নৌ ধর্মঘটে জনদুর্ভোগ চরমে- পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় বন্দরে জাহাজজট
নৌযান ধর্মঘট প্রত্যাহারে আনুষ্ঠানিক কোন
পদৰেপ নেয়া হয়নি। সরকারের তরফ থেকে বুধবার অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনার
আহ্বান জানানো হলেও মালিক-শ্রমিকদের এক টেবিলে বসানো সম্ভব হয়নি।
সারাদেশের নৌযান ধর্মঘটের দুই দিন অতিবাহিত হলেও মালিক এবং শ্রমিক সংগঠন
এখনও পরস্পরবিরোধী অবস্থানে রয়ে গেছে। ধর্মঘট দির্ঘায়িত হওয়ায় যাত্রী
ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। চট্টগ্রাম এবং মংলায় পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায়
ভোগ্যপণ্য, জ্বালানি, শিল্প কাঁচামারবাহী জাহাজের জট লেগেছে দু'বন্দরে।
কেরানীগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, বুধবার দাবি আদায়ের জন্য সদরঘাট এলাকায় নৌযান
ফেডারেশনের নেতারা বিৰোভ মিছিল করেছে। এ সময় দাবি না মানা পর্যন্ত ধর্মঘট
অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। নৌযান ধর্মঘটের কারণে বুধবার দৰিণাঞ্চলের
যাত্রীরা গনত্মব্যে পৌঁছাতে না পেরে দীর্ঘৰণ অপেৰার পর ফিরে গেছে।
চট্টগ্রাম থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, নৌযান ধর্মঘটের কারণে বন্দর বহির্নোঙ্গরে দুদিন ধরে পণ্য লাইটারিং বন্ধ। অলস ভেসে থেকে লোকসান গুনছে পণ্য বোঝাই ১৮টি মাদার ভেসেল। বিভিন্ন জেটি থেকে অভ্যনত্মরীণ রম্নটের কোন পণ্য পরিবহন করা হচ্ছে না। ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন বুধবার বন্দরনগরীর বাংলাবাজার, মাঝিরঘাটসহ কর্ণফুলী সংলগ্ন জেটিগুলোতে নিষপ্রাণ অবস্থা। সদা কর্মচঞ্চল এ বিরাট এলাকাতে শ্রমিকদের কর্মচাঞ্চল্যই ছিল না।
বুধবার কর্মসূচীর সমর্থনে সকালে সেখানে সমাবেশ ও বিােভ মিছিল করেছে নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তর্ৃপরে সচিব সৈয়দ ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ জনকণ্ঠকে জানান, বুধবার বহির্নোঙ্গরে ছিল ১৮টি মাদার ভেসেল । এসব জাহাজে কোন পণ্য লাইটারিং হয়নি। ফলে জলপথে পণ্য পরিবহন পুরোপুরি বন্ধ থাকে। গম, সার, লবণ, সিমেন্ট কিংকারসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী এ জাহাজগুলোর কাজ কখন শেষ হবে তা নির্ভর করছে কর্মসূচী কবে প্রত্যাহার হচ্ছে তার ওপর। এ ব্যাপারে বন্দর কর্তৃপরে করার কিছু নেই। তবে জেটিতে থাকা জাহাজগুলোতে পণ্য ওঠানামা চলছে বলে তিনি জানান।
চট্টগ্রাম বন্দর লাইটারেজ ঠিকাদার সমিতির সভাপতি হাজী শফিক আহমেদ জনকণ্ঠকে জানান, ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন ৬৭ ভাগ বৃদ্ধি করা হয়েছিল। তারপরও দাবি থাকলে শ্রমিকরা নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় মালিক পকে জানাতে পারত। তাছাড়া বেতন বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ইসু্যতে সরকার, মালিক ও শ্রমিকদের ত্রিপীয় আলোচনা চলা অবস্থায় এ ধরনের ধর্মঘট আহ্বান করা সমর্থনযোগ্য নয়। সরকারও এ কর্মসূচীকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। তিনি বলেন, বন্দরকে জিম্মি করে দাবি আদায়ের জন্য যে কৌশল নেয়া হয়েছে এর প্রভাব পড়তে পারে ভোগ্যপণ্যের বাজারে, যা সরকারকেও বিব্রত করবে। চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে সংশিষ্ট রয়েছে ৫ শতাধিক জাহাজ। কর্মচারীরা ধর্মঘটে থাকা এসব জাহাজ বিভিন্ন স্থানে অলস ভেসে আছে। বন্ধ রয়েছে পণ্য পরিবহন।
