উটের জকিরা এখন কেমন আছে by শফিকুল ইসলাম জীবন
উটের জকি কাওসার এখন নিয়মিত স্কুলে যায়। যদিও তার মেধা আর দশ স্বাভাবিক চঞ্চল শিশুর মতো না। ঠিকমতো পড়তে পারে না। গলা আটকে যায়।
সহপাঠীদের মতো দ্রুত লিখতে পারে না। সাড়ে তিন বছর আগে সৌদি আরবে এক উট
দৌড়ের প্রতিযোগিতায় জকি হিসেবে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিল দশ বছরের শিশু
কাওসার। এতে সে মারাত্মক জখম হয়। তার বাম চোখটি থেঁতলে যায়। তাই সে ঠিকমতো
এখন দেখতে পারে না।
কাওসার হোসেন, ভাই আওয়াল হোসেন এবং তাদের মা জুলেখা বিবি কয়েক বছর আগে পাচারকারীর খপ্পরে পড়ে। পরে তাদের সৌদি আরবে পাচার ও উটের মালিকদের কাছে বিক্রি করে দেয়। তাদের বাড়ি কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার কুড়িগ্রামে। ইউনিসেফের সহায়তায় কাওসারসহ ৮৭৯ শিশুকে সৌদি সরকার তিপূরণ দিয়ে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়েছে। উট দৌড় সৌদি আরবের একটি অত্যনত্ম জনপ্রিয় খেলা। এই খেলায় জকি হিসেবে ব্যবহার করা হয় শিশুদের। উটের দৌড় প্রতিযোগিতায় কোন জকি মাটিতে পড়ে গেলে নির্ঘাত তাকে পঙ্গুত্ব বরণ করে নিতে হয়। শিশুদের জকি ব্যবহার করা হলে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া উটগুলো দৌড়ানোর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। তবে এর পেছনে মানব শিশুদের অমানবিক ব্যবহারকে উট দৌড়ের ব্যবসায়ীরা পাত্তাই দেয় না। উটগুলো যাতে ঠিকমতো দৌড়াতে পারে সে জন্য হাল্কা পাতলা গড়ন ও ওজনে কম, অপুষ্টিতে আক্রানত্ম শিশুগুলোকেই বেছে নেয়া হয় জকি হিসেবে। তাদের ওজন কম রাখতে কারও কারও শরীরে পুশ করা হতো হরমোন ইনজেকশন। বহুকাল ধরে যার শিকার হয়ে আসছিল বাংলাদেশের অনাথ, দরিদ্র শিশুরাই।
আনত্মর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর চাপ বিশেষ করে ইউনিসেফের অব্যাহত তদ্বির ও চাপের মুখে ২০০৫ সালে সৌদি আরব সরকার উটের দৌড়ে জকি হিসেবে আঠারো বছরের নিচের শিশুদের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। ওই সময়টাতেও সৌদি আরবে প্রায় ৩ হাজার জকি ছিল। এদের মধ্যে ছিল কিছু তিন বছরের শিশুও যাদের বাড়ি বাংলাদেশেই। শিশুদের জকি হিসেবে ব্যবহার করা বন্ধ করার পর বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে শিশু পাচার কমেছে বলে ইউনিসেফ মনে করছে। অন্যদিকে সৌদি আরবে পাচার হওয়া বাংলাদেশী শিশুদের শনাক্ত করে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। পাশাপাশি জকিগুলোকে তিপূরণ দিয়ে বাংলাদেশে আনা হচ্ছে। ফেব্রম্নয়ারি পর্যনত্ম সৌদি সরকার ৮৭৯ সাবেক জকিকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়েছে। এ সব জকিগুলোকে মাথাপিছু ১ লাখ ৪ হাজার টাকা করে তিপূরণ দিয়েছে সৌদি সরকার।
