ক্যুইবেকের স্বাধীনতা দাবিঃ মুছে যায়নি ৩০ অক্টোবরের ঘা by সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল
‘হোছেলাগা’ স্বাধীনতা চায়। হোছেলাগা মানে ক্যুইবেক। আদি নাম- হোছেলাগা। কানাডা থেকে এই ক্যুইবেক প্রভিন্সের ফ্রেঞ্চভাষীরা স্বতন্ত্র রাষ্ট্র চায়। ক্যুইবেকের এই স্বাধীনতার দাবিই কানাডাবাসীর জন্য একটি জাতীয় সমস্যা। এ জন্য দু’বার হাঁ/না ভোট হয়েছে। দু’বারই ‘না’ জয়যুক্ত হয়েছে। কারণ কানাডায় বেশিরভাগ ক্যুইবেকবাসীই ঐক্যে বিশ্বাসী।
১৯৮১ সালের এক হিসাবে দেখা যায়, ক্যুইবেকে ফরাসীর সংখ্যা ৮২ শতাংশ এবং নিউ ব্রান্সউইক ৩১ শতাংশ। অর্থাৎ কানাডার ৮৯ ভাগ ফ্রেঞ্চভাষীই ক্যুইবেকবাসী। তারপরও কানাডায় বিপুল অর্থ ব্যয় করে বেসরকারি নথিপত্র থেকে শুরু করে প্রায় সবকিছুই দ্বিভাষী করা হয়েছে। ভাষার ক্ষেত্রে সমান মর্যাদা সত্ত্বেও ক্যুইবেকের প্রাদেশিক সরকারের নীতিমালা অন্যান্য প্রদেশের চেয়ে পৃথক । ইমিগ্রেশন আইন, শ্রমিক অধিকার, পুস্তক প্রকাশনা নিয়ম, সাংস্কৃতিক নীতি থেকে শুরু করে ড্রাইভিং নিয়ম কানুনও আলাদা !
এক সময় ক্যুইবেক ছিলো ফ্রান্সের কলোনি। ১৭৫৯ সালে ব্রিটিশের উপনিবেশিকতার শিকার হয়ে এখানকার ফ্রেঞ্চভাষীরা দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে তাদের মধ্যে ক্ষোভ এবং দ্বন্দ্ব দানা বেঁধে ওঠে। কৌশলী ব্রিটিশ সার্বিক শাসনের কথা ভেবে তাদের না ক্ষেপিয়ে Quebee Act 1774 -এর অধীনে খর্ব করা শক্তি ও অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। তাদের সেই ঘুমন্ত স্বদেশী আন্দোলন পুনরায় জেগে ওঠে এবং ১৮৩৭ সালে স্বায়ত্বশাসনের লক্ষ্যে সশস্ত্র বিদ্রোহ করে। এবারও ব্রিটিশ শাসকরা ক্যাথলিক ধর্মযাজকদের সহযোগিতায় তা কৌশলে দমন করে। বিনিময়ে ধর্মযাজকেরা ফ্রান্স থেকে রিফুজি আমদানিসহ নানা ধরনের সুযোগ গ্রহন করে। ফলে জাতীয়তাবাদ আন্দোলন পরিণত হয় ক্যাথলকিবাদে! লাভাল বিশ্ববিদ্যালয় মূলত এই আন্দোলনের কারখানায় পরিণত হয়। তাদের কয়েকজনের উদ্যোগে ১৯৬০ সালে গঠিত হয় RIN অর্থাৎ Resemlement Paur L’indepedance National. তারা নীরব বিপ্লব বা ‘Quiet Revolution’ শুরু করে। তাদের মূল লক্ষ্য ছিলো- কানাডিয়ান এবং ইংরেজ আগ্রাসন থেকে ক্যুইবেক ও ফ্রেঞ্চ ভাষাকে মুক্ত করা। এ ছাড়া ১৯৬৮ সালে রেনে লাবেক গঠন করেন কট্টর জাতীয়তাবাদী পার্টি ক্যুইবেক ( PQ)।
১৯৭০ সালে ক্যুইবেক লিবারেল পার্টির নেতা রবার্ট বুরাসা প্রদেশিক ক্ষমতায় এলে প্রদেশিক আইন সভায় BILL-IDI পাশ করিয়ে নেয়। ফলে অ-ইংলিশদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে ভর্তি বন্ধ হয়ে যায়। অফিস আদালত-ব্যবসা-বাণিজ্যেও ফরাসি ভাষার আদেশ জারি হয়।
তারপরও ১৯৮৫ সালে প্রদেশিক নির্বাচনে PQ ক্ষমতায় আসতে পারেনি। তার মানে তারা জনগণের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। তবে তারা রেফারেন্ডামের দাবিতে সার্থক হয়।
তারও আগে ১৮৬৫ সালের ৩ ফ্রেরুয়ারি কানাডীয় সংসদে ফেডারেশন সংক্রান্ত ক্যুবেক সম্মেলনের প্রস্তাবের ওপর আলোচনা তথা বির্তক শুরু হয়। পরে ১১ মার্চ উক্ত প্রস্তাব ৯১/৩৩ ভোটে গৃহীত হয়। তবে ফ্রেঞ্চভাষী সদস্যরা ভোটাভুটিতে ২৭/২২-এ বিভক্ত হয়ে পড়লেও সেখান থেকেই জাতীয়তাবাদী বীজের উৎপত্তি হয়। যা পরবর্তীতে ‘গাছ’ নয়, আগাছার সৃষ্টি করে।
প্রথম বার ২০ মে ১৯৮০, তার পনের বছর পর দ্বিতীয় বার ৩০ অক্টোবর ১৯৯৫ সালে হেরে গেলেও তারা মনে করে তাদের ‘স্বাধীনতা এবং জাতীয়তাবাদী আন্দোলন’ থেমে যায়নি। সময় সুযোগ মতো আবারো হয়তো বিচ্ছিন্নতাবাদীরা একটি পৃথক স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র গড়ে তোলার পুনঃপ্রচেষ্টায় তথা কানাডা ভাঙার আন্দোলনে নেমে পড়বে। কারণ, ক্যুইবেকপন্থীদের পরাজয় হলেও তারা মনে করেন গণজাগরণের তাদের বি‘জয়’ হয়েছে। প্রথমতঃ আগে রেফারেন্ডামের চেয়ে ৫৯.৫৬% বনাম ৪০.৪৪% (২১৮৭৯৯১ পক্ষান্তরে ১.৪৮৫৫১ ভোট)আর দ্বিতীয় বার ৫০.৫৮% বনাম ৪৯.৪২% (২৩৬২৬৪৮ পক্ষান্তরে ২৩০৮৩৬০ ভোট) ভোটের হার বৃদ্ধি পেয়েছে।
দ্বিতীয়ত: হ্যাঁ আর না’র ব্যবধান মাত্র ৫০ হাজার। এ জন্য তারা এথনিক গ্রুপ এবং অভিবাসীদেরও দোষারোপ করেন। কিন্তু পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ফরাসীরাই ‘হ্যা’-এর বিরোধীতা করেছে। কারণ ক্যুইবেকে তাদের সংখ্যা- ৮২% আর এথনিক ১৮%। তাতে দেখা যায়, অর্ধেক ফরাসীই ‘না’-এর পক্ষে। তারপরও আন্দোলকারীরা রেফারেন্ডামের আগেই আপত্তিকর পোস্টারিং করেছে- ‘ভোট ফর ইয়েস অর গো ব্যাক হোয়ার ইউ কাম ফ্রম।’
এতে ক্যুইবেক আলাদা করার আন্দোলনকারীরা কানাডার ঢেকে থাকা রেসিজমের (সাম্প্রদায়িক) রূপকে প্রকাশ্যে তুলে ধরেছে এবং অস্থির করে তুলতে চাইছে কানাডার মানচিত্রকে।
ষাট দশকের শেষ দিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রেনি লেভেক এই ‘আত্মঘাতী’ আন্দোলনের সূচনাকারী। পরে জ্যাক প্যারিজোরে ‘পার্টি ক্যুবেকুয়া’ এবং ‘ব্লক ক্যুইবেক’ যৌথভাবে সংগ্রামে নেমে পড়ে। কিন্তু মেনে নিতে হয় পরাজয়। অথচ সেই সময়- প্রধানমন্ত্রী জ্যাঁ ক্রেতিয়ে ছিলেন ক্যুইবেকবাসী। শুধু প্রধানমন্ত্রীই নয়, গভর্নর জেনারেল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, হ্যারিটেজ মন্ত্রীসহ অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিই ছিলেন ফ্রাঞ্চ ও ক্যুইবেকবাসী। যেহেতু তারা ‘ফরাসী ভাষা’র জন্য পৃথক রাষ্ট্র প্রত্যাশা করে, সেজন্য রেফারেন্ডামের আগে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট জ্যাক সিরাক স্বাধীন ক্যুবেকের স্বীকৃতিপত্রে সই করার জন্য ২৩ অক্টোবর থেকেই কলম খুলে অপেক্ষা করছিলেন। আর তার বিপক্ষে অর্থাৎ কানাডার অখন্ডতার পক্ষে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন- ‘কানাডা হলো বিশ্বের জন্য একটি মডেল বা উদাহরণ। যেখানে বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছে।’
আর কানাডার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মি. জ্যাক বলেন, ‘ডিভোর্স নিয়ে বি-ম্যারেজ করতে চেয়ে ক্যুইবেক নেতারা তাদের বুদ্ধিমত্তার নির্লজ্জ প্রমাণ দিতে চেয়েছে।’
স্বাধীনতা প্রত্যাশী ক্যুবেকবাসীরা সার্বভৌমত্বের পেছনে অনেক কারণ দেখান। যদিও প্রধান কারণ ভাষাগত। তারপরও তারা মনে করেন:
১. ক্যুইবেকের জনগণ নিজস্ব আইডেনটিটি নিয়ে স্বাধীনভাবে বাঁচতে চায়।
২. ক্যুইবেক স্বাধীন হলে এর অর্থনেতিক অবস্থা আরও ভালো হবে।
