আমরা কল্যাণমুখী ও দয়াবান হতে চাই by মে. জে. (অব:) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম
সাধারণত সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার আমার লেখা একটি কলাম বহুল প্রচারিত নয়া
দিগন্ত পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়। প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত এবং কর্মটি নয়া
দিগন্ত পত্রিকা কর্তৃপরে সৌজন্যে।
সম্পূরক
সৌজন্য হচ্ছে সম্মানিত পাঠক সমাজের যারা আগ্রহের সাথে কলামগুলো পড়েন।
অতএব, কলাম লেখকের কাঁধেও একটি দায়িত্ব বর্তায় সময়মতো লেখা এবং
সময়োপযোগী বিষয়ে লেখা। গত প্রায় চার সপ্তাহ বিবিধ কারণে আমার পে
কলামগুলো সময়মতো লেখা হয়নি, যার জন্য সময়মতো প্রকাশিত হয়নি। সে জন্য
পাঠক সমাজের কাছে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। বিষয়বস্তু প্রসঙ্গে এটুকু বলা
ভালো যে, সচেষ্ট থাকি সময়োযোগী বা প্রাসঙ্গিক বিষয়ে লিখতে। এই কলামটি
লিখছি বৃহস্পতিবার ৩১ জানুয়ারি ২০১৩ তথা ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৩৪ হিজরি।
রবিউল আউয়াল মাসের ১৮ দিন চলে গেলেও, এই প্রসঙ্গে আমি কোনো কলাম দ্বীনি
মূল্যবোধের চেতনাকে জাগ্রত রাখে এমন পত্রিকা নয়া দিগন্তে কিছুই লিখিনি।
বেশির ভাগ পত্রিকায় ১২ রবিউল আউয়াল তারিখে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু কথা লেখা
হয়, কম সংখ্যক পত্রিকায় ১২ রবিউল আউয়াল তারিখের দু-চার দিন আগেও লেখা
হয়। আমার এই কলামটি পাঠকের সামনে উপস্থাপিত হবে, আশা করি, রবিউল আউয়াল
মাসের শেষ সপ্তাহের শুরুতেই।
পবিত্র কুরআনে ৬ হাজার ২৩৬টি আয়াত আছে। পবিত্র কুরআনের ২১ নম্বর সূরার নাম হচ্ছে সূরা আম্বিয়া। আম্বিয়া শব্দের বাংলা মানে হচ্ছে নবীগণ। আরবিতে নবী শব্দের বাংলা প্রতিশব্দও হচ্ছে নবী। আরবিতে নবীর বহুবচন হচ্ছে আম্বিয়া। এর মানে এই নয় যে, এই সূরাতে শুধু নবীদের সম্বন্ধে আলোচনা হয়েছে, অন্য কোনো বিষয় আলোচনা হয়নি। অথবা এর মানে এ-ও নয় যে, পবিত্র কুরআনের অন্য কোনো সূরায় সম্মানিত নবীদের সম্বন্ধে কোনো প্রকারের আলোচনা হয়নি।
এখন রবিউল আউয়াল মাসের সাথে তাৎপর্যপূর্ণ একটি আয়াতের আলোচনায় আসছি। আয়াতটি পবিত্র কুরআনের সূরা আম্বিয়ার ১০৭ নম্বর আয়াত। ১০৭ নম্বর আয়াতটির আরবি উচ্চারণকে আমরা বাংলায় লিখছি : ‘ওয়ামা-আরসাল্না-কা ইল্লা-রাহ্মাতাল্লিল ‘আ-লামী-ন’। এই বাক্য তথা আয়াতটির বাংলা মানে এ রকম দাঁড়ায় : ‘আমি তো তোমাকে বিশ্বজগতের প্রতি কেবল রহমতরূপেই প্রেরণ করিয়াছি’ (ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুবাদ থেকে)।
পবিত্র কুরআনে ব্যবহৃত রহমত শব্দটি বাংলা ভাষায়ও এত ব্যাপকভাবে প্রচলিত ও ব্যবহৃত যে, এই শব্দটির হুবহু বাংলা প্রতিশব্দ পাওয়া খুব মুশকিল। পবিত্র কুরআনের ইংরেজি অনুবাদগুলোতে রহমত শব্দটির অনুবাদ করা হয়েছে ‘মার্সি’। এতদসত্ত্বেও যদি রহমত শব্দটির নিকটতম বাংলা শব্দ উপস্থাপন করতেই হয় তাহলে, নিম্নলিখিত পাঁচটি শব্দের প্রত্যেকটি একলা একলা অথবা একাধিক শব্দ যৌথভাবে রহমত শব্দের অনুবাদ না হলেও নিকটতম অর্থবোধক শব্দ বা অভিব্যক্তি প্রকাশকারী