এটা কি টেস্ট কেস? by কাদের সিদ্দিকী
বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা সফর এবং আজ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সম্মেলনের
কারণে গত সংখ্যায় লিখতে পারিনি। তাই তোমাকে কিছুই জানানো হয়নি।
প্রাকৃতিক
মর্জি মেজাজের যেমন সকাল বিকেল বোঝা যায় না এই শীত, এই গরম ঠিক তেমনি
রাজনৈতিক হাওয়া ঘোলাটে হতে হতে কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে। প্রায় দুই মাস
কারাগারে থেকে গত বুধবার প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। অন্য
দিকে সোমবার আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল দ্বিতীয়
রায় দিয়েছে। প্রথম রায় বাচ্চু রাজাকারকে তার অনুপস্থিতিতে ফাঁসি
দিয়েছে। অনেকে বলছে, ওটা ছিল টেস্ট কেস। আরো মজার, তদন্তের সময় বাচ্চু
রাজাকারকে নজরদারিতে রাখা হয়েছিল। কিন্তু ট্রাইব্যুনালের আদেশ নিয়ে আটক
করতে গিয়ে দেখা গেল পাখি উড়ে গেছে। কত দিন হয়ে গেল যাদের নজর থেকে পাখি
পালিয়েছে তাদের কারো কিছু হয়নি। লোকজন বলাবলি করেছে, বিপুল টাকা খেয়ে
পাহারাদারেরা ছেড়ে দিয়েছে। তাই যদি হয় তাহলে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা
কোথায়? বাচ্চু রাজাকারকে ফাঁসি, তার চাইতে অনেক গুরুতর অভিযোগে কাদের
মোল্লাকে যাবজ্জীবনÑ এ কেমন কথা? এখন আর মানুষের মুখ ধরে রাখা যায় না। তাই
কেউ কেউ বলছে, এটা একটা সরকারি চাল বা আঁতাত। আগামী নির্বাচনে জামায়াতকে
পাশে পাওয়ার একটা সূক্ষ্ম প্রচেষ্টা। কিন্তু ওসব আমি বলি কী করে? আমি একজন
প্রবীণ আইনবিদের ছেলে। কোর্ট-কাচারির পয়সায় লালিত পালিত হয়েছি, তাই
আইনের প্রতি আস্থা রাখতেই হয়। সেজন্যে ওসব নিয়ে আলোচনা করতে চাই না।
কিন্তু মজার কথা ’৬৮ সালে তোমার বিরুদ্ধে যখন আগরতলা মামলা রুজু করা
হয়েছিল, আমরা ওটাকে ষড়যন্ত্র মামলা বলে রাস্তাঘাট তোলপাড় করে ফেলেছিলাম।
কত গুলি, কত হত্যা, কত জেল-জুলুম কিন্তু একপর্যায়ে সমগ্র জাতি আমাদের
পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ট্রাইব্যুনাল তছনছ করে
দেয়া হয়েছিল। বিচারপতিরা পালিয়ে বেঁচেছিল। আমরা যে ’৬৮-’৬৯ সালে আইয়ুব
খানের বিরুদ্ধে তোমার মুক্তির জন্য সারা দেশ কাঁপিয়েছিলাম। এখন
অভিযুক্তদের লোকেরা যদি তেমন ভেবে মিছিল করে, মুক্তি চায় তাহলে তারা
আহাম্মকের রাজ্যে বাস করছে। তোমাকে আগরতলা মামলা থেকে মুক্তির দাবি আর
যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্তদের মুক্তি বা ট্রাইব্যুনাল বাতিল এক নয়। কিন্তু তবু
ডাকাতের দলেও তো কমবেশি লোক থাকে। তবে একটা জিনিস বড় বেদনার লাগছে, এই
ক’দিনে যারা পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে তারা একজনও পাকিস্তান হানাদারদের
দোসর নয়, দালাল-আলবদর-রাজাকার নয়। তাদের স্বাধীন দেশে জন্ম, তারা
স্বাধীনতার সন্তান। তারা কোনো আন্দোলন করছে বলেই পাখির মতো গুলি করে মারা
হবে, এটা মেনে নেয়া যায় না। তারা আন্দোলনের নামে জ্বালাও পোড়াও করলে
গ্রেফতার করে আইনের হাতে সোপর্দ করতে হবে। রাস্তাঘাটে গুলি করে মারা হবে
কেন? সে হোক না জামায়াত কর্মী, ছাত্রশিবির, তাতে কী এসে যায়। তার
দাবিদাওয়া অন্যায্য হলে তার কর্মকাণ্ড আইনবিরোধী হলে আইনানুগ শাস্তিভোগ
করবে। এমনকি অপরাধ প্রমাণ করে তাকে ফাঁসিতে ঝুলালেও কারো কিছু বলার থাকবে
না। কিন্তু আইন রার নামে কাউকে হত্যা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়।
