বাংলা ও উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব তমদ্দুন মজলিসের
সদ্য স্বাধীন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কী হবে তা নিয়ে অচিরেই বিতর্ক শুরু
হয়ে যায়। ভাষা আন্দোলনের এই আদি পর্বে এ নিয়ে বিতর্ক অবশ্য সমাজের
শিক্ষিত মহলে সীমিত ছিল।
ভাষাসৈনিক
শিক্ষাবিদ এনামুল হক ও আবু রুশদ মতিনউদ্দিন, প্রাবন্ধিক আবদুল হক, কবি
ফররুখ আহমদ প্রমুখ এ সময় বাংলা ভাষার যথার্থ মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দাবিতে
প্রবন্ধ লেখেন। এমনি পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রভাষাসংক্রান্ত সমস্যার
সমাধানমূলক প্রস্তাব নিয়ে সামনে আসে তমদ্দুন মজলিস। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার
মাত্র ১৭ দিনের মাথায় প্রফেসর আবুল কাসেম ১ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠা করেন
এই সাংস্কৃতিক সংগঠনটি। ওই মাসেরই ১৫ সেপ্টেম্বর ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা
বাংলাÑ না উর্দু’ শিরোনামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে তমদ্দুন মজিলস সবার
দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। তমদ্দুন মজলিসের প্রস্তাবে বলা হয় :
পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের রাষ্ট্রভাষা হবে দুটিÑ উর্দু এবং বাংলা।
বাংলাই হবে পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষার বাহন ও অফিস-আদালতের ভাষা। উর্দু হবে
পূর্ব পাকিস্তানের দ্বিতীয় ভাষা বা আন্তঃপ্রাদেশিক ভাষা।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে উর্দু শিক্ষা দেয়া যাবে। ইংরেজি
হবে পূর্ব পাকিস্তানের তৃতীয় ভাষা বা আন্তর্জাতিক ভাষা। ঠিক একই নীতিতে
পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশে প্রথম ভাষা হবে স্থানীয় ভাষা বা
উর্দু । দ্বিতীয় ভাষা বাংলা এবং তৃতীয় ভাষা হবে ইংরেজি।
তমদ্দুন মজলিসের প্রস্তাবে বলা হয়, ‘দেশের শক্তির যাতে অপচয় না হয় এবং যে ভাষায় দেশের জনগণ সহজে ও অল্প সময়ে লিখতে শিখতে ও বলতে পারে সে ভাষাই হবে রাষ্ট্রভাষা। এই অকাট্য যুক্তিই উপরিউক্ত প্রস্তাবের প্রধান ভিত্তি। আর না হয় ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদ যেমন জনগণের মত না নিয়ে জনগণের সুবিধা-অসুবিধা না ভেবে ইংরেজিকে জোর করে চাপিয়ে দিয়েছিল তেমনি শুধু উর্দু বা বাংলাকে সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করলে ঠিক সেই সাম্রাজ্যবাদী অযৌক্তিক নীতিরই অনুসরণ করা হবে। অথচ এই অযৌক্তিক ও অবৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টাই কোনো কোনো মহলে আজ দেখা যাচ্ছে। একে সর্বপ্রকারে বাধা দিতে হবে। এর বিরুদ্ধে বিরাট আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এরই সূচনা হিসেবে আমরা কয়েকজন লব্ধপ্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিকের প্রবন্ধ প্রকাশ করছি এবং সাথে সাথে পূর্ব পাকিস্তানের প্রত্যেককে এ আন্দোলনে যোগ দেয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’
প্রস্তাবে আরো বলা হয়, ‘কায়েদে আজম জিন্নাহ প্রত্যেক প্রদেশের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার স্বীকার করে নিয়েছেন। এমনকি লাহোর প্রস্তাবেও পাকিস্তানের প্রত্যেক ইউনিটকে সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার অধিকার দেয়া হয়েছে। কাজেই প্রত্যেক ইউনিটকে তাদের নিজ নিজ প্রাদেশিক রাষ্ট্রভাষা কী হবে তা নির্ধারণ করার স্বাধীনতা দিতে হবে।’
ইতিহাসবিদদের মতে উর্দু এবং বাংলা উভয়কে রাষ্ট্রভাষা করার যে প্রস্তাব সে দিন তমদ্দুন মজলিস দিয়েছিল তা যদি সবাই মেনে নিত তা হলে ইতিহাস ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত হতো হয়তো।
তমদ্দুন মজলিসের প্রস্তাবে বলা হয়, ‘দেশের শক্তির যাতে অপচয় না হয় এবং যে ভাষায় দেশের জনগণ সহজে ও অল্প সময়ে লিখতে শিখতে ও বলতে পারে সে ভাষাই হবে রাষ্ট্রভাষা। এই অকাট্য যুক্তিই উপরিউক্ত প্রস্তাবের প্রধান ভিত্তি। আর না হয় ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদ যেমন জনগণের মত না নিয়ে জনগণের সুবিধা-অসুবিধা না ভেবে ইংরেজিকে জোর করে চাপিয়ে দিয়েছিল তেমনি শুধু উর্দু বা বাংলাকে সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করলে ঠিক সেই সাম্রাজ্যবাদী অযৌক্তিক নীতিরই অনুসরণ করা হবে। অথচ এই অযৌক্তিক ও অবৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টাই কোনো কোনো মহলে আজ দেখা যাচ্ছে। একে সর্বপ্রকারে বাধা দিতে হবে। এর বিরুদ্ধে বিরাট আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এরই সূচনা হিসেবে আমরা কয়েকজন লব্ধপ্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিকের প্রবন্ধ প্রকাশ করছি এবং সাথে সাথে পূর্ব পাকিস্তানের প্রত্যেককে এ আন্দোলনে যোগ দেয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’
প্রস্তাবে আরো বলা হয়, ‘কায়েদে আজম জিন্নাহ প্রত্যেক প্রদেশের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার স্বীকার করে নিয়েছেন। এমনকি লাহোর প্রস্তাবেও পাকিস্তানের প্রত্যেক ইউনিটকে সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার অধিকার দেয়া হয়েছে। কাজেই প্রত্যেক ইউনিটকে তাদের নিজ নিজ প্রাদেশিক রাষ্ট্রভাষা কী হবে তা নির্ধারণ করার স্বাধীনতা দিতে হবে।’
ইতিহাসবিদদের মতে উর্দু এবং বাংলা উভয়কে রাষ্ট্রভাষা করার যে প্রস্তাব সে দিন তমদ্দুন মজলিস দিয়েছিল তা যদি সবাই মেনে নিত তা হলে ইতিহাস ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত হতো হয়তো।
No comments