ঈশ্বরদীর বিবিসি বাজার by সেলিম সরদার
ঈশ্বরদী শহর থেকে ৮-৯ কিলোমিটার দূরে পাকশী ইউনিয়নের রূপপুর গ্রামে 'বিবিসি বাজার'। ১৯৭১ সালে রেডিওতে বিবিসির বাংলা বিভাগে মুক্তিযুদ্ধের খবর শুনিয়েই ইতিহাসের পাতায় নাম লেখানো রূপপুর গ্রামের 'বিবিসি বাজার' আর কাশেম মোল্লা এখনও জীবন্ত কিংবদন্তি।
কিন্তু যে রূপপুর গ্রামে আজ তার জন্য প্রতিষ্ঠিত বিবিসি বাজার, সেখানে এখন কাশেম মোল্লার কোনো ঠাঁই নেই। নেই তার সেই দোকান। কালের সাক্ষী হয়ে গর্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে শুধু তার নিজ হাতে লাগানো বিশালাকৃতির কড়ইগাছটি। দিন বদলেছে, রূপপুরে এখন অনেক পরিবর্তন এসেছে। কাশেম মোল্লার হাতে লাগানো কড়ইগাছের চারপাশে সারি সারি দোকান, বিল্ডিং, বিশাল মার্কেট_ বিবিসি বাজার বলেই যার পরিচিতি।
রূপপুর গ্রামে এখন যেখানে জমজমাট বিবিসি বাজার, যুদ্ধের সময় সেখানে কাশেম মোল্লার একটি ছোট্ট ভাঙাচোরা চায়ের দোকান ছিল। রূপপুরসহ ঈশ্বরদীর গ্রামে গ্রামে তখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্বিচারে মানুষ হত্যা আর বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার তাণ্ডব চালিয়ে চলেছে, রূপপুরের তরুণ যুবকদের প্রায় সবাই গেছেন যুদ্ধে, গ্রামের সব মানুষই উৎকণ্ঠা আর আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। সংবাদপত্র কিংবা রেডিওতেও কোনো সংবাদ জানার সুযোগ নেই। আশপাশের দশ গ্রামে কারও বাড়িতে ৩ ব্যান্ডের রেডিও নেই যে বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকার খবর শুনবে। যাও-বা দু'একজনের ছিল, তাদের গোপনে খবর শুনতে হতো। কাশেম মোল্লা সেই সময় সাহসের সঙ্গে চায়ের দোকানে রেডিওতে শোনাতেন বিবিসির বাংলা অনুষ্ঠান। কাশেম মোল্লা তার স্ত্রীর আবদারে একটি ৩ ব্যান্ডের ফিলিপ্স রেডিও কিনেছিলেন। যুদ্ধের সময় তার চায়ের দোকানে রেডিওর নব ঘোরাতে ঘোরাতে পেয়ে গেলেন বিবিসির শর্ট ওয়েভ চ্যানেল। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ভেসে এলো 'জয় বাংলা, বাংলার জয়' গান আর বঙ্গবন্ধুর সেই বজ্রকণ্ঠ। একে একে চারদিকে খবর হয়ে গেল যে, কাশেম মোল্লার চায়ের দোকানে বিবিসির খবর শোনা যায়।
মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে ছিল তার নিবিড় সম্পর্ক। রাতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র এবং বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা ও কলকাতা বেতারের খবর শোনার জন্য আশপাশের দশ গ্রামের শত শত মানুষ দু'বেলাতেই তার দোকানে ভিড় জমাত। গোপনে মুক্তিযোদ্ধারাও দলবেঁধে আসতেন খবর শুনতে। রাজাকার আর পাকিস্তানিদের নানা খবর তারা জেনে যেতেন কাশেম মোল্লার কাছ থেকে। চা পান করতে আসা নানা লোকের নানা তথ্য থাকত কাশেমের কাছে, সেসব খবর তিনি দিতেন মুক্তিযোদ্ধাদের। দেশ স্বাধীনের কয়েকদিন আগে রাজাকারদের তথ্যের ভিত্তিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হানা দেয় তার দোকানে। সেদিনের কথা মনে হলে আজও তিনি আঁতকে ওঠেন। হানাদাররা সেদিন কাশেম মোল্লাকে বুটের আঘাতে আহত করে ফেলে রেখে যায়। কাশেম মোল্লার বয়স এখন ৬৮। এই প্রজন্মের কেউ এখন তাকে খুব ভালো করে চেনে না। পাক হানাদারদের বুটের সেই আঘাতে কাশেম মোল্লার একটি পা এখনও প্রায় অকেজো। লাঠিতে ভর দিয়ে এখনও তিনি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কোনোমতে পাকশী রেলবাজারে একটি দোকান নিয়ে পড়ে আছেন। বার্ধক্য এখন তার শরীরে নানা অসুখের জন্ম দিয়ে দুর্বল করে ফেলেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় যে মানুষটির অবদানের জন্য বিবিসি বাজারের নামকরণ, তার অবদানের কথা আজ অনেকেরই মনে রাখার সময় নেই।