শব্দ হিসেবে নেয়া যেতে পারে। শব্দগুলো নিম্নরূপ: দয়া, মায়া, মঙ্গল, কল্যাণ, সৌজন্য। এই অনুচ্ছেদের শুরুতে উদ্ধৃত করা ১০৭ নম্বর আয়াতে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ আছে যথা : ‘আ-লামি-ন’। ‘আ-লামি-ন’ শব্দটি পবিত্র কুরআনে একাধিকবার এসেছে। প্রথমবার এসেছে, পবিত্র কুরআনের প্রথম সূরা, সূরা আল ফাতিহার প্রথম আয়াতে। সেই প্রথম আয়াতটির আরবি উচ্চারণ বাংলায় উদ্ধৃত করছি। ‘আল্হামদু লিল্লা-হি রাব্বিল আ-লামি-ন’। অর্থ : ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, মালিক সমস্ত জগদ্বাসীর’। এখন আমরা প্রথম সূরার প্রথম আয়াত এবং ২১ নম্বর সূরার ১০৭ নম্বর আয়াতের মধ্যে একটু সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করছি। যেই মহান আল্লাহ, ‘আ-লামী-ন’ বা সমস্ত সৃষ্টি জগতের প্রতিপালক (অর্থাৎ আল্লাহ কর্তৃক যাহা কিছু সৃষ্টি করা হয়েছে তাহারই প্রতিপালক), সেই মহান আল্লাহই, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা:কে মনোনীত করছেন (বা করেছেন) ওই একই সৃষ্টিজগতের জন্য রহমতস্বরূপ। পবিত্র কুরআনের প্রচুরসংখ্যক ব্যাখ্যাকারী বিশেষ করে আহলে সুন্নাত-আল-জামায়াতের সাথে সংশ্লিষ্ট জ্ঞানী ব্যক্তিরা বলছেন যে, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা: হচ্ছেন রহমতের ধারক, বাহক ও প্রতিভূ। আমি ব্যক্তিজীবনে কোনো আলেম বা মাদরাসা থেকে শিতি অথবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি শিায় শিতি পণ্ডিত নই। আমার পরিচয় ইংরেজি ভাষায় : ‘প্র্যাকটিসিং মুসলিম’ তথা বাংলায় ধর্মীয় বিধানাবলি মেনে চলতে অভ্যাসরত একজন মুসলমান। মেনে চলার কাজটি করতে গিয়ে কতটুকু সফল বা বিফল সেই বিচারের মালিক মহান আল্লাহ তায়ালা। কিন্তু এই কারণে আমি বা আমার মতো ব্যক্তিদের প থেকে ধর্মীয় বিষয়ে মনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করায় কোনো বাধা নেই বলেই এই কলাম লেখা। ভুলভ্রান্তি যদি থাকে সেটিকে মাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার দায়িত্ব থাকবে জ্ঞানী পাঠকের ওপর।
আমি রহমত সম্পর্কে আলোচনাটি করছি আরো একটি বিষয় উপস্থাপন করার জন্য। বিষয়টি হচ্ছে, মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় ব্যক্তি মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা:কে অনেক দায়িত্ব দিয়েছেন এবং অনেক পরিচয়ে ভূষিত করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম পরিচয় হচ্ছে রাহ্মাতাল্লিল আ-লামি-ন এবং দায়িত্ব হচ্ছে, সৃষ্টি জগতের জন্য রহমত হওয়া। আমরা সবাই আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা:কে আমাদের নেতা মানি। আমরা তাঁর অনুসারী। তাহলে বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, আমাদের নেতা যদি রহমতের ধারক, বাহক ও প্রতিভূ হন তাহলে আমরা কি তাঁর উল্টোটা হবো, নাকি আমরাও তাঁকে অনুসরণ করে নিজেদের মধ্যে ওই বৈশিষ্ট্যের কিয়দংশ আনতে চেষ্টা করব? যদি আমরা সিদ্ধান্ত নিই যে, আমরা আমাদের নেতাকে অনুসরণ করব, তাহলে আমাদের নেতার অনুকরণে ও অনুসরণে চিন্তা ও চেতনায় এবং কর্মে সৃষ্টিজগতের প্রতি