৩. কানাডার প্রভাবমুক্ত হলে নিজস্ব কৃষ্টি, ভাষা ও সংস্কৃতিকে রক্ষা করা যাবে।
৪. স্বাধীন হলেও ক্যুইবেকের জনগণ কানাডার পাসপোর্ট, কানাডিয়ান ডলার ও কানাডার নাগরিত্ব বজায় রাখতে পারবে।
৫. ফেডারেল গভর্নমেন্ট ক্যুইবেককে বারংবারই বিভিন্ন অধিকার ও সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছে। ক্যুবেক আর কানাডার হাতে বঞ্চিত ও শোষিত হতে চায় না।
৬. ক্যুবেক স্বাধীন হলে অবশিষ্ট কানাডার মধ্যে একটি ইকোনমিক ও পলিটিক্যাল ইউনিয়ন গড়ে উঠবে, যা অবশ্যই কানাডা চাপের মুখে করতে বাধ্য হবে।
৭. বিশ্বের দরবারে ফ্রান্সের বাইরে একটি ফ্রাস্কোফোন রাষ্ট্র হিসেবে ক্যুইবেক প্রতিষ্ঠিত হবে।
স্বাধীনতাকামী বিচ্ছিন্নতাবাদী দল ব্লক ক্যুবেকুয়া ও পার্টি ক্রুইবেকুয়া উল্লেখিত দাবিগুলি উপস্থাপন করে ব্যাপক প্রচার অভিযান চালিয়েছে বিগত বছরগুলোতে।
তবে ঐক্যে বিশ্বাসীরাও অনেক নেতিবাচক চিত্র তুলে ধরেছেন। যেমন- রেফারেন্ডামের শুরুতেই অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে নিতে থাকে, গণভোটের একদিন পর ইমিগ্রেশন মন্ত্রী সার্জিও মার্সি ক্যুইবেকে ইমিগ্রেন্ট ও রিফুজি গ্রহণের হার হ্রাস করে দেন, আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিকভাবে দারুণ ক্ষতির সম্মুখীন হবে ইত্যাদি। এছাড়া ক্যুইবেকের মাথাপিছু ১৯,৭৬৭ ডলারের ঋণ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবে বলেও তারা উল্লেখ করেন।
আবার আদিবাসীরা বলেন, ‘এদেশ আমাদের। এ দেশে আমরা আদিবাসী। আমরাই সিদ্ধান্ত নেবো ক্যুইবেক কানাডার থাকবে কী না? যারা স্বাধীনতা দাবি করছে, তারাই তো পরগাছা।’
এদিকে, রেফারেন্ডামের সময় ‘ইহুদী পুঁজি বিনিয়োগকারীরা প্রদেশ পাড়ি দেওয়ার কথা ভাবছে। ব্যবসা বাণিজ্য গুটিয়ে অন্য কোথাও পুঁজি বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে। আর ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা তাদের অস্তিত্বের কথা ভাবতে পারছে না। এই স্বাধীনতার হিড়িকে বহু সংখ্যক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ক্যুইবেককে গুডবাই জানিয়ে চলে গেছে। হংকংয়ের পুঁজি বিনিয়োগকারীরা ক্যুইবেকে পুঁজি বিনিয়োগ করতে সাহস পাচ্ছে না। ইমিগ্রেশন তরিঘড়ি করে হংকংয়ে বড় আকারের অফিস খুলে বসেছে। কিন্তু তাতে কোন সাড়া মিলছে না। তারা বলছে, তোমাদের দেশে ব্যবসার নিরাপত্তা নেই, ওখানে পুঁজি বিনিয়োগ করা যাবে না।
অপরদিকে অভিবাসীরাও এই আন্দোলনের বিপক্ষে। বাংলাদেশীরাও ‘না’ কমিটি গঠন করেছিলো। যার সভাপতি ছিলেন মোস্তাক আহমেদ। তারা ২২ অক্টোবর ১৯৯৫-এ ওগলভি স্ট্রিটে সমাবেশ করেছিল। আবার আরেক দল (আহাদ-পান্না) ‘হ্যা’ এর পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলে, আমরা এক নদী রক্তের বিনিময়ে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাধীনতা (বাংলাদেশে) অর্জন করেছি। এর সাথে ক্যুইবেকের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও সার্বভৌমত্বের দাবির ঐতিহাসিক যোগসূত্র আছে।
