স্মরণ- খানবাহাদুর আহছানউল্লাহ
প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবক আহছান উল্লাহর জন্ম নলতা গ্রাম, সাতক্ষীরায়
১৮৭৩ সালে। নলতার মধ্য ইংরেজি বিদ্যালয় ও টাকির উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে
অধ্যয়ন করেন।
১৮৯০ সালে ভবানীপুর লন্ডন মিশনারি স্কুল
থেকে এন্ট্রান্স, ১৮৯২ সালে হুগলি কলেজ থেকে এফএ, ১৮৯৪ সালে প্রেসিডেন্সি
কলেজ থেকে বিএ এবং একই কলেজ থেকে ১৮৯৫ সালে দর্শনশাস্ত্রে এমএ পাস করেন।
১৮৯৬ সালে শিক্ষা বিভাগের চাকরিতে প্রবেশ করেন। রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের
সুপারনিউমার টিচার, পরে ফরিদপুরের ও বাকেরগঞ্জের (বরিশাল) ডেপুটি
ইন্সপেক্টর, চট্টগ্রামের ডিভিশনাল ইন্সপেক্টর অব এডুকেশন এবং সর্বশেষে
অবিভক্ত বাংলার শিক্ষা বিভাগের সহকারী ডিরেক্টর পদে উন্নীত হন। এই দেশীয়
মুসলমানদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম আইইএসএ (ইন্ডিয়ান এডুকেশন সার্ভিস)
অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন। ১৯২৯ সালে অবসর গ্রহণ করেন। তার বিশেষ প্রচেষ্টায়
শিক্ষা বিভাগে মুসলিম শিক্ষার বিপুল সংস্কার সাধিত হয়। অনার্স ও এমএ
পরীক্ষার খাতায় নামের পরিবর্তে রোল নম্বর লেখার নিয়ম প্রবর্তন করে উৎকট
সাম্প্রদায়িক পক্ষপাতিত্ব রহিত করেন। উচ্চ মাদ্রাসা ও মাধ্যমিক মাদ্রাসার
শিক্ষার মান উন্নীত করে মাদ্রাসা পাস করা ছাত্রদের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে
ভর্তি হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দেন। স্কুল-কলেজে ‘মৌলবি’র পদ সৃষ্টি এবং
পণ্ডিত ও মৌলবিদের বেতনের পার্থক্য রহিত করেছেন তিনিই। স্বতন্ত্র
মক্তবপাঠ্যসূচি নির্ধারণ এবং মুসলমান লেখকদের লেখা পুস্তক পাঠ্যসূচির
সহায়ক পুস্তক হিসেবে ব্যবহারের রীতি প্রবর্তন, স্কুল-কলেজে মুসলমান
ছাত্রদের জন্য বৃত্তির আনুপাতিক সংখ্যা ও পরিমাণ, টেকস্ট বুক কমিটিতে
মুসলমান সদস্যভুক্তির ব্যবস্থা, পরীক্ষকদের এবং শিক্ষা বিভাগের পরিদর্শক ও
কর্মচারীদের মধ্যে মুসলমানদের সংখ্যা নির্ধারণ, ট্রেনিং কলেজে মুসলমান
শিক্ষার্থীদের সংখ্যা এবং স্কুল-কলেজের ম্যানেজিং কমিটিতে মুসলমানদের
সংখ্যা নির্ধারণ করে পশ্চাৎপদ সমাজের অশেষ কল্যাণসাধন করেন। তার
প্রচেষ্টাতেই নিউ স্কিম মাদ্রাসার সৃষ্টি। কলকাতায় বেকার হোস্টেল, টেলার
হোস্টেল, কারমাইকেল হোস্টেল, রাজশাহীতে ফুলার হোস্টেল ও কলকাতায় মুসলিম
ইনস্টিটিউট স্থাপনে তিনি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। তার রচিত উল্লেখযোগ্য
গ্রন্থ : বঙ্গভাষা ও মুসলমান সাহিত্য (১৯১৮), History of the Muslim World
(১৯৩১), আল ইসলাম (১৯৩০), শিক্ষা ক্ষেত্রে বঙ্গীয় মুসলমান (১৯৩১), ইসলাম
রবি হজরত মোহাম্মদ সা: (১৯৫২), তরিকত শিক্ষা (১৯৩১), আমার জীবনধারা (১৯৪৬),
ছুফি (১৯৪৭), সৃষ্টিতত্ত্ব (১৯৪৯), ছেলেদের মহানবী (১৯৫১) ইত্যাদি।
মুসলমান লেখকদের উৎসাহিত করার জন্য কলকাতায় ‘মখদুমী লাইব্রেরি’ ও
‘এম্পায়ার বুক হাউস’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। শিক্ষা বিভাগে নানা প্রকার
উন্নতি সাধনের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘খান বাহাদুর’ খেতাবে ভূষিত হন। দেশের
শিক্ষা সংস্কার এবং মুসলিমসমাজে শিক্ষাবিস্তারের জন্য আজীবন প্রচেষ্টা
চালিয়ে গেছেন। তার জীবনের মৌলিক বৈশিষ্ট্য ছিল ধর্মসাধনা ও মানবসেবা।
বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান ‘আহ্ছানিয়া মিশন’ তার প্রতিষ্ঠিত। স্বগ্রাম নলতায়
০৯.০২.১৯৬৫ তারিখে ইন্তেকাল করেন। তিনি আধ্যাত্মিক সাধকও ছিলেন।
No comments