জামায়াতী অপতৎপরতা ও প্রবাসী প্রতিরোধ- সিডনির মেলব্যাগ ॥ অজয় দাশগুপ্ত
চোরাগোপ্তা হামলায় দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে
করার ষড়যন্ত্র চলছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরুর সময়ও ঘাতক
দালালরা ভাবেননি রায় হবে। তাঁদের বদ্ধমূল ধারণা ছিল, কোন না কোনভাবে বিচার
প্রক্রিয়া থেমে যাবে।
অথবা বিলম্বিত হবে। এ ধারণা যে
একেবারে অমূলক তাও নয়, দেশের মানুষের সমর্থন বা প্রিয়তা না থাকলেও
জামায়াতের আছে শক্ত নেটওয়ার্ক। সে নেটওয়ার্ক দেশের মতো বিদেশেও ক্রিয়াশীল।
আমার সিডনি তথা অস্ট্রেলিয়া বাসের দীর্ঘ সময়ে আমি খুব কম বাঙালীরই দেখা
পেয়েছি যাঁরা মনেপ্রাণে যুদ্ধাপরাধীদের খালাস চান বা বিচার চান না। এভাবে
দৃঢ়তার মোকাবেলা কিংবা জামায়াত-রাজাকারদের বিরুদ্ধে কঠোর বাঙালীর সংখ্যাও
হাতেগোনা, যার প্রধান কারণ তাঁদের শক্তিশালী প্রচার ও নেটওয়ার্ক।
খুব বেশি দূর না গিয়ে ভারতের নাগরিক শর্মিলা বসুর কথাই বলা যেতে পারে। নেতাজী সুভাষ বসুর আত্মীয় পরিচয়ে পরিচিত এ ভদ্র মহিলা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে সরব, বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশ ও একাত্তর নিয়ে নানা অপপ্রচারে মত্ত এ নারীর বয়ান জঘন্য, তথ্য ভুল আর ষড়যন্ত্র ভয়ঙ্কর, তিনি আমাদের বীরাঙ্গনা, ধর্ষিতাদের নিয়েও কটু কথা বলেছেন। শর্মিলা বসুর আবির্ভাব ও অপতৎপরতা বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়। তিনি সৃষ্ট চরিত্র, তাঁকে দৃশ্যপটে হাজির করেছে আইএসআই, পেট্রোডলার আর জামায়াতী চক্র। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এমন আরও কিছু অঘটন দেখেছি আমরা, বিদেশী ভাড়াটিয়া লেখকদের দিয়ে সাফাই গাওয়ানো হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক মিডিয়ায় যুদ্ধাপরাধী বিচারের ট্রাইব্যুনাল, বিচার প্রক্রিয়া তার স্বচ্ছতা নিয়েও লেখা হচ্ছে, আজগুবি তথ্য আর আন্তর্জাতিক মান নিয়ে মূলত প্রশ্ন তোলা এ জাতীয় লেখাগুলো পাঠকদের স্পর্শ করছে কি না তার চেয়ে বড় কথা এগুলো ডকুমেন্টেড হচ্ছে। এবং আমাদের অজানা নয়, তথ্য ভুল বা শুদ্ধ যাই হোক না কেন গ্রন্থিত হতে থাকলে তার শক্তি বাড়ে। এ অপশক্তি বৃদ্ধির প্রক্রিয়া রোধে বিদেশের আওয়ামী লীগ, তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো, বঙ্গবন্ধু পরিষদ বা অন্যদের ভূমিকা কি? না তাঁরা রুখে দাঁড়াচ্ছেন, না পারছেন সমুচিত উত্তর দিতে। এই যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ার প্রথম রায়, বাচ্চু রাজাকারের মৃত্যুদ- তা নিয়েও কিন্তু সংগঠিত কোন ভূমিকা দেখছি না।
সিডনিতে এক সময় ঘাতক দালাল নির্মূল কামিটির অস্তিত্ব ছিল, তাঁদের অনুষ্ঠান সেমিনার আলোচনায় যাবারও সুযোগ ঘটেছিল। শহরের উপকণ্ঠে রকডেলের একটি ছোট্ট কক্ষের সেমিনারে প্রদর্শিত ভিডিও আলোচনার কথা এখনও স্মৃতিতে উজ্জ্বল। নিঃসন্দেহে তা ছিল সময়োপযোগী আর অর্থবহ, কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে আজ তাঁরা কোথাও নেই। কেন নেই জানি না। তবে এটা বোঝা কঠিন কিছু নয়, তাঁদের অনুপস্থিতি উদ্বেগজনক। এ আরেক বিপদ, এ আমাদের আরেক ব্যর্থতা, প্রয়োজনের সময় ঐক্যবদ্ধ থাকা ও ঠিক কাজটি করতে পারার ঐতিহ্য যেন একাত্তরেই শেষ করে দিয়েছি আমরা। অথচ শর্মিলা বসু বা ভাড়াটিয়া লেখকদের বাংলাদেশের অস্তিত্ববিরোধী অপপ্রক্রিয়ার উত্তর আমাদের অজানা কিছু নয়।
