বাম্পার ফলন ॥ কৃষক সুফল পায় না by কাওসার রহমান
ত্রুটিপূর্ণ বাজার ব্যবস্থা ও সংরৰণ
সুবিধার অভাবে বাম্পার ফলনের সুফল পাচ্ছে না কৃষক। সরকারের উৎসাহে মাথার
ঘাম পায়ে ফেলে নিজের পুঁজি বিনিয়োগ করে উৎপাদন বৃদ্ধি করছে কৃষক; অথচ
সুষ্ঠু বিপণন ব্যবস্থা ও সংরৰণের সুযোগের অভাবে উৎপাদিত পণ্যের দাম পাচ্ছে
না তারা ।
ক্রেতার অভাবে কৃষকের চোখের সামনেই মাঠের
মধ্যেই উৎপাদিত ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফসলের এই বেহাল দশায় কৃষকের নির্বাক
হয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকছে না। ত্রুটিপূর্ণ বিপণন ব্যবস্থা,
পর্যাপ্ত হিমাগার ও প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের অভাব এবং স্থানীয় কাঁচাবাজারের
প্রতি সরকারের দৃষ্টি না থাকার কারণেই কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য
মূল্য থেকে বঞ্চিত ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের দেশের মূল সমস্যা_ দেশের বাজার ব্যবস্থায় উৎপাদকরা কোন ভূমিকা রাখতে পারছে না। আমাদের কৃষিপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়ারা। ফলে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কৃষক ফসল উৎপাদন করলেও তার ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। থাইল্যান্ড ও চীনের কৃষকের পণ্য বিক্রির জন্য নির্দিষ্ট পাইকারিবাজার থাকলেও আমাদের দেশে কৃষকদের জন্য কোন পাইকারি বাজার নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ঢাকা শহরের প্রবেশপথে পাইকারি বাজার স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হলেও এ বিষয়ে আর কোন অগ্রগতি হয়নি। আবার কৃষক কম দামে পণ্য বিক্রি করলেও তার সুফল পায় না ভোক্তারা। মাঠ থেকে আড়ত পর্যনত্ম চার সত্মরে কৃষিপণ্যের হাত বদল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যাচ্ছে পণ্যের দাম। আর সেই মধ্যস্বত্বভোগীদের বেঁধে দেয়া দামেই ক্রেতাদের তা কিনে খেতে হচ্ছে।
গত বছর ভাল দাম পাওয়ায় এবার দেশে আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে বাজারে আলুর দাম আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে। গত বছর যেখানে খুচরা বাজারে এক কেজি আলুর দাম ৩২ থেকে ৩৪ টাকা পর্যনত্ম উঠেছিল, এবার এই ভরা মৌসুমে সেই আলুর দাম ১০-১২ টাকায় নেমে এসেছে। যে উৎসাহ নিয়ে কৃষক আলু উৎপাদন করেছে, বাম্পার ফলনের সঙ্গে সঙ্গে দাম পড়ে যাওয়ায় তার মুখের হাসিও উবে গেছে। ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় গত ৯ মার্চ সিলেটের টমেটো চাষীরা এক অভিনব প্রতিবাদ করেছে। তাদের উৎপাদিত টমেটোর দাম পড়ে যাওয়ায় তারা সিলেট জেলা প্রশাসনের সামনের রাসত্মায় টকটকে লাল টমেটে ফেলে দিয়ে এই অভিনব প্রতিবাদ করেছে। অর্ধশতাধিক কৃষক তার উৎপাদিত টমেটো ফেলে দিয়ে মূল্য না পাওয়ার ওই প্রতিবাদ জানায়। কৃষকরা জানায়, প্রতিকেজি টমেটো উৎপাদনের খরচ পড়েছে চার টাকা। অথচ বাজারে বেচতে হচ্ছে এক টাকা বা তারও কম দামে। শহরের বাজারে ১০ টাকার ওপর টমেটো বিক্রি হচ্ছে। সিলেটের অন্যতম সবজি বাজারে টুকরি ভর্তি টমেটো নিয়ে চাষীরা অপেক্ষা করছে। প্রতি টুকরি ২৫ থেকে ৩০ কেজি টমেটোর দাম হাঁকছে পাইকাররা ২০ থেকে ২২ টাকা। এ প্রসঙ্গে জেলার কৃষক কল্যাণ সংস্থার আহ্বায়ক আব্দুল হান্নান আনসারী জানিয়েছেন, দাম না পাওয়ায় শত শত মণ টমেটো কৃষক গরম্নকে খাওয়াচ্ছে। মাঠ পর্যায়ের কৃষকরা সর্বোচ্চ এক টাকা, কোথাও কোথাও ৫০ পয়সার বেশি কেজিতে দাম পাচ্ছে না। এ কারণেই কৃষকরা তাদের উৎপাদিত টমেটো ফেলে দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে।