‘না’ ভোট বিজয়ের পর ক্যুইবেক নানা ধরনের চাপের মধ্যে পড়ে। নেতারা সংগ্রাম চালাবে বলে ঘোষণা দিলেও ২৪ ঘন্টার মধ্যে ইস্তফা দিয়ে রাজনীতি ত্যাগ করেন নেতৃত্বদানকারী লুসিয়াম বুর্শাড। তিনি বলেন, রেফারেন্ডামের কথা শুনলে আমার ৫ বছরের সন্তান থুথু ফেলে। আর স্ত্রী বলে আমি ‘আমরিকান।’
আরেক নেতা সম্পর্কে বাংলাদেশি সাংবাদিক লিখেছেন, বেচারী জ্য ক্রেচিয়ের অবস্থা দেখে প্রখ্যাত প্রয়াত সাংবাদিক জহুর ভাইয়ের একটা উক্তির কথা মনে পড়ল, কানাডার রাজনৈতিক অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী জ্য কার্তিয়ের অন্ডকোশ সিলেটের ফাটা বাঁশে আটকে গেছে।
সেই সময় কানাডার মূলধারার কাগজের পাশাপাশি বাংলা পত্রিকাগুলোও এসব চিত্র তুলে ধরে। যেমনঃ ১. মন্ট্রিয়লকে কানাডার নতুন প্রদেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা/কাজী আশরাফুজ্জামান, ২. স্বাধীনতাকামীরা কি জিতবেন/ বিদুৎ ভৌমিক, ৩. স্বল্প ভোটের ব্যবধানে কানাডার অখন্ডতা রক্ষা পেল/ নূর মোহাম্মদ কাজী, ৪. ক্যুইবেক রেফারেন্ডাম এবং আমরা/রুমু ইসলাম, ৫. ক্যুবেকঃ প্রদেশ, জাতি, স্বতন্ত্র সমাজ/আব্দুল কাদের চৌধুরী, ৬. কানাডীয় কনফেডারেশনঃ শুরু ও শেষ/আব্দুল কাদের চৌধুরী, ৭. ভাঙনের উচ্ছ্বাস: ক্যুইবেক রেফারেন্ডাম কিংবা আসন্ন ক্যুবেক রেফারেন্ডাম নিয়ে বাঙালি ভাবনা অথবা কানাডা অখন্ডের প্রশ্ন: ক্যুইবেকের ভাগ্য পরীক্ষা ইত্যাদি।
২০১১ সালের ১২ অক্টোবর সিআরওপি কর্তৃক পরিচালিত ও প্রকাশিত জরিপে ফেডারেল আইডিয়াতে ৬৩% ক্যুইবেকবাসী ফেডারিলিজমে আগ্রহী, বিশ্বাসী এবং গর্বিত। আর ৭১% মনে করে ক্যুইবেকের স্বাধীনতা বা আলাদা রাষ্ট্র হওয়ার বিষয়টি এখন অতীত। তাই এই রাজনৈতিক বির্তক ক্যুবেকবাসী প্রত্যাখান করেছে। তবে এ জরিপে এখনো ১৯% নিজেদের স্বাধীনতাকামী মনে করে। আর ৩৭% পক্ষে-বিপক্ষে কোনো দিকেই নেই।
কানাডা প্রায় প্রতিবছরই বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম দেশ হিসাবে স্বীকৃতি পাচ্ছে। বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম দেশের নাগরিক হিসেবে ক্যুইবেকের জনগণ কি গর্বিত বা লাভবান হচ্ছে, না বঞ্চিত হচ্ছে, এ প্রশ্নের সত্যিকার অর্থে জবাবগুলি নিন্মে দেওয়া হলো- যেখানে ক্যুইবেক ও কানাডা এক এবং অখন্ড থাকার স্বপক্ষে অতীব গুরুত্বপূর্ণ যুক্তিগুলি প্রকাশ পায়।
দুই জার্মানি যখন এক হয়েছে। শুধু তাই নয়; জার্মানি, গ্রিক, ফরাসি, ইতালিয়ানরা ইউরোপে হাতে হাত ধরে আগামী পৃথিবীর নেতৃত্বের স্বপ্ন দেখে, তখন সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো কানাডাকে টুকরো টুকরো করার ‘ষড়যন্ত্র’কে প্রতিহত করার দৃঢ়তায় বেশিরভাগ ক্যুইবেকবাসী ঐক্যবদ্ধ।
তারপরও ‘হ্যাঁ’ পরাজয়ের পর আরেকটি গ্রুপ অন্য দাবি উপস্থাপন করে, ক্যুইবেক থেকে আলাদা হয়ে স্বতন্ত্র প্রভিন্স হবে মন্ট্রিয়ল। কিন্তু সে আন্দোলন হালে পানি পায়নি। তবে ফরাসিভাষীরা গণভোটে গণরায়ের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ দেখালেও, তাদের মন থেকে ৩০ অক্টোবরের ঘা মুছে যায়নি।
তথ্যসূত্রঃ
১. Fitzmaurice, John (1985). Québec and Canada; Past, Present, and Future. C. Hurst & Co. Ltd.. pp. 47. ISBN 0-905838-94-7.
২. ‘Citizenship blitz in Quebec’. The Montreal Gazette. August 31, 1995, Montreeal. Canada.
