চরাচর-শতাব্দীপ্রাচীন গ্রন্থাগার by গৌরাঙ্গ নন্দী
খুলনা শহরের কেন্দ্রস্থলে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে জাহিদ স্মৃতি ভবন। খুলনা পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান জাহিদুর রহমানের অকালপ্রয়াণের স্মৃতিবাহী এ ভবনই উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি।
আজ থেকে ১১৫ বছর আগে ১৮৯৭ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তখনকার খুলনা শহরের কিছু উৎসাহী ব্যক্তি একটা ঘরোয়া বৈঠকে বসেন। সেদিন তাঁরা একটি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন। নড়াইলের জমিদার রায়বাহাদুর কিরণচন্দ্র রায় এগিয়ে আসেন এর আর্থিক সহযোগিতায়। জমিদারের পিতৃব্য উমেশচন্দ্র রায়ের নামে এর নামকরণ হয় উমেশচন্দ্র লাইব্রেরি। তখন এর ঠাঁই হয়েছিল খুলনা পৌরসভার ছোট্ট একটি ঘরে। এর দুই বছর পর ১৮৯৯ সালে খুলনা পৌরসভা ভবনে (ওই ভবনটি এখন আর নেই, এখন সেখানে গড়ে উঠেছে নগর ভবন)। লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ৮৭ বছর পর ১৯৮৪ সালে উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি তার নিজের ঠিকানা খুঁজে পায়। পৌরসভা ও লাইব্রেরি কমিটির যৌথ সিদ্ধান্তে ১৯৮৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি উঠে আসে এই নতুন ভবনে। এতে যেন এর নবজন্ম হয়। অল্পদিনের মধ্যেই এই ভবনে লাইব্রেরির স্থান সংকুলানে সমস্যা দেখা দেয়। ১৯৯০ সালে লাইব্রেরি ভবন দোতলা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ভবন দোতলা হলে একদিকে যেমন লাইব্রেরির কাজকর্ম পরিচালনায় সুবিধা হয়, অন্যদিকে ওপরতলায় নির্মিত হয় একটি মিলনায়তন। অর্থের বিনিময়ে মিলনায়তন ব্যবহারের সুযোগ থাকায় লাইব্রেরির আয়েরও উৎস সৃষ্টি হয়। সেই সঙ্গে উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে থাকে মহানগরীর সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। এরপর ভবনকে ত্রিতল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে কাজও শেষ হয় যথাসময়ে। তিনতলা নির্মাণের পর মিলনায়তনকে নিচতলায় স্থানান্তর করা হয়। এখন উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরির নিচতলা মিলনায়তন, দ্বিতীয় তলা গ্রন্থাগার ও পাঠকক্ষ, তৃতীয় তলা পত্রিকা পাঠকক্ষ। এ ছাড়া তৃতীয় তলায় রয়েছে ডা. মানাফ গবেষণা পাঠকক্ষ। খুলনার বিশিষ্ট ডাক্তার এম এ মানাফের ব্যক্তিগত সংগ্রহের সাত হাজার বই দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এই পাঠকক্ষ। এখানে রয়েছে শিশু বিভাগ, তথ্য শাখা, বইপড়া প্রতিযোগিতা প্রভৃতি বিভাগ ও কার্যক্রম। খুলনার বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অসংখ্য ছাত্রছাত্রী প্রতিদিন এই লাইব্রেরিতে আসেন তাঁদের প্রয়োজনীয় পাঠ্য বইয়ের অভাব মেটাতে। খরচের মধ্যে আছে এই বিরাট ভবনের রক্ষণাবেক্ষণ, বিদ্যুৎ বিল, পত্রিকা ও সাময়িকী ক্রয়, বই বাঁধানো, কর্মচারীদের বেতন ইত্যাদি। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে এই লাইব্রেরির জন্য বার্ষিক অনুদান দেওয়া হয় ৩০ হাজার টাকা। এর মধ্যে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র থেকে ১৫ হাজার টাকার বই এবং আসবাবপত্র কেনা ও মেরামতের জন্য ১৫ হাজার টাকা। শিক্ষার্থী ও পাঠক সদস্যদের জন্য প্রয়োজনীয় টেঙ্ট ও রেফারেন্স বইয়ের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। কিন্তু লাইব্রেরিতে বিনিয়োগ করার মতো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সচরাচর পাওয়া যায় না। তবু সগর্বে দাঁড়িয়ে আছে শতাব্দীপ্রাচীন এই গ্রন্থাগার।
গৌরাঙ্গ নন্দী
গৌরাঙ্গ নন্দী
No comments