বিকল্প পথে পদ্মা সেতু নির্মাণ- ট্যাক্সের বোঝা আসছে by শওকত ওসমান রচি
পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংক, এরপর এডিবি ও জাইকার বিদায়। বিদায়
নিয়েছে আইডিবিও। প্রকল্পের ভিত এখন নড়বড়ে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে
আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ওয়াদা ছিল।
দুর্নীতির
অভিযোগে বিশ্বব্যাংকসহ অর্থায়নকারী অন্য দাতা সংস্থাগুলোর মুখ ফিরিয়ে
নেয়ার পর সরকারের সব হিসাব-নিকাশ ওলট-পালট হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে
সরকারকে এখন বিকল্প অর্থায়নের পথ বের করতে হবে। চীন ও মালয়েশিয়ার পর
সর্বশেষ বিকল্প অর্থায়নের তালিকায় যোগ হয়েছে ভারত। অন্য দিকে নিজস্ব
অর্থায়নে সেতু নির্মাণেও সরকারের ভেতর থেকে চাপ বাড়ছে। সরকারের এক
কর্মকর্তা আভাস দিয়ে জানালেন, শেষ অবধি নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণ হলে
জনগণের ওপর ট্যাক্সের বোঝা বাড়ানোর পথেই যাচ্ছে সরকার। বিমানবন্দর ও
স্থলবন্দরের ট্যাক্স বাড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন খাতে ভ্যাটের পরিমাণও
বাড়ানোর পরিকল্পনা চলছে। সরকারের একজন মন্ত্রী জানিয়েছেন, মহাজোট সরকারের
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি তাদের রক্ষা করতেই হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী যমুনা
সেতুর মতো পদ্মা সেতু নির্মাণেও বিভিন্ন ধরনের টোল-সারচার্জের মাধ্যমে অর্থ
সংগ্রহ করা হবে। এ ছাড়া পরিকল্পনায় শেয়ারবাজারে বন্ড ছেড়েও বিনিয়োগের
বড় একটি অংশ সংগ্রহ করা হবে। কাজ শুরুর পর অর্থ সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনে
এক বা একাধিক দেশের সহায়তা চাইতে পারে সরকার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিজ
অর্থে সেতু নির্মাণ করলে ধেয়ে আসবে ট্যাক্স।
সরকারের বিকল্প পথে সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা প্রসঙ্গে ডিএসই সভাপতি রকিবুর রহমান গতকাল বলেছেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে যে পরিকল্পনা করা হচ্ছে, পুঁজিবাজারই হতে পারে সে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অন্যতম অংশীদার। পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে অর্ধেক টাকা পুঁজিবাজার থেকে তোলা সম্ভব। সরকার তাদের পরিকল্পনা জানালে সে ব্যাপারে তার প্রস্তাব আমরা পাঠাব।
কিভাবে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ তোলা যাবেÑ তার ব্যাখ্যা দিয়ে ডিএসই সভাপতি জানান, পদ্মা সেতুর জন্য ‘শেয়ারে কনভার্টেবল বন্ড’ ছাড়া যেতে পারে, বঙ্গবন্ধু সেতুকে কোম্পানিতে রূপান্তর করে এর একটি অংশ পুঁজিবাজারে ছাড়া যেতে পারে। এ ছাড়া সরকারি অন্যান্য কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করা এবং ইতোমধ্যে তালিকাভুক্ত সরকারি কোম্পানিগুলোর আরো শেয়ার বাজারে ছাড়া যেতে পারে।
ও দিকে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে একটি উৎসবভাতা উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সরকারের সচিবেরা। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহাÑ এই দুই উৎসবভাতা থেকে তারা এ অর্থ দেবেন বলে ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের টাকাও যাবে সেতু প্রকল্পে। সম্প্রতি প্রশাসনসংক্রান্ত সচিব কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ প্রসঙ্গে একজন সিনিয়র সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী যেহেতু নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছেন, সেহেতু উৎসাহিত হয়েই আমরা এ ভাতা জমা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি বলেন, সরকারের নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা এবং পরে মন্ত্রিসভায় নেয়া এ সিদ্ধান্ত পুরো জাতিকে আশাবাদী এবং উৎসাহ জুগিয়েছে। সচিবেরা মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্ত সময়োচিত। তাই এ মহৎ কাজে সমাজের অপরাপর অংশের মতো সচিবেরা মনে করেন তাদেরও শামিল হওয়া উচিত। এই বোধ ও বিবেচনা থেকেই বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি জানান, তবে মন্ত্রণালয় বা বিভাগ পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কিভাবে এ উদ্যোগে অংশ নেবেন, শিগগিরই তারা বৈঠক করে তা নির্ধারণ করবেন। সচিব জানান, শিগগিরই প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাদের মন্ত্রণালয়ের কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প চিহ্নিত করে এরপরই ওই প্রকল্পে বরাদ্দকৃত অর্থ পদ্মা সেতু নির্মাণে বরাদ্দ দেবে।
