উত্তরাঞ্চলে বিএনপির হরতাল পালিত- ঠাকুরগাঁও ও বগুড়ায় সংঘর্ষ ভাঙচুর আগুন
তত্ত্বাবধায়কপদ্ধতি পুনর্বহাল, দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল
ইসলাম আলমগীরের মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে গতকাল উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায়
বিএনপির ডাকে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পলিত হয়েছে।
হরতাল
চলাকালে পুলিশ শতাধিক রাউন্ড টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে। ঠাকুরগাঁও,
বগুড়া, সান্তাহার, সিরাজগঞ্জ ও রংপুরে সংঘর্ষ, ভাঙচুর, আগুন ও ককটেল
বিস্ফোরণে কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। সান্তাহারে হরতালবিরোধীরা ইসলামী
ব্যাংক ও যুবদল অফিসে হামলা চালিয়েছে।
হরতালের কারণে সারা দেশের সাথে উত্তরাঞ্চলের ৫৮টি প্রধান সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল।
ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে যুবলীগ হরতালবিরোধী কর্মসূচি ঘোষণা করায় সকাল থেকেই শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে থাকে।
বেলা বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন স্থানে দুই পক্ষের নেতাকর্মীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। দফায় দফায় কখনো আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এবং বিএনপি অফিসে প-বিপরে কর্মীরা ইট-পাথর নিপে করে। এতে পুলিশ বাধা দিলে পুলিশের সাথে তাদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়।
এ সময় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা ও ইটপাটকেল নিপে করে। এতে বিএনপির আটজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে বিএনপি কর্মী আনসারুল হক লিটন, তারেক আদনান ও জাহিদুর রহমানকে সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
জেলা বিএনপি তথ্য ও প্রচার সম্পাদক মামুন অর রশিদ জানান, পুলিশ তাদের ওপর রাবার বুলেটসহ অর্ধশতাধিক টিয়ার শেল নিপে করে।
ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার ফয়সল মাহমুদ বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
হরতাল চলাকালে ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড়-দিনাজপুর মহাসড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে ও কাঠের গুঁড়ি ফেলে রাস্তা অবরোধ করে রাখে বিএনপির নেতাকর্মীরা। খোঁচাবাড়ি ও শহরের চৌরাস্তায় চারটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। হরতালের সমর্থনে খণ্ড খণ্ড মিছিল করছে বিএনপি সমর্থকেরা।
রংপুর অফিস জানান, হরতাল চলাকালে রংপুর মহানগরী এলাকায় ২০টি গাড়ি ভাঙচুর করেছে পিকেটাররা। অন্য দিকে নগরীতে জামায়াতের সমাবেশের অনুমতি দেয়নি পুলিশ।
হরতালের সমর্থনে নগরীর গ্র্যান্ড হোটেল মোড় থেকে জেলা আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর হোসেনের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে জেলা বিএনপি। এ ছাড়া মডার্ন মোড়, সাতমাথায় মিছিল করেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। পিকেটারেরা নগরীর বিভিন্ন স্থানে পিকেটিং করে ১৫-২০টি গাড়ি ভাঙচুর করেছে।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু নয়া দিগন্তকে জানান, নগরবাসী স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল পালন করেছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
অন্য দিকে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমরা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অনুমতি চাই শাপলায় সমাবেশ করার জন্য। কিন্তু আমাদেরকে পুলিশ অনুমতি দেয়নি। এটা অগণতান্ত্রিক।
অন্য দিকে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার প্রধান শরিফুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে জানান, ‘বিধিসম্মতভাবে আবেদন না করায় অনুমতি পাননি তারা। তিনি জানান, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করার নিয়ম থাকলেও জামায়াত আবেদন করেছে পুলিশ সুপারের কাছে।
বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়ায় বিভিন্ন স্থানে দিনভর পিকেটিং করেছে হরতাল সমর্থকেরা। বেলা ১১টায় বগুড়া জেলা জজ আদালত চত্বরে দু’টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বগুড়ার সান্তাহার পৌর শহরে হরতালের প-েবিপে মিছিলকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও যুবদল অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় হরতালবিরোধীরা ইসলামী ব্যাংক শান্তাহার শাখার এটিএম বুথে ভাঙচুর করে। সকালে সদরের গোকুল এলাকায় পিকেটারেরা পাঁচটি ট্রাক ভাঙচুর করে। এ ছাড়া বগুড়া-নওগাঁ সড়কে গোদারপাড়া এলাকায় গাছের গুঁড়ি ফেলে পিকেটারেরা রাস্তা অবরোধ করে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় পিকেটারদের রিকশা-সাইকেল ও মোটরসাইকেলের হাওয়া ছেড়ে দিতে দেখা যায়। এ ছাড়াও শহরের বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে হরতাল সমর্থকেরা। সকালে শহরের মাটিডালী বনানী সড়কের সূত্রাপুর এলাকায় বিএনপির জেলা সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে মিছিল সমাবেশ হয়।
সমাবেশে ভিপি সাইফুল বলেন, এসএসসি পরীার পর বগুড়া থেকেই চূড়ান্ত আন্দোলন কর্মসূচি দেয়া হবে। তিনি সরকার পতনে সবাইকে সেই আন্দোলনে অংশ নেয়ার আহবান জানান।
আদমদীঘি (বগুড়া) সংবাদদাতা জানান, হরতাল চলাকালে বগুড়ার সান্তাহার শহরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়েছে।
প্রতিবাদে আগামী বুধবার ১৮ দলীয় জোট শহরে বিােভ ও প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছে।