শুধু টমেটোই নয়, একই অবস্থা হয়েছে আলুর ৰেত্রেও। গত বছর ফলন ভাল না হওয়ায় আলুর দাম ছিল আকাশচুম্বী। প্রতি কেজি আলু খুচরা বাজারে ৩০ টাকার ওপর উঠে গিয়েছিল। ফলে চাষীরা এবার ব্যাপকভাবে আলু চাষে আগ্রহী হয়ে পড়ে। কৃষকদের পরিশ্রম ও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এবার দেশে আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। এ বছর দেশে আলু চাষের লৰ্যমাত্রা ৪ লাখ ২৫ হাজার হেক্টর জমির বিপরীতে চাষ হয়েছে ৪ লাখ ৪০ হাজার হেক্টরে। আলু উৎপাদনের লৰ্যমাত্রা ৭২ লাখ মেটি্্রক টনের বিপরীতে উৎপাদন ৮০ লাখ মেটি্্রক টন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বার্ষিক চাহিদার চেয়ে বেশি আলু উৎপাদনের জন্য কৃষক আলুর ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে । খুচরা বাজারে ১০-১২ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হলেও কৃষক তার উৎপাদিত প্রতি কেজি আলুর জন্য দাম পাচ্ছে চার থেকে পাঁচ টাকা। এ সুযোগে মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়ারা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা বাজার থেকে কম দামে আলু কিনে নিয়ে প্রভাব বিস্তার করে হিমাগারে আলু রাখছে। অথচ চাষীরা ভ্যানে করে বসত্মা ভর্তি আলু নিয়ে দিনভর অপেৰা করেও হিমাগারে আলু রাখতে পারছে না।
বাম্পার ফলনের কারণে লালমনিরহাট থেকে মুন্সিগঞ্জ সর্বত্রই আলু চাষীদের মধ্যে শঙঙ্কা। তারা যে এই ভরা মৌসুমে আলুর দাম পাচ্ছে না শুধু তাই নয়, এত আলু তারা কোথায় সংরৰণ করবে, তা নিয়েও বিপাকে পড়েছে। সারাদেশে তিন শ' হিমাগার আছে। এ সকল হিমাগারে আলু সংরৰণের ৰমতা মাত্র ২৪ লাখ টন। ফলে হিমাগারগুলোতে স্থান না থাকায় লাখ লাখ টন আলু নিয়ে চাষীরা বিপাকে পড়েছে। কোল্ডস্টোরেজগুলোর সামনে আলুভর্তি ভ্যান নিয়ে দিনভর অপেৰা করেও স্থান পাচ্ছে না। কোথাও কোথাও হিমাগার মালিকরা আলু নিয়ে না আসার জন্য মাইকিং করছে। হিমাগার মালিকদের বিরম্নদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা চাষীদের আলু না রেখে মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়াদের আলু রাখছে। কোল্ডস্টেরেজ মালিকরা বলছে, ১৫ মার্চের পর হিমাগারগুলোতে আর আলু রাখার জায়গা থাকবে না।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে, কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে আলু রফতানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে সম্প্রতি এক সভায় রফতানিকারকরা আলু রফতানির ৰেত্রে নগদ সহায়তা বৃদ্ধি ছাড়াও পটেটো ফেক্স শিল্প চালুকরণে সহায়তা প্রদান, আলুর বহুমুখী ব্যবহার বৃদ্ধিকরণ, হিমাগার সমূহের বিদু্যত পরিস্থিতির উন্নতির ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে। বাংলাদেশ থেকে এ মুহূর্তে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এবং দুবাইতে আলু রফতানির সম্ভাবনা রয়েছে। এ বছর উৎপাদিত আলুর মধ্যে ১০ লাখ মেটি্্রক টন আলু রপতানির সুযোগ রয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে কৃষক ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হবেন না এবং দেশের রফতানিতে নতুন সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। এ লৰ্যে বিদেশে আলু রফতানির জন্য নগদ সহায়তা ১০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে উন্নীতকরণের নীতিগত সিদ্ধানত্ম নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে চূড়ানত্ম সিদ্ধানত্ম গ্রহণের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন চাইবে।