কাদের মোল্লার রায় নিয়ে সরকার এবং জামায়াত যা করছে কোনোটাই গ্রহণযোগ্য নয়। সরকারের এবং তার দলের ফাঁসির দাবি যেমন, জামায়াতের হরতাল করে বিচারকে প্রভাবিত করার চেষ্টাও তেমন গাওয়াজুরি ছাড়া কিছু নয়। দেশের মানুষ আর হরতাল চায় না। কাদের মোল্লার জন্য হরতালে সাধারণ মানুষের প্রয়োজন কী? জামায়াত কি খুব বেশি ভালো দল? ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সবাই যখন ইংরেজের বিরুদ্ধে, তখন জামায়াত জনাব মওদুদীর নেতৃত্বে ইংরেজের গোলামি করেছে। আবার পাকিস্তানের বঞ্চনার বিরুদ্ধে সমগ্র বাঙালি জাতি যখন ঐক্যবদ্ধ তখনো পাকিস্তানের প নিয়েছে। শুধু পাকিস্তানের পে রাজনৈতিক সমর্থন দিলেও তেমন কিছু বলার থাকত না। কিন্তু হানাদারদের কসাই হতে বলেছিল কে? তবে কি মুক্তিযুদ্ধ হয় নাই? তাতে লাখ লাখ মানুষ মরে নাই? হানাদারেরা হত্যা করে নাই? অবশ্যই করেছে। প্রশ্ন নিহতের সংখ্যা ত্রিশ লাখ না আটাশ-ঊনত্রিশ লাখ তেমন থাকতেই পারে। তাই বলে চুরির চুরি আবার শিনাজুরি। ব্রিটিশের শেষ সময় জামায়াতের তাদের সমর্থনের জন্য যেমন পাকিস্তানের আরব সাগরে ফেলে দেয়া উচিত ছিল, তেমনি পাকিস্তানের জামায়াতকে বাংলাদেশ থেকে মুছে ফেলা উচিত। পাকিস্তানের জামায়াতের বাংলার মাটিতে কোনো স্থান থাকার কথা নয়। ৪২ বছর পর আজ বাংলাদেশের ধ্যানধারণায় সৃষ্ট যদি নতুন জামায়াত হয়, তাদের যুদ্ধাপরাধের দায় কাঁধে নেয়া মোটেই যুক্তিযুক্ত নয়। বহু দিন পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যথার্থ বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তখনকার জামায়াতের কার্যকলাপ নতুন প্রজন্মকে ভালোভাবে জানা উচিত। কিন্তু তারা কি তা জানে বা জানার চেষ্টা করবে? কাদের সিদ্দিকী রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী। জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের এজেন্ট। তাহলে তো কাদের মোল্লা এমনিতেই বীর মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যায়। তার তো তেমন কোনো চেষ্টাও করতে হয় না। যত চেষ্টাই করি প্রশ্নগুলো তো চেপে রাখতে পারি না। ’৯৫-৯৬ সালে জামায়াতকে নিয়ে একত্র আন্দোলন না করলে কি বেগম জিয়াকে সরানো যেত না? সে সময় জামায়াত নেতা গোলাম আজমের দোয়া চাওয়ার কি কোনো প্রয়োজন ছিল? ওসব না করলে রাজাকারের গাড়িতে কোনোমতেই পতাকা উঠত না। কাদের মোল্লা কে? তার জন্য সমগ্র দেশ তিগ্রস্ত হবে কেন? তার জন্য সাধারণ মানুষ কষ্ট করবে কেন? তিনি জাতির জন্য কী এমন করেছেন? সরকার যেমন জাতিকে বিভ্রান্ত করছে, নতুন প্রজন্মের জামায়াতও তেমনি জাতির সাথে চরম জালিয়াতি নিষ্ঠুর আচরণ করছে। জামায়াত নেতারা বলছেন, আপিল করবেন। নিশ্চয় তারা আপিল করতে পারেন। যদি আপিল করেন তাহলে হরতাল কেন? গণদাবির বাইরে কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠীর স্বার্থে হরতাল আহ্বানÑ এক দণ্ডনীয় অপরাধ। আর পূর্বঘোষণা ছাড়া হরতাল আহ্বান সে তো হত্যার শামিল। বিষয়গুলো পিতাকে যেমন জানাচ্ছি, তেমনি নবপ্রজন্মের জামায়াতিরা, আপনাদেরকেও জানালাম।
পিতা, তুমি হয়তো এই কাদের মোল্লাকে চেনো না। চেনার কথাও না। আমিও ভালো করে চিনি না। কোনো দিন দেখাসাাৎ হয়নি। এখন জামায়াতে ইসলামীর যুগ্মসচিব আন্তর্জাতিক মানবাধিকার যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে যাবজ্জীবন দণ্ডে দণ্ডিত। কিন্তু সাধারণ মানুষ তাতে খুশি না, তারা চায় ফাঁসি। এ এক অভাবনীয় ব্যাপার। এই প্রথম কারো আহ্বান ছাড়াই কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে ক’দিন থেকে শাহবাগে হাজার হাজার মানুষ একত্র হয়েছে। তাদের এক দাবি রাজাকারের ফাঁসি চাই। আমারও সেই কথা রাজাকারের ফাঁসি চাই, সাথে সাথে পাকিস্তানি পদলেহী রাজাকার বানানো কর্মকর্তাদেরও চাই। তাই তাকে নিয়ে এত আলোচনা। তবে তোমার আমলে যখন প্রথম দালাল আইনে বিচার হচ্ছিল, ৩০-৩৫ হাজার দালাল আলবদর রাজাকার গ্রেফতার হয়েছিল সেখানে তাদের নাম ছিল না। য্দ্ধুাপরাধীদের বিচার এক শ’ বছর পরে হলেও হওয়া উচিত। যুদ্ধাপরাধের বিচারে কোনো টাইম বারড নেই, হাজার বছর পরেও হতে পারে। তবে রাজনৈতিক কারণে কাউকে অপছন্দ হলেই যুদ্ধাপরাধী বলে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেয়া ঠিক না। কেন যেন এখন অনেকের মধ্যে তেমন একটা সন্দেহ দোল খাচ্ছে।