দয়াবান, মায়াময়, সৌজন্যময়ী, মঙ্গল কামনাকারী, কল্যাণমুখী হতে হবে। আমাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগত সব চেষ্টার ফোকাস হবে সৃষ্টির কল্যাণ। সৃষ্টি শব্দটির তাৎপর্য ব্যাপক, কিন্তু আপাতত পরিবেশ, বন্য ও গৃহপালিত প্রাণী এবং মানব জাতিকে এর মধ্যে শামিল করলাম। অর্থাৎ আমি ব্যক্ত করতে চাচ্ছি যে, আমাদের চিন্তা-চেতনা, সব কর্মের উদ্দেশ্য, সব জ্ঞানের প্রয়োগের উদ্দেশ্য হতে হবে সৃষ্টিজগতের কল্যাণ বা উপকার বা মঙ্গল। আমাদের প্রিয় নেতা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা: এই শিাটি তত্ত্বীয়ভাবে আমাদের জানিয়েছেন এবং বাস্তবে প্রয়োগ করে দৃষ্টান্ত স্থাপনে সচেষ্ট ছিলেন। সে জন্যই তিনি ৬২৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে নিয়ে ৬৩৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ১০ বছর সময়কালে মদিনা নামক জনপদ বা নগরীতে প্রথমে একটি নগররাষ্ট্র কায়েম করেন এবং পরে ওই নগররাষ্ট্রটি একটি বড় রাষ্ট্রে পরিণত হয়, যার রাজধানী ছিল মদিনা। তখনকার আমলে লোকসংখ্যা কম ছিল, মানচিত্র আঁকার সুযোগ কম ছিল, সীমান্তরেখা চিহ্নিত করার জন্য পিলার বসানোর রেওয়াজ ছিল না। ওই আমলের মদিনা নামক নগররাষ্ট্র বা মদিনাকেন্দ্রিক বৃহৎ রাষ্ট্রটি আজকের দিনের আধুনিক একটি রাষ্ট্রের সাথে হুবহু হয়তো মিল খাবে না কিন্তু মূলনীতি বা ‘ফান্ডামেন্টাল্স’-এ মিল খাবে। ওই আমলে রাষ্ট্রের একজন প্রধান ছিলেন, রাষ্ট্রপ্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঘনিষ্ঠজনদের সাথে পরামর্শ করতেন, নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজনে সেনাবাহিনী সংগঠিত করা হতো, রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বসবাসকারী জনগণের মধ্যে সুসম্পর্ক রা করা ও কর্মকাণ্ডের ভারসাম্য রা করার নিমিত্তে সম্মত বন্দোবস্ত বা চুক্তি রচনা করা হয়েছিল, খাদ্য বিভাগ ছিল, খাজনা আদায়কারী বিভাগ ছিল, বিচার করার রেওয়াজ ছিল ইত্যাদি। ওই সব বা যাবতীয় কর্মকাণ্ডের আধুনিক রূপ হচ্ছে (বাংলাদেশকে উদাহরণস্বরূপ নিয়ে) রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, পরামর্শদাতা ক্যাবিনেট ও পার্লামেন্ট, রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের নিরাপত্তা প্রদানকারী সামরিক বাহিনী, রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক দলিল যার নাম সংবিধান এবং সংবিধানের অধীনে আইনগুলো, জনগণের মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য বিভাগ, শিা মন্ত্রণালয় ও শিা অধিদফতর, গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও গৃহায়ন অধিদফতর, সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট ও অধস্তন আদালতগুলো ইত্যাদি ইত্যাদি। অতএব কোনো অবস্থাতেই আমাদের পে বলা উচিত নয় যে, আধুনিক রাষ্ট্রে কল্যাণমুখী চিন্তা ও কল্যাণমুখী চেতনার কোনো জায়গা নেই। বরং এটা বলা উচিত যে, রাষ্ট্রের মৌলিক ল্য এবং উদ্দেশ্যই হচ্ছে তার নাগরিকদের কল্যাণ সাধন করা।
