বেসরকারি আবাসন প্রকল্পে অনীহা সরকারের by হামিম উল কবির
বেসরকারি আবাসন প্রকল্প অনুমোদনের পক্ষে নয় সরকার। ১৯৯০ সালের পর গৃহায়ন ও
গণপূর্ত মন্ত্রণালয় মাত্র ছয়টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে।
এগুলো
খুবই ছোট আকারের। বিশ্বের সবচেয়ে বর্ধিষ্ণু জনসংখ্যার শহর ঢাকা। আগামী
২০১৫ সালের মধ্যেই মেগা সিটির তালিকায় উঠবে ঢাকার নাম। এত মানুষের মাথা
গোঁজার ঠাঁই করে দিতে বেসরকারি উদ্যোগে ঢাকা এবং ঢাকার আশপাশে শতাধিক আবাসন
প্রকল্প গড়ে উঠলেও ১৯৮৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত অনুমোদন পেয়েছে ২৬টি।
বিপরীতে অনুমোদনের জন্য আবেদন পড়ে আছে শতাধিক। সরকারিভাবে যেসব আবাসন
প্রকল্প করা হয়েছে তাতে সব শ্রেণীর মানুষ যেতে পারে না। অভিজ্ঞমহল বলছে,
পরিকল্পিত শহর গড়ে তুলতে হলে বেসরকারি আবাসন প্রকল্প দ্রুত অনুমোদন দেয়া
উচিত। তা না হলে ঢাকা বিশ্বের মানচিত্রে ঘিঞ্জি শহর হিসেবেই পরিচিতি পাবে।
অনুমোদন না পাওয়ার ব্যাপারে রাজউক, নগর পরিকল্পনাবিদ ও আবাসন কোম্পানির লোকজনের পরস্পরবিরোধী মতামত রয়েছে। নগর পরিকল্পনাবিদদের বাদ দিলে রাজউক ও আবাসন কোম্পানির লোকেরা একে অপরকে দোষারোপ করে কথা বলছেন। কিন্তু পরিস্থিতি সামাল দিতে বাস্তব কোনো পদক্ষেপ নেই। রাজউক সব সময় বলে থাকে অনুমোদন পাওয়ার জন্য যেসব নীতিমালা রয়েছে আবাসন কোম্পানিগুলো তা পূর্ণ করতে পারে না বা নীতিমালা মেনে আবাসন কোম্পানি করতে চায় না।
কেন আবাসন প্রকল্প অনুমোদন পাচ্ছে না এ প্রশ্নের জবাবে রাজউকের সদস্য (পরিকল্পনা) শেখ আব্দুল মান্নান নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, ‘আবাসন প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয় মন্ত্রণালয় থেকে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রীর নেতৃত্বে কমিটি এ কাজটি করে থাকে। রাজউক প্রাথমিক শর্ত পূরণ করা হলে অথবা শর্ত পূরণ না হলে কোম্পানিগুলোকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয় ঘাটতিগুলো। ঘাটতিগুলো পূরণ করা হলে সবশেষে পাঠানো হয় মন্ত্রণালয়ে।’
এ ব্যাপারে মতামত জানতে চাওয়া হয় নগর পরিকল্পনাবিদ ড. তৌফিক এম সেরাজের কাছে। তিনি জানান, ১৯৯৬ সালে ঢাকার জন্য যে স্ট্রাকচারাল প্ল্যান (কাঠামো পরিকল্পনা) করা হয় তা চূড়ান্ত হওয়ার আগে অনেক অ্যাডহক পরিকল্পনা করা হয়। সব পরিকল্পনার মূল হলো বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি)। সরকারের তৈরী ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, জলাভূমি আইন, ভূমি উন্নয়ন বিধিমালাসহ অন্য যেসব আইন বা বিধি করা হয়েছে এগুলোর সাথে বিএনবিসি অনেক ক্ষেত্রে সাংঘর্ষিক। স¤পূর্ণভাবে কোনো একটি আইন বা বিধিমালা বিএনবিসি অনুসরণ করে চলে না। এর মধ্যেই অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়ে গেছে।
ড. সেরাজ বলেন, বিএনবিসি ও ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) মেয়াদ ২০১৫ সালের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। আগামী ২৫ বছরের জন্য সব আইন বা বিধিমালা এক করে একটি সমন্বিত মহাপরিকল্পনা সুচারুরূপে করা হলে আবাসন সমস্যার সমাধান হতে পারে। তা না হলে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা আবাসন প্রকল্প বা স্থাপনা ঠেকানো যাবে না। তিনি পরামর্শ দেন, বিষয়টি নিয়ে কালক্ষেপণ করা উচিত নয়।
