বাংলাবাজারের আলম আরিফ ও পলিশওয়ালারা কেমন আছে? by ড. আর এম. দেবনাথ
কয়েকদিন আগে 'বইপাড়া' মানে বাংলাবাজারে
গিয়ে ভীষণ বিড়ম্বনায় পড়ি। এ পাড়ায় আমি একনাগাড়ে ৩০/৩৫ বছর থেকে এসেছি।
স্বাধীনতা পূর্বকালে যখন জগন্নাথ কলেজে শিৰকতা দিয়ে চাকরি জীবন শুরম্ন করি
তখন থেকেই আমার আসত্মানা হয় বাংলাবাজার মানে নর্থব্রম্নক হল রোড।
এ পাড়া ছেড়েছি আজ প্রায় পাঁচ বছর। দিন দিন বাংলাবাজার এমন ব্যসত্ম হয়ে ওঠে
যে সেখানে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়ে। এবার গিয়ে দেখি অবস্থার আরও অবনতি
ঘটেছে। মাঝে মাঝে যাই বাংলাবাজার, তা অবশ্য শুক্রবারে। ঐদিন বিউটি
বোর্ডিংয়ে পুরনোদের একটা আড্ডা বসে। তাতে মাঝে মধ্যে অংশগ্রহণ করি। সেদিন
শুক্রবার হওয়ায় বাংলাবাজারের বিড়ম্বনা বোঝা যায় না। গত সপ্তাহে যখন কর্ম
দিবসে গেছি তখন হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি অবস্থা কতটুকু খারাপের দিকে গেছে।
সঙ্গে ড. জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত। তারই কাজে যাওয়া। অটোতে আমরা ঢুকেছি পুরনো
ঢাকার জিপিওর মোড় দিয়ে। দেখলাম পুরো রাসত্মা প্রায় বস্নকড। ঠেলাগাড়ি, ভ্যান
গাড়ি, লেগুন নামীয় ছোট ছোট পরিবহন, রিক্সা, ফুটপাথের বইয়ের দোকান_ সব কিছু
মিলে ঐ রাসত্মা দিয়ে বইয়ের বাজারে ঢোকার কোন কায়দা নেই। হাঁটব, তারও কোন
জোগাড় নেই। মানুষের গায়ে মানুষ লাগে। কেউ কারও দিকে ভ্রম্নৰেপ করে না।
হুড়োহুড়ি, ঠেলাঠেলি_ এ এক অকল্পনীয় অবস্থা। বইয়ের মৌসুম এখন। প্রাইমারি,
সেকেন্ডারির বই বিক্রি, দেশের প্রত্যনত্ম অঞ্চলে বই পাঠানো। সামনে ২১
ফেব্রম্নয়ারির বইমেলা। দোকানদার, প্রকাশকরা মহাব্যসত্ম। বছরের ব্যবসা এখন_
এমনই মনে হলো। বড় প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলা মুশকিল। তারা ব্যসত্ম একুশের
মেলা নিয়ে। ড. দত্ত এরই মধ্যে তাঁর কাজ সারছেন। একবার দোতলায় উঠছেন, একবার
তিনতলায় উঠছেন। আমি তা পারি না। এমতাবস্থায় তাঁর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে
বললাম, আমি 'নন্দী'র দোকানে অর্থাৎ 'নবযুগে' যাচ্ছি, আপনি আসুন।
সামান্য রাসত্মা। রিক্সায় ওঠার কোন প্রয়োজন নেই। তবু উঠলাম। কারণ ভিড়, গাড়ি-ঘোড়া, ভ্যান, রিক্সা, ঠেলাগাড়ি এবং মানুষ ঠেলে যাওয়া এক অসম্ভব ব্যাপার আমার জন্য। হাঁটতেও কষ্ট হয়। পাঁচ ছয় বছর আগে যখন বাংলাবাজার ছাড়ি তখনও এতটা ব্যসত্ম বাংলাবাজার, নর্থব্রম্নক হল রোড ছিল না। কিন্তু এখন তাই। এমতাবস্থায় দুই কদম রাসত্মা রিক্সাতেই গেলাম। রিক্সাওয়ালাকে দিলাম পাঁচ টাকা। ভাবলাম, ও খুশিই হবে। দুই মিনিটের রাসত্মা নয়। দেখা গেল, রিক্সাওয়ালা খুশি নয়। ও খুব বিরক্তি সহকারে বলল, কী দিলেন স্যার। বাধ্য হয়ে তাকে আরও