এ ছাড়া সরকারের নিজস্ব অর্থায়নের পাশাপাশি এ প্রকল্পে অর্থায়নে ইতোমধ্যে তিনটি দেশের পক্ষ থেকে আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণে মালয়েশিয়ার সাথে সরকার ইতোমধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে। অর্থায়নের ব্যাপারে দেশটি যে শর্ত দিয়েছে তাকে কঠিন বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। মালয়েশিয়া সুদ নেবে ৬ শতাংশ হারে। সেতু নির্মিত হওয়ার পর তারা পরিচালনা, রণাবেণ ও টোল আদায়ের দায়িত্ব ৩৫ বছরের জন্য নিজেদের কাছে রাখতে চায়। ৪০ বছর ওই সেতুর আশপাশে কোনো সেতু নির্মাণ করা যাবে না বলেও শর্ত দিয়েছে তারা।
গত বছর চীনের একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান সরকারের কাছে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেয়। তখন সরকারের প থেকে ওই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়া হয়েছিল। সে সময় বিশ্বব্যাংকের সাথে সমঝোতার চেষ্টা চলছিল। এ ছাড়া চীন সরকার অনেক আগেই পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়নে অনানুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে। চীন সরকারের এ প্রস্তাব নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে।
কর্মকর্তারা জানান, চীন সরকার দুই ধরনের শর্ত দিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন করতে পারে। প্রথমত, অপোকৃত নমনীয় সুদে ঋণ দেয়া। এ ঋণের সুদের হার সাধারণত ২ শতাংশ হয়ে থাকে। এ েেত্র ১০ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিতে হয়। এ ছাড়া এ ঋণ পেতে চীন থেকেই সব যন্ত্রাংশ কেনার বাধ্যবাধকতা থাকবে। দ্বিতীয়ত, চীন সরকার বাণিজ্যিকভাবে এ প্রকল্পে অর্থায়ন করতে পারে। এ ঋণের সুদের হার সাধারণত ৫ থেকে ৬ শতাংশ হয়ে থাকে। চীনের বাণিজ্যমন্ত্রীর চলতি মাসের শেষের দিকে বাংলাদেশ সফরের কথা। এ সফরের সময় পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা।
অর্থমন্ত্রী থাকাকালে প্রণব মুখার্জি ভারতের ১০০ কোটি ডলার ঋণের আওতায় ২০ কোটি ডলার অনুদান দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন গত বছরের এপ্রিলে। সে অর্থ এখনো ছাড় হয়নি। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সফরে আসছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ। ওই সফরে তিনি ২০ কোটি ডলারের মধ্যে ৫ কোটি ডলার আগামী অর্থবছরের শুরুতেই ছাড়ের ঘোষণা দিতে পারেন।
পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির পর শনিবার জাইকাও সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়। মোট ২৯০ কোটি ডলারের পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ১২০ কোটি ডলার দেয়ার কথা ছিল। বিশ্বব্যাংকের পাশাপাশি এডিবি ৬১ কোটি, জাইকা ৪০ কোটি ও আইডিবি ১৪ কোটি ডলার দেয়ার জন্য চুক্তি করে সরকারের সাথে। এর আগে শুক্রবার রাতে এডিবি সরে দাঁড়ানোর কথা জানায়। কানাডীয় কোম্পানি এসএনসি লাভালিনের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ ওঠার পর ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে চুক্তি স্থগিত করে বিশ্বব্যাংক। এরপর তদন্ত শুরু করলেও সরকারের সাথে মতভেদ না কাটায় গত জুন মাসে বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিল করে। বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও জাইকার পর এ প্রকল্পে আইডিবি সরে দাঁড়ায়। ও দিকে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়ার পর অনুসন্ধান পর্যায়ে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান, সাবেক সেতু সচিব