নতুন ছেলে by আবুল কালাম আজাদ
রতন স্যার অঙ্ক করাচ্ছিলেন। পুরো কাসে পিনপতন নিস্তব্ধতা। যাকে বলে পিনড্রপ সাইলেন্ট। রতন স্যার বলেনÑ ‘অঙ্ক হলো জটিল বিষয়।
পিনড্রপ সাইলেন্ট না থাকলে সূত্র ভুল হতে পারে।
রতন স্যার লিখছিলেন বোর্ডে আর সবাই লিখছিল খাতায়। লিখতে লিখতে রতন স্যার
বলছিলেনÑ ‘সবাই ঠিকমতো তুলে নাও। তারপর আমি বুঝিয়ে দেবো। বাসায় গিয়ে এই
সূত্রের যেসব অঙ্ক আছে তা করে ফেলবে। কাল আমি দেখব।’
রতন স্যার লেখা শেষ হলে মঞ্চ থেকে নেমে এলেন। একে একে সবার খাতা দেখতে লাগলেন। মাত্র সপ্তাহখানেক আগে নতুন যে ছেলেটা ভর্তি হয়েছে তার কাছে গিয়ে রতন স্যার থমকে গেলেন। কিছুক্ষণ থমকে থেকে বললেনÑ ‘তোমার অঙ্ক কোথায়?’
Ñ ‘আমি অঙ্ক তুলিনি স্যার।’
Ñ ‘তাহলে কী করেছ এতক্ষণ?’
Ñ ‘ছবি এঁকেছি।’
Ñ ‘এটা কি ছবি আঁকার কাস? আমি তো অঙ্কন মাস্টার চিন্ময় দেবর্ষি না। আমি অঙ্কের মাস্টার রতন মির্জা।’
সবাই ভাবছিল, ছেলেটা এবার ভীষণ বকা খাবে। কারণ রতন স্যার তার কাসে অন্য কিছু সহ্য করেন না। স্যার খাতাটা হাতে নিলেন। তারপর একবার খাতার দিকে, একবার জানালার বাইরে তাকাতে লাগলেন। কাসের কেউ বুঝছিল না স্যার কেন খাতায় আর জানালার বাইরে তাকাচ্ছেন। তারপর বিস্মিত কণ্ঠে বললেনÑ ‘এই ফুল তুমি এঁকেছ?’
Ñ ‘জি স্যার।’
রতন স্যার খাতাটা উঁচু করে ধরে বললেনÑ ‘তোমরা দেখো, জানালার বাইরে ওই সূর্যমুখী ফুলটা ও এঁকেছে।’ দেখে সবাই মুগ্ধ। এত সুন্দর করে কাসের আর কেউ আঁকতে পারবে না। চিন্ময় স্যার দেখলে ওকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিতেন। রতন স্যার ফিরে এলেন মঞ্চে। বললেনÑ ‘তোমার নাম কী?’
Ñ ‘আসিফ আলম পিন্টু খান মোহাম্মদ সাইফুল্লা দুলাল নূর।’
Ñ ‘আমি তোমার নাম জানতে চেয়েছি। তোমার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়পরিজন সবার নাম জানতে চাইনি।’
Ñ ‘আমি আমার নামই বলেছি স্যার।’
Ñ ‘তোমার নাম?’
Ñ ‘জি স্যার, আমার নামটা একটু বড়।’
Ñ ‘এত বড় নাম কে রেখেছে?’
Ñ ‘বাবা-মা ছোট নামই রেখেছিল। পরে আমি আমার বাবাকে বলি, আমার খুব বড় একটা নাম রেখে দিতে। বাবা এ নামটি খুঁজে দেয়।’
Ñ ‘তোমার এত বড় নামের কী দরকার?’
Ñ ‘আমি পাবলো পিকাসোর মতো শিল্পী হতে চাই।’
Ñ ‘পাবলো পিকাসোর মতো মহান শিল্পী হতে চাও, সে ভালো কথা। তাই বলে এত বড় নামের কী দরকার?’
Ñ ‘কোনো দরকার নেই। তবু অনেকেই ভালো লাগার মানুষের অনেক দিক নকল করে কিনা। অনেকেই প্রিয় খেলোয়াড়ের মতো মাথা কামিয়ে ফেলে, অনেকে প্রিয় অভিনেতার মতো পোশাক পরে।’
Ñ ‘পিকাসোর নামটা কি খুব বড় ছিল?’
Ñ ‘জি স্যার। তেইশটি শব্দ আছে তার নামে।’
Ñ ‘বলো কী! তুমি জানো সে নাম?’