নাটোর সংবাদদাতা জানান, নাটোরে দু’টি ককটেল বিস্ফোরণ ও একটি তাজা বোমা উদ্ধার এবং ১০টি ট্রাক ও আটটি অটোরিকশা ভাঙচুরের মধ্য দিয়ে হরতাল পালিত হয়েছে। হরতালসমর্থক কয়েকজন যুবক শহরের পশ্চিম বাইপাস এলাকায় একটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় এবং তেবাড়িয়া ও পালপাড়ায় পুলিশকে ল্য করে আরো একটি ককটেল ছুড়ে মারে। তবে তা বিস্ফোরিত হয়নি। একই সময় স্টেশন বাজারের একতার মোড়ে আরো একটি ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়। এ দিকে ভোরে হরতাল সমর্থকেরা নাটোর-রাজশাহী মহাসড়কের একডালায় ১০টি ট্রাকে ভাঙচুর চালায়। দুপুরের দিকে নাটোর স্টেশন বাজার এলাকায় আটটি অটোরিকশায় ভাঙচুর চালানো হয়।
সিরাজগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, সিরাজগঞ্জে বিপ্তি ঘটনার মধ্য দিয়ে সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়েছে। সকাল থেকে বিভিন্ন সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করা হয়।
এ দিকে সিরাজগঞ্জে হরতালসমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া এবং সংঘর্ষে উভয় পরে অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। এ সময় পুলিশ জুয়েল নামে এক বিএনপি কর্মীকে আটক করেছে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে বিএনপি কার্যালয় থেকে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির সভাপতি ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর নেতৃত্বে একটি বিােভ মিছিল শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদণি করে।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল গতকাল রাজশাহীতে শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে।
নগরীর কোথাও হরতাল সমর্থকদের পিকেটিং ল্য করা যায়নি। সাহেববাজার এলাকায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও মহানগর সভাপতি মিজানুর রহমান মিনুর নেতৃত্বে হরতালের সমর্থনে একটি মিছিল বের হয়। দলের কেন্দ্রীয় বিশেষ সম্পাদক ও জেলা সভাপতি নাদিম মোস্তফার নেতৃত্বে পৃথকভাবে মিছিল বের করেন নেতাকর্মীরা। এ ছাড়াও আরো কয়েকটি এলাকায় হরতালের সমর্থনে মিছিল করে বিএনপি নেতাকর্মীরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, খণ্ড খণ্ড মিছিল ও পিকেটিংয়ের মধ্য দিয়ে গতকাল চাঁপাইনবাবগঞ্জে পালিত হয়েছে বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল। হরতালের সমর্থনে বন্দর মহাসড়কের কয়েকটি পয়েন্টে বিএনপি নেতাকর্মীরা টায়ার জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। করনেশন রোডে একটি অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে পিকেটাররা।
নওগাঁ সংবাদদাতা জানান, নওগাঁয় শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল করছে বিএনপি। শহরের মুক্তির মোড় থেকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলুর নেতৃত্বে একটি বিােভ মিছিল শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদণি করে। এ ছাড়া শহরের মুক্তির মোড়, তাজের মোড়, গোস্তহাটির মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে হরতাল সমর্থকদের পিকেটিং করতে দেখা গেছে। হরতাল চলাকালে শহরের ব্রিজের ও দয়ালের মোড়ে দুইটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে পিকেটাররা।
জয়পুরহাট সংবাদদাতা জানান, জয়পুরহাটে বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলাকালে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে এক সাংবাদিকসহ সাতজন আহত হয়েছেন।
প্রতক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, শহরের তৃপ্তির মোড়ে পিকেটিং করার সময় জয়পুরহাট শহর বিএনপির সাবেক সভাপতি বহিষ্কৃত নেতা ফয়সাল আলীমের সমর্থকেরা জেলা বিএনপির সভাপতি মোজাহার আলী প্রধানের সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়। এতে উভয় পক্ষের সংঘর্ষে সাতজনসহ কালের কণ্ঠের জেলা প্রতিনিধি আলমগীর চৌধুরী মারাত্মক আহত হন। তাকে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, বিএনপির ডাকে কুড়িগ্রামে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়েছে।
হরতালের সমর্থনে সোমবার সকাল ১০টায় জেলা বিএনপির কার্যালয় থেকে একটি মিছিল শহর প্রদক্ষিণ করে। মিছিলটি শহরের ঘোষপাড়ায় পৌঁছলে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। বাধা উপেক্ষা করে মিছিলটি দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়।
উত্তরাঞ্চলে বিএনপির হরতাল
দিনাজপুরে খণ্ড খণ্ড মিছিল, পথসভা ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার মধ্যে হরতাল পালিত হয়েছে। বাহাদুর বাজারে পিকেটাররা চারটি অটোরিকশা, তিনটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। বাহাদুর বাজার চত্বরে এক পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল (অব:) মাহবুবুর রহমান।
পঞ্চগড় সংবাদদাতা জানান, পঞ্চগড়ে শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালিত হয়েছে। শহরের মোড়ে মোড়ে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে ছিল। জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এম এ মজিদের নেতৃত্বে হরতালের সমর্থনে বিএনপির নেতাকর্মীরা মিছিল বের করলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের হাতাহাতি হয়।
লালমনিরহাট সংবদাদাতা জানান, লালমনিরহাটে গতকাল হরতাল পালিত হয়েছে। হরতালের কারণে বাণিজ্যমন্ত্রীর ঢাকা যাত্রা বিলম্বিত হয়েছে। জেলার আদিতমারী, কালীগজ্ঞ, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রামেও হরতাল পালিত হয়েছে।
গাইবান্ধা সংবাদদাতা জানান, গাইবান্ধায় বিএনপির ডাকা হরতাল শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে।
জেলা যুবদল ও জিয়া পরিষদের উদ্যোগে শহরে পৃথক মিছিল ও পিকেটিং হয়েছে।
No comments