অবশেষে ডাচ রানি ক্ষমতা ছাড়ছেন by বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া
'রাজা আসে রাজা যায়।' হল্যান্ডে গত কয়েক
জেনারেশন ধরে রাজা নয়, রাজ সিংহাসনে এসেছেন রানি, গেছেন রানি। তবে এবার
আসবেন রাজা। বর্তমান রানি প্রিন্সেস বিয়াট্রিক্স প্রায় সাড়ে ৩২ বছর ধরে
রানি হিসেবে সিংহাসনে আসীন। এর আগে রানি ছিলেন তাঁর মা, প্রিন্সেস
জুলিয়ানা।
এরও আগে ছিলেন জুলিয়ানার মা, প্রিন্সেস
ভিলহেলমিনা। পরিবারের বড় সদস্য হিসেবে তাঁরা এই সিংহাসন উত্তরাধিকারসূত্রে
পেয়ে এসেছেন। গতকাল হঠাৎ করে বর্তমান রানি প্রিন্সেস বিয়াট্রিক্স ঘোষণা
দিলেন চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল তিনি সিংহাসন ছেড়ে দেবেন তাঁর বড় ছেলে প্রিন্স
উইলিয়ামকে। আগামী ৩০ এপ্রিল ক্ষমতা ছাড়লে রানি বিয়াট্রিক্সের সিংহাসনে
অবস্থান হবে মোট ৩২ বছর ৯ মাস অর্থাৎ ১১ হাজার ৯৪৯ দিন। হল্যান্ডের রানি
হিসেবে তিনি ক্ষমতায় আরোহণ করেন ১৯৮০ সালের ৩০ এপ্রিল। সময়ের পরিমাপে অনেক
মনে হলেও রানি বিয়াট্রিক্সের দাদি অর্থাৎ রানি ভিলহেলমিনা ছিলেন আরো বেশি।
ভিলহেলমিনা রানি হিসেবে ক্ষমতায় ছিলেন পুরো ৫০ বছর। তাঁর কন্যা প্রিন্সেস
জুলিয়ানা অর্থাৎ বর্তমান রানির মা ছিলেন ৩১ বছর। এই তিন রানির আগে উইলিয়াম
তৃতীয় ৪১ বছর ৯ মাস হল্যান্ডের রাজা ছিলেন। এরও আগে উইলিয়াম দ্বিতীয় ছিলেন
আট বছরের জন্য রাজা, এরপর উইলিয়াম প্রথম ছিলেন ২৫ বছর।
এই তিন পুরুষের (উইলিয়াম প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়) পর ক্ষমতায় আসেন রাজ পরিবারের মেয়েরা। প্রথমে ভিলহেলমিনা, এরপর জুলিয়ানা এবং সবশেষে বর্তমান রানি বিয়াট্রিক্স। তিন পুরুষ ও তিন মহিলা শাসনের পর আবারও এলো পুরুষ। উইলিয়াম আলেকজান্ডার রানি বিয়াট্রিক্সের তিন ছেলের বড় ছেলে। বিয়ে করেছেন আর্জেন্টিনার মেয়ে, প্রিন্সেস ম্যাক্সিমাকে। মজার ব্যাপার হলো, উইলিয়াম-ম্যাক্সিমার ঘরে তিন কন্যাসন্তান। এর অর্থ উইলিয়াম আলেকজান্ডারের পর আবার ক্ষমতা চলে যাবে নারীর কাছে।
বেশ কিছুদিন ধরে রানি বিয়াট্রিক্স সিংহাসন ছেড়ে দেবেন বলে পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হচ্ছিল। কেননা মেঘে মেঘে তাঁর বয়সও তো কম হলো না। পঁচাত্তরে পড়েছেন, যদিও ইংল্যান্ডের রানি এলিজাবেথের বয়সের তুলনায় অনেক কম। অনেকে দীর্ঘদিন ধরে বলাবলি করছিল, রানির বয়স তো কম হলো না। এখন উপযুক্ত সময় তাঁর ছেলের জন্য সিংহাসন ছেড়ে দেওয়া। ছেলের বয়স ৪১ বছর। উপযুক্ত ছেলে- বয়স, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতায়। ফিবছরই এমন কথা ওঠে। কিন্তু রানির ক্ষমতা আর ছাড়া হয় না। সে কারণে সম্প্রতি হঠাৎ দুপুরের দিকে যখন ঘোষণা দেওয়া হলো যে রানি বিশেষ ভাষণ দেবেন কোনো অনুষ্ঠানাদি ছাড়া, তখন অনেকটা ধরে নেওয়া হলো যে সিংহাসন ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা আসতে পারে। জনগণের কৌতূহলের শেষ নেই এবং তাই হলো। ১৬ মিলিয়ন জনগণের সাড়ে সাত মিলিয়ন অধীর আগ্রহ নিয়ে টিভির সামনে বসে রানি বিয়াট্রিক্সের রাজ সিংহাসন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা শুনলেন। রানি বললেন, 'এমন না যে বয়সের কারণে তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব ভারী হয়ে পড়েছে। এখন সময় এসেছে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার।' অবশ্য অনেকে মনে করেন, ইদানীং রানির মনমানসিকতাও ভালো যাচ্ছে না। কেননা তিন ছেলের মেজজন (প্রিন্স ফ্রিজো) গেল বছর স্কি খেলতে গেলে বরফচাপা পড়ে এখনো 'কোমায়' রয়েছেন। বাঁচার কোনো সম্ভাবনা নেই। একদিকে বার্ধক্য, অন্যদিকে সন্তানের এই দশা- সব মিলিয়ে তিনি সরে দাঁড়িয়েছেন বলে ধারণা করা হয়।
কেমন হবেন আগামী দিনের ডাচ রাজা? এ নিয়ে গবেষণা ও আলোচনার শেষ নেই। ভদ্র, মার্জিত, সহজে সাধারণ জনগণের সঙ্গে মিশে যাওয়ার ক্ষমতা এবং বুদ্ধিমত্তা সব রয়েছে তাঁর। অবশ্য কেউ কেউ বলেন, তাঁর মায়ের মতো 'ইন্টেলিজেন্ট' হয়তো তিনি নন, কিন্তু এর পরও তাঁর যে গুণ রয়েছে তা দিয়ে তাঁর মায়ের মতো দক্ষতার সঙ্গে রাজা হিসেবে কাজ করে যেতে পারবেন। এরই মধ্যে তিনি ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটিসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক কমিটিতে সক্রিয় সদস্য হিসেবে জড়িত রয়েছেন। খেলাধুলায়ও তাঁর আগ্রহ উল্লেখ করার মতো। বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতায় তাঁকে সস্ত্রীক স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলা দেখতে দেখা গেছে এবং এমনকি যখন ডাচ দল গোল করেছে তখন তাকে উৎফুল্ল জনতার সঙ্গে দাঁড়িয়ে হাততালি দিতে দেখা গেছে। অনেকের ধারণা, তিনি রাজপরিবার ও কার্যক্রমকে আরো আধুনিকীকরণ করবেন এবং জনগণের সঙ্গে আরো সম্পৃক্ত হবেন। আগামী ৩০ এপ্রিল রাজধানী আমস্টারডামে বিশাল যজ্ঞের মধ্য দিয়ে রাজপরিবারের ক্ষমতার হাতবদল হবে। এখন থেকে সরকারিভাবে শুরু হয়েছে তারই আয়োজন। আয়োজনে কয়েকজন মন্ত্রী সরাসরি সংশ্লিষ্ট থাকবেন। আসবেন দেশ-বিদেশ থেকে রাষ্ট্রীয় অতিথি, রাজা-রানিরা। উপস্থিত থাকবেন সাধারণ জনগণ। রাজার জয়ধ্বনিতে এই শতাব্দীতেও আবার নতুন করে মেতে উঠবে ওলন্দাজরা। বলে উঠবে উচ্চ ও এক সুরে 'রাজার জয় হোক'। আমরাও হবু রাজার শুভ কামনা করি। (২৯-১-২০১৩)
লেখক : হল্যান্ড প্রবাসী সাংবাদিক
এই তিন পুরুষের (উইলিয়াম প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়) পর ক্ষমতায় আসেন রাজ পরিবারের মেয়েরা। প্রথমে ভিলহেলমিনা, এরপর জুলিয়ানা এবং সবশেষে বর্তমান রানি বিয়াট্রিক্স। তিন পুরুষ ও তিন মহিলা শাসনের পর আবারও এলো পুরুষ। উইলিয়াম আলেকজান্ডার রানি বিয়াট্রিক্সের তিন ছেলের বড় ছেলে। বিয়ে করেছেন আর্জেন্টিনার মেয়ে, প্রিন্সেস ম্যাক্সিমাকে। মজার ব্যাপার হলো, উইলিয়াম-ম্যাক্সিমার ঘরে তিন কন্যাসন্তান। এর অর্থ উইলিয়াম আলেকজান্ডারের পর আবার ক্ষমতা চলে যাবে নারীর কাছে।