৩. মাসিক দেশ দিগন্ত, মে ১৯৯৮, জুন সংখ্যা ১৯৯৮ এবং জুলাই ১৯৯৮ সংখ্যা। মট্রিয়ল, কানাডা
৪. সাপ্তাহিক প্রবাস বাংলাঃ অক্টোবর ১৩, ১৯৯৫/ অক্টোবর ২৭, ১৯৯৫/ নভেম্বর ০৩, ১৯৯৫/ মার্চ ০৮, ১৯৯৬। মন্ট্রিয়ল, কানাডা
৫. গণরায়ে প্রতি শ্রদ্ধাবোধ/ তাজুল মোহাম্মদ। কানাডার চিঠি। প্রকাশকঃ অন্যপ্রকাশ, ফ্রেব্রুয়ারি ১৯০৭, ঢাকা
৬. CROP, October 12, 2011. Montreeal. Canada
৭. Former senator declares for Yes/ The Globe and maim, September 28, 1995. Canada.
৮. http://en.wikipedia.org/wiki/Quebec_referendum,_1980
৯. http://en.wikipedia.org/wiki/Quebec_referendum,_1995
এক সময় ক্যুইবেক ছিলো ফ্রান্সের কলোনি। ১৭৫৯ সালে ব্রিটিশের উপনিবেশিকতার শিকার হয়ে এখানকার ফ্রেঞ্চভাষীরা দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে তাদের মধ্যে ক্ষোভ এবং দ্বন্দ্ব দানা বেঁধে ওঠে। কৌশলী ব্রিটিশ সার্বিক শাসনের কথা ভেবে তাদের না ক্ষেপিয়ে Quebee Act 1774 -এর অধীনে খর্ব করা শক্তি ও অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। তাদের সেই ঘুমন্ত স্বদেশী আন্দোলন পুনরায় জেগে ওঠে এবং ১৮৩৭ সালে স্বায়ত্বশাসনের লক্ষ্যে সশস্ত্র বিদ্রোহ করে। এবারও ব্রিটিশ শাসকরা ক্যাথলিক ধর্মযাজকদের সহযোগিতায় তা কৌশলে দমন করে। বিনিময়ে ধর্মযাজকেরা ফ্রান্স থেকে রিফুজি আমদানিসহ নানা ধরনের সুযোগ গ্রহন করে। ফলে জাতীয়তাবাদ আন্দোলন পরিণত হয় ক্যাথলকিবাদে! লাভাল বিশ্ববিদ্যালয় মূলত এই আন্দোলনের কারখানায় পরিণত হয়। তাদের কয়েকজনের উদ্যোগে ১৯৬০ সালে গঠিত হয় RIN অর্থাৎ Resemlement Paur L’indepedance National. তারা নীরব বিপ্লব বা ‘Quiet Revolution’ শুরু করে। তাদের মূল লক্ষ্য ছিলো- কানাডিয়ান এবং ইংরেজ আগ্রাসন থেকে ক্যুইবেক ও ফ্রেঞ্চ ভাষাকে মুক্ত করা। এ ছাড়া ১৯৬৮ সালে রেনে লাবেক গঠন করেন কট্টর জাতীয়তাবাদী পার্টি ক্যুইবেক ( PQ)।
১৯৭০ সালে ক্যুইবেক লিবারেল পার্টির নেতা রবার্ট বুরাসা প্রদেশিক ক্ষমতায় এলে প্রদেশিক আইন সভায় BILL-IDI পাশ করিয়ে নেয়। ফলে অ-ইংলিশদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে ভর্তি বন্ধ হয়ে যায়। অফিস আদালত-ব্যবসা-বাণিজ্যেও ফরাসি ভাষার আদেশ জারি হয়।
তারপরও ১৯৮৫ সালে প্রদেশিক নির্বাচনে PQ ক্ষমতায় আসতে পারেনি। তার মানে তারা জনগণের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। তবে তারা রেফারেন্ডামের দাবিতে সার্থক হয়।
তারও আগে ১৮৬৫ সালের ৩ ফ্রেরুয়ারি কানাডীয় সংসদে ফেডারেশন সংক্রান্ত ক্যুবেক সম্মেলনের প্রস্তাবের ওপর আলোচনা তথা বির্তক শুরু হয়। পরে ১১ মার্চ উক্ত প্রস্তাব ৯১/৩৩ ভোটে গৃহীত হয়। তবে ফ্রেঞ্চভাষী সদস্যরা ভোটাভুটিতে ২৭/২২-এ বিভক্ত হয়ে পড়লেও সেখান থেকেই জাতীয়তাবাদী বীজের উৎপত্তি হয়। যা পরবর্তীতে ‘গাছ’ নয়, আগাছার সৃষ্টি করে।
প্রথম বার ২০ মে ১৯৮০, তার পনের বছর পর দ্বিতীয় বার ৩০ অক্টোবর ১৯৯৫ সালে হেরে গেলেও তারা মনে করে তাদের ‘স্বাধীনতা এবং জাতীয়তাবাদী আন্দোলন’ থেমে যায়নি। সময় সুযোগ মতো আবারো হয়তো বিচ্ছিন্নতাবাদীরা একটি পৃথক স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র গড়ে তোলার পুনঃপ্রচেষ্টায় তথা কানাডা ভাঙার আন্দোলনে নেমে পড়বে। কারণ, ক্যুইবেকপন্থীদের পরাজয় হলেও তারা মনে করেন গণজাগরণের তাদের বি‘জয়’ হয়েছে। প্রথমতঃ আগে রেফারেন্ডামের চেয়ে ৫৯.৫৬% বনাম ৪০.৪৪% (২১৮৭৯৯১ পক্ষান্তরে ১.৪৮৫৫১ ভোট)আর দ্বিতীয় বার ৫০.৫৮% বনাম ৪৯.৪২% (২৩৬২৬৪৮ পক্ষান্তরে ২৩০৮৩৬০ ভোট) ভোটের হার বৃদ্ধি পেয়েছে।