মো: মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াসহ ২৯ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুর্নীতি দমন কমিশন। তবে গত বছর ১৭ ডিসেম্বর ‘ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগে দুদক সাতজনের বিরুদ্ধে যে মামলা করে তাতে আবুল হোসেন ও আবুল হাসানের নাম বাদ দেয়া হয়। এরপর বিশ্বব্যাংক প্যানেল চলতি মাসে দুদকের তদন্ত নিয়ে একটি চিঠি পাঠায়, যাতে পর্যবেকেরা তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে। বিশ্বব্যাংকের প থেকে বলা হয়, শর্ত পূরণ না হলে তারা পদ্মা সেতুর অর্থ ছাড় করবে না। এর আগে বিশ্বব্যাংকের দেয়া শর্ত অনুযায়ী আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সাবেক প্রসিকিউটর লুইস গ্যাব্রিয়েল মোরেনো ওকাম্পোর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্যানেল দুদকের তদন্ত পর্যবেণে দুই দফা ঢাকা সফর করে।
সরকারের বিকল্প পথে সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা প্রসঙ্গে ডিএসই সভাপতি রকিবুর রহমান গতকাল বলেছেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে যে পরিকল্পনা করা হচ্ছে, পুঁজিবাজারই হতে পারে সে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অন্যতম অংশীদার। পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে অর্ধেক টাকা পুঁজিবাজার থেকে তোলা সম্ভব। সরকার তাদের পরিকল্পনা জানালে সে ব্যাপারে তার প্রস্তাব আমরা পাঠাব।
কিভাবে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ তোলা যাবেÑ তার ব্যাখ্যা দিয়ে ডিএসই সভাপতি জানান, পদ্মা সেতুর জন্য ‘শেয়ারে কনভার্টেবল বন্ড’ ছাড়া যেতে পারে, বঙ্গবন্ধু সেতুকে কোম্পানিতে রূপান্তর করে এর একটি অংশ পুঁজিবাজারে ছাড়া যেতে পারে। এ ছাড়া সরকারি অন্যান্য কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করা এবং ইতোমধ্যে তালিকাভুক্ত সরকারি কোম্পানিগুলোর আরো শেয়ার বাজারে ছাড়া যেতে পারে।
ও দিকে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে একটি উৎসবভাতা উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সরকারের সচিবেরা। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহাÑ এই দুই উৎসবভাতা থেকে তারা এ অর্থ দেবেন বলে ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের টাকাও যাবে সেতু প্রকল্পে। সম্প্রতি প্রশাসনসংক্রান্ত সচিব কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ প্রসঙ্গে একজন সিনিয়র সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী যেহেতু নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছেন, সেহেতু উৎসাহিত হয়েই আমরা এ ভাতা জমা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি বলেন, সরকারের নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা এবং পরে মন্ত্রিসভায় নেয়া এ সিদ্ধান্ত পুরো জাতিকে আশাবাদী এবং উৎসাহ জুগিয়েছে। সচিবেরা মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্ত সময়োচিত। তাই এ মহৎ কাজে সমাজের অপরাপর অংশের মতো সচিবেরা মনে করেন তাদেরও শামিল হওয়া উচিত। এই বোধ ও বিবেচনা থেকেই বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি জানান, তবে মন্ত্রণালয় বা বিভাগ পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কিভাবে এ উদ্যোগে অংশ নেবেন, শিগগিরই তারা বৈঠক করে তা নির্ধারণ করবেন। সচিব জানান, শিগগিরই প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাদের মন্ত্রণালয়ের কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প চিহ্নিত করে এরপরই ওই প্রকল্পে বরাদ্দকৃত অর্থ পদ্মা সেতু নির্মাণে বরাদ্দ দেবে।
এ ছাড়া সরকারের নিজস্ব অর্থায়নের পাশাপাশি এ প্রকল্পে অর্থায়নে ইতোমধ্যে তিনটি দেশের পক্ষ থেকে আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণে মালয়েশিয়ার সাথে সরকার ইতোমধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে। অর্থায়নের ব্যাপারে দেশটি যে শর্ত দিয়েছে তাকে কঠিন বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। মালয়েশিয়া সুদ নেবে ৬ শতাংশ হারে। সেতু নির্মিত হওয়ার পর তারা পরিচালনা, রণাবেণ ও টোল আদায়ের দায়িত্ব ৩৫ বছরের জন্য নিজেদের কাছে রাখতে চায়। ৪০ বছর ওই সেতুর আশপাশে কোনো সেতু নির্মাণ করা যাবে না বলেও শর্ত দিয়েছে তারা।
