যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে সকল নিয়োগ ২৬ মার্চের আগেই by বিকাশ দত্ত
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা
মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তাদের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের
কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। ট্রাইব্যুনালের সকল প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে।
এখন যে কোন সময় সরকার তদন্তকারী সংস্থা এবং চীফ প্রসিকিউটর নিয়োগ দেবে।
তদন্তকারী সংস্থা এবং চীফ প্রসিকিউটর নিয়োগের পর পরই মানবতাবিরোধী অপরাধ
যারা করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। '৭১ সালে যারা গণহত্যা,
যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ, সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা, ধর্ষণ ও
অগ্নিসংযোগসহ মারাত্মক অপরাধ করেছে তাদেরকেই আন্তর্জাতিক অপরাধ
ট্রাইব্যুনালের আওতায় আনা হবে। অপরাধ প্রমাণিত হলে এদের সর্বোচ্চ শাস্তি
মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। তবে বিচারক সাৰ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে সাজা কমাতেও
পারেন। পুরনো হাইকোর্ট ভবনে "মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তাদের বিচারের
জন্য" আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। আদালতের অবকাঠামো
কাজের উপযোগী করতে শ্রমিকগণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। পুরনো হাইকোর্ট ভবনের
দ্বিতীয় তলায় এজলাস। এজলাসের পাশে পি এস টু চেয়ারম্যানের রুম। এরপর
চেয়ারম্যান। এর ওপরে পর্যবেক্ষকদের বসার স্থান করা হয়েছে। এজলাসের ডান পাশে
সাংবাদিকদের বসার স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। নিচ তলায় চীফ ইনভেস্টিগেটর,
রেজিস্ট্রার, আইটি কৰ, রের্কড রম্নম, মিডিয়া, চীফ প্রসিকিউটর, হাজতখানা এবং
অভ্যর্থনা কৰ করা হয়েছে। নিচ তলার বাম পাশে আইন কমিশনের কার্যালয়। দ্বিতীয়
তলায় আইন কমিশন চেয়ারম্যানের অফিস। অবশ্য ট্রাইবু্যনালের পাশে আইন কমিশনের
অফিস রাখা নিয়ে ঘোর আপত্তি জানিয়েছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নিমর্ূল কমিটির
চেয়ারম্যান শাহরিয়ার কবির। তিনি বলেছেন, পুরনো হাইকোর্ট ভবনে '৭১ সালে
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তাদের বিচার শেষে
ঐ স্থানটি জাদুঘরে পরিণত করা। সারা বিশ্বের মানুষের কাছে এটা ঐতিহাসিক
স্থান হিসেবে চিহ্নিত থাকবে। তিনি বলেন, আমরা এখনও বলি, আনত্মর্জাতিক অপরাধ
ট্রাইবু্যনালের স্থান থেকে আইন কমিশনকে সরিয়ে নেয়া হোক। "আনত্মর্জাতিক
অপরাধ ট্রাইবু্যনালের কাজ দ্রম্নত এগিয়ে যাচ্ছে। আদালতের ভেতরে এবং বাইরে
কাজ হচ্ছে। আদালতের সামনের রাসত্মা পরিসর করা হয়েছে। প্রধান সড়কের পাশ থেকে
দোকানপাট উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। বাগানের ভেতরে পাকা রাসত্মা করা হচ্ছে। সব
মিলিয়ে আদালতের পরিবেশকে মনোমুগ্ধকর করার চেষ্টা চলছে।
২৮ ফেব্রম্নয়ারি আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদসহ অন্য কর্মকর্তাগণ ট্রাইবু্যনালের স্থান পরিদর্শন করেন। তখন আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, ২৬ মার্চের আগেই তদনত্মকারী সংস্থা এবং চীফ প্রসিকিউটর নিয়োগ দেয়া হবে। এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, শীঘ্রই তদনত্মকারী সংস্থা ও চীফ প্রসিকিউটর নিয়োগ দেয়া হবে। তাদের বসার স্থান না হলে নিয়োগ দেয়ার পর কোথায় বসবে।
সাবেক বিচারপতি গোলাম রাব্বানী জনকন্ঠকে বলেছেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, বিচারে তাদের সর্বোচ্চ শাসত্মি মৃতু্যদ- হতে পারে। তবে বিচারক সাৰ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে সাজা কমাতেও পারেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় জামায়াত ইসলামী, মুসলীম লীগ, নেজামে ইসলাম, পিডিপিসহ শানত্মি কমিটি গঠন করে। তারাই পাকিসত্মানী সেনাবাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে খুন, ধর্ষণ, অগি্নসংযোগ করেছে। ১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল নুরম্নল আমিনের নেতৃত্বে শানত্মি কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্যরা টিক্কা খানের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। তারা টিক্কা খানকে জানায়, পাকিসত্মানের সংহতি ও অখ-তা রৰায় তারা সেনাবাহিনীকে মদদ যুগিয়ে যেতে অটল রয়েছেন (দৈনিক পূর্ব দেশ, ১৭ এপ্রিল, ১৯৭১)।"
