কফিন by ইনফিতার আল সাবা
ভাপসা গরমে ঘুম ভাঙল জাফর সাহেবের। পিটপিট করে চারদিকে তাকিয়ে ভয় পেলেন, আবার অবাকও হলেন। একটু পর নিজেকে আবিষ্কার করলেন একটা বক্সের ভেতর, বলা যেতে পারে কফিন! কফিনের চিন্তা মাথায় আসার পর খুবই ভড়কে গেলেন জাফর সাহেব। অনেক চেষ্টা করেও কফিনের ডালাটা খুলতে পারলেন না। এর পর স্ত্রীর নাম ধরে চিৎকার করলেন, ‘রেহানা! রেহানা!’ আবার ছেলে আবিরের নাম ধরেও ডাকলেন অনেকক্ষণ। এমনিতে কখনো ছেলের সঙ্গে শখ করে কোনো সময় কথা বলেন না, আজ কেন ডাকছেন বুঝতে পারলেন না। ভয়ে বোধহয়।
কিছুক্ষণ ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলেন জাফর সাহেব, তিনি কি মারা গেছেন? একটু আগে কোথায় ছিলেন তিনি? হ্যাঁ মনে পড়েছে, বিকেলে অফিস থেকে ফিরে তিনি সোফায় বসে টিভি দেখছিলেন। তারপর? তারপর আর কিছু মনে নেই। জাফর সাহেবের মনে হলো, তিনি বেঁচে আছেন। কিন্তু এখানে কী করে এলেন? তাঁর মাথা বিগড়ে যাচ্ছে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। হঠাৎ কিছু একটা শুনতে পেলেন তিনি। আশা জেগে উঠল মনে। জিজ্ঞেস করলেন, —কে কে?
তোমার সঙ্গে কথা বলা পৃথিবীর শেষ মানুষ।
—কী? কী বলছেন এসব? আমি কোথায়? আপনি কে?
এখনো পৃথিবীতেই আছো, তবে আর ১৫ মিনিট পরে থাকবে না।
—কী বলছেন এসব? আমি আপনার কী ক্ষতি করেছি ভাই? ভাই, যত টাকা চান তত টাকাই দেব, আমাকে ছেড়ে দিন।
তোমাকে তো টাকার জন্য ধরে আনিনি, এনেছি পরের জীবন দেখানোর জন্য, মানে ‘আফটার লাইফ’। তুমি এতগুলো মানুষ মারলে, তোমার সাজা হওয়া দরকার।
—কী? আমি মানুষ মেরেছি? কে বলেছে আপনাকে?
গতকাল কেরানি লতিফের চাকরি বিনা দোষে বিনা বেতনে নট করে দিয়েছিলে না?
—কিন্তু আমি তো তাকে মারিনি। শুধু ছাঁটাই করেছি...।
তুমি জানতে তার গরিব ঘরে ছয়জন সদস্য, তারা এমনিতেই না খেয়ে থাকে; এখন তারা কীভাবে থাকবে? এবার বল, তুমি ওদের মার নি?
—তখন আমার মাথা ঠিক ছিল না। রাগের মাথায় এ কাজ করেছি।
তোমার কফিনের চার কোনায় চারটা পানির নল আছে, পানি ছেড়ে দিলে চার মিনিটেই তোমার কফিনটা পানিতে ভরে যাবে। এখন বল, আমি কি রাগের মাথায় পানি ছাড়ব?
—ভাই, আর মাথা গরম করব না, কসম করছি, আমার ছেলের কসম...।
মাথা গরম করার টাইমও পাবে না, আর পাঁচ মিনিট। আর ছেলের দোহাই? স্ত্রী আর ছেলের সঙ্গে কয় দিন ভালোভাবে কথা বলেছ, নাকি গত ২০ বছরও তোমার মাথা গরম ছিল? ছোটবেলার বন্ধু আশরাফ খানকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে যে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছ, সেটাও কি অস্বীকার করবে?
