সন্তান সবাই সমান by বদরুন নেসা নিপা
উর্মির বাবা মৃত্যুর আগে তার ব্যবসায় ও সহায়-সম্পত্তি ছেলেমেয়ের মধ্যে
ভাগ করে দিয়ে যান। তবে তিনি তার একমাত্র মেয়েকে তার ন্যায্য অধিকার থেকে
বঞ্চিত করেছেন।
আইন অনুযায়ী মেয়ের যা পাওয়ার কথা তার
চেয়ে অনেক কমই বাবা তাকে দিয়েছেন। তবে এই নিয়ে উর্মির কোনো আক্ষেপ নেই।
তিনি বাবাকে অনেক ভালোবাসেন। মৃত্যুর বেশ কয়েক মাস আগে থেকে উর্মির বাবা
অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন এবং সন্তানদের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়েন।
ছেলেরা সবাই যার যার জীবন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। অসুস্থ বাবাকে প্রয়োজনীয়
চিকিৎসা দেয়ার প্রয়োজন মনে করেননি ধনাঢ্য ছেলেরা। যাদের জন্য সব কিছু
করেছেন, যে পুত্রসন্তানদের সব কিছু দিয়ে গেছেন, সেই সন্তান মৃত্যুপথযাত্রী
বাবার প্রতি দায়িত্ব পালন করেননি। ভাইয়েরা যখন বাবার খোঁজ নেননি। উর্মি
তখন বাবার পাশে এক আদর্শ সন্তানের কর্তব্য পালনে অর্থ ও সেবা দিয়ে বাবাকে
সুস্থ করে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন।
সামীরা বছরখানেক আগে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। ফলাফলও ভালো। তিনি বলেন, ‘স্নাতক শেষ করার পর ইচ্ছা ছিল দেশের বাইরে পড়ার। মা-বাবা রাজি হননি। অথচ আমার মা-বাবা ছোট ভাইকে বিদেশে পাঠান পড়ার জন্য। বেশ কিছু দিন মন খারাপ ছিল। বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যাব, কত স্বপ্ন ছিল আমার। ওয়েবসাইট ঘেঁটে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেছিলাম। সেখানের বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তিসহ পড়ার সুযোগও মিলল। কিন্তু বাসায় কেউ রাজি নয়। একা যেতে দেবেন না বাবা-মা। বিয়ের জন্য পাত্র খুঁজতে থাকেন। পেয়েও গেলেন। নিজের কষ্টের কথা কাউকে বলতেও পারছি না। নিজের মতামতের কোনো গুরুত্ব নেই কারো কাছে। এটা খুব কষ্টের। আমার একমাত্র ভাইটি এখন প্রবাসী। নিজের পছন্দের পাত্রীকে বিয়ে করে প্রবাসী জীবনযাপন করছে। তার সময় হয় না দেশে আসার। মা-বাবা কখনো কখনো নিজেরাই গিয়ে ছেলেকে দেখে আসে। এখন দেশে একমাত্র মা-বাবার ভরসা আমি। অসুস্থ হলে ডাক্তার দেখানো। সেবা করা, বাজার সদাই, উৎসব অনুষ্ঠান, আত্মীয়স্বজনের খবর রাখা সব কিছুই এখন আমাকেই দেখতে হয়। এখন মনে হয় মা-বাবা যদি মেয়েদের ওপর আরেকটু ভরসা ও বিশ্বাস রাখতে পারেন তাহলে সুযোগ পেলে মেয়েরা সফলতার শিখরে পৌঁছতে পারে, গর্বিত করতে পারে তাদের পরিবার ও দেশকে।’
মেয়েরা সাধারণত এমনই হয়। বাবা-মায়ের প্রতি মেয়েদের ভালোবাসা বেশি। এমন অনেক মেয়ে আছেন আমাদের সমাজে যারা শুধু মেয়েসন্তান নয়, শুধু সন্তান হয়ে একটু সুযোগ পেলে বাবা-মাকে সব উজাড় করে দিতে কোনো কার্পণ্য করেন না। অথচ সেই মেয়েসন্তানকেই সব রকম অধিকারের বেলায় কম দেওয়া হয়। এখনো বেশিরভাগ পরিবারে শিক্ষা খাতে ছেলে ও মেয়েসন্তানের মধ্যে বৈষম্য রাখা হয়। বাবা-মায়ের ধারণা ছেলে সন্তানই তাদের আশ্রয়দাতা হবে। নাসরীন নাহারের বিয়ে হয়েছে ১০ বছর আগে। ভাই চাকরিসূত্রে আছেন খুলনায়। পাঁচ বছর ধরে বৃদ্ধ মা প্যারালাইসিসে আক্রান্ত। ভালো চিকিৎসার জন্য মাকে ঢাকায় শান্তিনগরে নিজের কাছে রেখেছেন। ভাই-ভাবী ছেলেমেয়ে নিয়ে ব্যস্ত জীবন যাপন করেন, এমনকি দূরত্বের জন্য নিয়মিত ঢাকায় আসতেও পারেন না। নাসরীন নাহার স্কুলশিক্ষিকা এবং এক সন্তানের মা। স্কুল ও সংসার সব সামলিয়ে মায়ের সেবাযতেœ কোনো কমতি রাখেন না তিনি। মায়ের জন্য আলাদা কাজের লোকও রেখেছেন। নিজের আয়ের সম্পূর্ণটাই মায়ের জন্য ব্যয় করতে কুণ্ঠাবোধ করেন না। যে কাজ তার ভাইয়ের করার কথা, যাকে এত ভালোবাসা, আদর, যতœ, সম্পদ উজাড় করে দিয়েছিলেন বাবা-মা, সেই একমাত্র ছেলে আর ছেলের বউ মা-বাবার প্রতি উদাসীন। মায়ের এই দুর্দিনে সন্তান হয়ে আমি কিছুই করতে পারব না, এ পরিস্থিতি যে কতটা যন্ত্রণাদায়ক তা বোঝানোর নয়। কবে তারা ভাববেন ছেলেমেয়ে উভয়েই সমান, সবাইকে সমান অধিকার দিতে হবে। নারীর চলার পথে বড় অনুপ্রেরণা হতে পারে তার বাবা-মা। বাবা ও মা-ই পারেন তার মেয়েসন্তানকে মানুষের সম্মান দিতে। বাবা যদি মেয়কে মানুষ হিসেবে ভাবতে পারেন, তবে সেই মেয়ের চলার পথ হয় অনেক সহজ। এই পৃথিবীতে মর্যাদার সাথে টিকে থাকতে হলে নিজের একটি পরিচয় প্রয়োজন। নিজের মনের শক্তি থাকলে অবশ্যই কিছুটা হলেও সফলতা আসবেই। আর এই শক্তির বীজ বপন শিশুকাল থেকেই করতে হবে। এ দায়িত্ব প্রতিটি পরিবারের বাবা-মায়ের। প্রত্যেক বাবা-মা যদি তার মেয়েসন্তানটির পড়াশোনার খেয়াল রাখেনÑ যেন মাঝপথে বন্ধ হয়ে না যায়, মেয়েটির পড়ালেখা কিংবা অল্প বয়সে বিয়ে না দেন; তবেই নারীরা আত্মনির্ভরশীল হতে সুযোগ পাবেন। মা-বাবার যোগ্য সন্তান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গর্বিত করবে সমাজকে।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নাসরীন জাহান বলেন, নারীর ক্ষমতায়নের কথা বললেও আমাদের দেশের পরিবেশ এখনো নারীবান্ধব হয়নি। পরিবার ও সমাজ থেকে এখনো ছেলেমেয়ের বেলায় সমান সমর্থন আসে না। মেয়েকে বিশ্বাস করতে পারেন না অনেক মা-বাবা। কিন্তু সন্তানকে অবিশ্বাস করলে ফলাফল হিতে বিপরীত হওয়ার আঙ্কা থাকে। বিশ্বাস, করলে সে প্রতিদানে ভালো কিছুই দেয়।’
সামীরা বছরখানেক আগে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। ফলাফলও ভালো। তিনি বলেন, ‘স্নাতক শেষ করার পর ইচ্ছা ছিল দেশের বাইরে পড়ার। মা-বাবা রাজি হননি। অথচ আমার মা-বাবা ছোট ভাইকে বিদেশে পাঠান পড়ার জন্য। বেশ কিছু দিন মন খারাপ ছিল। বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যাব, কত স্বপ্ন ছিল আমার। ওয়েবসাইট ঘেঁটে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেছিলাম। সেখানের বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তিসহ পড়ার সুযোগও মিলল। কিন্তু বাসায় কেউ রাজি নয়। একা যেতে দেবেন না বাবা-মা। বিয়ের জন্য পাত্র খুঁজতে থাকেন। পেয়েও গেলেন। নিজের কষ্টের কথা কাউকে বলতেও পারছি না। নিজের মতামতের কোনো গুরুত্ব নেই কারো কাছে। এটা খুব কষ্টের। আমার একমাত্র ভাইটি এখন প্রবাসী। নিজের পছন্দের পাত্রীকে বিয়ে করে প্রবাসী জীবনযাপন করছে। তার সময় হয় না দেশে আসার। মা-বাবা কখনো কখনো নিজেরাই গিয়ে ছেলেকে দেখে আসে। এখন দেশে একমাত্র মা-বাবার ভরসা আমি। অসুস্থ হলে ডাক্তার দেখানো। সেবা করা, বাজার সদাই, উৎসব অনুষ্ঠান, আত্মীয়স্বজনের খবর রাখা সব কিছুই এখন আমাকেই দেখতে হয়। এখন মনে হয় মা-বাবা যদি মেয়েদের ওপর আরেকটু ভরসা ও বিশ্বাস রাখতে পারেন তাহলে সুযোগ পেলে মেয়েরা সফলতার শিখরে পৌঁছতে পারে, গর্বিত করতে পারে তাদের পরিবার ও দেশকে।’