যাক এসব কথা। পরে আরো ভালো করে এসব বিষয় তোমাকে জানাব। সম্প্রতি বাংলাদেশের দুর্নীতির বিশ্বরেকর্ড সৃষ্টিকারী পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন স্থগিত হয়ে গেছে। পিতা, তোমাকে কী বলি! আজকাল কেউ দেশের স্বার্থ দেখে না। সবাই দেখে নিজের স্বার্থ, গোষ্ঠীর স্বার্থ। তোমার কন্যা প্রধানমন্ত্রী হয়ে কেমন যেন হয়ে গেছে। কোনো কিছুকেই পরোয়া করে না, এত বেপরোয়া শাসক আমার জীবনে কখনো দেখিনি। তুমি যখন রাস্তা দিয়ে যেতে কত মানুষ তোমাকে হাত নেড়ে উৎসাহ দিত, ছুটে এসে হাত ছুঁয়ে চুমু খেতো। আর এখন তোমার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন যায়, কোনো কাকপীও দু-চার মাইলের মধ্যে থাকতে পারে না। ২৫-৫০ গজ দূরে দূরে পেছনফিরে পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকে, তাদের মুখটাও দেখতে পায় না। শূন্য রাস্তায় চলাচল করে তোমার কন্যা। এখন তুমিই বলো, এ কেমন নেত্রী? প্রিয় প্রাক্তন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে রা করতে বিশ্বব্যাংক থেকে সরে এসেছেন। এক সপ্তাহ আগে লিখেছিলাম, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কারারুদ্ধ প্রাক্তন সচিব মোশাররফ হোসেন শেখ রেহেনার জেইঠাস অথবা জা’র জামাই। তাই কি হয়? হয়েছে। গত পরশু তিনি জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। সৈয়দ আবুল হোসেন কিছু দিন জেল খেটে এলে কি তেমন মহাভারত অশুদ্ধ হতো। দেশের স্বার্থ তো ুণœ হতো না। এখন বলছেন, নিজেরাই সেতু করবেন। তিনি আহ্বানও করেছেন স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের চকোলেটের পয়সা বাঁচিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য সাহায্য করতে। এ পর্যন্ত পদ্মা সেতু তহবিলে চকোলেট না খাওয়া পয়সা দুই লরে কিছু কম জমা হয়েছে। সেতু নির্মাণে খরচ হবে ৩০-৩৫ হাজার কোটি টাকা। এক বছরে জমা হয়েছে দুই লাখ। এভাবে অর্থসমাগম হলে ক’বছর লাগবে পরম প্রভুই বলতে পারবেন। তাও আবার দাবি করছেন তাদের আমলেই শেষ করে ফেলবেন। কারো কথায় কোনো মিল নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন এক রকম, অর্থমন্ত্রী মাথা ঝাঁকিয়ে অন্য রকম, যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের হেলেদুলে বলেন আরেক রকমÑ সাধারণ মানুষ পড়েছে মহাবিপদে। কোনটা বিশ্বাস করবে? এমন দুর্বিপাকে বাংলার মানুষ আর কখনো পড়েনি।
মাঝে আবার বিরোধী দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এক প্রবন্ধ বিদেশী পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। যে কথা দেশের সুধীজনেরা অহরহ বলেন, সেই একই রকম কথা বিরোধী দলের নেত্রীও বলেছেন। উনি যদি বিরোধী দলের নেত্রী না হতেন তাহলে সরকার এতটা প্রতিক্রিয়া দেখাত না। বিরোধী দলের নেত্রী বলেই যথার্থই প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। লেখাটা যদি যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে উদ্দেশ করে না হতো, শুধু মতামত হতো তাহলে তেমন কিছু বলার ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারকে সম্পৃক্ত করা মোটেই ঠিক হয়নি। পত্রিকায় যেভাবে লেখা হয় সেভাবে যদি কোনো প্রবন্ধ নিবন্ধ হতো তাহলে হয়তো কারো তেমন বলার ছিল না। বিরোধী দলে আছেন বলেই একজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অন্য দেশকে আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ডেকে আনবেনÑ এটা কোনো মতেই সমর্থনযোগ্য নয়।