ওপরের আলোচনাটি আমি উৎসর্গ করছি ঈদে মিলাদুন্নবী দিবসটির প্রতি। ১২ রবিউল আউয়াল তথা ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশে ঈদে মিলাদুন্নবী অনুষ্ঠান পালিত হয়। ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে, তৎকালীন আরব দেশের মক্কা শহরে আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা: জন্মগ্রহণ করেছিলেন। জীবনের প্রথম ৪০ বছর তিনি সংসারধর্ম পালন করেছেন। জীবনের পরবর্তী বছরগুলোতেও তিনি সংসারধর্ম পালন করেছেন। কিন্তু ৪০ বছর বয়সে তাঁর জীবনে তো বটেই, বিশ্বের ইতিহাসেও একটি যুগান্তকারী ঘটনা ঘটে। তাঁর ৪০ বছর বয়সে, মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁকে তাঁর (আল্লাহর) প্রিয়নবী এবং রাসূল হিসেবে মনোনীত করেন। নবুয়তপ্রাপ্তির পরবর্তী চার বছর মহানবী সা: গোপনে মক্কা শহরে ইসলাম প্রচার করেন। চার বছরের মাথায় খাত্তাবের ছেলে ওমর তথা হজরত ওমর রা: ইসলাম গ্রহণ করেন। ওমর রা:- এর ইসলাম গ্রহণ থেকে শুরু করে পরবর্তী ৯ বছর মক্কায় ও মক্কাকেন্দ্রিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচারিত হয়। মহানবী সা: এবং ওই সময়ের সাহাবিরা বর্ণনার অতীত কষ্ট, নির্যাতন, নিপীড়ন, বাধা-বিপত্তি সহ্য করে এই কর্মকাণ্ড চালু রেখেছিলেন। চার বছর যোগ ৯ বছর সমান ১৩ বছরের মাথায়, মহান আল্লাহ তায়ালার দয়ায়, মহানবী সা: সফলভাবে মদিনায় হিজরত করেন। মদিনাবাসী যেন মহানবী সা:কে সুন্দরভাবে গ্রহণ করেন, সে জন্য তিন বছর আগে থেকেই ত্রে প্রস্তুত করা হচ্ছিল। মদিনায় আগমনের তারিখ থেকে পরবর্তী ১০ বছর যুগপৎ কষ্ট, ত্যাগ স্বীকার, যুদ্ধ ও সংগ্রাম এবং সাফল্যের ইতিহাস। এই দুনিয়াতে মহানবী সা:-এর ওপর অর্পিত দুনিয়াবি দায়িত্বের ওই সময়ের জন্য প্রযোজ্য অংশ পালন শেষে তিনি মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে ফেরত যান। কিন্তু তাঁর প থেকে তথা তাঁর দ্বারা আজ পর্যন্ত তাঁর একটি পদ, পদবি ও দায়িত্ব পালন অব্যাহত আছে। তিনি সর্বশেষ নবী ও রাসূল, তিনি সব নবী ও রাসূলগণের সর্দার বা নেতা, তিনি রাহমাতাল্লিল আ-লামি-ন এবং যত দিন সৃষ্টিজগৎ বহাল থাকবে তত দিন এই রাহমাতাল্লিল আ-লামি-ন হিসেবে বহাল থাকবেন। আখেরাতে তথা শেষ বিচারের দিনেও তিনি রাহমাতাল্লিল আ-লামি-ন হিসেবে ভূষিত থাকবেন। সুতরাং এই পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসে, ঈদে মিলাদুন্নবী যেমন পালিত হয়েছে বা আগামী বছরগুলোতেও হবে, তেমনি একটু ব্যতিক্রমী চেষ্টার সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। সিদ্ধান্ত নিয়ে চেষ্টা করতে হবে, আমরা যেন মহানবী সা:-এর জীবন ও কর্মকে জানতে পারি। সিদ্ধান্ত হবে, তাঁকে অনুসরণ করব, সবকিছুতে না পারলেও অন্তত নিজেদের চিন্তা-চেতনা ও কর্মে দয়া, মায়া ও কল্যাণমুখিতা লালন করব। আমার বিশ্বাস এই যে, নেতৃস্থানীয় বাংলাদেশীরা যদি এই বৈশিষ্ট্য আয়ত্তে আনতে পারেন, তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতি, বাংলাদেশের সমাজনীতি, বাংলাদেশের ব্যবসায়-বাণিজ্যে একটি ইতিবাচক গুণগত পরিবর্তনের সূচনা হবে।
