প্রসঙ্গ ইসলাম- ভালবাসার বহুমাত্রিকতা by অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ুম
ভালবাসা আল্লাহ প্রদত্ত এক অপূর্ব অন্তরগত
মনস্তাত্তি্বক আকর্ষণ যা বিশ্বচরাচরকে সুস্থির সৌরভে মোহিত রেখেছে।
ভালবাসায় রয়েছে জান্নাতী সুখের প্রবাহমান দুর্দান্ত স্পন্দন যা
তারুণ্যদীপ্ত এবং এতে দেদীপ্যমান হয়ে ওঠে তরতাজা আনন্দ ও পরিচ্ছন্ন আবেগ
অনুভূতি।
ভালবাসার স্বরূপ শাশ্বত। মানব সৃষ্টির আগেও
ভালবাসা আপন মহিমায় ভাস্বর ছিল। মানব-মানবীর পারস্পরিক ভালবাসায় মনুষ্য
আবাদের স্পৃহা বলীয়ান হয়ে উঠলে বিয়ে রীতির উদ্ভব ঘটে।
ভালবাসা আছে বলেই ধমর্ীয় চিনত্মা-চেতনা জাগ্রত আছে, ভালবাসা আছে বলেই ভক্তি-পথ চলমান গতি পেয়েছে, ভালবাসা আছে বলেই সনত্মানের প্রতি জনক-জননীর মজবুত টান সক্রিয় হয়ে ওঠে, ভালবাসা আছে বলেই সনত্মান-সনত্মতি পিতা-মাতা সুখী হতে পারে, ভালবাসা আছে বলেই এক অদৃশ্য আকর্ষণে সৌরজগত সুশৃঙ্খলভাবে চলমান রয়েছে।
আরবীতে গাঢ় ভালবাসা বা গভীর প্রেমকে বলা হয় ইশ্ক। কুরআন মজীদে ইশ্ক শব্দের ব্যবহার না থাকলেও তাতে মুহব্বত শব্দের ব্যবহার ল্য করা যায়।
ভালবাসা কারে কয়_এ জিজ্ঞাসা চিরকালের। ভালবাসার স্বরূপ নির্ণয় করা দুরূহ হলেও এর উপস্থিতি হৃদয়ের গভীরে অনুভূত হয় একটা শিহরণ সৌকর্য মেখে। ভালবাসা নাড়া দেয় জীবনে-মরণে। ভালবাসাকে সংজ্ঞায়িত করা যায় না এক কথায়। একে সংজ্ঞায়িত করতে হলে মর্মবোধকে সক্রিয় করতে হয়। সৃষ্টির সূচনাকালের প্রারম্ভে ভালবাসাই উদ্দীপ্ত করেছে সৃষ্টি করতে।
হাদীস শরীফে আছে : আলস্নাহ্ ছিলেন এক গুপ্তধন। তিনি জাহির হবার ইরাদা করলেন, তাই তিনি তাঁর নূর মুবারকের তাজালিস্নর ফয়েযে বিকশিত করলেন একটা নূর আর সেই নূর মুবারক হাজার হাজার বছর ঘূর্ণায়মান অবস্থায় থাকল, অতঃপর সেই নূর মুবারককে স্থির করা হলো আর তার থেকে একে একে আরশ, কুরসী, লওহ, কলম প্রভৃতি সৃষ্টি করলেন এবং পর্যায়ক্রমে বিশ্বজগত সৃষ্টি হলো, সময়ের জন্ম হলো, মানুষ এলো সবার পরে। প্রথম মানব হযরত আদম আলায়হিস সালামকে আব (পানি) আতশ (আগুন) খাক (মাটি) বাদ (বাতাস) প্রভৃতি উপাদান দিয়ে সৃষ্টি করা হলো। অতঃপর আদম দেহে ফুঁকে দেয়া হলো রূহ বা আনত্মাকে। জান্নাতে আদম থাকলেন, কিন্তু কি যেন এক অভাব তাঁকে আকুল করে তোলে। সর্বণ তাঁর মধ্যে এক অজানা বিষণ্ন্নতা এসে জড়ো হয়। তিনি দেখতে পান সব প্রাণীরই জোড়া রয়েছে, অথচ তিনি একা, একদম একা। এই একাকিত্ব, এই নিসঙ্গতায় তিনি বে-চাইন হয়ে ওঠেন।
একদিন তিনি ঘুম থেকে উঠে তাঁর পাশে দেখতে পান তাঁরই গঠনের এক অপরূপ সুন্দরী নারীকে। কোন এক আকর্ষণ শক্তি তাঁর ভেতরে জাগ্রত হয়। তিনি সেই নারীকে ছুঁতে যেই হাত বাড়িয়েছেন অমনি এক আওয়াজ ভেসে এলো, তাঁকে নির্দেশ দেয়া হলো ছোঁয়ার আগে শাদি বন্ধনের। তাঁদের শাদি হলো সেই জান্নাতে। ভালবাসার এক নবদিগনত্ম উন্মোচিত হলো। আলস্নাহ আদমকে নির্দেশ দিলেন : হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করো এবং যেখানে ইচ্ছে স্বচ্ছন্দে আহার করো। কিন্তু এই বৃটির নিকটবতর্ী হয়ো না, হলে তোমরা অন্যায়কারীদের অনত্মভর্ুক্ত হবে। (সূরা বাকারা: আয়াত ৩৫)।
সৃষ্টি জগত সৃষ্টি ভালবাসারই ফল। নূরে মুহম্মদ সৃষ্টি করে আলস্নাহ তা'আলা তাঁর ভালবাসার প্রকাশ ঘটান। আর আলস্নাহর ভালবাসা পেতে হলে প্রিয়নবী সালস্নালস্নাহু 'আলায়হি ওয়া সালস্নামের পূর্ণ অনুসরণ করতে হবে। আলস্নাহ তা'আলা তাঁর হাবীবকে ভালবাসার ঘোষণা দেবার নির্দেশ দেন এইভাবে : (হে রসূল!) আপনি বলুন : যদি তোমরা আলস্নাহকে ভালবাসো তাহলে আমাকে অনুসরণ করো, আলস্নাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ মা করে দেবেন। (সূরা আল ইমরান : আয়াত ৩১)।
ইশনক, মুহব্বত, ভালবাসা প্রভৃতি আছে বলেই বিশ্বচরাচর সাধারণত সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে না। সংঘর্ষ যখনই দেখা দেয় তখনই অরাজকতা নেমে আসে।
সূফী মননে সফলতার চরমোৎকর্ষ সাধিত হয় এই ভালবাসার মাধ্যমে। হযরত মুহম্মদ সালস্নালস্নাহু 'আলায়হি ওয়া সালস্নামের মরতবা ব্যক্ত করতে যেয়ে বলা হয়েছে : খোদা আশেক তোমহারি/তুম মাহবুব হ্যায় উসকি/হ্যায় এ্যায়সা মরতবা কিসিকা/বাতাও ইয়া রসূলালস্নাহ -আলস্নাহ তোমার আশিক/ আর তুমি তাঁর মাহবুব/এমন মরতবা কার আছে/ বলো হে রসূলুলস্নাহ।
ভালবাসা বিশ্বজগতকে গরীয়ান ও মহীয়ান করে তুলেছে সৃষ্টির আদিকাল থেকে। মানব-মানবীর ভালবাসায় বৈধতার উপস্থিতি অপরিহার্য হয়ে যায়। ভালবাসা নিয়ে অসংখ্য কাহিনী কবিতা, কাসিদা নির্মিত হয়েছে। লায়লী-মজনু, শিরী-ফরহাদ প্রভৃতি অমর প্রেমকাহিনী আজও ভালবাসার মানবিক মূল্যবোধ বিকশিত করে। বলা হয়েছে : ও ফুল তো ফুলই নেহী/জিস্ ফুলমে খুশবু নেহী/ও দিলতো দিল্-ই নেহি/ জিস্ দিলমে মুহব্বত নেই_ ওই ফুল তো ফুলই নয়/যে ফুলে সুগন্ধী নেই-ওই অনত্মর তো অনত্মরই নয়। যে অনত্মরে ভালবাসা নেই।
ভালবাসা আছে বলেই মায়া, মমতা আছে, পারস্পরিক দরদ-অনভূতি আছে। ভালবাসার উপস্থিতি সুদৃঢ় করে টান-আকর্ষণ। ভালবাসার নানা মাত্রিকতা এক অনাবিল আনন্দ জোয়ার এসেছে সবখানে। সে আনন্দ পবিত্রতার সৌরভ যখন বিচ্ছুরিত করে তখন পৃথিবীতেই জান্নাতী সুখ নেমে আসে।
জগতের মায়া-মমতা, জন্মভূমির প্রতি ভালবাসা, জীবনের পরতে পরতে বয়ে আনে মনুষ্যানুভূতি। ভালবাসার বহু মাত্রিকতা শোভনীয় হয়ে ওঠে মানবিক মূল্যবোধ সমাহারে।