আমাদের সম্মেলনের আগে আর কোনো লেখা বেরুবে না। তাই তোমাকেই জানাই গত ২৯শে ডিসেম্বর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে হাজারো কর্মী, সমর্থক ও প্রবীণ নেতাদের সামনে ঘোষণা করেছিলাম, সম্মেলনের পরে জনসংযোগে বেরুব। লাগামহীন শাসনের অবসান না ঘটিয়ে ঘরে ফিরব না। লোকজন সামনে পেয়ে তুমুল হাততালির আশায় অনেকেই এমন বলে। বক্তৃতা করেই রাতে বাড়ি ফেরে। আমি তো তোমার ছেলে, তেমন করে ফিরতে চাই না, তাই ১২ই ফেব্র“য়ারি টাঙ্গাইলে হুজুর মওলানা ভাসানীর কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে ঘরছাড়া গণসংযোগের সূচনা করব। ১৪ই ফেব্র“য়ারি যাবো তোমার কবর জিয়ারত করে দোয়া চাইতে। তারপর ১৮ তারিখ হজরত শাহজালালের মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে অখণ্ড গণসংযোগ। তুমি একটু দোয়া কোরো। তুমি তো জানোই, শুধু আহ্বান করেছিলে হানাদারদের মোকাবেলা করতে। একটা চাকু দিয়েও যাও নাই। যুদ্ধ শেষে লাধিক অস্ত্র তোমার পদতলে বিছিয়ে দিয়েছিলাম। তুমি দোয়া করলে আমরা সব পারি। এবার শোনো প্রস্তুতির কথা। প্রায় সবাইকে দাওয়াত করেছি- ড. কামাল হোসেন, বদরুদ্দোজা চৌধুরী, ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, আ স ম আবদুর রব, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, শেখ শহীদ, রুহুল আমীন হাওলাদার এমন কেউ বাকি নেই যাদের দাওয়াত করিনি। বর্তমানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ খুবই মতাধর নেতা। জাতীয় পার্টি, জেপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে গিয়েছিলেন। সেখানে আমি বলেছিলাম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত দল। জেপির অনুষ্ঠানে যদি আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয়ই অংশ নেয়, সেখানে যেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ বঞ্চিত না হয়। আওয়ামী লীগ নেত্রীকে দাওয়াত করব, তিনি এবং তার প্রতিনিধি যেন সম্মেলনে শুভেচ্ছা জানান। জনাব হানিফ কথা দিয়েছিলেন, আওয়ামী লীগ অবশ্যই কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের অনুষ্ঠানে প্রতিনিধি পাঠাবেন। আওয়ামী লীগের সভানেত্রীসহ দলীয় কর্মীদের সস্ত্রীক দাওয়াত দিতে চেয়েছিলাম। এ জন্য ২০-২২ তারিখের দিকে তার সুবিধামতো সময়ও চেয়েছিলাম। ৩রা ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত অপো করে মাহবুব-উল-আলম হানিফকে আবার জিজ্ঞেস করেছিলাম। ভদ্রলোক যথার্থ সৌজন্যের সাথে বলেছেন, যারা সময় দেয় তাদেরকে আপনার কথা জানিয়ে দিয়েছি। তবে আমি আপনার দাওয়াত কবুল করলাম। জানি না, সে কবুল বিবাহ ভঙ্গের মতো হবে কি না। কারণ লেখাটা যখন ছাপা হবে তার অনেক পরে আমাদের সম্মেলন শুরু হবে। ড. কামাল হোসেনকে তার চেম্বারে দাওয়াত দিতে গিয়েছিলাম। শুনেছি, তিনি পায়ে ব্যথা পেয়েছেন। আসবেন কি না জানি না। মাস দুই আগে জাতীয় পার্টির মহাসচিব ছোট ভাই রুহুল আমীন হাওলাদারকে পত্রিকায় দু’কথা নছিহত করেছিলাম। হাওলাদারকে সেই ’৭২ সাল থেকে চিনি। তাকে আমার খুবই পছন্দ। তিনি বলেছিলেন, পল্লীবন্ধুকে নিয়ে সম্মেলনে যাবো। কিন্তু গত ৫ তারিখ পল্লীবন্ধু আমেরিকায় গেছেন। এমনিতেই ড. কামাল হোসেন অন্যদের ছোটখাটো মিটিংয়ে গেলেও আমাদের সভা-সমিতিতে অতটা কষ্ট করে আসতে চান না। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এলে তো আসতেনই না। এখন আসবেন কি না তা-ও বলতে পারি না। তবে বিকল্প ধারার প্রেসিডেন্ট বদরুদ্দোজা চৌধুরীসহ অনেকেই আসবেন। প্রশ্ন হলো, আমরা তাদের যথাযথ প্রাপ্য সম্মান দিতে পারব কি না। এ জন্য বড় দুশ্চিন্তায় আছি। বৃহস্পতিবার বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়াকে দাওয়াত দিয়েছি। সরকারের বাইরে সবাই বিরোধী দল। সেই অর্থে প্রধান বিরোধী দলের নেতা, সব বিরোধী দলের নেতা, তাই তার কাছে গিয়েছিলাম। ভীষণ সৌজন্য দেখিয়েছেন। সদ্য কারামুক্ত ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও সেখানে ছিলেন। জেল খাটায় কিছুটা স্বাস্থ্যহানি হয়েছে। পিতা, তুমি দোয়া করো, আমাদের দ্বারা যেন তোমার কোনো সম্মান নষ্ট না হয়। আমরা যেন তোমার সম্মান রা করতে পারি। তুমি দোয়া করলেই আমাদের সংগ্রাম সফল হবে। মঞ্জিলে মকসুদে পৌঁছবে।