চিন্তা-চেতনা ও কর্মে দয়া, মায়া ও কল্যাণমুখিতা লালন করার জন্য আহ্বান শুধু ব্যক্তিদের প্রতি নয়, প্রতিষ্ঠানের প্রতিও, সমষ্টির প্রতিও। বাংলাদেশের মিডিয়াজগতের উজ্জ্বল নত্র নয়া দিগন্ত পত্রিকা এরূপ লালনের েেত্র দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী। এরূপ আরো আরো পত্রিকা আছে, যারা সংবাদ পরিবেশন, মন্তব্য পরিবেশন, মতামত পরিবেশন ইত্যাদিতে চেষ্টা করেন দয়া, মায়া ও কল্যাণমুখিতা তুলে ধরতে। কিন্তু এ ধরনের পত্রিকাগুলো (যথা নয়া দিগন্ত, আমার দেশ) শক্তিশালী পগুলোর বা মতাশীল পগুলোর প্রতিহিংসার শিকার। রবিউল আউয়াল মাসে, মহানবী সা:-এর পবিত্র জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আঙ্গিক সম্বন্ধে বিনীতভাবে আলোচনা করতে গিয়ে, উপসংহারে আহ্বান হচ্ছে, আমাদের সমাজে আত্মসমালোচনার রেওয়াজ মূল্যায়িত হোক এবং প্রতিহিংসার রেওয়াজ ান্ত হোক।
লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
www.kallyan-ibrahim.com
পবিত্র কুরআনে ৬ হাজার ২৩৬টি আয়াত আছে। পবিত্র কুরআনের ২১ নম্বর সূরার নাম হচ্ছে সূরা আম্বিয়া। আম্বিয়া শব্দের বাংলা মানে হচ্ছে নবীগণ। আরবিতে নবী শব্দের বাংলা প্রতিশব্দও হচ্ছে নবী। আরবিতে নবীর বহুবচন হচ্ছে আম্বিয়া। এর মানে এই নয় যে, এই সূরাতে শুধু নবীদের সম্বন্ধে আলোচনা হয়েছে, অন্য কোনো বিষয় আলোচনা হয়নি। অথবা এর মানে এ-ও নয় যে, পবিত্র কুরআনের অন্য কোনো সূরায় সম্মানিত নবীদের সম্বন্ধে কোনো প্রকারের আলোচনা হয়নি।
এখন রবিউল আউয়াল মাসের সাথে তাৎপর্যপূর্ণ একটি আয়াতের আলোচনায় আসছি। আয়াতটি পবিত্র কুরআনের সূরা আম্বিয়ার ১০৭ নম্বর আয়াত। ১০৭ নম্বর আয়াতটির আরবি উচ্চারণকে আমরা বাংলায় লিখছি : ‘ওয়ামা-আরসাল্না-কা ইল্লা-রাহ্মাতাল্লিল ‘আ-লামী-ন’। এই বাক্য তথা আয়াতটির বাংলা মানে এ রকম দাঁড়ায় : ‘আমি তো তোমাকে বিশ্বজগতের প্রতি কেবল রহমতরূপেই প্রেরণ করিয়াছি’ (ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুবাদ থেকে)।
পবিত্র কুরআনে ব্যবহৃত রহমত শব্দটি বাংলা ভাষায়ও এত ব্যাপকভাবে প্রচলিত ও ব্যবহৃত যে, এই শব্দটির হুবহু বাংলা প্রতিশব্দ পাওয়া খুব মুশকিল। পবিত্র কুরআনের ইংরেজি অনুবাদগুলোতে রহমত শব্দটির অনুবাদ করা হয়েছে ‘মার্সি’। এতদসত্ত্বেও যদি রহমত শব্দটির নিকটতম বাংলা শব্দ উপস্থাপন করতেই হয় তাহলে, নিম্নলিখিত পাঁচটি শব্দের প্রত্যেকটি একলা একলা অথবা একাধিক শব্দ যৌথভাবে রহমত শব্দের অনুবাদ না হলেও নিকটতম অর্থবোধক শব্দ বা অভিব্যক্তি প্রকাশকারী শব্দ হিসেবে নেয়া যেতে পারে। শব্দগুলো নিম্নরূপ: দয়া, মায়া, মঙ্গল, কল্যাণ, সৌজন্য। এই অনুচ্ছেদের শুরুতে উদ্ধৃত করা ১০৭ নম্বর আয়াতে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ আছে যথা : ‘আ-লামি-ন’। ‘আ-লামি-ন’ শব্দটি পবিত্র কুরআনে একাধিকবার এসেছে। প্রথমবার এসেছে, পবিত্র কুরআনের প্রথম সূরা, সূরা আল ফাতিহার প্রথম আয়াতে। সেই প্রথম আয়াতটির আরবি উচ্চারণ বাংলায় উদ্ধৃত করছি। ‘আল্হামদু লিল্লা-হি রাব্বিল আ-লামি-ন’। অর্থ : ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, মালিক সমস্ত জগদ্বাসীর’। এখন আমরা প্রথম সূরার প্রথম আয়াত এবং ২১ নম্বর সূরার ১০৭ নম্বর আয়াতের মধ্যে একটু সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করছি। যেই মহান আল্লাহ, ‘আ-লামী-ন’ বা সমস্ত সৃষ্টি জগতের প্রতিপালক (অর্থাৎ আল্লাহ কর্তৃক যাহা কিছু সৃষ্টি করা হয়েছে তাহারই প্রতিপালক), সেই মহান আল্লাহই, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা:কে মনোনীত করছেন (বা করেছেন) ওই একই সৃষ্টিজগতের জন্য রহমতস্বরূপ। পবিত্র কুরআনের প্রচুরসংখ্যক ব্যাখ্যাকারী বিশেষ করে আহলে সুন্নাত-আল-জামায়াতের সাথে সংশ্লিষ্ট জ্ঞানী ব্যক্তিরা বলছেন যে, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা: হচ্ছেন রহমতের ধারক, বাহক ও প্রতিভূ। আমি ব্যক্তিজীবনে কোনো আলেম বা মাদরাসা থেকে শিতি অথবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি শিায় শিতি পণ্ডিত নই। আমার পরিচয় ইংরেজি ভাষায় : ‘প্র্যাকটিসিং মুসলিম’ তথা বাংলায় ধর্মীয় বিধানাবলি মেনে চলতে অভ্যাসরত একজন মুসলমান। মেনে চলার কাজটি করতে গিয়ে কতটুকু সফল বা বিফল সেই বিচারের মালিক মহান আল্লাহ তায়ালা। কিন্তু এই কারণে আমি বা আমার মতো ব্যক্তিদের প থেকে ধর্মীয় বিষয়ে মনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করায় কোনো বাধা নেই বলেই এই কলাম লেখা। ভুলভ্রান্তি যদি থাকে সেটিকে মাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার দায়িত্ব থাকবে জ্ঞানী পাঠকের ওপর।
আমি রহমত সম্পর্কে আলোচনাটি করছি আরো একটি বিষয় উপস্থাপন করার জন্য। বিষয়টি হচ্ছে, মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় ব্যক্তি মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা:কে অনেক দায়িত্ব দিয়েছেন এবং অনেক পরিচয়ে ভূষিত করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম পরিচয় হচ্ছে রাহ্মাতাল্লিল আ-লামি-ন এবং দায়িত্ব হচ্ছে, সৃষ্টি জগতের জন্য রহমত হওয়া। আমরা সবাই আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা:কে আমাদের নেতা মানি। আমরা তাঁর অনুসারী। তাহলে বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, আমাদের নেতা যদি রহমতের ধারক, বাহক ও প্রতিভূ হন তাহলে আমরা কি তাঁর উল্টোটা হবো, নাকি আমরাও তাঁকে অনুসরণ করে নিজেদের মধ্যে ওই বৈশিষ্ট্যের কিয়দংশ আনতে চেষ্টা করব? যদি আমরা সিদ্ধান্ত নিই যে, আমরা আমাদের নেতাকে অনুসরণ করব, তাহলে আমাদের নেতার অনুকরণে ও অনুসরণে চিন্তা ও চেতনায় এবং কর্মে সৃষ্টিজগতের প্রতি দয়াবান, মায়াময়, সৌজন্যময়ী, মঙ্গল কামনাকারী, কল্যাণমুখী হতে হবে। আমাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগত সব চেষ্টার ফোকাস হবে সৃষ্টির কল্যাণ। সৃষ্টি শব্দটির তাৎপর্য ব্যাপক, কিন্তু আপাতত পরিবেশ, বন্য ও গৃহপালিত প্রাণী এবং মানব জাতিকে এর মধ্যে শামিল করলাম। অর্থাৎ আমি ব্যক্ত করতে চাচ্ছি যে, আমাদের চিন্তা-চেতনা, সব কর্মের উদ্দেশ্য, সব জ্ঞানের প্রয়োগের উদ্দেশ্য হতে হবে সৃষ্টিজগতের কল্যাণ বা উপকার বা মঙ্গল। আমাদের প্রিয় নেতা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা: এই শিাটি তত্ত্বীয়ভাবে আমাদের জানিয়েছেন এবং বাস্তবে প্রয়োগ করে দৃষ্টান্ত স্থাপনে সচেষ্ট ছিলেন। সে জন্যই তিনি ৬২৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে নিয়ে ৬৩৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ১০ বছর সময়কালে মদিনা নামক জনপদ বা নগরীতে প্রথমে একটি নগররাষ্ট্র কায়েম করেন এবং পরে ওই নগররাষ্ট্রটি একটি বড় রাষ্ট্রে পরিণত হয়, যার রাজধানী ছিল মদিনা। তখনকার আমলে লোকসংখ্যা কম ছিল, মানচিত্র আঁকার সুযোগ কম ছিল, সীমান্তরেখা চিহ্নিত করার জন্য পিলার বসানোর রেওয়াজ ছিল না। ওই আমলের মদিনা নামক নগররাষ্ট্র বা মদিনাকেন্দ্রিক বৃহৎ রাষ্ট্রটি আজকের দিনের আধুনিক একটি রাষ্ট্রের সাথে হুবহু হয়তো মিল খাবে না কিন্তু মূলনীতি বা ‘ফান্ডামেন্টাল্স’-এ মিল খাবে। ওই আমলে রাষ্ট্রের একজন প্রধান ছিলেন, রাষ্ট্রপ্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঘনিষ্ঠজনদের সাথে পরামর্শ করতেন, নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজনে সেনাবাহিনী সংগঠিত করা হতো, রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বসবাসকারী জনগণের মধ্যে সুসম্পর্ক রা করা ও কর্মকাণ্ডের ভারসাম্য রা করার নিমিত্তে সম্মত বন্দোবস্ত বা চুক্তি রচনা করা হয়েছিল, খাদ্য বিভাগ ছিল, খাজনা আদায়কারী বিভাগ ছিল, বিচার করার রেওয়াজ ছিল ইত্যাদি। ওই সব বা যাবতীয় কর্মকাণ্ডের আধুনিক রূপ হচ্ছে (বাংলাদেশকে উদাহরণস্বরূপ নিয়ে) রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, পরামর্শদাতা ক্যাবিনেট ও পার্লামেন্ট, রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের নিরাপত্তা প্রদানকারী সামরিক বাহিনী, রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক দলিল যার নাম সংবিধান এবং সংবিধানের অধীনে আইনগুলো, জনগণের মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য বিভাগ, শিা মন্ত্রণালয় ও শিা অধিদফতর, গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও গৃহায়ন অধিদফতর, সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট ও অধস্তন আদালতগুলো ইত্যাদি ইত্যাদি। অতএব কোনো অবস্থাতেই আমাদের পে বলা উচিত নয় যে, আধুনিক রাষ্ট্রে কল্যাণমুখী চিন্তা ও কল্যাণমুখী চেতনার কোনো জায়গা নেই। বরং এটা বলা উচিত যে, রাষ্ট্রের মৌলিক ল্য এবং উদ্দেশ্যই হচ্ছে তার নাগরিকদের কল্যাণ সাধন করা।
ওপরের আলোচনাটি আমি উৎসর্গ করছি ঈদে মিলাদুন্নবী দিবসটির প্রতি। ১২ রবিউল আউয়াল তথা ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশে ঈদে মিলাদুন্নবী অনুষ্ঠান পালিত হয়। ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে, তৎকালীন আরব দেশের মক্কা শহরে আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা: জন্মগ্রহণ করেছিলেন। জীবনের প্রথম ৪০ বছর তিনি সংসারধর্ম পালন করেছেন। জীবনের পরবর্তী বছরগুলোতেও তিনি সংসারধর্ম পালন করেছেন। কিন্তু ৪০ বছর বয়সে তাঁর জীবনে তো বটেই, বিশ্বের ইতিহাসেও একটি যুগান্তকারী ঘটনা ঘটে। তাঁর ৪০ বছর বয়সে, মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁকে তাঁর (আল্লাহর) প্রিয়নবী এবং রাসূল হিসেবে মনোনীত করেন। নবুয়তপ্রাপ্তির পরবর্তী চার বছর মহানবী সা: গোপনে মক্কা শহরে ইসলাম প্রচার করেন। চার বছরের মাথায় খাত্তাবের ছেলে ওমর তথা হজরত ওমর রা: ইসলাম