বিচারপতি গোলাম রাব্বানী জনকণ্ঠকে আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামীসহ আরও কিছু দল 'মানবতাবিরোধী অপরাধ' করেছে। এর দালিলিক প্রমাণ রয়েছে। জামায়াতের যে সমসত্ম নেতাকর্মী অপরাধ করেছে, তাদেরকে অবশ্যই ট্রাইবু্যনালের মুখোমুখি হতে হবে। তিনি বলেন, কোন ব্যক্তি তিনি যে দেশেরই নাগরিক হন না কেন, যিনি কোন সশস্ত্র, প্রতিরৰা কিংবা সহায়ক দল বা বাহিনী সদস্য হয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সীমানার মধ্যে অত্র আইন কার্যকর হওয়ার পূর্বে কিংবা পরে হোক না কেন, নিম্ন বর্ণিত যে কোন অপরাধ করলে তার বিচার করবার ও শাসত্মি দেয়ার নিরঙ্কুশ ৰমতা ট্রাইবু্যনালের আছে। বেসামরিক জনসমষ্টির যে কারও বিরম্নদ্ধে কৃত নরহত্যা, উচ্ছেদ, ক্রীতদাসতুল্য, জবরদসত্মি, বিতাড়ন, কয়েদ, অপহরণ, আটক, শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণ কিংবা অপর অমানবিক কার্যসমূহ করে থাকে। যারা '৭১ সালে মানবতা বিরম্নদ্ধ অপরাধ, শানত্মিবিরম্নদ্ধ অপরাধ, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ করেছে, তাদেরই ট্রাইবু্যনালে বিচার করা হবে।
১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর দালাল আইনে আটক যে সব ব্যক্তির বিরম্নদ্ধে যুদ্ধাপরাধের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই তাদেরকে সরকার সাধারণ ৰমা করেছিল। তবে সাধারণ ৰমার প্রেসনোটে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, "ধর্ষণ, খুনের চেষ্টা, ঘরবাড়ি অথবা জাহাজ অগি্নসংযোগের দায়ে দ-িত ও অভিযুক্তদের ৰেত্রে ৰমা প্রদর্শন প্রযোজ্য হবে না। দালাল আইনে আটক ৩৭ হাজারের মধ্যে ২৬ হাজার ছাড়া পেয়েছিল। ১১ হাজারেরও বেশি ব্যক্তি দালাল আইনে দেশের বিভিন্ন কারাগারে আটক ছিল।
তদনত্মকারী সংস্থা ও চীফ প্রসিকিউটর নিয়োগের পর কারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তার তালিকা তৈরি হবে, তালিকা তৈরির পর পরই তাদের বিচার শুরম্ন হবে। ইতোমধ্যে একটি মহল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা দিতে শুরম্ন করেছে। আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, ১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নয়, সে সময় যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তাদেরকেই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষী সাব্যসত্ম হলে ট্রাইবু্যনাল তাকে মৃতু্যদ- দিতে পারবে। কিংবা অপরাধের গুরম্নত্বের অন্য দ- দেবে যা ট্রাইবু্যনালের নিকট ন্যায্য ও উপযুক্ত প্রতীয়মান হয়। এখানে উলেস্নখ্য, গুরম্নতর অপরাধে আদালত কতর্ৃক অভিযুক্ত একজন অপরাধীকে মৃতু্যদ- দেয়া উচিত কিনা তদ্বিষয়ে ১৯৪৯ সালে ইংল্যান্ডে মৃতু্যদ- বিষয়ক রাজকীয় কমিশন গঠন হয়েছিল। উক্ত কমিশনের সামনে উপস্থিত হয়ে বিচারপতি লর্ড ডেনিং মৃতু্যদ- বহাল রাখার পৰে সাৰ্য দেন। তিনি বলেছিলেন, মৃতু্যদ- দেয়ার পৰে মৌল যুক্তি এটাই নয় যে, দ-টি ওই অপরাধকে নিরোধ করে এবং এটাই যে দ-টি দ্বারা সমাজ ওই অপরাধের বিরম্নদ্ধে জোরালো সামাজিক ও ঘৃণা জ্ঞাপন করে।
২৮ ফেব্রম্নয়ারি আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদসহ অন্য কর্মকর্তাগণ ট্রাইবু্যনালের স্থান পরিদর্শন করেন। তখন আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, ২৬ মার্চের আগেই তদনত্মকারী সংস্থা এবং চীফ প্রসিকিউটর নিয়োগ দেয়া হবে। এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, শীঘ্রই তদনত্মকারী সংস্থা ও চীফ প্রসিকিউটর নিয়োগ দেয়া হবে। তাদের বসার স্থান না হলে নিয়োগ দেয়ার পর কোথায় বসবে।