রূপপুর গ্রামে এখন যেখানে জমজমাট বিবিসি বাজার, যুদ্ধের সময় সেখানে কাশেম মোল্লার একটি ছোট্ট ভাঙাচোরা চায়ের দোকান ছিল। রূপপুরসহ ঈশ্বরদীর গ্রামে গ্রামে তখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্বিচারে মানুষ হত্যা আর বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার তাণ্ডব চালিয়ে চলেছে, রূপপুরের তরুণ যুবকদের প্রায় সবাই গেছেন যুদ্ধে, গ্রামের সব মানুষই উৎকণ্ঠা আর আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। সংবাদপত্র কিংবা রেডিওতেও কোনো সংবাদ জানার সুযোগ নেই। আশপাশের দশ গ্রামে কারও বাড়িতে ৩ ব্যান্ডের রেডিও নেই যে বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকার খবর শুনবে। যাও-বা দু'একজনের ছিল, তাদের গোপনে খবর শুনতে হতো। কাশেম মোল্লা সেই সময় সাহসের সঙ্গে চায়ের দোকানে রেডিওতে শোনাতেন বিবিসির বাংলা অনুষ্ঠান। কাশেম মোল্লা তার স্ত্রীর আবদারে একটি ৩ ব্যান্ডের ফিলিপ্স রেডিও কিনেছিলেন। যুদ্ধের সময় তার চায়ের দোকানে রেডিওর নব ঘোরাতে ঘোরাতে পেয়ে গেলেন বিবিসির শর্ট ওয়েভ চ্যানেল। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ভেসে এলো 'জয় বাংলা, বাংলার জয়' গান আর বঙ্গবন্ধুর সেই বজ্রকণ্ঠ। একে একে চারদিকে খবর হয়ে গেল যে, কাশেম মোল্লার চায়ের দোকানে বিবিসির খবর শোনা যায়।
মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে ছিল তার নিবিড় সম্পর্ক। রাতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র এবং বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা ও কলকাতা বেতারের খবর শোনার জন্য আশপাশের দশ গ্রামের শত শত মানুষ দু'বেলাতেই তার দোকানে ভিড় জমাত। গোপনে মুক্তিযোদ্ধারাও দলবেঁধে আসতেন খবর শুনতে। রাজাকার আর পাকিস্তানিদের নানা খবর তারা জেনে যেতেন কাশেম মোল্লার কাছ থেকে। চা পান করতে আসা নানা লোকের নানা তথ্য থাকত কাশেমের কাছে, সেসব খবর তিনি দিতেন মুক্তিযোদ্ধাদের। দেশ স্বাধীনের কয়েকদিন আগে রাজাকারদের তথ্যের ভিত্তিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হানা দেয় তার দোকানে। সেদিনের কথা মনে হলে আজও তিনি আঁতকে ওঠেন। হানাদাররা সেদিন কাশেম মোল্লাকে বুটের আঘাতে আহত করে ফেলে রেখে যায়। কাশেম মোল্লার বয়স এখন ৬৮। এই প্রজন্মের কেউ এখন তাকে খুব ভালো করে চেনে না। পাক হানাদারদের বুটের সেই আঘাতে কাশেম মোল্লার একটি পা এখনও প্রায় অকেজো। লাঠিতে ভর দিয়ে এখনও তিনি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কোনোমতে পাকশী রেলবাজারে একটি দোকান নিয়ে পড়ে আছেন। বার্ধক্য এখন তার শরীরে নানা অসুখের জন্ম দিয়ে দুর্বল করে ফেলেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় যে মানুষটির অবদানের জন্য বিবিসি বাজারের নামকরণ, তার অবদানের কথা আজ অনেকেরই মনে রাখার সময় নেই।
No comments