারী নতুন ধরনের ভাইরাস আবির্ভূত হতে পারে। তাছাড়া আমরা দেখেছি সঠিক সময়ে সোয়াইন ফ্লু ভাইরাস শনাক্তকরণে বিলম্বের ফলে যথাযথ চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু হয়েছে সাভারবাসী মিতা চক্রবর্তীর। ফলে সাধারণ মানুষ সোয়াইন ফ্লু ভাইরাসের সঠিক পরীক্ষা কার্যক্রমের অপ্রতুলতার সংবাদে এখন দিকভ্রান্ত। আক্রান্ত রোগীর দেহে সোয়াইন ফ্লু ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিতভাবে নির্ণয় করার জন্য যে পরীক্ষা করা হয় তার নাম 'রিয়েল-টাইম পি সি আর । এতে মানুষের নাকের ভেতরের সর্দি বা রস নিয়ে তাতে সোয়াইন ফ্লু ভাইরাসের জঘঅ (জরনরড়হঁপষবরপ অপরফ) নির্ণয়ের মাধ্যমে ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়। এই পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য পরীক্ষাগারে যেসব যন্ত্রপাতি ও আনুষঙ্গিক বিষয়ের প্রয়োজন হয় তা হলো-(১) রিয়েল টাইম পিসিআর মেশিন (২) ভাইরাস-এর সুনির্দিষ্ট রিএজেন্ট/কিট এবং (৩) প্রশিক্ষিত জনবল। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় রিয়েল-টাইম পিসিআর মেশিন এ প্রশিক্ষিত জনবল বাংলাদেশের একাধিক বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে বিদ্যমান আছে। জবধষ ঃরসব চঈজ ঞবপযহড়ষড়মু ব্যবহার করে রোগীর দেহে হেপাটাইটিস বি ও হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের উপস্থিতি ও পরিমাণ নির্ণয়ের ব্যবস্থা বেসরকারি পর্যায়ে অনেকদিন থেকে প্রচলিত। বিষয়ে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন দক্ষ জনবলও আমাদের আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগে মাষ্টার্স পর্যায়ে কোর্স প্রচলিত আছে-যা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল তৈরিতে ভূমিকা রাখছে। পরীক্ষার জন্য অবশিষ্ট প্রয়োজনীয় উপাদান ঝরিহব ঋষঁ জবধষ ঞরসব চঈজ জবধমবহঃ বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত হয় যা স্বল্প সময়ে সংগ্রহ করা সম্ভব। এ লেখার মাধ্যমে জানাতে চাই যে, আক্রান্ত রোগীর দেহে স্বল্প সময়ে সোয়াইন ফ্লু ভাইরাসের নিশ্চিত উপস্থিতি পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও দক্ষ জনবল বাংলাদেশে বিদ্যমান আছে। জরুরি ভিত্তিতে সোয়াইন ফ্লুর জন্য নির্দিষ্ট রিএজেন্ট সংগ্রহ করে বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধার মধ্যেই এই ভাইরাসটি শনাক্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব। আর এজন্য প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ।
লেখক :অধ্যাপক, প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং কনসালট্যান্ট, পিসিআর ল্যাব, ল্যাবএইড লি.
লেখক :অধ্যাপক, প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং কনসালট্যান্ট, পিসিআর ল্যাব, ল্যাবএইড লি.
No comments