এ বছর কৃষকের দুঃখ শুরম্ন হয় শীতের সবজি থেকে। সেচ সুবিধার বদৌলতে এবার বরেন্দ্র অঞ্চলে বিভিন্ন সবজিরও বাম্পার ফলন হয়। কিন্তু কৃষক তার সবজির ন্যায্য মূল্য পায়নি। স্থানীয় হাট-বাজারে দুই শ' টাকা শ' দরেও এবার বাঁধাকপি, ফুলকপি বিক্রি করতে পারেনি। ক্রেতার অভাবে কৃষক শেষ পর্যনত্ম মাঠ থেকে সবজি তোলাই বন্ধ করে দেয়। ফলে এবার গরম্নতে খেয়েছে বাঁধাকপি, ফুলকপি। মণকে মন নষ্ট হয়েছে টমেটো। এ অঞ্চলে সবজি বিপস্নব হলেও তা সংরৰণের কোন ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি। বাজার ব্যবস্থায়ও কৃষকের কোন ভূমিকা রাখার সুযোগ তৈরি হয়নি। ফলে কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
কৃষিপণ্য উৎপাদন করে দাম না পাওয়া এদেশে নতুন কোন ঘটনা নয়। যুগ যুগ ধরেই কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে যখনই দেশে ফসল মার খায় কিংবা উৎপাদন হ্রাস পায়, তখনই দেশে কৃষিপণ্যের দাম বেড়ে যায়। ফলে পরের বছরই কৃষক ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে ওই ফসল উৎপাদনে মাঠে নেমে পড়ে। এতে বাম্পার ফলন হলে সঙ্গে সঙ্গে বাজারে ওই কৃষিপণ্যের দাম কমে যায়। কৃষক তার পণ্যের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। গত বছর বোরোর বাম্পার ফলনের পর বাজারে বোরো ধানের দাম একেবারেই কমে যায়। আট শ' টাকা মণের ধান চার শ' টাকার নিচে নেমে আসে। উৎপাদন খরচের নিচে দাম নেমে আসায় কৃষক লোকসানের মুখে পড়ে। সরকার ক্রয় মূল্য নির্ধারণ করেও ধানের দাম ধরে রাখতে পারেনি। এ সুযোগে চালকল মালিক ও মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়ারা কম দামে বাজার থেকে ধান কিনে মজুদ করে রাখে। কৃষকের ধান শেষ হয়ে গেলে আবার বাড়তে থাকে ধানের দাম। বর্তমানে আবার ধানের দাম ছয় শ' টাকার ওপরে উঠে গেছে। কিন্তু তার সুফল পায়নি কৃষক।
একই অবস্থা হয়েছে পাটের ৰেত্রে। গত বছর বিরূপ আবহাওয়ার কারণে দেশে পাটের ভাল ফলন হয়নি। এ কারণে পাটের দাম বৃদ্ধি পেয়ে অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। চাষীরা এবার শুরম্নতেই পাটের ভাল দাম পেলেও শেষ পর্যনত্ম ফড়িয়ারাই ওই পাট কিনে নিয়েছে। এখন পাটের দাম দ্বিগুণ হওয়ায় তার সুফল পাচ্ছে ফড়িয়ারা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও সে অনুযায়ী সংরৰণ ও কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প গড়ে উঠেনি। এ কারণে কৃষক মৌসুমে তার ফসলের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাছাড়া বাজার ও বিপণন ব্যবস্থায়ও কৃষকের কোন অংশগ্রহণ নেই। বাজার একচেটিয়া মধ্যস্বত্বভোগীরা নিয়ন্ত্রণ করছে। সরকার কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য যত পদৰেপ নিচ্ছে, উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তির ব্যাপারে তেমন কোন পদৰেই নিচ্ছে না। শুধুমাত্র ধান-চালের দাম নির্ধারণ করে খাদ্যশস্যের বাজারে হসত্মৰেপ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু ওই প্রক্রিয়ায় কৃষকদের সরাসরি অংশ গ্রহণের সুযোগ না থাকায় তা তেমন কার্যকর হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক ডক্টর মাহবুব হাসান বলেন, কৃষিপণ্যের দাম না পাওয়া আমাদের দেশে নতুন কিছু নয়। গত বছর ধানের