এদিকে, বুধবার সকালেও চট্টগ্রামের বাংলাবাজার এলাকায় কর্মসূচীর সমর্থনে শ্রমিক সমাবেশ ও বিােভ করেছে নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ। এতে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম অঞ্চলের নেতা নবী আলম মাস্টার। বক্তব্য রাখেন ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক মোঃ মামুন, সাবেক সভাপতি মাঈন উদ্দিন আহমেদ, পরিষদ নেতা আবু তাহের, খোরশেদ আলম, দীন মোহাম্মদ প্রমুখ।
মংলা থেকে আমাদের স্টাফ রিপোর্টার জানান, ধর্মঘট চলার কারণে মংলায় পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে। মংলা আংটিহারা হয়ে ভারতের নামখানা নৌরম্নটে পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় মংলার সিমেন্ট কারখানাগুলোর উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহতে হচ্ছে। মংলায় প্রায় দেড়শতাধিক কার্গো ধর্মঘট পালন করছে। চাঁদপুর থেকে আমাদের সংবাদদাতা জানান, ধর্মঘটের কারণে চাঁদপুর থেকে দৰিণাঞ্চল ও ঢাকাগামী কোন নৌযান চলাচল করেনি। এসময় অসংখ্য যাত্রী আটকা পড়ে।
আমাদের ভৈরব সংবাদদাতা জানান, ধর্মঘটের কারণে ভৈরবের পাঁচ রম্নটে বুধবার কোন নৌযান চলেনি। এতে যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগের সঙ্গে সঙ্গে পণ্য পরিবহন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
বুধবার বিকেলে ঢাকায় জাতীয় প্রেসকাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে পণ্যবাহী জাহাজ মালিক সমিতি। সংবাদ সম্মেলনে তারা শ্রমিকদের এ আন্দোলনকে অযৌক্তিক ও অবৈধ বলে দাবি করেন। তাঁরা বলেন, দাবি-দাওয়া সংক্রানত্ম কোন ধরনের পূর্ব আলোচনা ছাড়া এ ধরনের কর্মসূচীর কোন গ্রহণযোগ্যতা থাকতে পারে না। অন্যদিকে ধর্মঘটকে সমর্থন করে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ একাত্মতা ঘোষণা করেছে।
ধর্মঘট প্রত্যাহারের বিষয়ে সরকারের পদৰেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে নৌ সচিব আব্দুল মান্নান হাওলাদার বুধবার সন্ধ্যায় জনকণ্ঠকে বলেন, মালিক শ্রমিকদের মজুরির বিষয়টি শ্রম পরিদফতরের এ বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই। তার পরও বিষয়টি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের হওয়ায় আমি মালিক শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠকের জন্য শ্রম পরিচালককে আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু মালিক-শ্রমিকরা নিজ নিজ অবস্থানে অটল থাকায় আলোচনা করা সম্ভব হয়নি। পরে শ্রম পরিচালককে মালিক শ্রমিকদের সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনা করার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান নৌসচিব। এছাড়া নৌযান ধর্মঘট প্রত্যাহারে সরকার আরকোন পদৰেপ নিয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, না আর কোন পদৰেপ নেয়া হয়নি। মালিক শ্রমিকরা যখন কোন কথাই শুনছে না তখন আমরা কি করব।