Ñ ‘পাবলো দিয়েগো জোসে ফ্রান্সিকো দা পল জুয়ান নেপুমুসিনো মারি ডিলস রেমোদিস সিপ্রিয়ানো দেলা স্যান্তিÍসিমা ত্রিনিদাদ মার্টায়ার প্যার্ট্রকো কিতো রুচওয়াই পিকাসো।’
Ñ ‘তুমি এই নাম মুখস্থ করে রেখেছ! তাকে প্রথম ও শেষ দু’টি নাম নিয়ে পাবলো পিকাসো ডাকা হয়। তোমাকে নিশ্চয়ই আসিফ নূর বলে ডাকে?’
Ñ ‘জি স্যার।’
তারপর স্যার কাসের কথা ভুলে ছেলেটার সাথে গল্প জুড়ে দিলেন। বললেনÑ ‘তুমি এভাবে যা দেখো তাই আঁকো?’
Ñ ‘আমার যা দেখে ভালো লাগে তা আঁকি। যেমন এখন ভালো লাগল এই সূর্যমুখীটাকে। বিখ্যাত ফরাসি শিল্পী ককমঁনে একবার প্যারিসে এসে দেখলেন লুভ্যর মিউজিয়ামে বসে প্যারিসের চিত্রশিল্পীরা সব পুরনো দিনের শিল্পগুরুদের ছবি কপি করছেন। মঁনে সে রকম না করে জানালার বাইরে তাকিয়ে যা দেখলেন তাই আঁকলেন। খুঁটিনাটির মধ্যে না গিয়ে কেবল মূল ভাবটি ফুটিয়ে তোলার শিল্পরীতিই হচ্ছে ইমপ্রেসনিজম বা অভিব্যক্তিবাদ। আমি সে রকম আঁকার চেষ্টা করি।’
Ñ ‘তুমি দেখছি চিত্রকলা সম্পর্কে বেশ খোঁজখবর রাখো। তোমাকে এ ব্যাপারে কেউ সাহায্য করে?’
Ñ ‘বাবা আমাকে চিত্রকলা সম্পর্কিত বইপত্র কিনে দেয়। যেসব বই আমি বুঝি না বা ইংরেজিতে লেখা সেগুলো বাবা পড়ে আমাকে বলে। এভাবেই আমি চিত্রকলা সম্পর্কে জানি।’
‘আমার বিশ্বাস একদিন তুমি অনেক বড় চিত্রশিল্পী হবে। তোমার ছবি অনেক দামে বিক্রি হবে।’
Ñ ‘স্যার, ছবি বিক্রি হওয়াই শিল্পীর সার্থকতা নয়। শিল্পী ভ্যানগগের সারা জীবনে একটি মাত্র ছবি বিক্রি হয়েছিল চার শ’ ফ্রাঁতে।’
কাসের সবাই তখন অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আসিফ নূরের দিকে। কোনো বিষয়ে পারদর্শী হতে গেলে সে বিষয়ে অনেক পড়াশোনা করতে হয়, অনেক খোঁজখবর রাখতে হয় সে চিত্র শিল্প হোক, সঙ্গীত, নৃত্য, সাহিত্য চর্চা বা খেলাধুলা হোক। অনেকের মধ্যে তখন প্রত্যয় জেগে উঠেছে তাদের যেসব বিষয়ে আগ্রহ আছে সেসব বিষয়ে আসিফ নূরের মতো জ্ঞান অর্জন করবে। রতন স্যার বললেনÑ ‘আসিফ নূর, তুমি কি বোর্ডে এসে আমাদের সবার সৌজন্যে কিছু এঁকে দেখাবে?’