—আমার ভুল হয়ে গেছে।
ভুল স্বীকার করে লাভ নেই। তোমার ভুলের জন্য আশরাফ এখন হাসপাতালে, তাঁর স্ত্রী সাধারণ হাসপাতালের খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন, মেয়ের লেখাপড়া বন্ধের দিকে—শুধু তোমার লোভের জন্য।
জাফর সাহেব টের পেলেন, আস্তে আস্তে তাঁর কফিনটা ভর্তি হয়ে যাচ্ছে পানিতে! লোনা পানিতে। চিৎকার করছেন তিনি। কাঁদছেন শিশুর মতো, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে...। চোখ খুললেন জাফর সাহেব।
আরে! তিনি তো তাঁর বাসায়! সোফায় বসে টিভি দেখছিলেন বোধহয়, কিন্তু একটু আগে এসব কী হচ্ছিল? এটা কি স্বপ্ন ছিল? স্বপ্ন কি এত বাস্তব হয়? হঠাৎ চিৎকার জুড়ে দিলেন জাফর সাহেব। ভয়ানক চিৎকার করছেন তিনি। চিৎকার শুনে তাঁর স্ত্রী রেহানা আর ১৮ বছরের ছেলে আবির ছুটে এল। এতক্ষণ কী হচ্ছিল সেটা নিয়ে রাগারাগি করলেন অনেকক্ষণ, তারপর কি মনে করে হঠাৎ চুপ করে গেলেন। ধীরে ধীরে ব্যাপারটা খুলে বললেন। তারা দুজনই ব্যাপারটা দুঃস্বপ্ন বলে উড়িয়ে দিল। অনেক করেও জাফর সাহেব বোঝাতে পারলেন না যে স্বপ্নটা অনেক বাস্তব ছিল।
আবির বলল, বাবা, স্বপ্ন স্বপ্নই, বড়জোর হ্যালুসিনেশন।
কিছুক্ষণের জন্য কী যেন চিন্তা করতে লাগলেন জাফর সাহেব। তারপর ছেলেকে কাছে ডেকে নিয়ে খোঁজখবর জিজ্ঞেস করলেন। নরম গলায় রেহানাকে টেলিফোনটা আনতে বললেন। ফোন করে তিনি কেরানি লতিফকে বেশি বেতনে আবার যোগদান করতে বললেন, আর আশরাফ সাহেবের স্ত্রীকে ভুল স্বীকার করে সব টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বললেন। বন্ধুর এই অবস্থার জন্য নিজেকেও দায়ী করলেন তিনি।
আনন্দিত গলায় স্ত্রী রেহানা এসে বলল, দুঃস্বপ্নটা দেখে ভালোই হয়েছে বোধহয়।
ভাবলেশহীনভাবে আস্তে আস্তে মাথা ঝাঁকালেন জাফর সাহেব।
বাবার রুম থেকে বের হয়ে ডুপ্লেক্স বাড়ির নিচে নামতে নামতে এন-৮ ফোনসেটটা হাতে নিল আবির। ফোন করল নাজেরকে। ‘দোস্ত, তোর কফিন, পানির পাইপ আর মাইক্রোফোনটা পাঠিয়ে দিয়েছি, আমার কাজ শেষ।’ আবার ফোনসেটে চোখ বুলাল আবির। হঠাৎ নিজের সেটটার দিকে তাকিয়ে মনটা খুশিতে ভরে উঠল তাঁর।
তোমার সঙ্গে কথা বলা পৃথিবীর শেষ মানুষ।
—কী? কী বলছেন এসব? আমি কোথায়? আপনি কে?
এখনো পৃথিবীতেই আছো, তবে আর ১৫ মিনিট পরে থাকবে না।
—কী বলছেন এসব? আমি আপনার কী ক্ষতি করেছি ভাই? ভাই, যত টাকা চান তত টাকাই দেব, আমাকে ছেড়ে দিন।
তোমাকে তো টাকার জন্য ধরে আনিনি, এনেছি পরের জীবন দেখানোর জন্য, মানে ‘আফটার লাইফ’। তুমি এতগুলো মানুষ মারলে, তোমার সাজা হওয়া দরকার।
—কী? আমি মানুষ মেরেছি? কে বলেছে আপনাকে?
গতকাল কেরানি লতিফের চাকরি বিনা দোষে বিনা বেতনে নট করে দিয়েছিলে না?
—কিন্তু আমি তো তাকে মারিনি। শুধু ছাঁটাই করেছি...।
তুমি জানতে তার গরিব ঘরে ছয়জন সদস্য, তারা এমনিতেই না খেয়ে থাকে; এখন তারা কীভাবে থাকবে? এবার বল, তুমি ওদের মার নি?