লঞ্চমালিকদের সংগঠন অভ্যনত্মরীণ নৌ চলাচল সংস্থার চেয়ারম্যান মাহবুব উদ্দিন আহমদ (বীরবিক্রম) বলেন, ধর্মঘট প্রত্যাহার করলেই কেবল শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে। তিনি বলেন, মালিকদের জিম্মি করে কিছু আদায় কারা যাবে না। ধর্মঘট নিয়ে সরকারের সঙ্গে তাদের আলোচনা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম বলেন, মালিকরা ফোনে আলোচনা করে ধর্মঘটের বিষয়ে তাদের মনোভাব জানতে চেয়েছেন। এ সময় তারা আলোচনার আহ্বান জানালেও দাবি পূরণের বিষয়ে কোন আশ্বাস দেয়নি। এ কারণে শ্রমিক ফেডারেশন ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধানত্মে অটল রয়েছে। তিনি জানান, ইতোপূর্বে একই বিষয় নিয়ে একাধিকবার আলোচনা হলেও কোন সমাধান হয়নি।
শ্রমিক এবং মালিকপৰের দ্বিমুখী অবস্থানের কারণে সোমবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে চলা নৌযান ধর্মঘট অব্যাহত রয়েছে। ধর্মঘট প্রত্যাহারের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বুধবার অভ্যনত্মরীণ নৌচলাচল কর্তৃপৰের কার্যালয়ে (বিআইডবিস্নউটিএ) আলোচনায় বসার আহ্বান জানালেও মালিক-শ্রমিক কোন পৰই এতে হাজির হয়নি। ধর্মঘট চলায় দৰিণ অঞ্চলের হাজার হাজার যাত্রী চরম ভোগানত্মিতে পড়েছে। বিচ্ছিন্নভাবে দেশের বিভিন্ন রম্নটে কিছু লঞ্চ চললেও তার সংখ্যা ছিল সীমিত। ২২ দফা দাবিতে ধর্মঘট ডাকা হলেও বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধানত্ম নিলেই শ্রমিকরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করতে সম্মত রয়েছে বলে জানা গেছে। একই দাবিতে তিন বার ধর্মঘট করা হলেও সমস্যার সমাধান হয়নি বলে অভিযোগ করেছে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন। অন্যদিকে শ্রমিকদের দাবি করা বিপুল পরিমাণ মজুরি দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে রাখা সম্ভব নয় বলে অভিযোগ করছে মালিকপৰ।
সূত্র মতে, ২০০৪ সালের প্রকাশিত গেজেটের ভিত্তিতে নৌযান শ্রমিকদের মজুরি দেয়া হয়। এতে প্রথম শ্রেণীর মাস্টার এবং ড্রইভারের বেতন নির্ধারিত রয়েছে ৫ হাজার ৬৯০ টাকা শ্রমিকরা এখন ওইপদে মূল বেতনের ওপর ২৯৪ ভাগ বৃদ্ধি করে ২১ হাজার ৬৩০ টাকা দাবি করছে। দ্বিতীয় শ্রেণীর মাস্টার এবং ড্রাইভারের জন্য ৪ হাজার ৭৪০ টাকার স্থলে শ্রমিকরা ২৭৭ ভাগ বৃদ্ধি করে ১৭ হাজার ৩০ টাকা, ৩য় শ্রেণীর মাস্টার এবং ড্রাইভারের বেতন ৩ হাজার ৯৯০ টাকার স্থলে ২৬৪ ভাগ বৃদ্ধি করে ১৪ হাজার ২৮০ টাকা, সুকানিী/গ্রিজারদের বেতন ২ হাজার ৫৭০ টাকার স্থলে ২৫৯ ভাগ বৃদ্ধি করে ৯ হাজার ৩৮০ টাকা বকেং লস্কর/বাবুর্চির ২ হাজার ১২০ টাকার স্থলে ২৫৪ ভাগ বৃদ্ধি করে ৮ হাজার ৬৩০ টাকা বৃদ্ধির প্রসত্মাব করেছে। মালিকপৰ বলছে, প্রথম থেকে ৩য় শ্রেণীর মাস্টার এবং ড্রাইভারদের ৰেত্রে ২০০৮ সালে মূল বেতনের ওপর ২৫ ভাগ এবং সুকানি/গ্রিজার এবং লস্কর/বাবুর্চির ৰেত্রে যথাক্রমে ৩০ ও ৩৫ ভাগ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া প্রানত্মিক, চিকিৎসাভাতা বাবদ ৬০০ টাকা ছাড়াও অন্যান্য আরও কিছু সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরে বহির্নোঙ্গরে চলাচলরত সকল বেসরকারী নৌযান এবং বেসরকারী শ্যালো ট্যাংকার এ নিয়োজিত শ্রমিকদের আলাদা বেতন কাঠামো রয়েছে।
চট্টগ্রাম থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, নৌযান ধর্মঘটের কারণে বন্দর বহির্নোঙ্গরে দুদিন ধরে পণ্য লাইটারিং বন্ধ। অলস ভেসে থেকে লোকসান গুনছে পণ্য বোঝাই ১৮টি মাদার ভেসেল। বিভিন্ন জেটি থেকে অভ্যনত্মরীণ রম্নটের কোন পণ্য পরিবহন করা হচ্ছে না। ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন বুধবার বন্দরনগরীর বাংলাবাজার, মাঝিরঘাটসহ কর্ণফুলী সংলগ্ন জেটিগুলোতে নিষপ্রাণ অবস্থা। সদা কর্মচঞ্চল এ বিরাট এলাকাতে শ্রমিকদের কর্মচাঞ্চল্যই ছিল না।
বুধবার কর্মসূচীর সমর্থনে সকালে সেখানে সমাবেশ ও বিােভ মিছিল করেছে নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তর্ৃপরে সচিব সৈয়দ ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ জনকণ্ঠকে জানান, বুধবার বহির্নোঙ্গরে ছিল ১৮টি মাদার ভেসেল । এসব জাহাজে কোন পণ্য লাইটারিং হয়নি। ফলে জলপথে পণ্য পরিবহন পুরোপুরি বন্ধ থাকে। গম, সার, লবণ, সিমেন্ট কিংকারসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী এ জাহাজগুলোর কাজ কখন শেষ হবে তা নির্ভর করছে কর্মসূচী কবে প্রত্যাহার হচ্ছে তার ওপর। এ ব্যাপারে বন্দর কর্তৃপরে করার কিছু নেই। তবে জেটিতে থাকা জাহাজগুলোতে পণ্য ওঠানামা চলছে বলে তিনি জানান।
চট্টগ্রাম বন্দর লাইটারেজ ঠিকাদার সমিতির সভাপতি হাজী শফিক আহমেদ জনকণ্ঠকে জানান, ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন ৬৭ ভাগ বৃদ্ধি করা হয়েছিল। তারপরও দাবি থাকলে শ্রমিকরা নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় মালিক পকে জানাতে পারত। তাছাড়া বেতন বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ইসু্যতে সরকার, মালিক ও শ্রমিকদের ত্রিপীয় আলোচনা চলা অবস্থায় এ ধরনের ধর্মঘট আহ্বান করা সমর্থনযোগ্য নয়। সরকারও এ কর্মসূচীকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। তিনি বলেন, বন্দরকে জিম্মি করে দাবি আদায়ের জন্য যে কৌশল নেয়া হয়েছে এর প্রভাব পড়তে পারে ভোগ্যপণ্যের বাজারে, যা সরকারকেও বিব্রত করবে। চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে সংশিষ্ট রয়েছে ৫ শতাধিক জাহাজ। কর্মচারীরা ধর্মঘটে থাকা এসব জাহাজ বিভিন্ন স্থানে অলস ভেসে আছে। বন্ধ রয়েছে পণ্য পরিবহন।