প্রাথমিকভাবে কাওসার ও আওয়ালসহ দেশের ২৫টি জেলার ৬৫টি উপজেলায় ১৬৮ জন জকি শিশুকে পুনর্বাসনের কাজে হাত দিয়েছে ইউনিসেফ। তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা চলছে। সৌদি সরকার থেকে প্রাপ্ত তিপূরণের অর্থ রাখা হয়েছে যার যার ব্যাংক এ্যাকাউন্টে। যাদের বয়স খুবই কম তাদের বাবা মায়ের এ্যাকাউন্টে রাখা হয়েছে এই টাকা। বয়স ১৮ হলে তারা এই এ্যাকাউন্টের সরাসরি মালিক হবে। ততদিনে গচ্ছিত অর্থ থেকে প্রাপ্ত সুদ দিয়েই তাদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা হবে। প্রতি মাসে এ্যাকাউন্ট থেকে প্রাপ্ত মুনাফা পেয়ে দরিদ্র বাবা-মায়েরাও তাঁদের জকি শিশুগুলোর দিকে বাড়তি নজর দিতে পারছে। শৈশবে সৌদিতে পাচার করার কারণে অনেক শিশু বাংলা বলতে ভুলে গেছে। তাদের নতুন করে বাংলা ভাষা শেখানো হচ্ছে। কাওসার ও আওয়াল ইতোমধ্যে কিছুটা সুস্থ জীবনে ফিরে এসেছে। তাদের কিছু বন্ধু হয়েছে। তারা এখন এক সঙ্গে স্কুলে যায়, খেলে।
বরম্নড়া উপজেলার ২৫ কিলোমিটার উত্তরে বুড়িচং। সীমানত্মবতর্ী এই এলাকাকে শিশু ও নারী পাচারের জন্য একটি বিশেষ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে ইউনিসেফ। এ কারণে ওই এলাকায় নারী ও শিশুদের সচেতনতা সৃষ্টির জন্য নেয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ। এই এলাকায় রয়েছে বেশ কিছু মাদ্রাসা ও ইসলামী প্রাথমিক বিদ্যালয়। যেখানে মূলত দরিদ্র শিশুরাই যায়।
ইউনিসেফের শিশু নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান রোজ আন পাপাভেরো বলেছেন, আমাদের এই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশের যে সব এলাকার শিশুরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে বিশেষ করে গ্রামীণ শিশুদের অধিকার রায় ইউনিসেফ কাজ চালিয়ে যাবে। একটি জাতীয় শিশু রা কৌশল কর্মসূচী বাসত্মবায়নের জন্য ইউনিসেফ বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ চালাচ্ছে।
কাওসার হোসেন, ভাই আওয়াল হোসেন এবং তাদের মা জুলেখা বিবি কয়েক বছর আগে পাচারকারীর খপ্পরে পড়ে। পরে তাদের সৌদি আরবে পাচার ও উটের মালিকদের কাছে বিক্রি করে দেয়। তাদের বাড়ি কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার কুড়িগ্রামে। ইউনিসেফের সহায়তায় কাওসারসহ ৮৭৯ শিশুকে সৌদি সরকার তিপূরণ দিয়ে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়েছে। উট দৌড় সৌদি আরবের একটি অত্যনত্ম জনপ্রিয় খেলা। এই খেলায় জকি হিসেবে ব্যবহার করা হয় শিশুদের। উটের দৌড় প্রতিযোগিতায় কোন জকি মাটিতে পড়ে গেলে নির্ঘাত তাকে পঙ্গুত্ব বরণ করে নিতে হয়। শিশুদের জকি ব্যবহার করা হলে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া উটগুলো দৌড়ানোর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। তবে এর পেছনে মানব শিশুদের অমানবিক ব্যবহারকে উট দৌড়ের ব্যবসায়ীরা পাত্তাই দেয় না। উটগুলো যাতে ঠিকমতো দৌড়াতে পারে সে জন্য হাল্কা পাতলা গড়ন ও ওজনে কম, অপুষ্টিতে আক্রানত্ম শিশুগুলোকেই বেছে নেয়া হয় জকি হিসেবে। তাদের ওজন কম রাখতে কারও কারও শরীরে পুশ করা হতো হরমোন ইনজেকশন। বহুকাল ধরে যার শিকার হয়ে আসছিল বাংলাদেশের অনাথ, দরিদ্র শিশুরাই।
