জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও ‘উন্মাদ’ সমাচার by অ্যাডভোকেট ফিরোজ আহমেদ
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে জনসাধারণের দুর্ভোগ এবং সেই সাথে ােভ-বেদনা
বৃদ্ধি পেয়েছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিএনপিসহ সমমনা ১৮
দলের হরতালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত হরতালকারীদের ‘উন্মাদ’ বলে
সম্বোধন করেছিলেন।
১৬
জানুয়ারি সিপিবি ও বাসদের একই দাবিতে হরতালকেও ‘উন্মাদদের কর্মকাণ্ড’ বলে
তিনি অভিহিত করেছেন। এই হরতালকে সমর্থন জানিয়ে রাজপথে নেমেছে গণতান্ত্রিক
বাম মোর্চা। মহাজোটের শরিক বামপন্থীরাও সমমনা ১০ বাম দলের ব্যানারে
জ্বালানি তেলের এই অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ওয়ার্কার্স
পার্টির সভাপতি এবং মহাজোট এমপি রাশেদ খান মেনন জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই
এলাহীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের
মূল্যবৃদ্ধি হয়নি, সুতরাং এই দোহাই দিয়ে দেশে তেলের মূল্যবৃদ্ধি সমীচীন
নয়। উপদেষ্টা বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি প্রমাণ করতে পারলে
স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করব। আর প্রমাণ করতে না পারলে জ্বালানি উপদেষ্টাকে
পদত্যাগ করতে হবে, তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রা জাতীয় কমিটির
সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেছেন, আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের মতো
প্রভুদের স্বার্থ রার জন্য সরকার জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করেছে। এই
পরিপ্রেেিত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিবাদ নতুন মেরুকরণের সম্ভাবনা সৃষ্টি
করেছে।
আইএমএফের দ্বিতীয় কিস্তির ঋণ, ১৪ কোটি ডলার পাওয়ার জন্য সরকার ভর্তুকি কমানোর শর্ত পূরণ করতে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করেছে, এটি আজ দিবালোকের মতো স্পষ্ট। ফলে বিশ্ববাজারে তেলের মূল্যবৃদ্ধির কাহিনী নিতান্তই মিথ্যাচার। বিশ্ববাজারে মূল্য তো বাড়েইনি, বরং কোনো কোনো েেত্র কমেছে। জ্বালানির দাম বাড়ালে এর প্রভাব কৃষি উৎপাদন, পরিবহন, গৃহস্থালিসহ সর্বেেত্র পড়বে। সারা দেশের ১৩ লাখ সেচপাম্পের মধ্যে ৯ থেকে ১০ লাখ পাম্পই জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরশীল। এক একর জমিতে সেচ দিতে ৬০ লিটার জ্বালানি তেল লাগে। ফলে সেচের কারণেই কৃষকের খরচ বেড়ে গেছে একরপ্রতি ৪২০ টাকা করে। কৃষি অধিদফতরের হিসাব মতে, এক মণ ধান উৎপাদনে কৃষকের খরচ ৬৭৩ টাকা, কিন্তু ধান বিক্রি করেন মাত্র ৫৫০ টাকায়। অর্থাৎ লোকসান প্রতি মণে ১২৩ টাকা। সে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে হবে ৪৫০ টাকা। ফলে তার খরচ বাড়বে, সেই সাথে লোকশানও।
বাংলাদেশের প্রবাসী নাগরিকেরা জীবন-মরণ হাড়ভাঙা খাটুনি করে বছরে প্রায় এক হাজার কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স হিসেবে স্বদেশে নিয়ে আসেন, সে েেত্র ১৪ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার জন্য আইএমএফকে খুশি করতে তেলের মূল্যবৃদ্ধি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অনৈতিক। সব সময়ই ভর্তুকির অজুহাত দিয়ে সরকার তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েই চলেছে। ভর্তুকি কেন হচ্ছে? এটা হচ্ছে, কারণ সমতা থাকা সত্ত্বেও দেশের গ্যাস ব্লকগুলো বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে দিয়ে, তাদের কাছ থেকে জাতীয় সংস্থাগুলোর তুলনায় ১০ থেকে ৩০ গুণ বেশি দামে গ্যাস কেনা হয়। এটা হচ্ছে কম দামে বিদ্যুৎ তৈরির সুযোগ সঙ্কুচিত করে অনেক বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তির কারণেও। নানা রকম প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের ৬০ ভাগ গ্যাস উত্তোলন করে জাতীয় সংস্থাগুলো। কিন্তু গ্যাস ক্রয়ের জন্য মোট অর্থের মাত্র ১০ ভাগ জাতীয় সংস্থাগুলো পেয়ে থাকে। বহুজাতিক কোম্পানি থেকে পিএসসি চুক্তির অধীনে নির্ধারিত ফর্মুলা অনুযায়ী গ্যাস কেনা হয় ডলারে; যা গড়ে টাকার অঙ্কে ২৫০ টাকার বেশি। তেল বাবদ ঘাটতি হয় জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতকে আইএমএফের পরামর্শে করপোরেট জালে ফেলার কারণে। তা ছাড়া তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ প্লান্টের কাছ থেকে উচ্চ দামে বিদ্যুৎ ক্রয় আর সেই বিদ্যুৎ কিনতে ভর্তুকিকৃত তেল সরবরাহ করাও কারণ। পরিশোধিত তেলের তুলনায় অপরিশোধিত তেলের দাম অনেক কম। সরকার যদি অপরিশোধিত তেল পরিশোধনের জন্য রিফাইনারি মতা বৃদ্ধি করত, তাহলে ভর্তুকির পরিমাণ কমে যেত। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, সরকার সে কাজটি করেনি।
অর্থমন্ত্রী হরতাল ডাকার জন্য শুধু উন্মাদ বলেই ান্ত হননি, তিনি বামপন্থীদের রাষ্ট্র পরিচালনায় অনভিজ্ঞ বলে মন্তব্য করেছেন। মানবমুক্তির মহান আদর্শ পরিত্যাগ করে যেসব বামপন্থী আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে মন্ত্রী হয়েছিলেন, দেশ পরিচালনা করেছেন তাদের হিসাব অর্থমন্ত্রীর জানার কথা। বাসদের তরুণ নেতা রাজেকুজ্জামান রতন দৈনিক কালের কণ্ঠের ১৫ জানুয়ারি সাময়িকীতে সাাৎকারে বলেছেন ‘আমাদের অভিজ্ঞ অর্থমন্ত্রী এক সময়ে স্বৈরাচারী এরশাদের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। ফলে তার অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার যথেষ্ট পরিপূর্ণ। গত ১০ বছরে এক লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার হয়েছে। এই অর্থমন্ত্রী বলেছেন, তিনি শেয়ারবাজার বোঝেন না। এগুলো সবই তাদের রাষ্ট্র পরিচালনার দতার চিহ্ন।’
বিগত চারদলীয় জোট সরকার আমলে আওয়ামী লীগ হরতাল করে রেকর্ড গড়েছিল। এমনকি জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদেও হরতাল আহ্বান হয়েছিল। মতায় থাকলে হরতাল সর্বনাশ আর মতার বাইরে থাকলে হরতাল রাজনৈতিক শক্তির বহিঃপ্রকাশ। এ বিষয়টি আমাদের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল বিশ্বাস ও কার্যকর করে থাকে। ফলে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদকারীদের উন্মাদ বলার সুযোগ মিলে দেশের জনগণ জ্বালানি তেলের এই অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধিতে যত বেশি প্রতিবাদ জানাতেন, যত বেশি অর্থমন্ত্রীর ভাষায় ‘উন্মাদ’ হবেন, আসলে ততই দেশের জন্য মঙ্গল।
আইএমএফের দ্বিতীয় কিস্তির ঋণ, ১৪ কোটি ডলার পাওয়ার জন্য সরকার ভর্তুকি কমানোর শর্ত পূরণ করতে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করেছে, এটি আজ দিবালোকের মতো স্পষ্ট। ফলে বিশ্ববাজারে তেলের মূল্যবৃদ্ধির কাহিনী নিতান্তই মিথ্যাচার। বিশ্ববাজারে মূল্য তো বাড়েইনি, বরং কোনো কোনো েেত্র কমেছে। জ্বালানির দাম বাড়ালে এর প্রভাব কৃষি উৎপাদন, পরিবহন, গৃহস্থালিসহ সর্বেেত্র পড়বে। সারা দেশের ১৩ লাখ সেচপাম্পের মধ্যে ৯ থেকে ১০ লাখ পাম্পই জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরশীল। এক একর জমিতে সেচ দিতে ৬০ লিটার জ্বালানি তেল লাগে। ফলে সেচের কারণেই কৃষকের খরচ বেড়ে গেছে একরপ্রতি ৪২০ টাকা করে। কৃষি অধিদফতরের হিসাব মতে, এক মণ ধান উৎপাদনে কৃষকের খরচ ৬৭৩ টাকা, কিন্তু ধান বিক্রি করেন মাত্র ৫৫০ টাকায়। অর্থাৎ লোকসান প্রতি মণে ১২৩ টাকা। সে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে হবে ৪৫০ টাকা। ফলে তার খরচ বাড়বে, সেই সাথে লোকশানও।