লেখক : পীর সাহেব দ্বারিয়াপুর শরীফ, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আঞ্জুমানে তোয়াজিয়া, উপদেষ্টা ইনস্টিটিউট অব হযরত মুহম্মদ (সা.) সাবেক পরিচালক ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
ভালবাসা আছে বলেই ধমর্ীয় চিনত্মা-চেতনা জাগ্রত আছে, ভালবাসা আছে বলেই ভক্তি-পথ চলমান গতি পেয়েছে, ভালবাসা আছে বলেই সনত্মানের প্রতি জনক-জননীর মজবুত টান সক্রিয় হয়ে ওঠে, ভালবাসা আছে বলেই সনত্মান-সনত্মতি পিতা-মাতা সুখী হতে পারে, ভালবাসা আছে বলেই এক অদৃশ্য আকর্ষণে সৌরজগত সুশৃঙ্খলভাবে চলমান রয়েছে।
আরবীতে গাঢ় ভালবাসা বা গভীর প্রেমকে বলা হয় ইশ্ক। কুরআন মজীদে ইশ্ক শব্দের ব্যবহার না থাকলেও তাতে মুহব্বত শব্দের ব্যবহার ল্য করা যায়।
ভালবাসা কারে কয়_এ জিজ্ঞাসা চিরকালের। ভালবাসার স্বরূপ নির্ণয় করা দুরূহ হলেও এর উপস্থিতি হৃদয়ের গভীরে অনুভূত হয় একটা শিহরণ সৌকর্য মেখে। ভালবাসা নাড়া দেয় জীবনে-মরণে। ভালবাসাকে সংজ্ঞায়িত করা যায় না এক কথায়। একে সংজ্ঞায়িত করতে হলে মর্মবোধকে সক্রিয় করতে হয়। সৃষ্টির সূচনাকালের প্রারম্ভে ভালবাসাই উদ্দীপ্ত করেছে সৃষ্টি করতে।
হাদীস শরীফে আছে : আলস্নাহ্ ছিলেন এক গুপ্তধন। তিনি জাহির হবার ইরাদা করলেন, তাই তিনি তাঁর নূর মুবারকের তাজালিস্নর ফয়েযে বিকশিত করলেন একটা নূর আর সেই নূর মুবারক হাজার হাজার বছর ঘূর্ণায়মান অবস্থায় থাকল, অতঃপর সেই নূর মুবারককে স্থির করা হলো আর তার থেকে একে একে আরশ, কুরসী, লওহ, কলম প্রভৃতি সৃষ্টি করলেন এবং পর্যায়ক্রমে বিশ্বজগত সৃষ্টি হলো, সময়ের জন্ম হলো, মানুষ এলো সবার পরে। প্রথম মানব হযরত আদম আলায়হিস সালামকে আব (পানি) আতশ (আগুন) খাক (মাটি) বাদ (বাতাস) প্রভৃতি উপাদান দিয়ে সৃষ্টি করা হলো। অতঃপর আদম দেহে ফুঁকে দেয়া হলো রূহ বা আনত্মাকে। জান্নাতে আদম থাকলেন, কিন্তু কি যেন এক অভাব তাঁকে আকুল করে তোলে। সর্বণ তাঁর মধ্যে এক অজানা বিষণ্ন্নতা এসে জড়ো হয়। তিনি দেখতে পান সব প্রাণীরই জোড়া রয়েছে, অথচ তিনি একা, একদম একা। এই একাকিত্ব, এই নিসঙ্গতায় তিনি বে-চাইন হয়ে ওঠেন।
একদিন তিনি ঘুম থেকে উঠে তাঁর পাশে দেখতে পান তাঁরই গঠনের এক অপরূপ সুন্দরী নারীকে। কোন এক আকর্ষণ শক্তি তাঁর ভেতরে জাগ্রত হয়। তিনি সেই নারীকে ছুঁতে যেই হাত বাড়িয়েছেন অমনি এক আওয়াজ ভেসে এলো, তাঁকে নির্দেশ দেয়া হলো ছোঁয়ার আগে শাদি বন্ধনের। তাঁদের শাদি হলো সেই জান্নাতে। ভালবাসার এক নবদিগনত্ম উন্মোচিত হলো। আলস্নাহ আদমকে নির্দেশ দিলেন : হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করো এবং যেখানে ইচ্ছে স্বচ্ছন্দে আহার করো। কিন্তু এই বৃটির নিকটবতর্ী হয়ো না, হলে তোমরা অন্যায়কারীদের অনত্মভর্ুক্ত হবে। (সূরা বাকারা: আয়াত ৩৫)।