আনত্মর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর চাপ বিশেষ করে ইউনিসেফের অব্যাহত তদ্বির ও চাপের মুখে ২০০৫ সালে সৌদি আরব সরকার উটের দৌড়ে জকি হিসেবে আঠারো বছরের নিচের শিশুদের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। ওই সময়টাতেও সৌদি আরবে প্রায় ৩ হাজার জকি ছিল। এদের মধ্যে ছিল কিছু তিন বছরের শিশুও যাদের বাড়ি বাংলাদেশেই। শিশুদের জকি হিসেবে ব্যবহার করা বন্ধ করার পর বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে শিশু পাচার কমেছে বলে ইউনিসেফ মনে করছে। অন্যদিকে সৌদি আরবে পাচার হওয়া বাংলাদেশী শিশুদের শনাক্ত করে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। পাশাপাশি জকিগুলোকে তিপূরণ দিয়ে বাংলাদেশে আনা হচ্ছে। ফেব্রম্নয়ারি পর্যনত্ম সৌদি সরকার ৮৭৯ সাবেক জকিকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়েছে। এ সব জকিগুলোকে মাথাপিছু ১ লাখ ৪ হাজার টাকা করে তিপূরণ দিয়েছে সৌদি সরকার।
প্রাথমিকভাবে কাওসার ও আওয়ালসহ দেশের ২৫টি জেলার ৬৫টি উপজেলায় ১৬৮ জন জকি শিশুকে পুনর্বাসনের কাজে হাত দিয়েছে ইউনিসেফ। তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা চলছে। সৌদি সরকার থেকে প্রাপ্ত তিপূরণের অর্থ রাখা হয়েছে যার যার ব্যাংক এ্যাকাউন্টে। যাদের বয়স খুবই কম তাদের বাবা মায়ের এ্যাকাউন্টে রাখা হয়েছে এই টাকা। বয়স ১৮ হলে তারা এই এ্যাকাউন্টের সরাসরি মালিক হবে। ততদিনে গচ্ছিত অর্থ থেকে প্রাপ্ত সুদ দিয়েই তাদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা হবে। প্রতি মাসে এ্যাকাউন্ট থেকে প্রাপ্ত মুনাফা পেয়ে দরিদ্র বাবা-মায়েরাও তাঁদের জকি শিশুগুলোর দিকে বাড়তি নজর দিতে পারছে। শৈশবে সৌদিতে পাচার করার কারণে অনেক শিশু বাংলা বলতে ভুলে গেছে। তাদের নতুন করে বাংলা ভাষা শেখানো হচ্ছে। কাওসার ও আওয়াল ইতোমধ্যে কিছুটা সুস্থ জীবনে ফিরে এসেছে। তাদের কিছু বন্ধু হয়েছে। তারা এখন এক সঙ্গে স্কুলে যায়, খেলে।
বরম্নড়া উপজেলার ২৫ কিলোমিটার উত্তরে বুড়িচং। সীমানত্মবতর্ী এই এলাকাকে শিশু ও নারী পাচারের জন্য একটি বিশেষ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে ইউনিসেফ। এ কারণে ওই এলাকায় নারী ও শিশুদের সচেতনতা সৃষ্টির জন্য নেয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ। এই এলাকায় রয়েছে বেশ কিছু মাদ্রাসা ও ইসলামী প্রাথমিক বিদ্যালয়। যেখানে মূলত দরিদ্র শিশুরাই যায়।
ইউনিসেফের শিশু নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান রোজ আন পাপাভেরো বলেছেন, আমাদের এই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশের যে সব এলাকার শিশুরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে বিশেষ করে গ্রামীণ শিশুদের অধিকার রায় ইউনিসেফ কাজ চালিয়ে যাবে। একটি জাতীয় শিশু রা কৌশল কর্মসূচী বাসত্মবায়নের জন্য ইউনিসেফ বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ চালাচ্ছে।
No comments