ড্যাপ প্রণয়নে জড়িত ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সারওয়ার জাহান। তিনি বিষয়টি দেখছেন একটু ভিন্নভাবে। নয়া দিগন্তকে রাজউকের মতোই তিনি জানান, আবাসন কোম্পানিগুলো বিরাজমান শর্ত পূরণ করতে পারে না বা করে না। তারা অল্প কিছু নিষ্কণ্টক জমি কিনে রাজউকে আবেদন করতে আসেন বিশাল প্রকল্প নিয়ে। তিনি বলেন, ঢাকার চারপাশে যেসব আবাসন গড়ে উঠছে তা মুষ্টিমেয় কিছু লোকের হাতে চলে যাচ্ছে। কেউ কেউ প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্লট কিনে রাখছেন ভবিষ্যতের জন্য। এদের এ প্লটগুলোতে ভবন নির্মাণ করতে ১৫ থেকে ২০ বছর সময় লাগবে। তাই এগুলো ঢাকার আবাসন সমস্যা সমাধানে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। তিনি বলেন, আমরা হিসাব করে দেখেছি বর্তমান ঢাকায় কম ঘন বসতি এলাকায় পরিকল্পিত উপায়ে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হলে আবাসন সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
বসুন্ধরা গ্রুপের ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেডের মার্কেটিং অ্যান্ড সেলসের নির্বাহী পরিচালক মো: তৌহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘সরকারি হওয়ায় রাজউকের আবাসন প্রকল্পগুলো অনুমোদন পাচ্ছে। যদিও বিদ্যমান বিধিমালাগুলো শর্ত পূরণ করে না। বিপরীতে বেসরকারি উদ্যোক্তারা যখনই প্রকল্প নিয়ে রাজউকে যান তখনই আইন-কানুনের প্যাঁচে ফেলে দেয়া হয়। কলমের খোঁচায় রাজউকের আবাসন প্রকল্প অনুমোদন হয় কিন্তু ঝুলিয়ে রাখা হয় বেসরকারি প্রকল্পগুলো। তিনি বলেন, এমন আইন কেন করা হলো যা বাস্তবায়ন করা যায় না? রাজউক নিজেরা হাজার হাজার একর জমি সরকারি ক্ষমতায় অধিগ্রহণ করে। আর আমরা এক কাঠা ও পাঁচ কাঠা করে কিনি। তৌহিদুল ইসলাম সরকারের উদ্দেশে বলেন, বেসরকারি উদ্যোক্তারা মেনে চলতে পারেন এমন আইন করা উচিত, যাতে ঢাকার মানুষকে বসবাসের সুযোগ করে দেয়া যায়।’
যে ছয়টি আবাসন প্রকল্প ১৯৯০’র পর রাজউক অনুমোদন দিয়েছে এর মধ্যে চারটি অনুমোদন দেয়া হয় ২০১২ সালে। এগুলো হলো নেপচুন ডেভেলপমেন্টের ইউনাইটেড সিটি, বিডিডিএলের নতুন ধারা, আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশনের গ্রিন মডেল টাউন, স্বদেশ প্রপার্টিজের বর্ণালী আবাসন প্রকল্প। এগুলো অনুমোদন দেয়ার সাথে ‘শর্ত সাপেক্ষ’ শব্দ দুটো জুড়ে দেয়া হয়। এই চারটি প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে বিতর্কিত হলো বিডিডিএলের নতুন ধারা প্রকল্প। অন্যের জমি জাল দলিল করে রাজউকে জমা দিয়েছে বলে এলাকাবাসী লিখিত অভিযোগ করেছেন। অবশিষ্ট দু’টি প্রকল্প হলো ২০০৩ সালে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের নিকেতন এবং ১৯৯২ সালে অনুমোদিত প্রবাল হাউজিং।
অনুমোদন না পাওয়ার ব্যাপারে রাজউক, নগর পরিকল্পনাবিদ ও আবাসন কোম্পানির লোকজনের পরস্পরবিরোধী মতামত রয়েছে। নগর পরিকল্পনাবিদদের বাদ দিলে রাজউক ও আবাসন কোম্পানির লোকেরা একে অপরকে দোষারোপ করে কথা বলছেন। কিন্তু পরিস্থিতি সামাল দিতে বাস্তব কোনো পদক্ষেপ নেই। রাজউক সব সময় বলে থাকে অনুমোদন পাওয়ার জন্য যেসব নীতিমালা রয়েছে আবাসন কোম্পানিগুলো তা পূর্ণ করতে পারে না বা নীতিমালা মেনে আবাসন কোম্পানি করতে চায় না।
কেন আবাসন প্রকল্প অনুমোদন পাচ্ছে না এ প্রশ্নের জবাবে রাজউকের সদস্য (পরিকল্পনা) শেখ আব্দুল মান্নান নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, ‘আবাসন প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয় মন্ত্রণালয় থেকে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রীর নেতৃত্বে কমিটি এ কাজটি করে থাকে। রাজউক প্রাথমিক শর্ত পূরণ করা হলে অথবা শর্ত পূরণ না হলে কোম্পানিগুলোকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয় ঘাটতিগুলো। ঘাটতিগুলো পূরণ করা হলে সবশেষে পাঠানো হয় মন্ত্রণালয়ে।’
এ ব্যাপারে মতামত জানতে চাওয়া হয় নগর পরিকল্পনাবিদ ড. তৌফিক এম সেরাজের কাছে। তিনি জানান, ১৯৯৬ সালে ঢাকার জন্য যে স্ট্রাকচারাল প্ল্যান (কাঠামো পরিকল্পনা) করা হয় তা চূড়ান্ত হওয়ার আগে অনেক অ্যাডহক পরিকল্পনা করা হয়। সব পরিকল্পনার মূল হলো বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি)। সরকারের তৈরী ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, জলাভূমি আইন, ভূমি উন্নয়ন বিধিমালাসহ অন্য যেসব আইন বা বিধি করা হয়েছে এগুলোর সাথে বিএনবিসি অনেক ক্ষেত্রে সাংঘর্ষিক। স¤পূর্ণভাবে কোনো একটি আইন বা বিধিমালা বিএনবিসি অনুসরণ করে চলে না। এর মধ্যেই অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়ে গেছে।
ড. সেরাজ বলেন, বিএনবিসি ও ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) মেয়াদ ২০১৫ সালের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। আগামী ২৫ বছরের জন্য সব আইন বা বিধিমালা এক করে একটি সমন্বিত মহাপরিকল্পনা সুচারুরূপে করা হলে আবাসন সমস্যার সমাধান হতে পারে। তা না হলে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা আবাসন প্রকল্প বা স্থাপনা ঠেকানো যাবে না। তিনি পরামর্শ দেন, বিষয়টি নিয়ে কালক্ষেপণ করা উচিত নয়।
ড্যাপ প্রণয়নে জড়িত ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সারওয়ার জাহান। তিনি বিষয়টি দেখছেন একটু ভিন্নভাবে। নয়া দিগন্তকে রাজউকের মতোই তিনি জানান, আবাসন কোম্পানিগুলো বিরাজমান শর্ত পূরণ করতে পারে না বা করে না। তারা অল্প কিছু নিষ্কণ্টক জমি কিনে রাজউকে আবেদন করতে আসেন বিশাল প্রকল্প নিয়ে। তিনি বলেন, ঢাকার চারপাশে যেসব আবাসন গড়ে উঠছে তা মুষ্টিমেয় কিছু লোকের হাতে চলে যাচ্ছে। কেউ কেউ প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্লট কিনে রাখছেন ভবিষ্যতের জন্য। এদের এ প্লটগুলোতে ভবন নির্মাণ করতে ১৫ থেকে ২০ বছর সময় লাগবে। তাই এগুলো ঢাকার আবাসন সমস্যা সমাধানে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। তিনি বলেন, আমরা হিসাব করে দেখেছি বর্তমান ঢাকায় কম ঘন বসতি এলাকায় পরিকল্পিত উপায়ে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হলে আবাসন সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
বসুন্ধরা গ্রুপের ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেডের মার্কেটিং অ্যান্ড সেলসের নির্বাহী পরিচালক মো: তৌহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘সরকারি হওয়ায় রাজউকের আবাসন প্রকল্পগুলো অনুমোদন পাচ্ছে। যদিও বিদ্যমান বিধিমালাগুলো শর্ত পূরণ করে না। বিপরীতে বেসরকারি উদ্যোক্তারা যখনই প্রকল্প নিয়ে রাজউকে যান তখনই আইন-কানুনের প্যাঁচে ফেলে দেয়া হয়। কলমের খোঁচায় রাজউকের আবাসন প্রকল্প অনুমোদন হয় কিন্তু ঝুলিয়ে রাখা হয় বেসরকারি প্রকল্পগুলো। তিনি বলেন, এমন আইন কেন করা হলো যা বাস্তবায়ন করা যায় না? রাজউক নিজেরা হাজার হাজার একর জমি সরকারি ক্ষমতায় অধিগ্রহণ করে। আর আমরা এক কাঠা ও পাঁচ কাঠা করে কিনি। তৌহিদুল ইসলাম সরকারের উদ্দেশে বলেন, বেসরকারি উদ্যোক্তারা মেনে চলতে পারেন এমন আইন করা উচিত, যাতে ঢাকার মানুষকে বসবাসের সুযোগ করে দেয়া যায়।’
যে ছয়টি আবাসন প্রকল্প ১৯৯০’র পর রাজউক অনুমোদন দিয়েছে এর মধ্যে চারটি অনুমোদন দেয়া হয় ২০১২ সালে। এগুলো হলো নেপচুন ডেভেলপমেন্টের ইউনাইটেড সিটি, বিডিডিএলের নতুন ধারা, আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশনের গ্রিন মডেল টাউন, স্বদেশ প্রপার্টিজের বর্ণালী আবাসন প্রকল্প। এগুলো অনুমোদন দেয়ার সাথে ‘শর্ত সাপেক্ষ’ শব্দ দুটো জুড়ে দেয়া হয়। এই চারটি প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে বিতর্কিত হলো বিডিডিএলের নতুন ধারা প্রকল্প। অন্যের জমি জাল দলিল করে রাজউকে জমা দিয়েছে বলে এলাকাবাসী লিখিত অভিযোগ করেছেন। অবশিষ্ট দু’টি প্রকল্প হলো ২০০৩ সালে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের নিকেতন এবং ১৯৯২ সালে অনুমোদিত প্রবাল হাউজিং।
No comments