দ্বিতীয়ত: হ্যাঁ আর না’র ব্যবধান মাত্র ৫০ হাজার। এ জন্য তারা এথনিক গ্রুপ এবং অভিবাসীদেরও দোষারোপ করেন। কিন্তু পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ফরাসীরাই ‘হ্যা’-এর বিরোধীতা করেছে। কারণ ক্যুইবেকে তাদের সংখ্যা- ৮২% আর এথনিক ১৮%। তাতে দেখা যায়, অর্ধেক ফরাসীই ‘না’-এর পক্ষে। তারপরও আন্দোলকারীরা রেফারেন্ডামের আগেই আপত্তিকর পোস্টারিং করেছে- ‘ভোট ফর ইয়েস অর গো ব্যাক হোয়ার ইউ কাম ফ্রম।’
এতে ক্যুইবেক আলাদা করার আন্দোলনকারীরা কানাডার ঢেকে থাকা রেসিজমের (সাম্প্রদায়িক) রূপকে প্রকাশ্যে তুলে ধরেছে এবং অস্থির করে তুলতে চাইছে কানাডার মানচিত্রকে।
ষাট দশকের শেষ দিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রেনি লেভেক এই ‘আত্মঘাতী’ আন্দোলনের সূচনাকারী। পরে জ্যাক প্যারিজোরে ‘পার্টি ক্যুবেকুয়া’ এবং ‘ব্লক ক্যুইবেক’ যৌথভাবে সংগ্রামে নেমে পড়ে। কিন্তু মেনে নিতে হয় পরাজয়। অথচ সেই সময়- প্রধানমন্ত্রী জ্যাঁ ক্রেতিয়ে ছিলেন ক্যুইবেকবাসী। শুধু প্রধানমন্ত্রীই নয়, গভর্নর জেনারেল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, হ্যারিটেজ মন্ত্রীসহ অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিই ছিলেন ফ্রাঞ্চ ও ক্যুইবেকবাসী। যেহেতু তারা ‘ফরাসী ভাষা’র জন্য পৃথক রাষ্ট্র প্রত্যাশা করে, সেজন্য রেফারেন্ডামের আগে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট জ্যাক সিরাক স্বাধীন ক্যুবেকের স্বীকৃতিপত্রে সই করার জন্য ২৩ অক্টোবর থেকেই কলম খুলে অপেক্ষা করছিলেন। আর তার বিপক্ষে অর্থাৎ কানাডার অখন্ডতার পক্ষে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন- ‘কানাডা হলো বিশ্বের জন্য একটি মডেল বা উদাহরণ। যেখানে বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছে।’
আর কানাডার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মি. জ্যাক বলেন, ‘ডিভোর্স নিয়ে বি-ম্যারেজ করতে চেয়ে ক্যুইবেক নেতারা তাদের বুদ্ধিমত্তার নির্লজ্জ প্রমাণ দিতে চেয়েছে।’
স্বাধীনতা প্রত্যাশী ক্যুবেকবাসীরা সার্বভৌমত্বের পেছনে অনেক কারণ দেখান। যদিও প্রধান কারণ ভাষাগত। তারপরও তারা মনে করেন:
১. ক্যুইবেকের জনগণ নিজস্ব আইডেনটিটি নিয়ে স্বাধীনভাবে বাঁচতে চায়।
২. ক্যুইবেক স্বাধীন হলে এর অর্থনেতিক অবস্থা আরও ভালো হবে।
৩. কানাডার প্রভাবমুক্ত হলে নিজস্ব কৃষ্টি, ভাষা ও সংস্কৃতিকে রক্ষা করা যাবে।
৪. স্বাধীন হলেও ক্যুইবেকের জনগণ কানাডার পাসপোর্ট, কানাডিয়ান ডলার ও কানাডার নাগরিত্ব বজায় রাখতে পারবে।
৫. ফেডারেল গভর্নমেন্ট ক্যুইবেককে বারংবারই বিভিন্ন অধিকার ও সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছে। ক্যুবেক আর কানাডার হাতে বঞ্চিত ও শোষিত হতে চায় না।
৬. ক্যুবেক স্বাধীন হলে অবশিষ্ট কানাডার মধ্যে একটি ইকোনমিক ও পলিটিক্যাল ইউনিয়ন গড়ে উঠবে, যা অবশ্যই কানাডা চাপের মুখে করতে বাধ্য হবে।