দু' টাকা দিলাম। না, তাতেও তার মন পেলাম না। আজেবাজে বলতে বলতে সে চলে গেল। আমি গিয়ে বসলাম অশোক নন্দীর দোকানে। দোকানের কর্মচারী শ্যামল আদর করে চা ও শিঙ্গাড়া খাওয়াল। খেতে খেতে দেখি রাসত্মার ওপারে আলম কাজ করছে, ঘরে রঙ লাগাচ্ছে। দূর থেকেই ডাকলাম, এই আলম, তাই না। আলম শুনল। অনতিবিলম্বে সে এসে হাজির। এসেই অত্যনত্ম বিনয়ের সঙ্গে বলল, স্যার কেমন আছেন। তার সঙ্গে একটি ছেলে। ওর নাম ভুলে গেছি। এ পলিশওয়ালা, জুতা পলিশ করে। নদীর ওপারে থাকে। দুজনকেই জিজ্ঞেস করলাম, তোমরা এখানে কী কর? আলম বলল, দোকান রঙ করার কাজ নিয়েছি। আমার সঙ্গে আছে পলিশওয়ালা ছেলেটি। আমি পাল্টা প্রশ্ন করলাম, তোমাকে না দেখলাম ঐ দিন চা বিক্রি করতে। তখন আলম বলল, স্যার একটা কাজ করে এখন সংসার চলে না। চা সব সময় চলে না। রঙের কাজও সবসময় পাওয়া যায় না। যখন যেটা পাই তাই করি। নতুবা উপোস থাকতে হবে। এখন শীতকাল। রঙের কাজ আছে। আর এ কাজটি শিখে নিয়েছি। কত পাও দিনে? আলম বলল, এ কাজেরও স্যার জোয়ার-ভাটা আছে। কখনও ৩০০ টাকা রোজ, কখনও ৪০০ টাকা রোজ। মৌসুম বুঝে তা দাবি করি। যখন কাজ থাকে না তখন ফুটপাথে চা বিক্রি করি। এখানে অনেক চায়ের দোকান। তাই চায়ের কাজ জমে না। তবে ছুটির দিনে কিছু জমে। তখন দিনে ১০০-২০০ টাকা থাকে। মাঝে মাঝে ধার করতে হয়। তবে কাজ পেলে দিয়ে দিই। থাকি পোসত্মগোলার দিকে। কোনমতে আছি। তাই, কারণ ওকে দেখছি আজ ১৫-২০ বছর যাবত। কোন পরিবর্তন নেই। খেটেখাওয়া মানুষ, দেখলেই বোঝা যায়। পলিশওয়ালা ছেলেটিকেও আমি চিনি বহুদিন থেকে। সে যতদূর জানি বিউটি বোর্ডিংয়েই বিনা ভাড়ায় বারান্দায় বা কোন কর্মচারীর সঙ্গে থাকে। ওকে জিজ্ঞেস করাতে সেও একই কথা বলল। এক কাজে এখন চলে না। পলিশের কাজ সব সময় পোষায় না। কাজেই আলম ভাইয়ের সঙ্গে থেকে রঙমিস্ত্রির কাজটা শিখে ফেলেছি। প্রথম কিছুদিন যোগালি হিসাবে কাজ করেছি। এখন নিজেই পারি। ও বলল আরেকটা কথা। পলিশের কাজে স্যার, ইজ্জত নেই। সবাই নীচু চোখে দেখে। মুচি বলে ঘৃণা করে। কিন্তু রঙমিস্ত্রির কাজ করলে ওভাবে নীচু করে দেখে না। তখন স্যার ভাল লাগে। আমরা দুঃখী মানুষ স্যার। কাজ করে পরিশ্রম করে খাব। সেখানে যদি অবজ্ঞার চোখে দেখা হয় তাহলে বড় দুঃখ পাই। এ কারণেই প্রতিজ্ঞা ছিল পলিশের কাজ যেভাবেই পারি ছাড়ব। আলম ভাই আমার উপকার করেছে। আমাকে কাজ শিখিয়েছে। এতে কী তোমার আর্থিক লাভ হয়েছে? নিশ্চয়ই স্যার। নতুবা অনেকদিন বিনা কাজে বসে থাকতে হতো। এখন এতটা না। অনেকটা ভাল। রঙমিস্ত্রির কাজ করলে দিনে ৩০০-৪০০ টাকা পাওয়া যায়। পলিশওয়ালার সঙ্গে কথা বলতে বলতেই একজন মিনত্মি এসে নবযুগের সামনে হাজির। ওকে কিছুৰণ আগে বইয়ের বড় একটা বাজারের সামনে দেখে এসেছি। মাথার বোঝা নামিয়ে সে আমার দিকে এলো। তোমার নাম কী?