তুমি জানো কি না জানি না, দিগন্ত নামে এক চ্যানেলে ‘সবার উপরে দেশ’ এক মুক্ত অনুষ্ঠান করি। তা প্রায় এক বছর। ঝড়-বৃষ্টি-তুফান কখনো ব্যাঘাত ঘটাতে পারেনি। অনুষ্ঠানের মূল ক্যামেরাম্যান কে এম জালাল খান প্রতিদিন হাসিমুখে অপোয় থাকত। আগে বিটিভিতে কাজ করত। অনেক দিন সংসদ অধিবেশন কভার করেছে। তাকে কখনো কালো মুখ দেখিনি। গত ২রা জানুয়ারি শনিবার যখন স্টুডিওতে প্রবেশ করি তখনো হাসিমুখে বসেছিলেন। যেতেই অন্য দিনের মতো সাদরে গ্রহণ করেছিলেন। অনুষ্ঠানটি প্রতি শনিবার রাত ১১.১৫ মিনিট থেকে ১২টা পর্যন্ত চলে। পরের দিন সকাল ৯.০৫ মিনিটে পুনঃপ্রচার হয়। দিগন্ত টেলিভিশনে তখন ‘সবার উপরে দেশ’ পুনঃপ্রচার হচ্ছিল। হঠাৎই ফোন পেলাম, ক্যামেরাম্যান কে এম জালাল খান সকালে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছে। তোমার মতো রাত ১২টায় যাকে ছেড়ে এলাম সকালে তিনি নেইÑ এই তো জীবন। তা-ও কেন আমরা মারমারি কাটাকাটি করি, আপনকে পর করে আল্লাহর কাছে গুনাহগার হই। পিতা, এই সদাহাস্য মানুষটার জন্য একটু দোয়া কোরো। আল্লাহ যেন তাকে বেহেশতবাসী করেন। আর তার পরিবার পরিজনকে এই আঘাত সইবার শক্তি দান করেন, আমিন।
কাদের মোল্লার রায় নিয়ে সরকার এবং জামায়াত যা করছে কোনোটাই গ্রহণযোগ্য নয়। সরকারের এবং তার দলের ফাঁসির দাবি যেমন, জামায়াতের হরতাল করে বিচারকে প্রভাবিত করার চেষ্টাও তেমন গাওয়াজুরি ছাড়া কিছু নয়। দেশের মানুষ আর হরতাল চায় না। কাদের মোল্লার জন্য হরতালে সাধারণ মানুষের প্রয়োজন কী? জামায়াত কি খুব বেশি ভালো দল? ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সবাই যখন ইংরেজের বিরুদ্ধে, তখন জামায়াত জনাব মওদুদীর নেতৃত্বে ইংরেজের গোলামি করেছে। আবার পাকিস্তানের বঞ্চনার বিরুদ্ধে সমগ্র বাঙালি জাতি যখন ঐক্যবদ্ধ তখনো পাকিস্তানের প নিয়েছে। শুধু পাকিস্তানের পে রাজনৈতিক সমর্থন দিলেও তেমন কিছু বলার থাকত না। কিন্তু হানাদারদের কসাই হতে বলেছিল কে? তবে কি মুক্তিযুদ্ধ হয় নাই? তাতে লাখ লাখ মানুষ মরে নাই? হানাদারেরা হত্যা করে নাই? অবশ্যই করেছে। প্রশ্ন নিহতের সংখ্যা ত্রিশ লাখ না আটাশ-ঊনত্রিশ লাখ তেমন থাকতেই পারে। তাই বলে চুরির চুরি আবার শিনাজুরি। ব্রিটিশের শেষ সময় জামায়াতের তাদের সমর্থনের জন্য যেমন পাকিস্তানের আরব সাগরে ফেলে দেয়া উচিত ছিল, তেমনি পাকিস্তানের জামায়াতকে বাংলাদেশ থেকে মুছে ফেলা উচিত। পাকিস্তানের জামায়াতের বাংলার মাটিতে কোনো স্থান থাকার কথা নয়। ৪২ বছর পর আজ বাংলাদেশের ধ্যানধারণায় সৃষ্ট যদি নতুন জামায়াত হয়, তাদের যুদ্ধাপরাধের দায় কাঁধে নেয়া মোটেই যুক্তিযুক্ত নয়। বহু দিন পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যথার্থ বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তখনকার জামায়াতের কার্যকলাপ নতুন প্রজন্মকে ভালোভাবে জানা উচিত। কিন্তু তারা কি তা জানে বা জানার চেষ্টা করবে? কাদের সিদ্দিকী রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী। জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের এজেন্ট। তাহলে তো কাদের মোল্লা এমনিতেই বীর মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যায়। তার তো তেমন