গ্রহণ করেন। ওমর রা:- এর ইসলাম গ্রহণ থেকে শুরু করে পরবর্তী ৯ বছর মক্কায় ও মক্কাকেন্দ্রিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচারিত হয়। মহানবী সা: এবং ওই সময়ের সাহাবিরা বর্ণনার অতীত কষ্ট, নির্যাতন, নিপীড়ন, বাধা-বিপত্তি সহ্য করে এই কর্মকাণ্ড চালু রেখেছিলেন। চার বছর যোগ ৯ বছর সমান ১৩ বছরের মাথায়, মহান আল্লাহ তায়ালার দয়ায়, মহানবী সা: সফলভাবে মদিনায় হিজরত করেন। মদিনাবাসী যেন মহানবী সা:কে সুন্দরভাবে গ্রহণ করেন, সে জন্য তিন বছর আগে থেকেই ত্রে প্রস্তুত করা হচ্ছিল। মদিনায় আগমনের তারিখ থেকে পরবর্তী ১০ বছর যুগপৎ কষ্ট, ত্যাগ স্বীকার, যুদ্ধ ও সংগ্রাম এবং সাফল্যের ইতিহাস। এই দুনিয়াতে মহানবী সা:-এর ওপর অর্পিত দুনিয়াবি দায়িত্বের ওই সময়ের জন্য প্রযোজ্য অংশ পালন শেষে তিনি মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে ফেরত যান। কিন্তু তাঁর প থেকে তথা তাঁর দ্বারা আজ পর্যন্ত তাঁর একটি পদ, পদবি ও দায়িত্ব পালন অব্যাহত আছে। তিনি সর্বশেষ নবী ও রাসূল, তিনি সব নবী ও রাসূলগণের সর্দার বা নেতা, তিনি রাহমাতাল্লিল আ-লামি-ন এবং যত দিন সৃষ্টিজগৎ বহাল থাকবে তত দিন এই রাহমাতাল্লিল আ-লামি-ন হিসেবে বহাল থাকবেন। আখেরাতে তথা শেষ বিচারের দিনেও তিনি রাহমাতাল্লিল আ-লামি-ন হিসেবে ভূষিত থাকবেন। সুতরাং এই পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসে, ঈদে মিলাদুন্নবী যেমন পালিত হয়েছে বা আগামী বছরগুলোতেও হবে, তেমনি একটু ব্যতিক্রমী চেষ্টার সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। সিদ্ধান্ত নিয়ে চেষ্টা করতে হবে, আমরা যেন মহানবী সা:-এর জীবন ও কর্মকে জানতে পারি। সিদ্ধান্ত হবে, তাঁকে অনুসরণ করব, সবকিছুতে না পারলেও অন্তত নিজেদের চিন্তা-চেতনা ও কর্মে দয়া, মায়া ও কল্যাণমুখিতা লালন করব। আমার বিশ্বাস এই যে, নেতৃস্থানীয় বাংলাদেশীরা যদি এই বৈশিষ্ট্য আয়ত্তে আনতে পারেন, তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতি, বাংলাদেশের সমাজনীতি, বাংলাদেশের ব্যবসায়-বাণিজ্যে একটি ইতিবাচক গুণগত পরিবর্তনের সূচনা হবে।
চিন্তা-চেতনা ও কর্মে দয়া, মায়া ও কল্যাণমুখিতা লালন করার জন্য আহ্বান শুধু ব্যক্তিদের প্রতি নয়, প্রতিষ্ঠানের প্রতিও, সমষ্টির প্রতিও। বাংলাদেশের মিডিয়াজগতের উজ্জ্বল নত্র নয়া দিগন্ত পত্রিকা এরূপ লালনের েেত্র দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী। এরূপ আরো আরো পত্রিকা আছে, যারা সংবাদ পরিবেশন, মন্তব্য পরিবেশন, মতামত পরিবেশন ইত্যাদিতে চেষ্টা করেন দয়া, মায়া ও কল্যাণমুখিতা তুলে ধরতে। কিন্তু এ ধরনের পত্রিকাগুলো (যথা নয়া দিগন্ত, আমার দেশ) শক্তিশালী পগুলোর বা মতাশীল পগুলোর প্রতিহিংসার শিকার। রবিউল আউয়াল মাসে, মহানবী সা:-এর পবিত্র জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আঙ্গিক সম্বন্ধে বিনীতভাবে আলোচনা করতে গিয়ে, উপসংহারে আহ্বান হচ্ছে, আমাদের সমাজে আত্মসমালোচনার রেওয়াজ মূল্যায়িত হোক এবং প্রতিহিংসার রেওয়াজ ান্ত হোক।
লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
www.kallyan-ibrahim.com
No comments