৭. বিশ্বের দরবারে ফ্রান্সের বাইরে একটি ফ্রাস্কোফোন রাষ্ট্র হিসেবে ক্যুইবেক প্রতিষ্ঠিত হবে।
স্বাধীনতাকামী বিচ্ছিন্নতাবাদী দল ব্লক ক্যুবেকুয়া ও পার্টি ক্রুইবেকুয়া উল্লেখিত দাবিগুলি উপস্থাপন করে ব্যাপক প্রচার অভিযান চালিয়েছে বিগত বছরগুলোতে।
তবে ঐক্যে বিশ্বাসীরাও অনেক নেতিবাচক চিত্র তুলে ধরেছেন। যেমন- রেফারেন্ডামের শুরুতেই অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে নিতে থাকে, গণভোটের একদিন পর ইমিগ্রেশন মন্ত্রী সার্জিও মার্সি ক্যুইবেকে ইমিগ্রেন্ট ও রিফুজি গ্রহণের হার হ্রাস করে দেন, আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিকভাবে দারুণ ক্ষতির সম্মুখীন হবে ইত্যাদি। এছাড়া ক্যুইবেকের মাথাপিছু ১৯,৭৬৭ ডলারের ঋণ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবে বলেও তারা উল্লেখ করেন।
আবার আদিবাসীরা বলেন, ‘এদেশ আমাদের। এ দেশে আমরা আদিবাসী। আমরাই সিদ্ধান্ত নেবো ক্যুইবেক কানাডার থাকবে কী না? যারা স্বাধীনতা দাবি করছে, তারাই তো পরগাছা।’
এদিকে, রেফারেন্ডামের সময় ‘ইহুদী পুঁজি বিনিয়োগকারীরা প্রদেশ পাড়ি দেওয়ার কথা ভাবছে। ব্যবসা বাণিজ্য গুটিয়ে অন্য কোথাও পুঁজি বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে। আর ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা তাদের অস্তিত্বের কথা ভাবতে পারছে না। এই স্বাধীনতার হিড়িকে বহু সংখ্যক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ক্যুইবেককে গুডবাই জানিয়ে চলে গেছে। হংকংয়ের পুঁজি বিনিয়োগকারীরা ক্যুইবেকে পুঁজি বিনিয়োগ করতে সাহস পাচ্ছে না। ইমিগ্রেশন তরিঘড়ি করে হংকংয়ে বড় আকারের অফিস খুলে বসেছে। কিন্তু তাতে কোন সাড়া মিলছে না। তারা বলছে, তোমাদের দেশে ব্যবসার নিরাপত্তা নেই, ওখানে পুঁজি বিনিয়োগ করা যাবে না।
অপরদিকে অভিবাসীরাও এই আন্দোলনের বিপক্ষে। বাংলাদেশীরাও ‘না’ কমিটি গঠন করেছিলো। যার সভাপতি ছিলেন মোস্তাক আহমেদ। তারা ২২ অক্টোবর ১৯৯৫-এ ওগলভি স্ট্রিটে সমাবেশ করেছিল। আবার আরেক দল (আহাদ-পান্না) ‘হ্যা’ এর পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলে, আমরা এক নদী রক্তের বিনিময়ে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাধীনতা (বাংলাদেশে) অর্জন করেছি। এর সাথে ক্যুইবেকের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও সার্বভৌমত্বের দাবির ঐতিহাসিক যোগসূত্র আছে।
‘না’ ভোট বিজয়ের পর ক্যুইবেক নানা ধরনের চাপের মধ্যে পড়ে। নেতারা সংগ্রাম চালাবে বলে ঘোষণা দিলেও ২৪ ঘন্টার মধ্যে ইস্তফা দিয়ে রাজনীতি ত্যাগ করেন নেতৃত্বদানকারী লুসিয়াম বুর্শাড। তিনি বলেন, রেফারেন্ডামের কথা শুনলে আমার ৫ বছরের সন্তান থুথু ফেলে। আর স্ত্রী বলে আমি ‘আমরিকান।’
আরেক নেতা সম্পর্কে বাংলাদেশি সাংবাদিক লিখেছেন, বেচারী জ্য ক্রেচিয়ের অবস্থা দেখে প্রখ্যাত প্রয়াত সাংবাদিক জহুর ভাইয়ের একটা উক্তির কথা মনে পড়ল, কানাডার রাজনৈতিক অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী জ্য কার্তিয়ের অন্ডকোশ সিলেটের ফাটা বাঁশে আটকে গেছে।