আসিফ নূর বোর্ডে গিয়ে যা আঁকল তা দেখে সবার বিস্ময় সীমা ছাড়িয়ে গেল। সে একটানে রবীন্দ্রনাথ এঁকে ফেলল। তিন টানে আঁকল লালন, চার টানে নজরুল, পাঁচ টানে হাসন রাজা এবং ছয় টানে জয়নুল। তারা সবাই শুধু আমাদের গর্ব।
পরদিন রতন স্যার বিশাল এক বাক্স কাঁধে নিয়ে কাসে এলেন। কেউ বুঝতে পারছিল না কী আছে এই বাক্সের ভেতর। বাক্সটা এক পাশে নামিয়ে রেখে রতন স্যার বলতে শুরু করলেন ‘প্রত্যেক মানুষ কোনো না কোনো দিক দিয়ে মেধাবী। সেসব মেধাকে উপযুক্তভাবে বিকশিত করতে পারলে দেশ, জাতি তথা গোটা বিশ্ব উপকৃত হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বর্তমানে আমাদের শিশুদের মধ্যে শিল্প-সাহিত্য-বিজ্ঞান ও অন্যান্য সৃজনশীলতার চর্চা সেভাবে দেখা যায় না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেড়েছে, শিক্ষার হার বেড়েছে। কিন্তু বাড়েনি সৃজনশীল মানুষ। তাই তো এখন আমরা অনেক অনেক শিক্ষিত পাই, কিন্তু রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জসীমউদ্দীনের মতো সাহিত্যিক পাই না, জয়নুল-সুলতান-কামরুলের মতো চিত্রশিল্পী পাই না, জগদীশ বসুর মতো বিজ্ঞানী পাই না, ওয়াহিদুল হক-ফিরোজা বেগমের মতো সঙ্গীতশিল্পী পাই না, রাজ্জাক-আনোয়ার হোসেনের মতো অভিনেতা পাই না, ব্রজেন দাসের মতো সাঁতারু পাই নাÑ সালাউদ্দিনের মতো ফুটবলার পাই না। আমাদের শিশুরা যেভাবে কম্পিউটার নিয়ে সময় কাটাচ্ছে সেভাবে আমরা প্রোগ্রামার পাচ্ছি না। অতি সামান্য একটা সফটওয়্যারের জন্যও আমাদের নির্ভর করতে হয় উন্নত বিশ্বের ওপর। যা হোক, তার পরও আমি হতাশ হব না। যেভাবে পাওয়ার কথা সেভাবে না পেলেও সব ক্ষেত্রে আমরা কিছু প্রতিভা পাচ্ছি। গৌরব করার মতো মানুষ এখনো তৈরি হচ্ছে। তোমাদের প্রতি আমার অনুরোধ, অকারণে সময় হত্যা করো না। লেখাপড়ার পরও তোমাদের হাতে যথেষ্ট সময় থাকে, সে সময়কে তোমরা ভালো লাগা কোনো সৃজনশীল কাজে ব্যবহার করো। তুমি নিজেকে আরো সুন্দর মানুষ হিসেবে সাজাতে পারবে। শুধু পেটের ুধা নিবারণ হলো পশুর কাজ। সত্যিকার মানুষ পেটের ুধা নিবারণের সাথে সাথে সুন্দরের চর্চা করে।’
তারপর রতন স্যার খুললেন তার বাক্স। সবাই দেখল সে বাক্স ভরে আছে নানা রকম অঙ্কন সরঞ্জামে। রঙ, তুলি, বোর্ড, আর্ট পেপার, রঙ রাখার প্লেট আরো অনেক কিছু। সেগুলো আসিফ নূরের জন্য উপহার।
রতন স্যার লেখা শেষ হলে মঞ্চ থেকে নেমে এলেন। একে একে সবার খাতা দেখতে লাগলেন। মাত্র সপ্তাহখানেক আগে নতুন যে ছেলেটা ভর্তি হয়েছে তার কাছে গিয়ে রতন স্যার থমকে গেলেন। কিছুক্ষণ থমকে থেকে বললেনÑ ‘তোমার অঙ্ক কোথায়?’
Ñ ‘আমি অঙ্ক তুলিনি স্যার।’
Ñ ‘তাহলে কী করেছ এতক্ষণ?’
Ñ ‘ছবি এঁকেছি।’
Ñ ‘এটা কি ছবি আঁকার কাস? আমি তো অঙ্কন মাস্টার চিন্ময় দেবর্ষি না। আমি অঙ্কের মাস্টার রতন মির্জা।’
সবাই ভাবছিল, ছেলেটা এবার ভীষণ বকা খাবে। কারণ রতন স্যার তার কাসে অন্য কিছু সহ্য করেন না। স্যার খাতাটা হাতে নিলেন। তারপর একবার খাতার দিকে, একবার জানালার বাইরে তাকাতে লাগলেন। কাসের কেউ বুঝছিল না স্যার কেন খাতায় আর জানালার বাইরে তাকাচ্ছেন। তারপর বিস্মিত কণ্ঠে বললেনÑ ‘এই ফুল তুমি এঁকেছ?’
Ñ ‘জি স্যার।’
রতন স্যার খাতাটা উঁচু করে ধরে বললেনÑ ‘তোমরা দেখো, জানালার বাইরে ওই সূর্যমুখী ফুলটা ও এঁকেছে।’ দেখে সবাই মুগ্ধ। এত সুন্দর করে কাসের আর কেউ আঁকতে পারবে না। চিন্ময় স্যার দেখলে ওকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিতেন। রতন স্যার ফিরে এলেন মঞ্চে। বললেনÑ ‘তোমার নাম কী?’