যারা আন্তর্জাতিক আইন বা ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ডের প্রশ্ন তোলেন, তারা ভুলে যান এ দেশের লাখো শহীদ, হাজারো ধর্ষিতা আর নির্যাতিতদের বেলায় কোন আইন, কোন স্ট্যান্ডার্ড এমন কি ন্যূনতম মানবিকতারও বালাই ছিল না। পশু-পাখির মতো বাঙালী নিধনে বেপরোয়া, হিন্দু-মুসলিম পরিচয় প্রমাণে অন্তর্বাস খুলে পরীক্ষার মতো অমানবিক কাজে পারদর্শীদের বিচার নিয়ে আন্তর্জাতিকতার দোহাই মূলত ভেক, এক ধরনের দীর্ঘসূত্রতার পথ খুলতে বলা। আশ্চর্য হচ্ছি, আমাদের দেশের মেধাবী মানুষ ও বিচক্ষণ বাঙালী ভরা বিশ্বে প্রত্যুত্তর দেয়ার কাজটি কেন হচ্ছে না।
এর মধ্যে আরেক রোগ বাসা বেঁধেছে, ছলে-বলে-কৌশলে নেত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের বিরোধিতা। শেখ হাসিনার ঘোর শত্রুও অস্বীকার করতে পারবেন না যে, তিনি না থাকলে এ কাজটি হতো না। তিনি আছেন বলেই বাংলাদেশ যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী কাজে জড়িত ঘাতক দালালদের বিচারের মুখোমুখি করতে পেরেছেন। তাঁকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি তাঁর হাতকে শক্তিশালী করার কাজটি হওয়া প্রয়োজন। না স্তাবকতা, চামচামি বা তোষণে নয় প্রকৃত বিশ্বাস আর শক্তি দিয়ে শেখ হাসিনার এই প্রত্যয়কে বেগবান করতে হবে। চল্লিশ বছর পর বাংলাদেশ যুদ্ধরাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া ও রায় নিয়ে নতুনভাবে জেগে উঠেছে। একাত্তরের মতো এবারও প্রবাসীদের পাশে দাঁড়াতে হবে। অন্যথায় আওয়ামী লীগ বা বঙ্গবন্ধুর সাইনবোর্ড বহনের অধিকার নেই, থাকবে না ঐতিহ্য বহনের দায়িত্ব। সিডনির সে শক্তি আছে, এখন সময় তা প্রমাণের।
খুব বেশি দূর না গিয়ে ভারতের নাগরিক শর্মিলা বসুর কথাই বলা যেতে পারে। নেতাজী সুভাষ বসুর আত্মীয় পরিচয়ে পরিচিত এ ভদ্র মহিলা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে সরব, বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশ ও একাত্তর নিয়ে নানা অপপ্রচারে মত্ত এ নারীর বয়ান জঘন্য, তথ্য ভুল আর ষড়যন্ত্র ভয়ঙ্কর, তিনি আমাদের বীরাঙ্গনা, ধর্ষিতাদের নিয়েও কটু কথা বলেছেন। শর্মিলা বসুর আবির্ভাব ও অপতৎপরতা বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়। তিনি সৃষ্ট চরিত্র, তাঁকে দৃশ্যপটে হাজির করেছে আইএসআই, পেট্রোডলার আর জামায়াতী চক্র। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এমন আরও কিছু অঘটন দেখেছি আমরা, বিদেশী ভাড়াটিয়া লেখকদের দিয়ে সাফাই গাওয়ানো হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক মিডিয়ায় যুদ্ধাপরাধী বিচারের ট্রাইব্যুনাল, বিচার প্রক্রিয়া তার স্বচ্ছতা নিয়েও লেখা হচ্ছে, আজগুবি তথ্য আর আন্তর্জাতিক মান নিয়ে মূলত প্রশ্ন তোলা এ জাতীয় লেখাগুলো পাঠকদের স্পর্শ করছে কি না তার চেয়ে বড় কথা এগুলো ডকুমেন্টেড হচ্ছে। এবং আমাদের অজানা নয়, তথ্য ভুল বা শুদ্ধ যাই হোক না কেন গ্রন্থিত হতে থাকলে তার শক্তি বাড়ে। এ অপশক্তি বৃদ্ধির প্রক্রিয়া রোধে বিদেশের আওয়ামী লীগ, তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো, বঙ্গবন্ধু পরিষদ বা অন্যদের ভূমিকা কি? না তাঁরা রুখে দাঁড়াচ্ছেন, না পারছেন সমুচিত উত্তর দিতে। এই যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ার প্রথম রায়, বাচ্চু রাজাকারের মৃত্যুদ- তা নিয়েও কিন্তু সংগঠিত কোন ভূমিকা দেখছি না।
সিডনিতে এক সময় ঘাতক দালাল নির্মূল কামিটির অস্তিত্ব ছিল, তাঁদের অনুষ্ঠান সেমিনার আলোচনায় যাবারও সুযোগ ঘটেছিল। শহরের উপকণ্ঠে রকডেলের একটি ছোট্ট কক্ষের সেমিনারে প্রদর্শিত ভিডিও আলোচনার কথা এখনও স্মৃতিতে উজ্জ্বল। নিঃসন্দেহে তা ছিল সময়োপযোগী আর অর্থবহ, কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে আজ তাঁরা কোথাও নেই। কেন নেই জানি না। তবে এটা বোঝা কঠিন কিছু নয়, তাঁদের অনুপস্থিতি উদ্বেগজনক। এ আরেক বিপদ, এ আমাদের আরেক ব্যর্থতা, প্রয়োজনের সময় ঐক্যবদ্ধ থাকা ও ঠিক কাজটি করতে পারার ঐতিহ্য যেন একাত্তরেই শেষ করে দিয়েছি আমরা। অথচ শর্মিলা বসু বা ভাড়াটিয়া লেখকদের বাংলাদেশের অস্তিত্ববিরোধী অপপ্রক্রিয়ার উত্তর আমাদের অজানা কিছু নয়।
যারা আন্তর্জাতিক আইন বা ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ডের প্রশ্ন তোলেন, তারা ভুলে যান এ দেশের লাখো শহীদ, হাজারো ধর্ষিতা আর নির্যাতিতদের বেলায় কোন আইন, কোন স্ট্যান্ডার্ড এমন কি ন্যূনতম মানবিকতারও বালাই ছিল না। পশু-পাখির মতো বাঙালী নিধনে বেপরোয়া, হিন্দু-মুসলিম পরিচয় প্রমাণে অন্তর্বাস খুলে পরীক্ষার মতো অমানবিক কাজে পারদর্শীদের বিচার নিয়ে আন্তর্জাতিকতার দোহাই মূলত ভেক, এক ধরনের দীর্ঘসূত্রতার পথ খুলতে বলা। আশ্চর্য হচ্ছি, আমাদের দেশের মেধাবী মানুষ ও বিচক্ষণ বাঙালী ভরা বিশ্বে প্রত্যুত্তর দেয়ার কাজটি কেন হচ্ছে না।
এর মধ্যে আরেক রোগ বাসা বেঁধেছে, ছলে-বলে-কৌশলে নেত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের বিরোধিতা। শেখ হাসিনার ঘোর শত্রুও অস্বীকার করতে পারবেন না যে, তিনি না থাকলে এ কাজটি হতো না। তিনি আছেন বলেই বাংলাদেশ যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী কাজে জড়িত ঘাতক দালালদের বিচারের মুখোমুখি করতে পেরেছেন। তাঁকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি তাঁর হাতকে শক্তিশালী করার কাজটি হওয়া প্রয়োজন। না স্তাবকতা, চামচামি বা তোষণে নয় প্রকৃত বিশ্বাস আর শক্তি দিয়ে শেখ হাসিনার এই প্রত্যয়কে বেগবান করতে হবে। চল্লিশ বছর পর বাংলাদেশ যুদ্ধরাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া ও রায় নিয়ে নতুনভাবে জেগে উঠেছে। একাত্তরের মতো এবারও প্রবাসীদের পাশে দাঁড়াতে হবে। অন্যথায় আওয়ামী লীগ বা বঙ্গবন্ধুর সাইনবোর্ড বহনের অধিকার নেই, থাকবে না ঐতিহ্য বহনের দায়িত্ব। সিডনির সে শক্তি আছে, এখন সময় তা প্রমাণের।
No comments