আমার নাম আরিফ। কী কর তুমি? একই উত্তর দেখলাম তারও। ও বলল, যখন যা পাই তাই করি। মিনত্মিগিরি করি। বইয়ের বোঝা বহন করি। এক দোকান থেকে আরেক দোকানে নিয়ে যাই। প্রেস থেকে দোকানে নিই। ট্রাক থেকে মাল নামাই। কার্টন ভাঙ্গি-খুলি। আবার বইয়ের প্যাকিং করে দিই। আরিফ বলল, আমরা গরিব মানুষ, স্যার। আলস্নাহ যে কাজ দেয় সেই কাজই করি। এসব বলতে বলতে সে মুখ থেকে পানের পিক ফেলছে। জিজ্ঞেস করলাম তোমার বাড়ি কোথায়? আরিফের বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুরে। নাগরপুর থেকে তিন আইল দূরে ঘূর্ণিপাড়া বলে একটা গ্রাম আছে। ঢাকা থেকে ৪ ঘণ্টায় ওখানে যাওয়া যায়। বাসভাড়া ১২০ টাকা। ঐ গ্রামের অনেক লোক বাংলাবাজারে মিনত্মির কাজ করে। যখন যা পায় সেই কাজই করে। কেউ ছাপাখানায় কাজ করে। কেউ বই সেলাই করে। কেউ বই বাঁধাই করে। এমন লোক বাংলাবাজারে শত শত বলব না, আমার ধারণা হাজার হাজার। এরা দিন রাত কাজ করে। মাথায় একটা টুপরি নিয়ে তারা ঘুরছে সারা বাংলাবাজার। পাশেই আবার বুড়িগঙ্গার তীরে শ্যামবাজার। ওটা পাইকারি বাজার। সেখানে আড়ত, বড় বড় আড়ত। ওখানেও তারা কাজ করে। বিচিত্র ধরনের কাজ। দিনের বেলায় ওদের দল বেঁধে চলতে দেখে মাঝে মাঝে মনে প্রশ্ন জাগে ওরা রাতে যায় কোথায়? কোথায় থাকে? ওরা থাকে বড় বড় মার্কেটের করিডরে, বাসাবাড়ির বারান্দায়। কেউ কেউ থাকে প্রেসে, কারখানায় ও দোকানে দোকানে। আবার কেউ কেউ আছে যারা থাকে ভাড়া করা ঝুপড়িতে। যেমন থাকে আরিফ।
আরিফ থাকে ধুপখোলার এক ঝুপড়িতে। মাসে ভাড়া দিতে হয় ৫০০ টাকা জনপ্রতি। ওখানে তারা নাগরপুরের কিছু লোক থাকে। তারা সবাই রান্না করে খায়। ঝুপড়িতে সকালে কিছু একটা খায় এবং খায় রাতে। দুপুরের খাওয়া হোটেলে বাংলাবাজারে। এ ছাড়া বাংলাবাজারে তাকে দু' বার নাসত্মা খেতে হয়। সব মিলিয়ে দিনে আরিফের যায় প্রায় ১০০ টাকা খাওয়া ও নাসত্মা বাবদ। এতে মাসে আসে তিন হাজার। মেস বাড়া ৫০০ টাকা। তার হিসাব মতে ওর মাসে খরচ আছে তিন সাড়ে তিন হাজার টাকা। তাহলে তোমার মাসিক রোজগার কত? গড়ে তার মাসিক আয় ছয় হাজারের কম নয়। এই মুহূর্তে আরিফরা তিনজন বইয়ের প্যাকেট করছে। একটা প্যাকেট করলে মালিক ১৫ টাকা দেয়। দিনে ৫০-৬০টি প্যাকেট করা যায়। মাল ম্যাটেরিয়াল মালিকের। প্যাকেট করার পর বই ওঠে ভ্যানে, রিক্সায়। যায় বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায়। তারা আরও কয়েকদিন তিনজনে মিলে দিনে ৯০০-১০০০ টাকার কাজ করবে। পরের বিষয়টি অনিশ্চিত। যখন অনিশ্চিত জীবিকা, তখন আবার মিনত্মির কাজ। এ কাজেও তারা দিনে ১৫০-২০০ টাকা পায়। আবার নর্থব্রম্নক হল রোডে ভিন্ন ধরনের কাজ আছে। নথব্রম্নক হল রোডে টায়ার টিউব, পার্টস ও অয়েলের ব্যবসা। মাল আসে আমদানি হয়ে। বেশিরভাগই মালই ভারতের। অনেক মাল আসে দু' নম্বরী পথে। একটা ট্রাক যদি আসে ঋণপত্রের দুটো আসে বিনা ঋণপত্রে। তা না হলে না কি মালের পড়তা পড়ে না। এজন্য আমদানিকারকরা কিছু মাল আনে ট্যাক্স না দিয়ে। এসব মাল লোড-আনলোড হয় অতি সনত্মর্পণে। গভীর রাতেই হয় এ কাজ। মুহূর্তের মধ্যে মাল খালাস করতে হয়। ট্রাক আসল দেখা গেল কয়েক মিনিটের মধ্যেই ট্রাক উধাও। ট্রাফিক পুলিশ দূর থেকে পাহারা দেয়। পায় ভাল টাকা। এতে মাল খালাস হয় খুব সহজে। এ ধরনের খালাসে যদি তারা নিয়োজিত হয় তাহলে মিনতিদের রোজগার অনেক বেশি। তবে বিশ্বসত্ম হতে হয়। আরিফ এ কাজ করে কী না, তা আর জিজ্ঞেস করিনি।