মেয়েরা সাধারণত এমনই হয়। বাবা-মায়ের প্রতি মেয়েদের ভালোবাসা বেশি। এমন অনেক মেয়ে আছেন আমাদের সমাজে যারা শুধু মেয়েসন্তান নয়, শুধু সন্তান হয়ে একটু সুযোগ পেলে বাবা-মাকে সব উজাড় করে দিতে কোনো কার্পণ্য করেন না। অথচ সেই মেয়েসন্তানকেই সব রকম অধিকারের বেলায় কম দেওয়া হয়। এখনো বেশিরভাগ পরিবারে শিক্ষা খাতে ছেলে ও মেয়েসন্তানের মধ্যে বৈষম্য রাখা হয়। বাবা-মায়ের ধারণা ছেলে সন্তানই তাদের আশ্রয়দাতা হবে। নাসরীন নাহারের বিয়ে হয়েছে ১০ বছর আগে। ভাই চাকরিসূত্রে আছেন খুলনায়। পাঁচ বছর ধরে বৃদ্ধ মা প্যারালাইসিসে আক্রান্ত। ভালো চিকিৎসার জন্য মাকে ঢাকায় শান্তিনগরে নিজের কাছে রেখেছেন। ভাই-ভাবী ছেলেমেয়ে নিয়ে ব্যস্ত জীবন যাপন করেন, এমনকি দূরত্বের জন্য নিয়মিত ঢাকায় আসতেও পারেন না। নাসরীন নাহার স্কুলশিক্ষিকা এবং এক সন্তানের মা। স্কুল ও সংসার সব সামলিয়ে মায়ের সেবাযতেœ কোনো কমতি রাখেন না তিনি। মায়ের জন্য আলাদা কাজের লোকও রেখেছেন। নিজের আয়ের সম্পূর্ণটাই মায়ের জন্য ব্যয় করতে কুণ্ঠাবোধ করেন না। যে কাজ তার ভাইয়ের করার কথা, যাকে এত ভালোবাসা, আদর, যতœ, সম্পদ উজাড় করে দিয়েছিলেন বাবা-মা, সেই একমাত্র ছেলে আর ছেলের বউ মা-বাবার প্রতি উদাসীন। মায়ের এই দুর্দিনে সন্তান হয়ে আমি কিছুই করতে পারব না, এ পরিস্থিতি যে কতটা যন্ত্রণাদায়ক তা বোঝানোর নয়। কবে তারা ভাববেন ছেলেমেয়ে উভয়েই সমান, সবাইকে সমান অধিকার দিতে হবে। নারীর চলার পথে বড় অনুপ্রেরণা হতে পারে তার বাবা-মা। বাবা ও মা-ই পারেন তার মেয়েসন্তানকে মানুষের সম্মান দিতে। বাবা যদি মেয়কে মানুষ হিসেবে ভাবতে পারেন, তবে সেই মেয়ের চলার পথ হয় অনেক সহজ। এই পৃথিবীতে মর্যাদার সাথে টিকে থাকতে হলে নিজের একটি পরিচয় প্রয়োজন। নিজের মনের শক্তি থাকলে অবশ্যই কিছুটা হলেও সফলতা আসবেই। আর এই শক্তির বীজ বপন শিশুকাল থেকেই করতে হবে। এ দায়িত্ব প্রতিটি পরিবারের বাবা-মায়ের। প্রত্যেক বাবা-মা যদি তার মেয়েসন্তানটির পড়াশোনার খেয়াল রাখেনÑ যেন মাঝপথে বন্ধ হয়ে না যায়, মেয়েটির পড়ালেখা কিংবা অল্প বয়সে বিয়ে না দেন; তবেই নারীরা আত্মনির্ভরশীল হতে সুযোগ পাবেন। মা-বাবার যোগ্য সন্তান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গর্বিত করবে সমাজকে।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নাসরীন জাহান বলেন, নারীর ক্ষমতায়নের কথা বললেও আমাদের দেশের পরিবেশ এখনো নারীবান্ধব হয়নি। পরিবার ও সমাজ থেকে এখনো ছেলেমেয়ের বেলায় সমান সমর্থন আসে না। মেয়েকে বিশ্বাস করতে পারেন না অনেক মা-বাবা। কিন্তু সন্তানকে অবিশ্বাস করলে ফলাফল হিতে বিপরীত হওয়ার আঙ্কা থাকে। বিশ্বাস, করলে সে প্রতিদানে ভালো কিছুই দেয়।’
No comments