দাম কমে গিয়েছিল। ফলে কৃষক ৰতিগ্রসত্ম হয়েছে। এখন আবার ধানের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর আলুর দাম বেশি ছিল। ফলে এবার আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু দাম পড়ে গেছে। কোন কোন কৃষিপণ্য পচনশীল। ফলে একসঙ্গে বাজারে এলে দাম কমবেই। এ কারণেই সংরৰণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। আমাদের দেশে যথেষ্ট কোল্ডস্টোরেজ নেই। ফলে সব আলু রাখা যাবে না। এতে কৃষক যেমন আলুর দাম পাবে না, তেমনি অনেক আলু নষ্টও হয়ে যাবে। যদি সব আলু রাখার মতো দেশে কোল্ডস্টোরেজ থাকে তা হলে আলু রেখে দেয়া যেত এবং আলুর দাম কমত না। তাই আমাদের দেশে কৃষিপণ্য সংরৰণের জন্য বিনিয়োগ দরকার। বেসরকারী খাতে এই হিমাগার স্থাপনে এগিয়ে আসছে না বিদু্যত সঙ্কটের কারণে। ডিজেল দিয়ে চালালে সংরৰণ খরচ অনেক বেশি পড়বে। ফলে বাজারে অনেক দাম বেড়ে যাবে। তাই দেশে যাতে পর্যাপ্ত হিমাগার নির্মিত হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া সরকারওকে বাজার ব্যবস্থায় অংশ গ্রহণ করতে হবে। যখন দাম কমে যায়, তখন সরকার কিনে নেবে এবং দাম বৃদ্ধি পেলে তা বাজারে ছেড়ে বাজার স্থিতিশীল রাখবে।
তিনি বলেন, কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের মূল্য নিশ্চিত করতে হলে সংরৰণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই। এই হিমাগার নির্মাণের জন্য বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। সোলার সিস্টেম করে হিমাগারগুলো চালানো যায় কি-না সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে। দেশে পর্যাপ্ত সংরৰণের ব্যবস্থা করতে না পারলে উৎপাদিত পণ্য নিয়ে কৃষকের সমস্যা কাটবে না।
এ প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক সাঈদ আলী বলেন, আমাদের দেশে মৌসুমের প্রথম দিকে সবজির দাম বেশি থাকে, আবার শেষ দিকে দাম পড়ে যায়। আমরা এখনও সুষম বাজার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারিনি। এ কারণে প্রথম দিকে ভাল দাম পেলেও কৃষক মৌসুমের শেষে এসে পণ্যের দাম পায় না। যুগ যুগ ধরে আমাদের দেশে এই ব্যবস্থা চলে এসেছে। কৃষকের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হলে উৎপাদিত পণ্য সংরৰণের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের মূল দায়িত্ব উৎপাদন বৃদ্ধি করা। কৃষকের মাঝে প্রযুক্তি হসত্মানত্মর ও তাদের প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যাপারে আমরা কাজ করছি। এখন কৃষক যাতে তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য সবাই মিলে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব সিকিউকে মুসতাক আহমেদ বলেন, কৃষক যাতে তার উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় সে জন্য তাকে বাজারের অংশীদার করা হবে। বাজার ব্যবস্থায় কৃষকদের এ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকার বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারের একটি বিশেষ সংস্থা কৃষককে বাজার ব্যবস্থায় অংশীদার করার কাজটি করবে। এ দায়িত্ব দেয়া হবে কৃষি বিপণন অধিদফতরকে। এ জন্য পুরনো এ সংস্থাকে ঢেলে সাজানো হবে। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে একটি রিপোর্ট পাওয়া গেছে। রিপোর্ট পরীৰা-নিরীৰা করে তার ভিত্তিতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, অসম প্রতিযোগিতার কারণে কৃষক তার পণ্যের ন্যায্য মূল্য পায় না। সরকারও ধান ও গম ছাড়া অন্য কোন ফসলের মূল্যের ব্যাপারে হসত্মৰেপ করে না। অন্যান্য কৃষিপণ্যের ৰেত্রেও যাতে কৃষকদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা যায়, সেই উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। আমাদের মূল কাজ উৎপাদনের উপকরণ সরবরাহ করা। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করছি। অন্য সকলকেও তার দায়িত্ব পালন করতে হবে। তা হলেই কৃষক সুফল পাবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের দেশের মূল সমস্যা_ দেশের বাজার ব্যবস্থায় উৎপাদকরা কোন ভূমিকা রাখতে পারছে না। আমাদের কৃষিপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়ারা। ফলে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কৃষক ফসল উৎপাদন করলেও তার ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। থাইল্যান্ড ও চীনের কৃষকের পণ্য বিক্রির জন্য নির্দিষ্ট পাইকারিবাজার থাকলেও আমাদের দেশে কৃষকদের জন্য কোন পাইকারি বাজার নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ঢাকা শহরের প্রবেশপথে পাইকারি বাজার স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হলেও এ বিষয়ে আর কোন অগ্রগতি হয়নি। আবার কৃষক কম দামে পণ্য বিক্রি করলেও তার সুফল পায় না ভোক্তারা। মাঠ থেকে আড়ত পর্যনত্ম চার সত্মরে কৃষিপণ্যের হাত বদল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যাচ্ছে পণ্যের দাম। আর সেই মধ্যস্বত্বভোগীদের বেঁধে দেয়া দামেই ক্রেতাদের তা কিনে খেতে হচ্ছে।
গত বছর ভাল দাম পাওয়ায় এবার দেশে আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে বাজারে আলুর দাম আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে। গত বছর যেখানে খুচরা বাজারে এক কেজি আলুর দাম ৩২ থেকে ৩৪ টাকা পর্যনত্ম উঠেছিল, এবার এই ভরা মৌসুমে সেই আলুর দাম ১০-১২ টাকায় নেমে এসেছে। যে উৎসাহ নিয়ে কৃষক আলু উৎপাদন করেছে, বাম্পার ফলনের সঙ্গে সঙ্গে দাম পড়ে যাওয়ায় তার মুখের হাসিও উবে গেছে। ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় গত ৯ মার্চ সিলেটের টমেটো চাষীরা এক অভিনব প্রতিবাদ করেছে। তাদের উৎপাদিত টমেটোর দাম পড়ে যাওয়ায় তারা সিলেট জেলা প্রশাসনের সামনের রাসত্মায় টকটকে লাল টমেটে ফেলে দিয়ে এই অভিনব প্রতিবাদ করেছে। অর্ধশতাধিক কৃষক তার উৎপাদিত টমেটো ফেলে দিয়ে মূল্য না পাওয়ার ওই প্রতিবাদ জানায়। কৃষকরা জানায়, প্রতিকেজি টমেটো উৎপাদনের খরচ পড়েছে চার টাকা। অথচ বাজারে বেচতে হচ্ছে এক টাকা বা তারও কম দামে। শহরের বাজারে ১০ টাকার ওপর টমেটো বিক্রি হচ্ছে। সিলেটের অন্যতম সবজি বাজারে টুকরি ভর্তি টমেটো নিয়ে চাষীরা অপেক্ষা করছে। প্রতি টুকরি ২৫ থেকে ৩০ কেজি টমেটোর দাম হাঁকছে পাইকাররা ২০ থেকে ২২ টাকা। এ প্রসঙ্গে জেলার কৃষক কল্যাণ সংস্থার আহ্বায়ক আব্দুল হান্নান আনসারী জানিয়েছেন, দাম না পাওয়ায় শত শত মণ টমেটো কৃষক গরম্নকে খাওয়াচ্ছে। মাঠ পর্যায়ের কৃষকরা সর্বোচ্চ এক টাকা, কোথাও কোথাও ৫০ পয়সার বেশি কেজিতে দাম পাচ্ছে না। এ কারণেই কৃষকরা তাদের উৎপাদিত টমেটো ফেলে দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে।