Ñ ‘আসিফ আলম পিন্টু খান মোহাম্মদ সাইফুল্লা দুলাল নূর।’
Ñ ‘আমি তোমার নাম জানতে চেয়েছি। তোমার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়পরিজন সবার নাম জানতে চাইনি।’
Ñ ‘আমি আমার নামই বলেছি স্যার।’
Ñ ‘তোমার নাম?’
Ñ ‘জি স্যার, আমার নামটা একটু বড়।’
Ñ ‘এত বড় নাম কে রেখেছে?’
Ñ ‘বাবা-মা ছোট নামই রেখেছিল। পরে আমি আমার বাবাকে বলি, আমার খুব বড় একটা নাম রেখে দিতে। বাবা এ নামটি খুঁজে দেয়।’
Ñ ‘তোমার এত বড় নামের কী দরকার?’
Ñ ‘আমি পাবলো পিকাসোর মতো শিল্পী হতে চাই।’
Ñ ‘পাবলো পিকাসোর মতো মহান শিল্পী হতে চাও, সে ভালো কথা। তাই বলে এত বড় নামের কী দরকার?’
Ñ ‘কোনো দরকার নেই। তবু অনেকেই ভালো লাগার মানুষের অনেক দিক নকল করে কিনা। অনেকেই প্রিয় খেলোয়াড়ের মতো মাথা কামিয়ে ফেলে, অনেকে প্রিয় অভিনেতার মতো পোশাক পরে।’
Ñ ‘পিকাসোর নামটা কি খুব বড় ছিল?’
Ñ ‘জি স্যার। তেইশটি শব্দ আছে তার নামে।’
Ñ ‘বলো কী! তুমি জানো সে নাম?’
Ñ ‘পাবলো দিয়েগো জোসে ফ্রান্সিকো দা পল জুয়ান নেপুমুসিনো মারি ডিলস রেমোদিস সিপ্রিয়ানো দেলা স্যান্তিÍসিমা ত্রিনিদাদ মার্টায়ার প্যার্ট্রকো কিতো রুচওয়াই পিকাসো।’
Ñ ‘তুমি এই নাম মুখস্থ করে রেখেছ! তাকে প্রথম ও শেষ দু’টি নাম নিয়ে পাবলো পিকাসো ডাকা হয়। তোমাকে নিশ্চয়ই আসিফ নূর বলে ডাকে?’
Ñ ‘জি স্যার।’
তারপর স্যার কাসের কথা ভুলে ছেলেটার সাথে গল্প জুড়ে দিলেন। বললেনÑ ‘তুমি এভাবে যা দেখো তাই আঁকো?’
Ñ ‘আমার যা দেখে ভালো লাগে তা আঁকি। যেমন এখন ভালো লাগল এই সূর্যমুখীটাকে। বিখ্যাত ফরাসি শিল্পী ককমঁনে একবার প্যারিসে এসে দেখলেন লুভ্যর মিউজিয়ামে বসে প্যারিসের চিত্রশিল্পীরা সব পুরনো দিনের শিল্পগুরুদের ছবি কপি করছেন। মঁনে সে রকম না করে জানালার বাইরে তাকিয়ে যা দেখলেন তাই আঁকলেন। খুঁটিনাটির মধ্যে না গিয়ে কেবল মূল ভাবটি ফুটিয়ে তোলার শিল্পরীতিই হচ্ছে ইমপ্রেসনিজম বা অভিব্যক্তিবাদ। আমি সে রকম আঁকার চেষ্টা করি।’
Ñ ‘তুমি দেখছি চিত্রকলা সম্পর্কে বেশ খোঁজখবর রাখো। তোমাকে এ ব্যাপারে কেউ সাহায্য করে?’