কোনো চেষ্টাও করতে হয় না। যত চেষ্টাই করি প্রশ্নগুলো তো চেপে রাখতে পারি না। ’৯৫-৯৬ সালে জামায়াতকে নিয়ে একত্র আন্দোলন না করলে কি বেগম জিয়াকে সরানো যেত না? সে সময় জামায়াত নেতা গোলাম আজমের দোয়া চাওয়ার কি কোনো প্রয়োজন ছিল? ওসব না করলে রাজাকারের গাড়িতে কোনোমতেই পতাকা উঠত না। কাদের মোল্লা কে? তার জন্য সমগ্র দেশ তিগ্রস্ত হবে কেন? তার জন্য সাধারণ মানুষ কষ্ট করবে কেন? তিনি জাতির জন্য কী এমন করেছেন? সরকার যেমন জাতিকে বিভ্রান্ত করছে, নতুন প্রজন্মের জামায়াতও তেমনি জাতির সাথে চরম জালিয়াতি নিষ্ঠুর আচরণ করছে। জামায়াত নেতারা বলছেন, আপিল করবেন। নিশ্চয় তারা আপিল করতে পারেন। যদি আপিল করেন তাহলে হরতাল কেন? গণদাবির বাইরে কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠীর স্বার্থে হরতাল আহ্বানÑ এক দণ্ডনীয় অপরাধ। আর পূর্বঘোষণা ছাড়া হরতাল আহ্বান সে তো হত্যার শামিল। বিষয়গুলো পিতাকে যেমন জানাচ্ছি, তেমনি নবপ্রজন্মের জামায়াতিরা, আপনাদেরকেও জানালাম।
পিতা, তুমি হয়তো এই কাদের মোল্লাকে চেনো না। চেনার কথাও না। আমিও ভালো করে চিনি না। কোনো দিন দেখাসাাৎ হয়নি। এখন জামায়াতে ইসলামীর যুগ্মসচিব আন্তর্জাতিক মানবাধিকার যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে যাবজ্জীবন দণ্ডে দণ্ডিত। কিন্তু সাধারণ মানুষ তাতে খুশি না, তারা চায় ফাঁসি। এ এক অভাবনীয় ব্যাপার। এই প্রথম কারো আহ্বান ছাড়াই কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে ক’দিন থেকে শাহবাগে হাজার হাজার মানুষ একত্র হয়েছে। তাদের এক দাবি রাজাকারের ফাঁসি চাই। আমারও সেই কথা রাজাকারের ফাঁসি চাই, সাথে সাথে পাকিস্তানি পদলেহী রাজাকার বানানো কর্মকর্তাদেরও চাই। তাই তাকে নিয়ে এত আলোচনা। তবে তোমার আমলে যখন প্রথম দালাল আইনে বিচার হচ্ছিল, ৩০-৩৫ হাজার দালাল আলবদর রাজাকার গ্রেফতার হয়েছিল সেখানে তাদের নাম ছিল না। য্দ্ধুাপরাধীদের বিচার এক শ’ বছর পরে হলেও হওয়া উচিত। যুদ্ধাপরাধের বিচারে কোনো টাইম বারড নেই, হাজার বছর পরেও হতে পারে। তবে রাজনৈতিক কারণে কাউকে অপছন্দ হলেই যুদ্ধাপরাধী বলে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেয়া ঠিক না। কেন যেন এখন অনেকের মধ্যে তেমন একটা সন্দেহ দোল খাচ্ছে।
যাক এসব কথা। পরে আরো ভালো করে এসব বিষয় তোমাকে জানাব। সম্প্রতি বাংলাদেশের দুর্নীতির বিশ্বরেকর্ড সৃষ্টিকারী পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন স্থগিত হয়ে গেছে। পিতা, তোমাকে কী বলি! আজকাল কেউ দেশের স্বার্থ দেখে না। সবাই দেখে নিজের স্বার্থ, গোষ্ঠীর স্বার্থ। তোমার কন্যা প্রধানমন্ত্রী হয়ে কেমন যেন হয়ে গেছে। কোনো কিছুকেই পরোয়া করে না, এত বেপরোয়া শাসক আমার জীবনে কখনো দেখিনি। তুমি যখন রাস্তা দিয়ে যেতে কত মানুষ তোমাকে হাত নেড়ে উৎসাহ দিত, ছুটে এসে হাত ছুঁয়ে চুমু খেতো। আর এখন তোমার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন যায়, কোনো কাকপীও দু-চার মাইলের মধ্যে থাকতে পারে না। ২৫-৫০ গজ দূরে দূরে পেছনফিরে পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকে, তাদের মুখটাও দেখতে পায় না। শূন্য রাস্তায় চলাচল করে তোমার কন্যা। এখন তুমিই বলো, এ কেমন নেত্রী? প্রিয় প্রাক্তন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে রা করতে বিশ্বব্যাংক থেকে সরে এসেছেন। এক সপ্তাহ আগে লিখেছিলাম, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কারারুদ্ধ প্রাক্তন সচিব মোশাররফ হোসেন শেখ রেহেনার জেইঠাস অথবা জা’র জামাই। তাই কি হয়? হয়েছে। গত পরশু তিনি জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। সৈয়দ আবুল হোসেন কিছু দিন জেল খেটে এলে কি তেমন মহাভারত