বস্তিতে আগুন- কারো দায় এড়ানো উচিত নয়
পোশাক শিল্পে আগুন যেমন দুর্ঘটনার বিষয় না হয়ে নিত্যঘটনায় রূপান্তরিত
হয়েছে তেমনি বস্তিতে আগুনও যেন আর কোনো দুর্ঘটনা নয়।
বাংলাদেশে এ সময়
আবহাওয়া শুষ্ক থাকে। বৃষ্টিপাতও হয় না, বিভিন্ন স্থানে দাহ্য পদার্থও
ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। এই মওসুমটিকে স্বাভাবিকভাবে অগ্নিজনিত দুর্ঘটনার
সময় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তার পরও সতর্কতার অভাব পরিলক্ষিত হয়। নতুন
করে রাজধানীর আগারগাঁও বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে তিন শতাধিক ঘর পুড়ে ছাই
হয়ে গেল। রোববার দুপুরে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে হতাহতের ঘটনা না
ঘটলেও সহায় সম্বল হারিয়ে সহস্রাধিক মানুষ খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিতে
বাধ্য হচ্ছে।
সূত্র অনুযায়ী দুপুর ১২টায় বস্তির একটি ঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়।
ঘরগুলো টিন ও বাঁশের তৈরি হওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তের
মধ্যে বস্তির প্রায় সব ঘর পুড়ে যায়। বস্তিবাসীর অভিযোগ, ফায়ার
সার্ভিসের গাফিলতির কারণে এত তি হয়েছে। আগুন লাগার সাথে সাথে ফায়ার
সার্ভিসকে খবর দেয়া হলেও অনেক দেরিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। এ ছাড়া আগুন
নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রমও শুরু করতে দেরি হয়ে যায়। দেরি হওয়ায় দোকান,
গ্যারেজসহ বস্তির প্রায় সব ঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া বস্তির
বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, বস্তিতে আগুন লাগেনি, উদ্দেশ্যমূলকভাবে আগুন
দেয়া হয়েছে।
অভিযোগ ও ষড়যন্ত্রের কথা অস্বীকার করে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বলা
হয়েছে, বস্তিবাসীর অসচেতনতার কারণেই আগুনের ঘটনা ঘটেছে। ঢাকার প্রতিটি
বস্তিতে ঘনবসতি হওয়ায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। যে কারণে প্রচুর তি হয়।
রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম থাকায় তাদেরও আসতে দেরি হয়েছিল। তা ছাড়া বস্তির
প্রবেশপথ অনেক সরু হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি সেখানে গিয়ে আগুন
নেভাতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। বাড়তি সময়ও ক্ষেপণ হয়েছে। থানা ও
জনপ্রতিনিধিরাও অভিন্ন সুরে কথা বলেছেন।
আমরা বারবার বস্তিতে আগুন লাগা কিংবা লাগানো কোনোটাকেই উড়িয়ে দেয়ার
বিষয় মনে করি না। এর আগে মহাখালী বস্তিতে আগুন লাগানোর সুনির্দিষ্ট অভিযোগ
উঠেছিল। বলা হয়েছিল আর কোনোভাবে উচ্ছেদ করতে না পারার কারণে এমনি
ষড়যন্ত্র করে আগুনে পুড়িয়ে হতদরিদ্র এই মানুষদের উচ্ছেদ করেছে। তারও আগে
বিএনপি বস্তিখ্যাত একটি বস্তি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল রাজনৈতিক কারণে।
জেনেভা ক্যাম্পে আগুন জ্বালানোর অভিযোগও খতিয়ে দেখা হয়নি। বস্তিবাসী
অসতর্ক এটা মিথ্যা নয়। তা ছাড়া দাহ্য পদার্থও বস্তিগুলোতে বেশি থাকে।
স্বাভাবিক কারণেই দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে। তার পরও ঠাণ্ডা মাথায় আগুন
জ্বালিয়ে বস্তি উচ্ছেদের ঘটনা অস্বীকার করা সম্ভব নয়। আশা করি, হতদরিদ্র
বস্তিবাসীরা অমানবিক আচরণ ও ষড়যন্ত্রের শিকার হবেন না। অজুহাত দিয়ে
ফায়ার সার্ভিসও দায় এড়াবে না। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করা জরুরি। তার
চেয়ে জরুরি সতর্কতা ও সচেতনতা বৃদ্ধি করা। এ ব্যাপারে সরকারি ভূমিকা আরো
জোরদার হওয়া উচিত।
|
No comments