আরিফের বয়স হবে চলিস্নশের কিছু উপরে। তার দুই মেয়ে। ছেলে সনত্মান নেই। বড় মেয়ে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে। ছোটটি খুবই ছোট। স্ত্রী আছে, আছে বুড়ো বাবা-মা। সবাই গ্রামে। এক কথায় পরিবারের সে একাই রোজগারী। অন্যরা সবাই তার ওপর নির্ভরশীল। ও অসচ্ছল বলা যাবে না। আরিফ বলে দেশে যখন কাজ থাকে না, তখন ও ঢাকায় চলে আসে। আবার ঢাকায় কাজ না থাকলে দেশে চলে যায়। বলা যায় বছরের অর্ধেক অর্ধেক সে ঢাকা-নাগরপুর করে। দেশে তার চাষাবাদের জমি নেই। বাড়ির একটু জায়গা আছে। এতেই সে সন্তুষ্ট। ও বলে জমিতে অনেক ঝামেলা। নগদ টাকায় লাভ বেশি_ এটা আরিফের ধারণা। সে ঢাকায় ভাল রোজগার করে, তার কথা থেকে বোঝা যায়। টাকা কী কর? খাওয়া দাওয়ায় ২-৩ হাজার গেলে বাকি টাকা কী কর? ও বলল, বাড়িতে খরচ আছে। সেখানে খরচ করে। কিছু টাকা বিনিয়োগ করেছে। আরিফের ভাষায় সে বর্গাতে ৫টা গরম্ন দিয়েছে পাঁচজনকে। এতে খরচ পড়েছে ৮০ হাজার টাকা। এ গরম্ন লালন-পালনের পর এক সময় বিক্রি করা হবে। যা লাভ আসবে তা ভাগ হবে অর্ধেক অর্ধেক ভিত্তিতে। এভাবে সে কত পায় বছরে? সে নানাভাবে হিসাব দিল। তাতে আমার মনে হলো বছরে এ খাত থেকেও তার ৩০-৪০ হাজার টাকা আয় হয়। বাড়িতে তার আছে ২টা বাছুর এবং একটি গাভী। বাছুর বড় হলে একটা রেখে আরেকটা বিক্রি করে দেবে। একটি গাভী ২-৩ লিটার দুধ দেয়। কিছু সংসারে খরচ হয় বুড়ো বাবা-মা ও বাচ্চাদের জন্য। বাকি কিছু দুধ বিক্রি করতে পারে। লিটারপ্রতি ২০ টাকা । এতেও মাসিক কিছু টাকা আয় হয়। আরিফকে বললাম, তোমাদের গ্রামে উপোস করে কেউ? ও বলল, না স্যার। উপোসের লোক নেই। এখন নেই। মানুষ বিভিন্নভাবে বাঁচছে। এখন ধান-চালের দাম কম হওয়ায় মানুষ স্বসত্মিতে আছে। কিন্তু চালের দাম আবার বাড়তে শুরম্ন করেছে। এতে মানুষের আতঙ্ক বাড়ছে। আরিফ কোন ব্যাংকে টাকা রাখে? খুবই আশ্চর্যের বিষয় ও ব্যাংকে কোন টাকা রাখে না। কোন ব্যাংকে হিসাব আছে তার? না, তাও নেই। ব্যাংকের নাম শুনেছ? শুনেছি। তবে আরিফ আবার ঋণ নিয়েছে একটি এনজিও থেকে। কেন নিলে? তোমার তো আয় রোজগার এত খারাপ নয় যে তোমাকে ঋণ করতে হবে। আরিফ বলল, গরম্ন কিনে বর্গা দেয়ার সময় তার কিছু টাকা দরকার হয়ে পড়ে। তখন সে এনজিও থেকে ঋণ নেয়। ঋণ নিয়েছে মাত্র ৭০০০ টাকা। সপ্তাহে কিসত্মি হিসাবে দিতে হয় ১৭৫ টাকা। একথা বলেই ও বলল সুদ খুব বেশি। তাই চেষ্টা করছি যত তাড়াতাড়ি পারা যায় এনজিওর টাকা দিয়ে দিতে।