অশুদ্ধ হতো। দেশের স্বার্থ তো ুণœ হতো না। এখন বলছেন, নিজেরাই সেতু করবেন। তিনি আহ্বানও করেছেন স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের চকোলেটের পয়সা বাঁচিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য সাহায্য করতে। এ পর্যন্ত পদ্মা সেতু তহবিলে চকোলেট না খাওয়া পয়সা দুই লরে কিছু কম জমা হয়েছে। সেতু নির্মাণে খরচ হবে ৩০-৩৫ হাজার কোটি টাকা। এক বছরে জমা হয়েছে দুই লাখ। এভাবে অর্থসমাগম হলে ক’বছর লাগবে পরম প্রভুই বলতে পারবেন। তাও আবার দাবি করছেন তাদের আমলেই শেষ করে ফেলবেন। কারো কথায় কোনো মিল নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন এক রকম, অর্থমন্ত্রী মাথা ঝাঁকিয়ে অন্য রকম, যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের হেলেদুলে বলেন আরেক রকমÑ সাধারণ মানুষ পড়েছে মহাবিপদে। কোনটা বিশ্বাস করবে? এমন দুর্বিপাকে বাংলার মানুষ আর কখনো পড়েনি।
মাঝে আবার বিরোধী দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এক প্রবন্ধ বিদেশী পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। যে কথা দেশের সুধীজনেরা অহরহ বলেন, সেই একই রকম কথা বিরোধী দলের নেত্রীও বলেছেন। উনি যদি বিরোধী দলের নেত্রী না হতেন তাহলে সরকার এতটা প্রতিক্রিয়া দেখাত না। বিরোধী দলের নেত্রী বলেই যথার্থই প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। লেখাটা যদি যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে উদ্দেশ করে না হতো, শুধু মতামত হতো তাহলে তেমন কিছু বলার ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারকে সম্পৃক্ত করা মোটেই ঠিক হয়নি। পত্রিকায় যেভাবে লেখা হয় সেভাবে যদি কোনো প্রবন্ধ নিবন্ধ হতো তাহলে হয়তো কারো তেমন বলার ছিল না। বিরোধী দলে আছেন বলেই একজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অন্য দেশকে আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ডেকে আনবেনÑ এটা কোনো মতেই সমর্থনযোগ্য নয়।
আমাদের সম্মেলনের আগে আর কোনো লেখা বেরুবে না। তাই তোমাকেই জানাই গত ২৯শে ডিসেম্বর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে হাজারো কর্মী, সমর্থক ও প্রবীণ নেতাদের সামনে ঘোষণা করেছিলাম, সম্মেলনের পরে জনসংযোগে বেরুব। লাগামহীন শাসনের অবসান না ঘটিয়ে ঘরে ফিরব না। লোকজন সামনে পেয়ে তুমুল হাততালির আশায় অনেকেই এমন বলে। বক্তৃতা করেই রাতে বাড়ি ফেরে। আমি তো তোমার ছেলে, তেমন করে ফিরতে চাই না, তাই ১২ই ফেব্র“য়ারি টাঙ্গাইলে হুজুর মওলানা ভাসানীর কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে ঘরছাড়া গণসংযোগের সূচনা করব। ১৪ই ফেব্র“য়ারি যাবো তোমার কবর জিয়ারত করে দোয়া চাইতে। তারপর ১৮ তারিখ হজরত শাহজালালের মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে অখণ্ড গণসংযোগ। তুমি একটু দোয়া কোরো। তুমি তো জানোই, শুধু আহ্বান করেছিলে হানাদারদের মোকাবেলা করতে। একটা চাকু দিয়েও যাও নাই। যুদ্ধ শেষে লাধিক অস্ত্র তোমার পদতলে বিছিয়ে দিয়েছিলাম। তুমি দোয়া করলে আমরা সব পারি। এবার শোনো প্রস্তুতির কথা। প্রায় সবাইকে দাওয়াত করেছি- ড. কামাল হোসেন, বদরুদ্দোজা চৌধুরী, ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, আ স ম আবদুর রব, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, শেখ শহীদ, রুহুল আমীন হাওলাদার এমন কেউ বাকি নেই যাদের দাওয়াত করিনি। বর্তমানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ খুবই মতাধর নেতা। জাতীয় পার্টি, জেপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে গিয়েছিলেন। সেখানে আমি বলেছিলাম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত দল। জেপির