সেই সময় কানাডার মূলধারার কাগজের পাশাপাশি বাংলা পত্রিকাগুলোও এসব চিত্র তুলে ধরে। যেমনঃ ১. মন্ট্রিয়লকে কানাডার নতুন প্রদেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা/কাজী আশরাফুজ্জামান, ২. স্বাধীনতাকামীরা কি জিতবেন/ বিদুৎ ভৌমিক, ৩. স্বল্প ভোটের ব্যবধানে কানাডার অখন্ডতা রক্ষা পেল/ নূর মোহাম্মদ কাজী, ৪. ক্যুইবেক রেফারেন্ডাম এবং আমরা/রুমু ইসলাম, ৫. ক্যুবেকঃ প্রদেশ, জাতি, স্বতন্ত্র সমাজ/আব্দুল কাদের চৌধুরী, ৬. কানাডীয় কনফেডারেশনঃ শুরু ও শেষ/আব্দুল কাদের চৌধুরী, ৭. ভাঙনের উচ্ছ্বাস: ক্যুইবেক রেফারেন্ডাম কিংবা আসন্ন ক্যুবেক রেফারেন্ডাম নিয়ে বাঙালি ভাবনা অথবা কানাডা অখন্ডের প্রশ্ন: ক্যুইবেকের ভাগ্য পরীক্ষা ইত্যাদি।
২০১১ সালের ১২ অক্টোবর সিআরওপি কর্তৃক পরিচালিত ও প্রকাশিত জরিপে ফেডারেল আইডিয়াতে ৬৩% ক্যুইবেকবাসী ফেডারিলিজমে আগ্রহী, বিশ্বাসী এবং গর্বিত। আর ৭১% মনে করে ক্যুইবেকের স্বাধীনতা বা আলাদা রাষ্ট্র হওয়ার বিষয়টি এখন অতীত। তাই এই রাজনৈতিক বির্তক ক্যুবেকবাসী প্রত্যাখান করেছে। তবে এ জরিপে এখনো ১৯% নিজেদের স্বাধীনতাকামী মনে করে। আর ৩৭% পক্ষে-বিপক্ষে কোনো দিকেই নেই।
কানাডা প্রায় প্রতিবছরই বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম দেশ হিসাবে স্বীকৃতি পাচ্ছে। বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম দেশের নাগরিক হিসেবে ক্যুইবেকের জনগণ কি গর্বিত বা লাভবান হচ্ছে, না বঞ্চিত হচ্ছে, এ প্রশ্নের সত্যিকার অর্থে জবাবগুলি নিন্মে দেওয়া হলো- যেখানে ক্যুইবেক ও কানাডা এক এবং অখন্ড থাকার স্বপক্ষে অতীব গুরুত্বপূর্ণ যুক্তিগুলি প্রকাশ পায়।
দুই জার্মানি যখন এক হয়েছে। শুধু তাই নয়; জার্মানি, গ্রিক, ফরাসি, ইতালিয়ানরা ইউরোপে হাতে হাত ধরে আগামী পৃথিবীর নেতৃত্বের স্বপ্ন দেখে, তখন সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো কানাডাকে টুকরো টুকরো করার ‘ষড়যন্ত্র’কে প্রতিহত করার দৃঢ়তায় বেশিরভাগ ক্যুইবেকবাসী ঐক্যবদ্ধ।
তারপরও ‘হ্যাঁ’ পরাজয়ের পর আরেকটি গ্রুপ অন্য দাবি উপস্থাপন করে, ক্যুইবেক থেকে আলাদা হয়ে স্বতন্ত্র প্রভিন্স হবে মন্ট্রিয়ল। কিন্তু সে আন্দোলন হালে পানি পায়নি। তবে ফরাসিভাষীরা গণভোটে গণরায়ের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ দেখালেও, তাদের মন থেকে ৩০ অক্টোবরের ঘা মুছে যায়নি।
তথ্যসূত্রঃ
১. Fitzmaurice, John (1985). Québec and Canada; Past, Present, and Future. C. Hurst & Co. Ltd.. pp. 47. ISBN 0-905838-94-7.
২. ‘Citizenship blitz in Quebec’. The Montreal Gazette. August 31, 1995, Montreeal. Canada.
৩. মাসিক দেশ দিগন্ত, মে ১৯৯৮, জুন সংখ্যা ১৯৯৮ এবং জুলাই ১৯৯৮ সংখ্যা। মট্রিয়ল, কানাডা
৪. সাপ্তাহিক প্রবাস বাংলাঃ অক্টোবর ১৩, ১৯৯৫/ অক্টোবর ২৭, ১৯৯৫/ নভেম্বর ০৩, ১৯৯৫/ মার্চ ০৮, ১৯৯৬। মন্ট্রিয়ল, কানাডা
৫. গণরায়ে প্রতি শ্রদ্ধাবোধ/ তাজুল মোহাম্মদ। কানাডার চিঠি। প্রকাশকঃ অন্যপ্রকাশ, ফ্রেব্রুয়ারি ১৯০৭, ঢাকা
৬. CROP, October 12, 2011. Montreeal. Canada
৭. Former senator declares for Yes/ The Globe and maim, September 28, 1995. Canada.
৮. http://en.wikipedia.org/wiki/Quebec_referendum,_1980
৯. http://en.wikipedia.org/wiki/Quebec_referendum,_1995
No comments