আলম, পলিশওয়ালা এবং আরিফ এরা সবাই খেটে খাওয়া মানুষ। দেখা যাচ্ছে এরা কেউ এক ধরনের পেশা অনুসরণ করে না, করে না একই ধরনের কাজ। যখন যেমন দরকার সময়ের সঙ্গে, চাহিদার সঙ্গে মিলিয়ে তারা তাদের কাজকে সমন্বয় করে নেয়। এরা না খেয়ে নেই। এদের গায়ে কাপড় আছে। এদের পায়ে জুতো আছে। এরা ঢাকায় কাজ করে, পরিবার এদের গ্রামে থাকে অথবা থাকে নদীর ওপারে অর্থাৎ বুড়িগঙ্গার ওপারে। এদের সঙ্গে ব্যাংকের যোগাযোগ নেই। এদের কারও কারও কিছু সঞ্চয় আছে। কিন্তু এরপরও জীবন এদের অনিশ্চিত। একবার অসুস্থ হলে, পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে এরা বিপাকে পড়ে। তখন এরা আর কুলিয়ে উঠতে পারে না। ঋণী হয়। এই ঋণ শোধ করতে করতে আরেক ঋণের সময় এসে যায়। এরা দারিদ্র্যকবলিত নয়। কিন্তু জীবন এদের অনিশ্চিত, জীবিকা এদের অনিশ্চিত। এদের কেউ কেউ শহরের রোজগার গ্রামে নিয়ে আয় বাড়ানোর চেষ্টা করে। এতে কেউ সফল হয়, কেউ সফল হয় না। এ ধরনের হাজার হাজার, লাখ লাক লোক ঢাকা শহরের বাসিন্দা। এদের বাসস্থান নেই, বাথরম্নম করার সুযোগ নেই। চিকিৎসার সুযোগ এদের নেই। নেই পানীয় জলেরও ব্যবস্থা। এরা গ্রাম থেকে শহরে আসে। আবার গ্রামে যায়। স্বসত্মি নেই তাদের। কেউ কী ভাবে তাদের কথা? যারা ভাবে তাদের বেশিরভাগই এখন এদের নিয়ে এনজিও করে ব্যবসা করে। যারা ভাবলে কাজ হতো তারা ছয় মাস দেশে থাকে, ছয় মাস থাকে বিদেশে। যাদের ভাবনা সত্যিকার তারা অসহায় এবং সংখ্যায় লঘু।
লেখক : অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার
সামান্য রাসত্মা। রিক্সায় ওঠার কোন প্রয়োজন নেই। তবু উঠলাম। কারণ ভিড়, গাড়ি-ঘোড়া, ভ্যান, রিক্সা, ঠেলাগাড়ি এবং মানুষ ঠেলে যাওয়া এক অসম্ভব ব্যাপার আমার জন্য। হাঁটতেও কষ্ট হয়। পাঁচ ছয় বছর আগে যখন বাংলাবাজার ছাড়ি তখনও এতটা ব্যসত্ম বাংলাবাজার, নর্থব্রম্নক হল রোড ছিল না। কিন্তু এখন তাই। এমতাবস্থায় দুই কদম রাসত্মা রিক্সাতেই গেলাম। রিক্সাওয়ালাকে দিলাম পাঁচ টাকা। ভাবলাম, ও খুশিই হবে। দুই মিনিটের রাসত্মা নয়। দেখা গেল, রিক্সাওয়ালা খুশি নয়। ও খুব বিরক্তি সহকারে বলল, কী দিলেন স্যার। বাধ্য হয়ে তাকে আরও দু' টাকা দিলাম। না, তাতেও তার মন পেলাম না। আজেবাজে বলতে বলতে সে চলে গেল। আমি গিয়ে বসলাম অশোক নন্দীর দোকানে। দোকানের কর্মচারী শ্যামল আদর করে চা ও শিঙ্গাড়া খাওয়াল। খেতে খেতে দেখি রাসত্মার ওপারে আলম কাজ করছে, ঘরে রঙ লাগাচ্ছে। দূর থেকেই ডাকলাম, এই আলম, তাই না। আলম শুনল। অনতিবিলম্বে সে এসে হাজির। এসেই অত্যনত্ম বিনয়ের সঙ্গে বলল, স্যার কেমন আছেন। তার সঙ্গে একটি ছেলে। ওর নাম ভুলে গেছি। এ পলিশওয়ালা, জুতা পলিশ করে। নদীর ওপারে থাকে। দুজনকেই জিজ্ঞেস করলাম, তোমরা এখানে কী কর? আলম বলল, দোকান রঙ করার কাজ নিয়েছি। আমার সঙ্গে আছে পলিশওয়ালা ছেলেটি। আমি পাল্টা প্রশ্ন করলাম, তোমাকে না দেখলাম ঐ দিন চা বিক্রি করতে। তখন আলম বলল, স্যার একটা কাজ করে এখন সংসার চলে না। চা সব সময় চলে না। রঙের কাজও সবসময় পাওয়া যায় না। যখন যেটা পাই তাই করি। নতুবা উপোস থাকতে হবে। এখন শীতকাল। রঙের কাজ আছে। আর এ কাজটি শিখে নিয়েছি। কত পাও দিনে? আলম বলল, এ কাজেরও স্যার জোয়ার-ভাটা আছে। কখনও ৩০০ টাকা রোজ, কখনও ৪০০ টাকা