অনুষ্ঠানে যদি আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয়ই অংশ নেয়, সেখানে যেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ বঞ্চিত না হয়। আওয়ামী লীগ নেত্রীকে দাওয়াত করব, তিনি এবং তার প্রতিনিধি যেন সম্মেলনে শুভেচ্ছা জানান। জনাব হানিফ কথা দিয়েছিলেন, আওয়ামী লীগ অবশ্যই কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের অনুষ্ঠানে প্রতিনিধি পাঠাবেন। আওয়ামী লীগের সভানেত্রীসহ দলীয় কর্মীদের সস্ত্রীক দাওয়াত দিতে চেয়েছিলাম। এ জন্য ২০-২২ তারিখের দিকে তার সুবিধামতো সময়ও চেয়েছিলাম। ৩রা ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত অপো করে মাহবুব-উল-আলম হানিফকে আবার জিজ্ঞেস করেছিলাম। ভদ্রলোক যথার্থ সৌজন্যের সাথে বলেছেন, যারা সময় দেয় তাদেরকে আপনার কথা জানিয়ে দিয়েছি। তবে আমি আপনার দাওয়াত কবুল করলাম। জানি না, সে কবুল বিবাহ ভঙ্গের মতো হবে কি না। কারণ লেখাটা যখন ছাপা হবে তার অনেক পরে আমাদের সম্মেলন শুরু হবে। ড. কামাল হোসেনকে তার চেম্বারে দাওয়াত দিতে গিয়েছিলাম। শুনেছি, তিনি পায়ে ব্যথা পেয়েছেন। আসবেন কি না জানি না। মাস দুই আগে জাতীয় পার্টির মহাসচিব ছোট ভাই রুহুল আমীন হাওলাদারকে পত্রিকায় দু’কথা নছিহত করেছিলাম। হাওলাদারকে সেই ’৭২ সাল থেকে চিনি। তাকে আমার খুবই পছন্দ। তিনি বলেছিলেন, পল্লীবন্ধুকে নিয়ে সম্মেলনে যাবো। কিন্তু গত ৫ তারিখ পল্লীবন্ধু আমেরিকায় গেছেন। এমনিতেই ড. কামাল হোসেন অন্যদের ছোটখাটো মিটিংয়ে গেলেও আমাদের সভা-সমিতিতে অতটা কষ্ট করে আসতে চান না। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এলে তো আসতেনই না। এখন আসবেন কি না তা-ও বলতে পারি না। তবে বিকল্প ধারার প্রেসিডেন্ট বদরুদ্দোজা চৌধুরীসহ অনেকেই আসবেন। প্রশ্ন হলো, আমরা তাদের যথাযথ প্রাপ্য সম্মান দিতে পারব কি না। এ জন্য বড় দুশ্চিন্তায় আছি। বৃহস্পতিবার বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়াকে দাওয়াত দিয়েছি। সরকারের বাইরে সবাই বিরোধী দল। সেই অর্থে প্রধান বিরোধী দলের নেতা, সব বিরোধী দলের নেতা, তাই তার কাছে গিয়েছিলাম। ভীষণ সৌজন্য দেখিয়েছেন। সদ্য কারামুক্ত ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও সেখানে ছিলেন। জেল খাটায় কিছুটা স্বাস্থ্যহানি হয়েছে। পিতা, তুমি দোয়া করো, আমাদের দ্বারা যেন তোমার কোনো সম্মান নষ্ট না হয়। আমরা যেন তোমার সম্মান রা করতে পারি। তুমি দোয়া করলেই আমাদের সংগ্রাম সফল হবে। মঞ্জিলে মকসুদে পৌঁছবে।
তুমি জানো কি না জানি না, দিগন্ত নামে এক চ্যানেলে ‘সবার উপরে দেশ’ এক মুক্ত অনুষ্ঠান করি। তা প্রায় এক বছর। ঝড়-বৃষ্টি-তুফান কখনো ব্যাঘাত ঘটাতে পারেনি। অনুষ্ঠানের মূল ক্যামেরাম্যান কে এম জালাল খান প্রতিদিন হাসিমুখে অপোয় থাকত। আগে বিটিভিতে কাজ করত। অনেক দিন সংসদ অধিবেশন কভার করেছে। তাকে কখনো কালো মুখ দেখিনি। গত ২রা জানুয়ারি শনিবার যখন স্টুডিওতে প্রবেশ করি তখনো হাসিমুখে বসেছিলেন। যেতেই অন্য দিনের মতো সাদরে গ্রহণ করেছিলেন। অনুষ্ঠানটি প্রতি শনিবার রাত ১১.১৫ মিনিট থেকে ১২টা পর্যন্ত চলে। পরের দিন সকাল ৯.০৫ মিনিটে পুনঃপ্রচার হয়। দিগন্ত টেলিভিশনে তখন ‘সবার উপরে দেশ’ পুনঃপ্রচার হচ্ছিল। হঠাৎই ফোন পেলাম, ক্যামেরাম্যান কে এম জালাল খান সকালে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছে। তোমার মতো রাত ১২টায় যাকে ছেড়ে এলাম সকালে তিনি নেইÑ এই তো জীবন। তা-ও কেন আমরা মারমারি কাটাকাটি করি, আপনকে পর করে আল্লাহর কাছে গুনাহগার হই। পিতা, এই সদাহাস্য মানুষটার জন্য একটু দোয়া কোরো। আল্লাহ যেন তাকে বেহেশতবাসী করেন। আর তার পরিবার পরিজনকে এই আঘাত সইবার শক্তি দান করেন, আমিন।
No comments