বাংলাদেশের প্রবাসী নাগরিকেরা জীবন-মরণ হাড়ভাঙা খাটুনি করে বছরে প্রায় এক হাজার কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স হিসেবে স্বদেশে নিয়ে আসেন, সে েেত্র ১৪ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার জন্য আইএমএফকে খুশি করতে তেলের মূল্যবৃদ্ধি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অনৈতিক। সব সময়ই ভর্তুকির অজুহাত দিয়ে সরকার তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েই চলেছে। ভর্তুকি কেন হচ্ছে? এটা হচ্ছে, কারণ সমতা থাকা সত্ত্বেও দেশের গ্যাস ব্লকগুলো বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে দিয়ে, তাদের কাছ থেকে জাতীয় সংস্থাগুলোর তুলনায় ১০ থেকে ৩০ গুণ বেশি দামে গ্যাস কেনা হয়। এটা হচ্ছে কম দামে বিদ্যুৎ তৈরির সুযোগ সঙ্কুচিত করে অনেক বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তির কারণেও। নানা রকম প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের ৬০ ভাগ গ্যাস উত্তোলন করে জাতীয় সংস্থাগুলো। কিন্তু গ্যাস ক্রয়ের জন্য মোট অর্থের মাত্র ১০ ভাগ জাতীয় সংস্থাগুলো পেয়ে থাকে। বহুজাতিক কোম্পানি থেকে পিএসসি চুক্তির অধীনে নির্ধারিত ফর্মুলা অনুযায়ী গ্যাস কেনা হয় ডলারে; যা গড়ে টাকার অঙ্কে ২৫০ টাকার বেশি। তেল বাবদ ঘাটতি হয় জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতকে আইএমএফের পরামর্শে করপোরেট জালে ফেলার কারণে। তা ছাড়া তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ প্লান্টের কাছ থেকে উচ্চ দামে বিদ্যুৎ ক্রয় আর সেই বিদ্যুৎ কিনতে ভর্তুকিকৃত তেল সরবরাহ করাও কারণ। পরিশোধিত তেলের তুলনায় অপরিশোধিত তেলের দাম অনেক কম। সরকার যদি অপরিশোধিত তেল পরিশোধনের জন্য রিফাইনারি মতা বৃদ্ধি করত, তাহলে ভর্তুকির পরিমাণ কমে যেত। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, সরকার সে কাজটি করেনি।
অর্থমন্ত্রী হরতাল ডাকার জন্য শুধু উন্মাদ বলেই ান্ত হননি, তিনি বামপন্থীদের রাষ্ট্র পরিচালনায় অনভিজ্ঞ বলে মন্তব্য করেছেন। মানবমুক্তির মহান আদর্শ পরিত্যাগ করে যেসব বামপন্থী আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে মন্ত্রী হয়েছিলেন, দেশ পরিচালনা করেছেন তাদের হিসাব অর্থমন্ত্রীর জানার কথা। বাসদের তরুণ নেতা রাজেকুজ্জামান রতন দৈনিক কালের কণ্ঠের ১৫ জানুয়ারি সাময়িকীতে সাাৎকারে বলেছেন ‘আমাদের অভিজ্ঞ অর্থমন্ত্রী এক সময়ে স্বৈরাচারী এরশাদের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। ফলে তার অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার যথেষ্ট পরিপূর্ণ। গত ১০ বছরে এক লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার হয়েছে। এই অর্থমন্ত্রী বলেছেন, তিনি শেয়ারবাজার বোঝেন না। এগুলো সবই তাদের রাষ্ট্র পরিচালনার দতার চিহ্ন।’
বিগত চারদলীয় জোট সরকার আমলে আওয়ামী লীগ হরতাল করে রেকর্ড গড়েছিল। এমনকি জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদেও হরতাল আহ্বান হয়েছিল। মতায় থাকলে হরতাল সর্বনাশ আর মতার বাইরে থাকলে হরতাল রাজনৈতিক শক্তির বহিঃপ্রকাশ। এ বিষয়টি আমাদের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল বিশ্বাস ও কার্যকর করে থাকে। ফলে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদকারীদের উন্মাদ বলার সুযোগ মিলে দেশের জনগণ জ্বালানি তেলের এই অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধিতে যত বেশি প্রতিবাদ জানাতেন, যত বেশি অর্থমন্ত্রীর ভাষায় ‘উন্মাদ’ হবেন, আসলে ততই দেশের জন্য মঙ্গল।
No comments