এদিকে, বুধবার সকালেও চট্টগ্রামের বাংলাবাজার এলাকায় কর্মসূচীর সমর্থনে শ্রমিক সমাবেশ ও বিােভ করেছে নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ। এতে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম অঞ্চলের নেতা নবী আলম মাস্টার। বক্তব্য রাখেন ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক মোঃ মামুন, সাবেক সভাপতি মাঈন উদ্দিন আহমেদ, পরিষদ নেতা আবু তাহের, খোরশেদ আলম, দীন মোহাম্মদ প্রমুখ।
মংলা থেকে আমাদের স্টাফ রিপোর্টার জানান, ধর্মঘট চলার কারণে মংলায় পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে। মংলা আংটিহারা হয়ে ভারতের নামখানা নৌরম্নটে পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় মংলার সিমেন্ট কারখানাগুলোর উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহতে হচ্ছে। মংলায় প্রায় দেড়শতাধিক কার্গো ধর্মঘট পালন করছে। চাঁদপুর থেকে আমাদের সংবাদদাতা জানান, ধর্মঘটের কারণে চাঁদপুর থেকে দৰিণাঞ্চল ও ঢাকাগামী কোন নৌযান চলাচল করেনি। এসময় অসংখ্য যাত্রী আটকা পড়ে।
আমাদের ভৈরব সংবাদদাতা জানান, ধর্মঘটের কারণে ভৈরবের পাঁচ রম্নটে বুধবার কোন নৌযান চলেনি। এতে যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগের সঙ্গে সঙ্গে পণ্য পরিবহন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
বুধবার বিকেলে ঢাকায় জাতীয় প্রেসকাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে পণ্যবাহী জাহাজ মালিক সমিতি। সংবাদ সম্মেলনে তারা শ্রমিকদের এ আন্দোলনকে অযৌক্তিক ও অবৈধ বলে দাবি করেন। তাঁরা বলেন, দাবি-দাওয়া সংক্রানত্ম কোন ধরনের পূর্ব আলোচনা ছাড়া এ ধরনের কর্মসূচীর কোন গ্রহণযোগ্যতা থাকতে পারে না। অন্যদিকে ধর্মঘটকে সমর্থন করে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ একাত্মতা ঘোষণা করেছে।
ধর্মঘট প্রত্যাহারের বিষয়ে সরকারের পদৰেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে নৌ সচিব আব্দুল মান্নান হাওলাদার বুধবার সন্ধ্যায় জনকণ্ঠকে বলেন, মালিক শ্রমিকদের মজুরির বিষয়টি শ্রম পরিদফতরের এ বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই। তার পরও বিষয়টি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের হওয়ায় আমি মালিক শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠকের জন্য শ্রম পরিচালককে আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু মালিক-শ্রমিকরা নিজ নিজ অবস্থানে অটল থাকায় আলোচনা করা সম্ভব হয়নি। পরে শ্রম পরিচালককে মালিক শ্রমিকদের সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনা করার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান নৌসচিব। এছাড়া নৌযান ধর্মঘট প্রত্যাহারে সরকার আরকোন পদৰেপ নিয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, না আর কোন পদৰেপ নেয়া হয়নি। মালিক শ্রমিকরা যখন কোন কথাই শুনছে না তখন আমরা কি করব।