—তখন আমার মাথা ঠিক ছিল না। রাগের মাথায় এ কাজ করেছি।
তোমার কফিনের চার কোনায় চারটা পানির নল আছে, পানি ছেড়ে দিলে চার মিনিটেই তোমার কফিনটা পানিতে ভরে যাবে। এখন বল, আমি কি রাগের মাথায় পানি ছাড়ব?
—ভাই, আর মাথা গরম করব না, কসম করছি, আমার ছেলের কসম...।
মাথা গরম করার টাইমও পাবে না, আর পাঁচ মিনিট। আর ছেলের দোহাই? স্ত্রী আর ছেলের সঙ্গে কয় দিন ভালোভাবে কথা বলেছ, নাকি গত ২০ বছরও তোমার মাথা গরম ছিল? ছোটবেলার বন্ধু আশরাফ খানকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে যে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছ, সেটাও কি অস্বীকার করবে?
—আমার ভুল হয়ে গেছে।
ভুল স্বীকার করে লাভ নেই। তোমার ভুলের জন্য আশরাফ এখন হাসপাতালে, তাঁর স্ত্রী সাধারণ হাসপাতালের খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন, মেয়ের লেখাপড়া বন্ধের দিকে—শুধু তোমার লোভের জন্য।
জাফর সাহেব টের পেলেন, আস্তে আস্তে তাঁর কফিনটা ভর্তি হয়ে যাচ্ছে পানিতে! লোনা পানিতে। চিৎকার করছেন তিনি। কাঁদছেন শিশুর মতো, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে...। চোখ খুললেন জাফর সাহেব।
আরে! তিনি তো তাঁর বাসায়! সোফায় বসে টিভি দেখছিলেন বোধহয়, কিন্তু একটু আগে এসব কী হচ্ছিল? এটা কি স্বপ্ন ছিল? স্বপ্ন কি এত বাস্তব হয়? হঠাৎ চিৎকার জুড়ে দিলেন জাফর সাহেব। ভয়ানক চিৎকার করছেন তিনি। চিৎকার শুনে তাঁর স্ত্রী রেহানা আর ১৮ বছরের ছেলে আবির ছুটে এল। এতক্ষণ কী হচ্ছিল সেটা নিয়ে রাগারাগি করলেন অনেকক্ষণ, তারপর কি মনে করে হঠাৎ চুপ করে গেলেন। ধীরে ধীরে ব্যাপারটা খুলে বললেন। তারা দুজনই ব্যাপারটা দুঃস্বপ্ন বলে উড়িয়ে দিল। অনেক করেও জাফর সাহেব বোঝাতে পারলেন না যে স্বপ্নটা অনেক বাস্তব ছিল।
আবির বলল, বাবা, স্বপ্ন স্বপ্নই, বড়জোর হ্যালুসিনেশন।
কিছুক্ষণের জন্য কী যেন চিন্তা করতে লাগলেন জাফর সাহেব। তারপর ছেলেকে কাছে ডেকে নিয়ে খোঁজখবর জিজ্ঞেস করলেন। নরম গলায় রেহানাকে টেলিফোনটা আনতে বললেন। ফোন করে তিনি কেরানি লতিফকে বেশি বেতনে আবার যোগদান করতে বললেন, আর আশরাফ সাহেবের স্ত্রীকে ভুল স্বীকার করে সব টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বললেন। বন্ধুর এই অবস্থার জন্য নিজেকেও দায়ী করলেন তিনি।
আনন্দিত গলায় স্ত্রী রেহানা এসে বলল, দুঃস্বপ্নটা দেখে ভালোই হয়েছে বোধহয়।
ভাবলেশহীনভাবে আস্তে আস্তে মাথা ঝাঁকালেন জাফর সাহেব।
বাবার রুম থেকে বের হয়ে ডুপ্লেক্স বাড়ির নিচে নামতে নামতে এন-৮ ফোনসেটটা হাতে নিল আবির। ফোন করল নাজেরকে। ‘দোস্ত, তোর কফিন, পানির পাইপ আর মাইক্রোফোনটা পাঠিয়ে দিয়েছি, আমার কাজ শেষ।’ আবার ফোনসেটে চোখ বুলাল আবির। হঠাৎ নিজের সেটটার দিকে তাকিয়ে মনটা খুশিতে ভরে উঠল তাঁর।
No comments