সাবেক বিচারপতি গোলাম রাব্বানী জনকন্ঠকে বলেছেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, বিচারে তাদের সর্বোচ্চ শাসত্মি মৃতু্যদ- হতে পারে। তবে বিচারক সাৰ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে সাজা কমাতেও পারেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় জামায়াত ইসলামী, মুসলীম লীগ, নেজামে ইসলাম, পিডিপিসহ শানত্মি কমিটি গঠন করে। তারাই পাকিসত্মানী সেনাবাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে খুন, ধর্ষণ, অগি্নসংযোগ করেছে। ১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল নুরম্নল আমিনের নেতৃত্বে শানত্মি কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্যরা টিক্কা খানের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। তারা টিক্কা খানকে জানায়, পাকিসত্মানের সংহতি ও অখ-তা রৰায় তারা সেনাবাহিনীকে মদদ যুগিয়ে যেতে অটল রয়েছেন (দৈনিক পূর্ব দেশ, ১৭ এপ্রিল, ১৯৭১)।"
বিচারপতি গোলাম রাব্বানী জনকণ্ঠকে আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামীসহ আরও কিছু দল 'মানবতাবিরোধী অপরাধ' করেছে। এর দালিলিক প্রমাণ রয়েছে। জামায়াতের যে সমসত্ম নেতাকর্মী অপরাধ করেছে, তাদেরকে অবশ্যই ট্রাইবু্যনালের মুখোমুখি হতে হবে। তিনি বলেন, কোন ব্যক্তি তিনি যে দেশেরই নাগরিক হন না কেন, যিনি কোন সশস্ত্র, প্রতিরৰা কিংবা সহায়ক দল বা বাহিনী সদস্য হয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সীমানার মধ্যে অত্র আইন কার্যকর হওয়ার পূর্বে কিংবা পরে হোক না কেন, নিম্ন বর্ণিত যে কোন অপরাধ করলে তার বিচার করবার ও শাসত্মি দেয়ার নিরঙ্কুশ ৰমতা ট্রাইবু্যনালের আছে। বেসামরিক জনসমষ্টির যে কারও বিরম্নদ্ধে কৃত নরহত্যা, উচ্ছেদ, ক্রীতদাসতুল্য, জবরদসত্মি, বিতাড়ন, কয়েদ, অপহরণ, আটক, শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণ কিংবা অপর অমানবিক কার্যসমূহ করে থাকে। যারা '৭১ সালে মানবতা বিরম্নদ্ধ অপরাধ, শানত্মিবিরম্নদ্ধ অপরাধ, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ করেছে, তাদেরই ট্রাইবু্যনালে বিচার করা হবে।
১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর দালাল আইনে আটক যে সব ব্যক্তির বিরম্নদ্ধে যুদ্ধাপরাধের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই তাদেরকে সরকার সাধারণ ৰমা করেছিল। তবে সাধারণ ৰমার প্রেসনোটে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, "ধর্ষণ, খুনের চেষ্টা, ঘরবাড়ি অথবা জাহাজ অগি্নসংযোগের দায়ে দ-িত ও অভিযুক্তদের ৰেত্রে ৰমা প্রদর্শন প্রযোজ্য হবে না। দালাল আইনে আটক ৩৭ হাজারের মধ্যে ২৬ হাজার ছাড়া পেয়েছিল। ১১ হাজারেরও বেশি ব্যক্তি দালাল আইনে দেশের বিভিন্ন কারাগারে আটক ছিল।
তদনত্মকারী সংস্থা ও চীফ প্রসিকিউটর নিয়োগের পর কারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তার তালিকা তৈরি হবে, তালিকা তৈরির পর পরই তাদের বিচার শুরম্ন হবে। ইতোমধ্যে একটি মহল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা দিতে শুরম্ন করেছে। আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, ১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নয়, সে সময় যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তাদেরকেই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষী সাব্যসত্ম হলে ট্রাইবু্যনাল তাকে মৃতু্যদ- দিতে পারবে। কিংবা অপরাধের গুরম্নত্বের অন্য দ- দেবে যা ট্রাইবু্যনালের নিকট ন্যায্য ও উপযুক্ত প্রতীয়মান হয়। এখানে উলেস্নখ্য, গুরম্নতর অপরাধে আদালত কতর্ৃক অভিযুক্ত একজন অপরাধীকে মৃতু্যদ- দেয়া উচিত কিনা তদ্বিষয়ে ১৯৪৯ সালে ইংল্যান্ডে মৃতু্যদ- বিষয়ক রাজকীয় কমিশন গঠন হয়েছিল। উক্ত কমিশনের সামনে উপস্থিত হয়ে বিচারপতি লর্ড ডেনিং মৃতু্যদ- বহাল রাখার পৰে সাৰ্য দেন। তিনি বলেছিলেন, মৃতু্যদ- দেয়ার পৰে মৌল যুক্তি এটাই নয় যে, দ-টি ওই অপরাধকে নিরোধ করে এবং এটাই যে দ-টি দ্বারা সমাজ ওই অপরাধের বিরম্নদ্ধে জোরালো সামাজিক ও ঘৃণা জ্ঞাপন করে।
No comments