সৃষ্টি জগত সৃষ্টি ভালবাসারই ফল। নূরে মুহম্মদ সৃষ্টি করে আলস্নাহ তা'আলা তাঁর ভালবাসার প্রকাশ ঘটান। আর আলস্নাহর ভালবাসা পেতে হলে প্রিয়নবী সালস্নালস্নাহু 'আলায়হি ওয়া সালস্নামের পূর্ণ অনুসরণ করতে হবে। আলস্নাহ তা'আলা তাঁর হাবীবকে ভালবাসার ঘোষণা দেবার নির্দেশ দেন এইভাবে : (হে রসূল!) আপনি বলুন : যদি তোমরা আলস্নাহকে ভালবাসো তাহলে আমাকে অনুসরণ করো, আলস্নাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ মা করে দেবেন। (সূরা আল ইমরান : আয়াত ৩১)।
ইশনক, মুহব্বত, ভালবাসা প্রভৃতি আছে বলেই বিশ্বচরাচর সাধারণত সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে না। সংঘর্ষ যখনই দেখা দেয় তখনই অরাজকতা নেমে আসে।
সূফী মননে সফলতার চরমোৎকর্ষ সাধিত হয় এই ভালবাসার মাধ্যমে। হযরত মুহম্মদ সালস্নালস্নাহু 'আলায়হি ওয়া সালস্নামের মরতবা ব্যক্ত করতে যেয়ে বলা হয়েছে : খোদা আশেক তোমহারি/তুম মাহবুব হ্যায় উসকি/হ্যায় এ্যায়সা মরতবা কিসিকা/বাতাও ইয়া রসূলালস্নাহ -আলস্নাহ তোমার আশিক/ আর তুমি তাঁর মাহবুব/এমন মরতবা কার আছে/ বলো হে রসূলুলস্নাহ।
ভালবাসা বিশ্বজগতকে গরীয়ান ও মহীয়ান করে তুলেছে সৃষ্টির আদিকাল থেকে। মানব-মানবীর ভালবাসায় বৈধতার উপস্থিতি অপরিহার্য হয়ে যায়। ভালবাসা নিয়ে অসংখ্য কাহিনী কবিতা, কাসিদা নির্মিত হয়েছে। লায়লী-মজনু, শিরী-ফরহাদ প্রভৃতি অমর প্রেমকাহিনী আজও ভালবাসার মানবিক মূল্যবোধ বিকশিত করে। বলা হয়েছে : ও ফুল তো ফুলই নেহী/জিস্ ফুলমে খুশবু নেহী/ও দিলতো দিল্-ই নেহি/ জিস্ দিলমে মুহব্বত নেই_ ওই ফুল তো ফুলই নয়/যে ফুলে সুগন্ধী নেই-ওই অনত্মর তো অনত্মরই নয়। যে অনত্মরে ভালবাসা নেই।
ভালবাসা আছে বলেই মায়া, মমতা আছে, পারস্পরিক দরদ-অনভূতি আছে। ভালবাসার উপস্থিতি সুদৃঢ় করে টান-আকর্ষণ। ভালবাসার নানা মাত্রিকতা এক অনাবিল আনন্দ জোয়ার এসেছে সবখানে। সে আনন্দ পবিত্রতার সৌরভ যখন বিচ্ছুরিত করে তখন পৃথিবীতেই জান্নাতী সুখ নেমে আসে।
জগতের মায়া-মমতা, জন্মভূমির প্রতি ভালবাসা, জীবনের পরতে পরতে বয়ে আনে মনুষ্যানুভূতি। ভালবাসার বহু মাত্রিকতা শোভনীয় হয়ে ওঠে মানবিক মূল্যবোধ সমাহারে।
লেখক : পীর সাহেব দ্বারিয়াপুর শরীফ, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আঞ্জুমানে তোয়াজিয়া, উপদেষ্টা ইনস্টিটিউট অব হযরত মুহম্মদ (সা.) সাবেক পরিচালক ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
No comments