শুধু টমেটোই নয়, একই অবস্থা হয়েছে আলুর ৰেত্রেও। গত বছর ফলন ভাল না হওয়ায় আলুর দাম ছিল আকাশচুম্বী। প্রতি কেজি আলু খুচরা বাজারে ৩০ টাকার ওপর উঠে গিয়েছিল। ফলে চাষীরা এবার ব্যাপকভাবে আলু চাষে আগ্রহী হয়ে পড়ে। কৃষকদের পরিশ্রম ও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এবার দেশে আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। এ বছর দেশে আলু চাষের লৰ্যমাত্রা ৪ লাখ ২৫ হাজার হেক্টর জমির বিপরীতে চাষ হয়েছে ৪ লাখ ৪০ হাজার হেক্টরে। আলু উৎপাদনের লৰ্যমাত্রা ৭২ লাখ মেটি্্রক টনের বিপরীতে উৎপাদন ৮০ লাখ মেটি্্রক টন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বার্ষিক চাহিদার চেয়ে বেশি আলু উৎপাদনের জন্য কৃষক আলুর ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে । খুচরা বাজারে ১০-১২ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হলেও কৃষক তার উৎপাদিত প্রতি কেজি আলুর জন্য দাম পাচ্ছে চার থেকে পাঁচ টাকা। এ সুযোগে মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়ারা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা বাজার থেকে কম দামে আলু কিনে নিয়ে প্রভাব বিস্তার করে হিমাগারে আলু রাখছে। অথচ চাষীরা ভ্যানে করে বসত্মা ভর্তি আলু নিয়ে দিনভর অপেৰা করেও হিমাগারে আলু রাখতে পারছে না।
বাম্পার ফলনের কারণে লালমনিরহাট থেকে মুন্সিগঞ্জ সর্বত্রই আলু চাষীদের মধ্যে শঙঙ্কা। তারা যে এই ভরা মৌসুমে আলুর দাম পাচ্ছে না শুধু তাই নয়, এত আলু তারা কোথায় সংরৰণ করবে, তা নিয়েও বিপাকে পড়েছে। সারাদেশে তিন শ' হিমাগার আছে। এ সকল হিমাগারে আলু সংরৰণের ৰমতা মাত্র ২৪ লাখ টন। ফলে হিমাগারগুলোতে স্থান না থাকায় লাখ লাখ টন আলু নিয়ে চাষীরা বিপাকে পড়েছে। কোল্ডস্টোরেজগুলোর সামনে আলুভর্তি ভ্যান নিয়ে দিনভর অপেৰা করেও স্থান পাচ্ছে না। কোথাও কোথাও হিমাগার মালিকরা আলু নিয়ে না আসার জন্য মাইকিং করছে। হিমাগার মালিকদের বিরম্নদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা চাষীদের আলু না রেখে মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়াদের আলু রাখছে। কোল্ডস্টেরেজ মালিকরা বলছে, ১৫ মার্চের পর হিমাগারগুলোতে আর আলু রাখার জায়গা থাকবে না।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে, কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে আলু রফতানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে সম্প্রতি এক সভায় রফতানিকারকরা আলু রফতানির ৰেত্রে নগদ সহায়তা বৃদ্ধি ছাড়াও পটেটো ফেক্স শিল্প চালুকরণে সহায়তা প্রদান, আলুর বহুমুখী ব্যবহার বৃদ্ধিকরণ, হিমাগার সমূহের বিদু্যত পরিস্থিতির উন্নতির ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে। বাংলাদেশ থেকে এ মুহূর্তে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এবং দুবাইতে আলু রফতানির সম্ভাবনা রয়েছে। এ বছর উৎপাদিত আলুর মধ্যে ১০ লাখ মেটি্্রক টন আলু রপতানির সুযোগ রয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে কৃষক ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হবেন না এবং দেশের রফতানিতে নতুন সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। এ লৰ্যে বিদেশে আলু রফতানির জন্য নগদ সহায়তা ১০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে উন্নীতকরণের নীতিগত সিদ্ধানত্ম নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে চূড়ানত্ম সিদ্ধানত্ম গ্রহণের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন চাইবে।