রোজ। মৌসুম বুঝে তা দাবি করি। যখন কাজ থাকে না তখন ফুটপাথে চা বিক্রি করি। এখানে অনেক চায়ের দোকান। তাই চায়ের কাজ জমে না। তবে ছুটির দিনে কিছু জমে। তখন দিনে ১০০-২০০ টাকা থাকে। মাঝে মাঝে ধার করতে হয়। তবে কাজ পেলে দিয়ে দিই। থাকি পোসত্মগোলার দিকে। কোনমতে আছি। তাই, কারণ ওকে দেখছি আজ ১৫-২০ বছর যাবত। কোন পরিবর্তন নেই। খেটেখাওয়া মানুষ, দেখলেই বোঝা যায়। পলিশওয়ালা ছেলেটিকেও আমি চিনি বহুদিন থেকে। সে যতদূর জানি বিউটি বোর্ডিংয়েই বিনা ভাড়ায় বারান্দায় বা কোন কর্মচারীর সঙ্গে থাকে। ওকে জিজ্ঞেস করাতে সেও একই কথা বলল। এক কাজে এখন চলে না। পলিশের কাজ সব সময় পোষায় না। কাজেই আলম ভাইয়ের সঙ্গে থেকে রঙমিস্ত্রির কাজটা শিখে ফেলেছি। প্রথম কিছুদিন যোগালি হিসাবে কাজ করেছি। এখন নিজেই পারি। ও বলল আরেকটা কথা। পলিশের কাজে স্যার, ইজ্জত নেই। সবাই নীচু চোখে দেখে। মুচি বলে ঘৃণা করে। কিন্তু রঙমিস্ত্রির কাজ করলে ওভাবে নীচু করে দেখে না। তখন স্যার ভাল লাগে। আমরা দুঃখী মানুষ স্যার। কাজ করে পরিশ্রম করে খাব। সেখানে যদি অবজ্ঞার চোখে দেখা হয় তাহলে বড় দুঃখ পাই। এ কারণেই প্রতিজ্ঞা ছিল পলিশের কাজ যেভাবেই পারি ছাড়ব। আলম ভাই আমার উপকার করেছে। আমাকে কাজ শিখিয়েছে। এতে কী তোমার আর্থিক লাভ হয়েছে? নিশ্চয়ই স্যার। নতুবা অনেকদিন বিনা কাজে বসে থাকতে হতো। এখন এতটা না। অনেকটা ভাল। রঙমিস্ত্রির কাজ করলে দিনে ৩০০-৪০০ টাকা পাওয়া যায়। পলিশওয়ালার সঙ্গে কথা বলতে বলতেই একজন মিনত্মি এসে নবযুগের সামনে হাজির। ওকে কিছুৰণ আগে বইয়ের বড় একটা বাজারের সামনে দেখে এসেছি। মাথার বোঝা নামিয়ে সে আমার দিকে এলো। তোমার নাম কী?
আমার নাম আরিফ। কী কর তুমি? একই উত্তর দেখলাম তারও। ও বলল, যখন যা পাই তাই করি। মিনত্মিগিরি করি। বইয়ের বোঝা বহন করি। এক দোকান থেকে আরেক দোকানে নিয়ে যাই। প্রেস থেকে দোকানে নিই। ট্রাক থেকে মাল নামাই। কার্টন ভাঙ্গি-খুলি। আবার বইয়ের প্যাকিং করে দিই। আরিফ বলল, আমরা গরিব মানুষ, স্যার। আলস্নাহ যে কাজ দেয় সেই কাজই করি। এসব বলতে বলতে সে মুখ থেকে পানের পিক ফেলছে। জিজ্ঞেস করলাম তোমার বাড়ি কোথায়? আরিফের বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুরে। নাগরপুর থেকে তিন আইল দূরে ঘূর্ণিপাড়া বলে একটা গ্রাম আছে। ঢাকা থেকে ৪ ঘণ্টায় ওখানে যাওয়া যায়। বাসভাড়া ১২০ টাকা। ঐ গ্রামের অনেক লোক বাংলাবাজারে মিনত্মির কাজ করে। যখন যা পায় সেই কাজই করে। কেউ ছাপাখানায় কাজ করে। কেউ বই সেলাই করে। কেউ বই বাঁধাই করে। এমন লোক বাংলাবাজারে শত শত বলব না, আমার ধারণা হাজার হাজার। এরা দিন রাত কাজ করে। মাথায় একটা টুপরি নিয়ে তারা ঘুরছে সারা বাংলাবাজার। পাশেই আবার বুড়িগঙ্গার তীরে শ্যামবাজার। ওটা পাইকারি বাজার। সেখানে আড়ত, বড় বড় আড়ত। ওখানেও তারা কাজ করে। বিচিত্র ধরনের কাজ। দিনের বেলায় ওদের দল বেঁধে চলতে দেখে মাঝে মাঝে মনে প্রশ্ন জাগে ওরা রাতে যায় কোথায়? কোথায় থাকে? ওরা থাকে বড় বড় মার্কেটের করিডরে, বাসাবাড়ির বারান্দায়। কেউ কেউ থাকে প্রেসে, কারখানায় ও দোকানে দোকানে। আবার কেউ কেউ আছে যারা থাকে ভাড়া করা ঝুপড়িতে। যেমন থাকে আরিফ।