গত বছর চীনের একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান সরকারের কাছে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেয়। তখন সরকারের প থেকে ওই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়া হয়েছিল। সে সময় বিশ্বব্যাংকের সাথে সমঝোতার চেষ্টা চলছিল। এ ছাড়া চীন সরকার অনেক আগেই পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়নে অনানুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে। চীন সরকারের এ প্রস্তাব নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে।
কর্মকর্তারা জানান, চীন সরকার দুই ধরনের শর্ত দিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন করতে পারে। প্রথমত, অপোকৃত নমনীয় সুদে ঋণ দেয়া। এ ঋণের সুদের হার সাধারণত ২ শতাংশ হয়ে থাকে। এ েেত্র ১০ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিতে হয়। এ ছাড়া এ ঋণ পেতে চীন থেকেই সব যন্ত্রাংশ কেনার বাধ্যবাধকতা থাকবে। দ্বিতীয়ত, চীন সরকার বাণিজ্যিকভাবে এ প্রকল্পে অর্থায়ন করতে পারে। এ ঋণের সুদের হার সাধারণত ৫ থেকে ৬ শতাংশ হয়ে থাকে। চীনের বাণিজ্যমন্ত্রীর চলতি মাসের শেষের দিকে বাংলাদেশ সফরের কথা। এ সফরের সময় পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা।
অর্থমন্ত্রী থাকাকালে প্রণব মুখার্জি ভারতের ১০০ কোটি ডলার ঋণের আওতায় ২০ কোটি ডলার অনুদান দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন গত বছরের এপ্রিলে। সে অর্থ এখনো ছাড় হয়নি। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সফরে আসছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ। ওই সফরে তিনি ২০ কোটি ডলারের মধ্যে ৫ কোটি ডলার আগামী অর্থবছরের শুরুতেই ছাড়ের ঘোষণা দিতে পারেন।
পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির পর শনিবার জাইকাও সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়। মোট ২৯০ কোটি ডলারের পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ১২০ কোটি ডলার দেয়ার কথা ছিল। বিশ্বব্যাংকের পাশাপাশি এডিবি ৬১ কোটি, জাইকা ৪০ কোটি ও আইডিবি ১৪ কোটি ডলার দেয়ার জন্য চুক্তি করে সরকারের সাথে। এর আগে শুক্রবার রাতে এডিবি সরে দাঁড়ানোর কথা জানায়। কানাডীয় কোম্পানি এসএনসি লাভালিনের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ ওঠার পর ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে চুক্তি স্থগিত করে বিশ্বব্যাংক। এরপর তদন্ত শুরু করলেও সরকারের সাথে মতভেদ না কাটায় গত জুন মাসে বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিল করে। বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও জাইকার পর এ প্রকল্পে আইডিবি সরে দাঁড়ায়। ও দিকে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়ার পর অনুসন্ধান পর্যায়ে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান, সাবেক সেতু সচিব মো: মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াসহ ২৯ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুর্নীতি দমন কমিশন। তবে গত বছর ১৭ ডিসেম্বর ‘ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগে দুদক সাতজনের বিরুদ্ধে যে মামলা করে তাতে আবুল হোসেন ও আবুল হাসানের নাম বাদ দেয়া হয়। এরপর বিশ্বব্যাংক প্যানেল চলতি মাসে দুদকের তদন্ত নিয়ে একটি চিঠি পাঠায়, যাতে পর্যবেকেরা তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে। বিশ্বব্যাংকের প থেকে বলা হয়, শর্ত পূরণ না হলে তারা পদ্মা সেতুর অর্থ ছাড় করবে না। এর আগে বিশ্বব্যাংকের দেয়া শর্ত অনুযায়ী আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সাবেক প্রসিকিউটর লুইস গ্যাব্রিয়েল মোরেনো ওকাম্পোর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্যানেল দুদকের তদন্ত পর্যবেণে দুই দফা ঢাকা সফর করে।
No comments