লঞ্চমালিকদের সংগঠন অভ্যনত্মরীণ নৌ চলাচল সংস্থার চেয়ারম্যান মাহবুব উদ্দিন আহমদ (বীরবিক্রম) বলেন, ধর্মঘট প্রত্যাহার করলেই কেবল শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে। তিনি বলেন, মালিকদের জিম্মি করে কিছু আদায় কারা যাবে না। ধর্মঘট নিয়ে সরকারের সঙ্গে তাদের আলোচনা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম বলেন, মালিকরা ফোনে আলোচনা করে ধর্মঘটের বিষয়ে তাদের মনোভাব জানতে চেয়েছেন। এ সময় তারা আলোচনার আহ্বান জানালেও দাবি পূরণের বিষয়ে কোন আশ্বাস দেয়নি। এ কারণে শ্রমিক ফেডারেশন ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধানত্মে অটল রয়েছে। তিনি জানান, ইতোপূর্বে একই বিষয় নিয়ে একাধিকবার আলোচনা হলেও কোন সমাধান হয়নি।
শ্রমিক এবং মালিকপৰের দ্বিমুখী অবস্থানের কারণে সোমবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে চলা নৌযান ধর্মঘট অব্যাহত রয়েছে। ধর্মঘট প্রত্যাহারের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বুধবার অভ্যনত্মরীণ নৌচলাচল কর্তৃপৰের কার্যালয়ে (বিআইডবিস্নউটিএ) আলোচনায় বসার আহ্বান জানালেও মালিক-শ্রমিক কোন পৰই এতে হাজির হয়নি। ধর্মঘট চলায় দৰিণ অঞ্চলের হাজার হাজার যাত্রী চরম ভোগানত্মিতে পড়েছে। বিচ্ছিন্নভাবে দেশের বিভিন্ন রম্নটে কিছু লঞ্চ চললেও তার সংখ্যা ছিল সীমিত। ২২ দফা দাবিতে ধর্মঘট ডাকা হলেও বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধানত্ম নিলেই শ্রমিকরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করতে সম্মত রয়েছে বলে জানা গেছে। একই দাবিতে তিন বার ধর্মঘট করা হলেও সমস্যার সমাধান হয়নি বলে অভিযোগ করেছে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন। অন্যদিকে শ্রমিকদের দাবি করা বিপুল পরিমাণ মজুরি দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে রাখা সম্ভব নয় বলে অভিযোগ করছে মালিকপৰ।
সূত্র মতে, ২০০৪ সালের প্রকাশিত গেজেটের ভিত্তিতে নৌযান শ্রমিকদের মজুরি দেয়া হয়। এতে প্রথম শ্রেণীর মাস্টার এবং ড্রইভারের বেতন নির্ধারিত রয়েছে ৫ হাজার ৬৯০ টাকা শ্রমিকরা এখন ওইপদে মূল বেতনের ওপর ২৯৪ ভাগ বৃদ্ধি করে ২১ হাজার ৬৩০ টাকা দাবি করছে। দ্বিতীয় শ্রেণীর মাস্টার এবং ড্রাইভারের জন্য ৪ হাজার ৭৪০ টাকার স্থলে শ্রমিকরা ২৭৭ ভাগ বৃদ্ধি করে ১৭ হাজার ৩০ টাকা, ৩য় শ্রেণীর মাস্টার এবং ড্রাইভারের বেতন ৩ হাজার ৯৯০ টাকার স্থলে ২৬৪ ভাগ বৃদ্ধি করে ১৪ হাজার ২৮০ টাকা, সুকানিী/গ্রিজারদের বেতন ২ হাজার ৫৭০ টাকার স্থলে ২৫৯ ভাগ বৃদ্ধি করে ৯ হাজার ৩৮০ টাকা বকেং লস্কর/বাবুর্চির ২ হাজার ১২০ টাকার স্থলে ২৫৪ ভাগ বৃদ্ধি করে ৮ হাজার ৬৩০ টাকা বৃদ্ধির প্রসত্মাব করেছে। মালিকপৰ বলছে, প্রথম থেকে ৩য় শ্রেণীর মাস্টার এবং ড্রাইভারদের ৰেত্রে ২০০৮ সালে মূল বেতনের ওপর ২৫ ভাগ এবং সুকানি/গ্রিজার এবং লস্কর/বাবুর্চির ৰেত্রে যথাক্রমে ৩০ ও ৩৫ ভাগ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া প্রানত্মিক, চিকিৎসাভাতা বাবদ ৬০০ টাকা ছাড়াও অন্যান্য আরও কিছু সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরে বহির্নোঙ্গরে চলাচলরত সকল বেসরকারী নৌযান এবং বেসরকারী শ্যালো ট্যাংকার এ নিয়োজিত শ্রমিকদের আলাদা বেতন কাঠামো রয়েছে।
No comments