আরিফ থাকে ধুপখোলার এক ঝুপড়িতে। মাসে ভাড়া দিতে হয় ৫০০ টাকা জনপ্রতি। ওখানে তারা নাগরপুরের কিছু লোক থাকে। তারা সবাই রান্না করে খায়। ঝুপড়িতে সকালে কিছু একটা খায় এবং খায় রাতে। দুপুরের খাওয়া হোটেলে বাংলাবাজারে। এ ছাড়া বাংলাবাজারে তাকে দু' বার নাসত্মা খেতে হয়। সব মিলিয়ে দিনে আরিফের যায় প্রায় ১০০ টাকা খাওয়া ও নাসত্মা বাবদ। এতে মাসে আসে তিন হাজার। মেস বাড়া ৫০০ টাকা। তার হিসাব মতে ওর মাসে খরচ আছে তিন সাড়ে তিন হাজার টাকা। তাহলে তোমার মাসিক রোজগার কত? গড়ে তার মাসিক আয় ছয় হাজারের কম নয়। এই মুহূর্তে আরিফরা তিনজন বইয়ের প্যাকেট করছে। একটা প্যাকেট করলে মালিক ১৫ টাকা দেয়। দিনে ৫০-৬০টি প্যাকেট করা যায়। মাল ম্যাটেরিয়াল মালিকের। প্যাকেট করার পর বই ওঠে ভ্যানে, রিক্সায়। যায় বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায়। তারা আরও কয়েকদিন তিনজনে মিলে দিনে ৯০০-১০০০ টাকার কাজ করবে। পরের বিষয়টি অনিশ্চিত। যখন অনিশ্চিত জীবিকা, তখন আবার মিনত্মির কাজ। এ কাজেও তারা দিনে ১৫০-২০০ টাকা পায়। আবার নর্থব্রম্নক হল রোডে ভিন্ন ধরনের কাজ আছে। নথব্রম্নক হল রোডে টায়ার টিউব, পার্টস ও অয়েলের ব্যবসা। মাল আসে আমদানি হয়ে। বেশিরভাগই মালই ভারতের। অনেক মাল আসে দু' নম্বরী পথে। একটা ট্রাক যদি আসে ঋণপত্রের দুটো আসে বিনা ঋণপত্রে। তা না হলে না কি মালের পড়তা পড়ে না। এজন্য আমদানিকারকরা কিছু মাল আনে ট্যাক্স না দিয়ে। এসব মাল লোড-আনলোড হয় অতি সনত্মর্পণে। গভীর রাতেই হয় এ কাজ। মুহূর্তের মধ্যে মাল খালাস করতে হয়। ট্রাক আসল দেখা গেল কয়েক মিনিটের মধ্যেই ট্রাক উধাও। ট্রাফিক পুলিশ দূর থেকে পাহারা দেয়। পায় ভাল টাকা। এতে মাল খালাস হয় খুব সহজে। এ ধরনের খালাসে যদি তারা নিয়োজিত হয় তাহলে মিনতিদের রোজগার অনেক বেশি। তবে বিশ্বসত্ম হতে হয়। আরিফ এ কাজ করে কী না, তা আর জিজ্ঞেস করিনি।
আরিফের বয়স হবে চলিস্নশের কিছু উপরে। তার দুই মেয়ে। ছেলে সনত্মান নেই। বড় মেয়ে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে। ছোটটি খুবই ছোট। স্ত্রী আছে, আছে বুড়ো বাবা-মা। সবাই গ্রামে। এক কথায় পরিবারের সে একাই রোজগারী। অন্যরা সবাই তার ওপর নির্ভরশীল। ও অসচ্ছল বলা যাবে না। আরিফ বলে দেশে যখন কাজ থাকে না, তখন ও ঢাকায় চলে আসে। আবার ঢাকায় কাজ না থাকলে দেশে চলে যায়। বলা যায় বছরের অর্ধেক অর্ধেক সে ঢাকা-নাগরপুর করে। দেশে তার চাষাবাদের জমি নেই। বাড়ির একটু জায়গা আছে। এতেই সে সন্তুষ্ট। ও বলে জমিতে অনেক ঝামেলা। নগদ টাকায় লাভ বেশি_ এটা আরিফের ধারণা। সে ঢাকায় ভাল রোজগার করে, তার কথা থেকে বোঝা যায়। টাকা কী কর? খাওয়া দাওয়ায় ২-৩ হাজার গেলে বাকি টাকা কী কর? ও বলল, বাড়িতে খরচ আছে। সেখানে খরচ করে। কিছু টাকা বিনিয়োগ করেছে। আরিফের ভাষায় সে বর্গাতে ৫টা গরম্ন দিয়েছে পাঁচজনকে। এতে খরচ পড়েছে ৮০ হাজার