Ñ ‘বাবা আমাকে চিত্রকলা সম্পর্কিত বইপত্র কিনে দেয়। যেসব বই আমি বুঝি না বা ইংরেজিতে লেখা সেগুলো বাবা পড়ে আমাকে বলে। এভাবেই আমি চিত্রকলা সম্পর্কে জানি।’
‘আমার বিশ্বাস একদিন তুমি অনেক বড় চিত্রশিল্পী হবে। তোমার ছবি অনেক দামে বিক্রি হবে।’
Ñ ‘স্যার, ছবি বিক্রি হওয়াই শিল্পীর সার্থকতা নয়। শিল্পী ভ্যানগগের সারা জীবনে একটি মাত্র ছবি বিক্রি হয়েছিল চার শ’ ফ্রাঁতে।’
কাসের সবাই তখন অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আসিফ নূরের দিকে। কোনো বিষয়ে পারদর্শী হতে গেলে সে বিষয়ে অনেক পড়াশোনা করতে হয়, অনেক খোঁজখবর রাখতে হয় সে চিত্র শিল্প হোক, সঙ্গীত, নৃত্য, সাহিত্য চর্চা বা খেলাধুলা হোক। অনেকের মধ্যে তখন প্রত্যয় জেগে উঠেছে তাদের যেসব বিষয়ে আগ্রহ আছে সেসব বিষয়ে আসিফ নূরের মতো জ্ঞান অর্জন করবে। রতন স্যার বললেনÑ ‘আসিফ নূর, তুমি কি বোর্ডে এসে আমাদের সবার সৌজন্যে কিছু এঁকে দেখাবে?’
আসিফ নূর বোর্ডে গিয়ে যা আঁকল তা দেখে সবার বিস্ময় সীমা ছাড়িয়ে গেল। সে একটানে রবীন্দ্রনাথ এঁকে ফেলল। তিন টানে আঁকল লালন, চার টানে নজরুল, পাঁচ টানে হাসন রাজা এবং ছয় টানে জয়নুল। তারা সবাই শুধু আমাদের গর্ব।
পরদিন রতন স্যার বিশাল এক বাক্স কাঁধে নিয়ে কাসে এলেন। কেউ বুঝতে পারছিল না কী আছে এই বাক্সের ভেতর। বাক্সটা এক পাশে নামিয়ে রেখে রতন স্যার বলতে শুরু করলেন ‘প্রত্যেক মানুষ কোনো না কোনো দিক দিয়ে মেধাবী। সেসব মেধাকে উপযুক্তভাবে বিকশিত করতে পারলে দেশ, জাতি তথা গোটা বিশ্ব উপকৃত হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বর্তমানে আমাদের শিশুদের মধ্যে শিল্প-সাহিত্য-বিজ্ঞান ও অন্যান্য সৃজনশীলতার চর্চা সেভাবে দেখা যায় না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেড়েছে, শিক্ষার হার বেড়েছে। কিন্তু বাড়েনি সৃজনশীল মানুষ। তাই তো এখন আমরা অনেক অনেক শিক্ষিত পাই, কিন্তু রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জসীমউদ্দীনের মতো সাহিত্যিক পাই না, জয়নুল-সুলতান-কামরুলের মতো চিত্রশিল্পী পাই না, জগদীশ বসুর মতো বিজ্ঞানী পাই না, ওয়াহিদুল হক-ফিরোজা বেগমের মতো সঙ্গীতশিল্পী পাই না, রাজ্জাক-আনোয়ার হোসেনের মতো অভিনেতা পাই না, ব্রজেন দাসের মতো সাঁতারু পাই নাÑ সালাউদ্দিনের মতো ফুটবলার পাই না। আমাদের শিশুরা যেভাবে কম্পিউটার নিয়ে সময় কাটাচ্ছে সেভাবে আমরা প্রোগ্রামার পাচ্ছি না। অতি সামান্য একটা সফটওয়্যারের জন্যও আমাদের নির্ভর করতে হয় উন্নত বিশ্বের ওপর। যা হোক, তার পরও আমি হতাশ হব না। যেভাবে পাওয়ার কথা সেভাবে না পেলেও সব ক্ষেত্রে আমরা কিছু প্রতিভা পাচ্ছি। গৌরব করার মতো মানুষ এখনো তৈরি হচ্ছে। তোমাদের প্রতি আমার অনুরোধ, অকারণে সময় হত্যা করো না। লেখাপড়ার পরও তোমাদের হাতে যথেষ্ট সময় থাকে, সে সময়কে তোমরা ভালো লাগা কোনো সৃজনশীল কাজে ব্যবহার করো। তুমি নিজেকে আরো সুন্দর মানুষ হিসেবে সাজাতে পারবে। শুধু পেটের ুধা নিবারণ হলো পশুর কাজ। সত্যিকার মানুষ পেটের ুধা নিবারণের সাথে সাথে সুন্দরের চর্চা করে।’
তারপর রতন স্যার খুললেন তার বাক্স। সবাই দেখল সে বাক্স ভরে আছে নানা রকম অঙ্কন সরঞ্জামে। রঙ, তুলি, বোর্ড, আর্ট পেপার, রঙ রাখার প্লেট আরো অনেক কিছু। সেগুলো আসিফ নূরের জন্য উপহার।
No comments