এ বছর কৃষকের দুঃখ শুরম্ন হয় শীতের সবজি থেকে। সেচ সুবিধার বদৌলতে এবার বরেন্দ্র অঞ্চলে বিভিন্ন সবজিরও বাম্পার ফলন হয়। কিন্তু কৃষক তার সবজির ন্যায্য মূল্য পায়নি। স্থানীয় হাট-বাজারে দুই শ' টাকা শ' দরেও এবার বাঁধাকপি, ফুলকপি বিক্রি করতে পারেনি। ক্রেতার অভাবে কৃষক শেষ পর্যনত্ম মাঠ থেকে সবজি তোলাই বন্ধ করে দেয়। ফলে এবার গরম্নতে খেয়েছে বাঁধাকপি, ফুলকপি। মণকে মন নষ্ট হয়েছে টমেটো। এ অঞ্চলে সবজি বিপস্নব হলেও তা সংরৰণের কোন ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি। বাজার ব্যবস্থায়ও কৃষকের কোন ভূমিকা রাখার সুযোগ তৈরি হয়নি। ফলে কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
কৃষিপণ্য উৎপাদন করে দাম না পাওয়া এদেশে নতুন কোন ঘটনা নয়। যুগ যুগ ধরেই কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে যখনই দেশে ফসল মার খায় কিংবা উৎপাদন হ্রাস পায়, তখনই দেশে কৃষিপণ্যের দাম বেড়ে যায়। ফলে পরের বছরই কৃষক ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে ওই ফসল উৎপাদনে মাঠে নেমে পড়ে। এতে বাম্পার ফলন হলে সঙ্গে সঙ্গে বাজারে ওই কৃষিপণ্যের দাম কমে যায়। কৃষক তার পণ্যের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। গত বছর বোরোর বাম্পার ফলনের পর বাজারে বোরো ধানের দাম একেবারেই কমে যায়। আট শ' টাকা মণের ধান চার শ' টাকার নিচে নেমে আসে। উৎপাদন খরচের নিচে দাম নেমে আসায় কৃষক লোকসানের মুখে পড়ে। সরকার ক্রয় মূল্য নির্ধারণ করেও ধানের দাম ধরে রাখতে পারেনি। এ সুযোগে চালকল মালিক ও মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়ারা কম দামে বাজার থেকে ধান কিনে মজুদ করে রাখে। কৃষকের ধান শেষ হয়ে গেলে আবার বাড়তে থাকে ধানের দাম। বর্তমানে আবার ধানের দাম ছয় শ' টাকার ওপরে উঠে গেছে। কিন্তু তার সুফল পায়নি কৃষক।
একই অবস্থা হয়েছে পাটের ৰেত্রে। গত বছর বিরূপ আবহাওয়ার কারণে দেশে পাটের ভাল ফলন হয়নি। এ কারণে পাটের দাম বৃদ্ধি পেয়ে অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। চাষীরা এবার শুরম্নতেই পাটের ভাল দাম পেলেও শেষ পর্যনত্ম ফড়িয়ারাই ওই পাট কিনে নিয়েছে। এখন পাটের দাম দ্বিগুণ হওয়ায় তার সুফল পাচ্ছে ফড়িয়ারা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও সে অনুযায়ী সংরৰণ ও কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প গড়ে উঠেনি। এ কারণে কৃষক মৌসুমে তার ফসলের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাছাড়া বাজার ও বিপণন ব্যবস্থায়ও কৃষকের কোন অংশগ্রহণ নেই। বাজার একচেটিয়া মধ্যস্বত্বভোগীরা নিয়ন্ত্রণ করছে। সরকার কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য যত পদৰেপ নিচ্ছে, উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তির ব্যাপারে তেমন কোন পদৰেই নিচ্ছে না। শুধুমাত্র ধান-চালের দাম নির্ধারণ করে খাদ্যশস্যের বাজারে হসত্মৰেপ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু ওই প্রক্রিয়ায় কৃষকদের সরাসরি অংশ গ্রহণের সুযোগ না থাকায় তা তেমন কার্যকর হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক ডক্টর মাহবুব হাসান বলেন, কৃষিপণ্যের দাম না পাওয়া আমাদের দেশে নতুন কিছু নয়। গত বছর ধানের দাম কমে গিয়েছিল। ফলে কৃষক ৰতিগ্রসত্ম হয়েছে। এখন আবার ধানের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর আলুর দাম বেশি ছিল। ফলে এবার আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু দাম পড়ে গেছে। কোন কোন কৃষিপণ্য পচনশীল। ফলে একসঙ্গে বাজারে এলে দাম কমবেই। এ কারণেই সংরৰণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। আমাদের দেশে যথেষ্ট কোল্ডস্টোরেজ নেই। ফলে