টাকা। এ গরম্ন লালন-পালনের পর এক সময় বিক্রি করা হবে। যা লাভ আসবে তা ভাগ হবে অর্ধেক অর্ধেক ভিত্তিতে। এভাবে সে কত পায় বছরে? সে নানাভাবে হিসাব দিল। তাতে আমার মনে হলো বছরে এ খাত থেকেও তার ৩০-৪০ হাজার টাকা আয় হয়। বাড়িতে তার আছে ২টা বাছুর এবং একটি গাভী। বাছুর বড় হলে একটা রেখে আরেকটা বিক্রি করে দেবে। একটি গাভী ২-৩ লিটার দুধ দেয়। কিছু সংসারে খরচ হয় বুড়ো বাবা-মা ও বাচ্চাদের জন্য। বাকি কিছু দুধ বিক্রি করতে পারে। লিটারপ্রতি ২০ টাকা । এতেও মাসিক কিছু টাকা আয় হয়। আরিফকে বললাম, তোমাদের গ্রামে উপোস করে কেউ? ও বলল, না স্যার। উপোসের লোক নেই। এখন নেই। মানুষ বিভিন্নভাবে বাঁচছে। এখন ধান-চালের দাম কম হওয়ায় মানুষ স্বসত্মিতে আছে। কিন্তু চালের দাম আবার বাড়তে শুরম্ন করেছে। এতে মানুষের আতঙ্ক বাড়ছে। আরিফ কোন ব্যাংকে টাকা রাখে? খুবই আশ্চর্যের বিষয় ও ব্যাংকে কোন টাকা রাখে না। কোন ব্যাংকে হিসাব আছে তার? না, তাও নেই। ব্যাংকের নাম শুনেছ? শুনেছি। তবে আরিফ আবার ঋণ নিয়েছে একটি এনজিও থেকে। কেন নিলে? তোমার তো আয় রোজগার এত খারাপ নয় যে তোমাকে ঋণ করতে হবে। আরিফ বলল, গরম্ন কিনে বর্গা দেয়ার সময় তার কিছু টাকা দরকার হয়ে পড়ে। তখন সে এনজিও থেকে ঋণ নেয়। ঋণ নিয়েছে মাত্র ৭০০০ টাকা। সপ্তাহে কিসত্মি হিসাবে দিতে হয় ১৭৫ টাকা। একথা বলেই ও বলল সুদ খুব বেশি। তাই চেষ্টা করছি যত তাড়াতাড়ি পারা যায় এনজিওর টাকা দিয়ে দিতে।
আলম, পলিশওয়ালা এবং আরিফ এরা সবাই খেটে খাওয়া মানুষ। দেখা যাচ্ছে এরা কেউ এক ধরনের পেশা অনুসরণ করে না, করে না একই ধরনের কাজ। যখন যেমন দরকার সময়ের সঙ্গে, চাহিদার সঙ্গে মিলিয়ে তারা তাদের কাজকে সমন্বয় করে নেয়। এরা না খেয়ে নেই। এদের গায়ে কাপড় আছে। এদের পায়ে জুতো আছে। এরা ঢাকায় কাজ করে, পরিবার এদের গ্রামে থাকে অথবা থাকে নদীর ওপারে অর্থাৎ বুড়িগঙ্গার ওপারে। এদের সঙ্গে ব্যাংকের যোগাযোগ নেই। এদের কারও কারও কিছু সঞ্চয় আছে। কিন্তু এরপরও জীবন এদের অনিশ্চিত। একবার অসুস্থ হলে, পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে এরা বিপাকে পড়ে। তখন এরা আর কুলিয়ে উঠতে পারে না। ঋণী হয়। এই ঋণ শোধ করতে করতে আরেক ঋণের সময় এসে যায়। এরা দারিদ্র্যকবলিত নয়। কিন্তু জীবন এদের অনিশ্চিত, জীবিকা এদের অনিশ্চিত। এদের কেউ কেউ শহরের রোজগার গ্রামে নিয়ে আয় বাড়ানোর চেষ্টা করে। এতে কেউ সফল হয়, কেউ সফল হয় না। এ ধরনের হাজার হাজার, লাখ লাক লোক ঢাকা শহরের বাসিন্দা। এদের বাসস্থান নেই, বাথরম্নম করার সুযোগ নেই। চিকিৎসার সুযোগ এদের নেই। নেই পানীয় জলেরও ব্যবস্থা। এরা গ্রাম থেকে শহরে আসে। আবার গ্রামে যায়। স্বসত্মি নেই তাদের। কেউ কী ভাবে তাদের কথা? যারা ভাবে তাদের বেশিরভাগই এখন এদের নিয়ে এনজিও করে ব্যবসা করে। যারা ভাবলে কাজ হতো তারা ছয় মাস দেশে থাকে, ছয় মাস থাকে বিদেশে। যাদের ভাবনা সত্যিকার তারা অসহায় এবং সংখ্যায় লঘু।
লেখক : অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার
No comments