বেশ কিছুদিন ধরে রানি বিয়াট্রিক্স সিংহাসন ছেড়ে দেবেন বলে পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হচ্ছিল। কেননা মেঘে মেঘে তাঁর বয়সও তো কম হলো না। পঁচাত্তরে পড়েছেন, যদিও ইংল্যান্ডের রানি এলিজাবেথের বয়সের তুলনায় অনেক কম। অনেকে দীর্ঘদিন ধরে বলাবলি করছিল, রানির বয়স তো কম হলো না। এখন উপযুক্ত সময় তাঁর ছেলের জন্য সিংহাসন ছেড়ে দেওয়া। ছেলের বয়স ৪১ বছর। উপযুক্ত ছেলে- বয়স, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতায়। ফিবছরই এমন কথা ওঠে। কিন্তু রানির ক্ষমতা আর ছাড়া হয় না। সে কারণে সম্প্রতি হঠাৎ দুপুরের দিকে যখন ঘোষণা দেওয়া হলো যে রানি বিশেষ ভাষণ দেবেন কোনো অনুষ্ঠানাদি ছাড়া, তখন অনেকটা ধরে নেওয়া হলো যে সিংহাসন ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা আসতে পারে। জনগণের কৌতূহলের শেষ নেই এবং তাই হলো। ১৬ মিলিয়ন জনগণের সাড়ে সাত মিলিয়ন অধীর আগ্রহ নিয়ে টিভির সামনে বসে রানি বিয়াট্রিক্সের রাজ সিংহাসন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা শুনলেন। রানি বললেন, 'এমন না যে বয়সের কারণে তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব ভারী হয়ে পড়েছে। এখন সময় এসেছে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার।' অবশ্য অনেকে মনে করেন, ইদানীং রানির মনমানসিকতাও ভালো যাচ্ছে না। কেননা তিন ছেলের মেজজন (প্রিন্স ফ্রিজো) গেল বছর স্কি খেলতে গেলে বরফচাপা পড়ে এখনো 'কোমায়' রয়েছেন। বাঁচার কোনো সম্ভাবনা নেই। একদিকে বার্ধক্য, অন্যদিকে সন্তানের এই দশা- সব মিলিয়ে তিনি সরে দাঁড়িয়েছেন বলে ধারণা করা হয়।
কেমন হবেন আগামী দিনের ডাচ রাজা? এ নিয়ে গবেষণা ও আলোচনার শেষ নেই। ভদ্র, মার্জিত, সহজে সাধারণ জনগণের সঙ্গে মিশে যাওয়ার ক্ষমতা এবং বুদ্ধিমত্তা সব রয়েছে তাঁর। অবশ্য কেউ কেউ বলেন, তাঁর মায়ের মতো 'ইন্টেলিজেন্ট' হয়তো তিনি নন, কিন্তু এর পরও তাঁর যে গুণ রয়েছে তা দিয়ে তাঁর মায়ের মতো দক্ষতার সঙ্গে রাজা হিসেবে কাজ করে যেতে পারবেন। এরই মধ্যে তিনি ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটিসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক কমিটিতে সক্রিয় সদস্য হিসেবে জড়িত রয়েছেন। খেলাধুলায়ও তাঁর আগ্রহ উল্লেখ করার মতো। বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতায় তাঁকে সস্ত্রীক স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলা দেখতে দেখা গেছে এবং এমনকি যখন ডাচ দল গোল করেছে তখন তাকে উৎফুল্ল জনতার সঙ্গে দাঁড়িয়ে হাততালি দিতে দেখা গেছে। অনেকের ধারণা, তিনি রাজপরিবার ও কার্যক্রমকে আরো আধুনিকীকরণ করবেন এবং জনগণের সঙ্গে আরো সম্পৃক্ত হবেন। আগামী ৩০ এপ্রিল রাজধানী আমস্টারডামে বিশাল যজ্ঞের মধ্য দিয়ে রাজপরিবারের ক্ষমতার হাতবদল হবে। এখন থেকে সরকারিভাবে শুরু হয়েছে তারই আয়োজন। আয়োজনে কয়েকজন মন্ত্রী সরাসরি সংশ্লিষ্ট থাকবেন। আসবেন দেশ-বিদেশ থেকে রাষ্ট্রীয় অতিথি, রাজা-রানিরা। উপস্থিত থাকবেন সাধারণ জনগণ। রাজার জয়ধ্বনিতে এই শতাব্দীতেও আবার নতুন করে মেতে উঠবে ওলন্দাজরা। বলে উঠবে উচ্চ ও এক সুরে 'রাজার জয় হোক'। আমরাও হবু রাজার শুভ কামনা করি। (২৯-১-২০১৩)
লেখক : হল্যান্ড প্রবাসী সাংবাদিক
No comments