সব আলু রাখা যাবে না। এতে কৃষক যেমন আলুর দাম পাবে না, তেমনি অনেক আলু নষ্টও হয়ে যাবে। যদি সব আলু রাখার মতো দেশে কোল্ডস্টোরেজ থাকে তা হলে আলু রেখে দেয়া যেত এবং আলুর দাম কমত না। তাই আমাদের দেশে কৃষিপণ্য সংরৰণের জন্য বিনিয়োগ দরকার। বেসরকারী খাতে এই হিমাগার স্থাপনে এগিয়ে আসছে না বিদু্যত সঙ্কটের কারণে। ডিজেল দিয়ে চালালে সংরৰণ খরচ অনেক বেশি পড়বে। ফলে বাজারে অনেক দাম বেড়ে যাবে। তাই দেশে যাতে পর্যাপ্ত হিমাগার নির্মিত হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া সরকারওকে বাজার ব্যবস্থায় অংশ গ্রহণ করতে হবে। যখন দাম কমে যায়, তখন সরকার কিনে নেবে এবং দাম বৃদ্ধি পেলে তা বাজারে ছেড়ে বাজার স্থিতিশীল রাখবে।
তিনি বলেন, কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের মূল্য নিশ্চিত করতে হলে সংরৰণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই। এই হিমাগার নির্মাণের জন্য বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। সোলার সিস্টেম করে হিমাগারগুলো চালানো যায় কি-না সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে। দেশে পর্যাপ্ত সংরৰণের ব্যবস্থা করতে না পারলে উৎপাদিত পণ্য নিয়ে কৃষকের সমস্যা কাটবে না।
এ প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক সাঈদ আলী বলেন, আমাদের দেশে মৌসুমের প্রথম দিকে সবজির দাম বেশি থাকে, আবার শেষ দিকে দাম পড়ে যায়। আমরা এখনও সুষম বাজার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারিনি। এ কারণে প্রথম দিকে ভাল দাম পেলেও কৃষক মৌসুমের শেষে এসে পণ্যের দাম পায় না। যুগ যুগ ধরে আমাদের দেশে এই ব্যবস্থা চলে এসেছে। কৃষকের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হলে উৎপাদিত পণ্য সংরৰণের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের মূল দায়িত্ব উৎপাদন বৃদ্ধি করা। কৃষকের মাঝে প্রযুক্তি হসত্মানত্মর ও তাদের প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যাপারে আমরা কাজ করছি। এখন কৃষক যাতে তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য সবাই মিলে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব সিকিউকে মুসতাক আহমেদ বলেন, কৃষক যাতে তার উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় সে জন্য তাকে বাজারের অংশীদার করা হবে। বাজার ব্যবস্থায় কৃষকদের এ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকার বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারের একটি বিশেষ সংস্থা কৃষককে বাজার ব্যবস্থায় অংশীদার করার কাজটি করবে। এ দায়িত্ব দেয়া হবে কৃষি বিপণন অধিদফতরকে। এ জন্য পুরনো এ সংস্থাকে ঢেলে সাজানো হবে। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে একটি রিপোর্ট পাওয়া গেছে। রিপোর্ট পরীৰা-নিরীৰা করে তার ভিত্তিতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, অসম প্রতিযোগিতার কারণে কৃষক তার পণ্যের ন্যায্য মূল্য পায় না। সরকারও ধান ও গম ছাড়া অন্য কোন ফসলের মূল্যের ব্যাপারে হসত্মৰেপ করে না। অন্যান্য কৃষিপণ্যের ৰেত্রেও যাতে কৃষকদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা যায়, সেই উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। আমাদের মূল কাজ উৎপাদনের উপকরণ সরবরাহ করা। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করছি। অন্য সকলকেও তার দায়িত্ব পালন করতে হবে। তা হলেই কৃষক সুফল পাবে।
No comments